30/08/2023
#রুকইয়াহ্ শারইয়্যাহ কি:
কিতাবুত তিব্বি ওয়ার রুকা অধ্যায়: চিকিৎসা ও মন্ত্র الطب শব্দটি ط এর যেরের সাথে প্রসিদ্ধ। আল্লামা সুয়ূতী রহ. বলেন, যে طএর মধ্যে যবর যের সবটিই জায়েজ। যার অর্থ হলো রোগসমূহের চিকিৎসা করা। আর এর অর্থ যাদু করাও এসে থাকে। এজন্য مطبوبযাদুকৃত ব্যক্তিকেও বলা হয়ে থাকে।
আর طب হচ্ছে দুই প্রকার।
১। শারীরিক।
২। আধ্যাত্মিক।
নবীজি (স.) দুনিয়াতে আগমনের মূল উদ্দেশ্য হলো আধ্যাত্মিক চিকিৎসা করা। আর এ বিষয়কে কুরআনে কারীমের মধ্যে يزكيهم “এবং নবী তাদের আত্মশুদ্ধি করবেন” এ বাক্য দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু রাসূল স. শারীরিক চিকি’সা সম্পর্কেও বর্ণনা করেছেন। তাহলে যেন আনিত শরীয়ত পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং কোন দিকে অসম্পূর্ণ থাকে না। الرقى হচ্ছে رقية এর বহুবচন। যার অর্থ হচ্ছে মন্ত্র বা জরাক্রান্ত, ব্যথাগ্রস্ত এবং জিনে ধরা ব্যক্তির উপর যা পাঠ করা হয়ে থাকে। এখ যদি এ رقية কুরআনের আয়াত এবং হাদীসে বর্ণিত رقية দ্বারা হয়ে থাকে তাহলে তা সর্বসম্মতিক্রমে জায়েজ। আর যদি অনারবদের ভাষার এমন শব্দসমূহের মাধ্যমে হয় যেসব শব্দের অর্থ জানা নেই তাহলে এটা হারাম। কারণ, এতে কুফরী শব্দের সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি এমন শব্দসমূহের দ্বারা হয় যার অর্থ জানা আর তা যদি শরীয়ত সম্মত হয় তাহলেও তা জায়েজ। আর কোন কোন রেওয়ায়েতের মধ্যে মন্ত্র থেকে নিষেধ সাবেত রয়েছে। সে রেওয়ায়েত হয়ত রহিত হয়ে গেছে অথবা এমন মন্ত্রের ক্ষেত্রে যার অর্থ জানা নেই। অথবা এ মন্ত্রকে স্বয়ং প্রতিক্রিয়াশীল বলে মনে করা হয়ে থাকে। যেমন বর্বর যুগে এমন ধারনা করা হতো। অতএব নিষেধ এবং জায়েজের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। সমস্ত উম্মতের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সবাই চিকিৎসা করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। কেননা হযরত জাবের রাযি. থেকে হাদীস রয়েছে,অর্থাৎ, রাসূল স. এরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক রোগের জন্য ঔষধ রয়েছে। সুতরাং সঠিক ঔষদ যখন রোগের জন্য ব্যবহৃত হয় তখন আল্লাহ তাআলার নির্দেশে রোগমুক্ত হয়। “কিন্তু চিকিৎসক কখনো রোগ নির্ণয় করতে পারে না। বরং ধারনার উপর ঔষধ করে থাকে। বিধার হাজারও বার রোগমুক্তি হয় না। যদি রোগের উপর সঠিক ঔষধ পড়ে তাহলে রুগী রোগমুক্ত হয়ে যায়। এ কথাটিকেই হাদীসের মধ্যে أُصِيبَ দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে।
এমনিভাবে মুসনাদে আহমদের হাদীসে রয়েছে,অর্থাৎ, তোমরা চিকিৎসা করো হে আল্লাহর বান্দাগণ! কেননা,আল্লাহ তাআলা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেন নি যার ঔষধ সৃষ্টি করেন নি। শুধুমাত্র একটি রোগ ব্যতীত। আর তা হচ্ছে, বয়োঃবৃদ্ধতা।[2]الرقية الشرعية[1]عَنْ جَابِرٍ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٌ، فَإِذَا أُصِيبَ دَوَاءُ الدَّاءِ بَرَأَ بِإِذْنِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ»মুসলিম, হাদীস নং-২২০৪
[2]تَدَاوَوْا، فَإِنَّ اللهَ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلَّا وَضَعَ لَهُ دَوَاءً غَيْرَ دَاءٍ وَاحِدٍ الْهَرَمُ মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-১৮৪৫৪।
ইসলামী শরীয়তসম্মত ঝাড়-ফুঁক করাকে আরবীতে রুকইয়াহ বলা হয়। অর্থাৎ, যে আয়াত ও জিকিরসমূহ দ্বারা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা হয় এবং আরোগ্যের জন্য রোগীকে তার দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা হয়। রুকইয়াহ চার প্রকার:
১। পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ এবং আল্লাহর সুন্দর নাম ও সুমহান গুণাবলী দ্বারা ঝাড়-ফুঁক। এটা জায়েজ এবং উত্তম।
২। সহীহ হাদীস দ্বারা সুসাব্যস্ত জিকির আজকার দ্বারা ঝাড়ফুক। এটাও জায়েজ।
৩। এমন জিকির আজকার ও দোআসমূহ যার দ্বারা এমন ঝাড়-ফুঁক যা কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় তবে কুরআন-সুন্নাহর বিপরীতও নয়। এটাও জায়েজ।
৪। এটা হলো এমন মন্ত্র যা কুফর এবং শিরক মিশ্রিত এবং যার অর্থও বোঝা যায় না। যার প্রচলন জাহেলী যুগেও ছিল। এ প্রকার মন্ত্র দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা হারাম এবং এ থেকে মুসলিমদের বেঁচে থাকা ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন
,اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَکَ بِهٖ وَیَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِکَ لِمَنْ یَّشَآءُ ۚ وَمَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرٰۤی اِثْمًا عَظِیْمًا ﴿۴۸
নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহ্ এর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল।
#রুকইয়াহ_হাদীস_থেকে_প্রমাণঃ হাদীসে বর্ণিত আছে,* আব্দুল আযিয রহ. বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি ও সাবিত একবার আনাস ইবনে মালিক রাযি. এর নিকট গেলাম। সাবিত বললেন, হে আবু হামযা! আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তখন আনাস রাযি. বললেন, আমি কি তোমাকে রাসূল স. যা দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করেছেন তা দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করে দিবো? তিনি বললেন, হা। তখন আনাস রাযি. পড়লেন,
اللهم رب الناس، مذهب الباس، اشف أنت الشافي، لا شافي إلا أنت، شفاء لا يغادر سقما
হে আল্লাহ! তুমি মানুষের রব। রোগ নিরাময়কারী। আরোগ্য দান করো। তুমি আরোগ্য দানকারী। তুমি ব্যতীত আর কেউ আরোগ্যদানকারী নেই। এমন আরোগ্য দাও যা কোন রোগ অবশিষ্ট রখে না।
হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূল স. ঝাড়-ফুঁক করতেন আর এ দুআ পাঠ করতেন: ব্যাথা দূর করে দাও হে মানুষের পালনকর্তা! আরোগ্য দানের ক্ষমতা কেবল তোমারই হাতে। এ ব্যাথা তুমি ছাড়া আর কেউ দূর করতে পারবে না। হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, জ্বর, ফুসকুড়ি ইত্যাদির ক্ষেত্রে রাসূল (স:) ঝাড়-ফুঁক দেওয়ার সম্মতি দিয়েছেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস নং-২০৫৬)।
রুকইয়াহ দ্বারা বিনিময় গ্রহণকরা বৈধ: হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূল স. একটি সামরিক অভিযানে পাঠান। আমরা একটি জনপথে আসার পর তাদের কাছে মেহমানদারী প্রার্থনা করলাম। কিন্তু তারা আমাদেরকে আপ্যায়ণ করল না। এরকম পরিস্থিতিতে তাদের গোত্রের প্রধানকে বিচ্ছু দংশন করলো। তারা আমাদের নিকট এসে বললো, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে বিচ্ছু দংশনকারীকে ঝাড়-ফুঁক করতে পারে? আমি বললাম, হা। আমি নিজেই। কিন্তু তোমরা যাদি আমাদেরকে এক পাল বকরী প্রদান না করো তাহলে আমি ঝাড়-ফুঁক করতে সম্মত নই। তারা বললো, আমরা তোমাদের ৩০টি বকরী প্রদান করবো। আমরা এ প্রস্তাবে রাজি হলাম। আমি সাতবার সূরা ফাতেহা পাঠ করে তাকে ঝাড়-ফুঁক করলাম। ফলে সে রোগমুক্ত হলো একং আমরা বকরীগুলো হস্তগত করলাম। বর্ণনাকারী বলেন, এ বিষয়ে আমাদের মনে সন্দেহের উদ্ভব হলো। আমরা বললাম, তোমরা রাসূল স. এর সামনে হাজির হওয়ার আগ পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তার নিকট উপস্থিত হওয়ার পর আমি যা করেছি তা তাকে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, কিভাবে তুমি জানতে পারলে যে এটা দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করা যায়? বকরীগুলো হস্তগত করো এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটি অংশ রাখো।
عن عبد العزيز، قال: دخلت أنا وثابت على أنس بن مالك، فقال ثابت: يا أبا حمزة، اشتكيت، فقال أنس: ألا أرقيك برقية رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال: بلى، قال: «اللهم رب الناس، مذهب الباس، اشف أنت الشافي، لا شافي إلا أنت، شفاء لا يغادر سقما»সহীহুল বুখারী, হাদীস নং-৫৭৪২, ই: ফা: ৫২১৮
عن عائشة، رضي الله عنها: أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يعوذ بعض أهله، يمسح بيده اليمنى ويقول: «اللهم رب الناس أذهب الباس، اشفه وأنت الشافي، لا شفاء إلا شفاؤك، شفاء لا يغادر سقما»সহীহুল বুখারী, হাদীস নং-৫৭৪৪, ই: ফা: ৫২২০
عَنْ أَنَسٍ، «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَخَّصَ فِي الرُّقْيَةِ مِنَ الْحُمَةِ وَالْعَيْنِ وَالنَّمْلَةِ»
জামে তিরমিযী, হাদীস নং-২০৫৬
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ قَالَ: بَعَثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَرِيَّةٍ فَنَزَلْنَا بِقَوْمٍ، فَسَأَلْنَاهُمُ القِرَى فَلَمْ يَقْرُونَا، فَلُدِغَ سَيِّدُهُمْ فَأَتَوْنَا فَقَالُوا: هَلْ فِيكُمْ مَنْ يَرْقِي مِنَ العَقْرَبِ؟ قُلْتُ: نَعَمْ أَنَا، وَلَكِنْ لَا أَرْقِيهِ حَتَّى تُعْطُونَا غَنَمًا، قَالُوا: فَإِنَّا نُعْطِيكُمْ ثَلَاثِينَ شَاةً، فَقَبِلْنَا فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ: الحَمْدُ لِلَّهِ سَبْعَ مَرَّاتٍ، فَبَرَأَ وَقَبَضْنَا الغَنَمَ، قَالَ: فَعَرَضَ فِي أَنْفُسِنَا مِنْهَا شَيْءٌ فَقُلْنَا: لَا تَعْجَلُوا حَتَّى تَأْتُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فَلَمَّا قَدِمْنَا عَلَيْهِ ذَكَرْتُ لَهُ الَّذِي صَنَعْتُ، قَالَ: «وَمَا عَلِمْتَ أَنَّهَا رُقْيَةٌ؟ اقْبِضُوا الغَنَمَ وَاضْرِبُوا لِي مَعَكُمْ بِسَهْمٍ»জামে তিরমিযী, হাদীস নং-২০৬৩
#স্বয়ং_রাসূল_যখন_নিজেই_রুকইয়াহ_করলেনঃ
এক হাদীসে বর্ণিত আছে। হযরত উবাই ইবনে কাব রাযি. বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসে ছিলাম। তখন এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর নবী, আমার ভাই ব্যাথায় আক্রান্ত। সে বলল, তার একটু পাগলামীও রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। ঐ ব্যক্তি তার ভাইকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে নিয়ে বসালেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সূরা ফাতিহা, সূরা বাকারার প্রথম চার আয়াত, সূরা বাকারার ১৬৩ নং আয়াত, আয়াতুল কুরসী, সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত, সূরা আল ইমরানের ১৮নং আয়াত, সূরা আরাফের ৫৬ নং আয়াত, সূরা মুমিনুনের ১১৬ আয়াত,সূরা সাফ্ফাতের প্রথম দশ আয়াত, সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়ে রুকইয়াহ করে দিলেন। তখন ঐ অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে দাড়িয়ে গেলেন। আর এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলেন যে, পূর্বে তার যেন কোন অসুস্থতাই ছিল না।
সাহাবী ইবনে মাসউদ রাঃ রুকইয়াহ করলেন অতঃপর
তাফসীরে রুহুল মাআনীতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এক ব্যক্তির মধ্যে পাগলামীর লক্ষণ ছিল। লোকটি ইবনে মাসউদ রাযি. এর কাছে আসলেন। তিনি লোকটির কানের কাছে সুরা মু’মিনুনের ১৫-১৮ এই চারটি আয়াত পড়ে রুকাইয়াহ করে দিলেন। লোকটি তৎক্ষণাৎ সুস্থ হয়ে গেল। অতঃপর এ খবর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলো, তখন তিনি বললেন, তুমি তো এ আয়াতগুলো তার কানে পড়ার কারণে তাকে (তার সাথে থাকা জিনকে) জালিয়ে দিয়েছ। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহর কসম! কোন ব্যক্তি যদি ইয়াকীনের সাথে কোন পাহাড়ের উপর এ আয়াতগুলো পাঠ করে তবে পাহাড়ও টলে যাবে।
মুসনাদে আহমদ, হা: ২১১৭৪
#রুকইয়াহ_দ্বারা_উপকার_পাবেন_কিভাবে?
১। রুকইয়াহ গ্রহণকারী আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে।
২। রোগী পূর্ণ এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল কুরআন মহাঔষধ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও মুমিনের জন্য উপকারী।
৩। আরোগ্য লাভে দেরী হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ধৈর্য্যধারণ করা।
৪। আকিদা ঠিক করতে হবে। অর্থাৎ, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ-এর পূর্ণ আকিদা অনুসরণ করতে হবে।
৫। কোন যাদুকর বা গণকের দেওয়া তাবিজ-কবজ থাকলে খুলে ফেলে দিতে হবে।
৬। এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যিনি রুকইয়াহ করেন তার কোন ক্ষমতা নেই। আল্লাহ চাইলে কুরআনের বরকতে আরোগ্য লাভ হবে।
৭। রোগী কোন গুনাহে লিপ্ত থাকতে পারবে না।
৮। বেশি বেশি দান সাদকাহ করতে হবে।
৯। সুন্নাহ অনুযায়ী চলতে হবে এবং বেশি বেশি নফল নামাজের পাবন্দী করতে হবে।
১০। রোগী যদি নারী হয় তাহলে পূর্ণ পর্দার অনুরসরণ করতে হবে।
রাকীর জন্য শর্তসমূহঃ
১। তিনিও আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করবেন।
২। গুনাহমুক্ত থাকতে হবে।
৩। রোগীকে যখন রুকইয়াহ করবেন তখন আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।
৪। রাক্কীকেও সহীহ আক্কীদার অনুসরণ করতে হবে।
৫। রাক্কীকে কুরআনের উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে যে, কুরআনের বরকতেই আল্লাহ তাআলা রোগীকে আরোগ্য দান করবেন।
৬। রাক্কীকে পরহেজগার মুত্তাকী হতে হবে।
৭। মহিলা রোগীর ক্ষেত্রে পর্দা মেনে চলতে হবে।
৮। রোগীর সাথে অসদাচারণ কিংবা তাকে ভর্ৎসনা করা যাবে না।
৯। গভীর আগ্রহের সাথে রুকইয়াহ করতে হবে।
১০। তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া বর্জন করতে হবে এবং গাম্ভীযে তেলাওয়াত করতে হবে।
১১। মনে মনে আরোগ্যের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করবে।
১২। রোগীর মাঝে আছরকৃত জীনকে জালানো-পোড়ানো ও তাড়ানোর পূর্বে তাকে হিদায়াতের দিকে আহবান করতে হবে। আর রোগীর চিকিৎসার পূর্বে তার ঈমান আকিদা মজবুত করার জন্য রোগীকেও দাওয়াত দিতে হবে।
১৩। রাক্কীকে অবশ্যই একজন আদর্শবান ব্যক্তি হতে হবে। তার কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও লেনদেনসহ প্রতিটি কাজে রোগীর ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ হওয়া জরুরী। কেননা, তিনিই তো রোগীকে সর্বদা বেশি বেশি ইবাদত ও যিকির করতে বলবেন। তাই এমন যেন না হয় যেমন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
اَتَاْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ اَنْفُسَكُمْ وَاَنْتُمْ تَتْلُوْنَ الْکِتٰبَ ؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
﴾তোমরা মানুষকে পূণ্যের আদেশ করো। আর নিজেদের ভুলে যাও অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত করো। তোমরা কি বুঝ না?
১৪। রোগীর মাঝে আত্মবিশ্বাস স্থাপন করানো। রোগীর মাঝে প্রশান্তি ও প্রথমতঃ তার প্রতিপালকের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ও দ্বিতীয়তঃ নিজের উপর আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করানো একান্ত প্রয়োজন। রোগীর জন্য যা হয়েছে তার ভুল হওয়ার ছিল না। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা এবং তাঁর ভালোবাসার প্রমাণ।কারণ হাদীসে আছে, আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকে রোগ-শোক দেন। মানুষ খুব মানষিকভাবে দুর্বল থাকে তখন শয়তান তার ভিতরে প্রবেশ করে, বিভিন্ন ধরনের সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি করে। পরিবারের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
১৫। রোগীকে চিকিৎসার সাথে সাথে তাওবার পরামর্শ দিতে হবে। যেন সে তার জীবনধারাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। এটা তার মনে আশার সঞ্চার করবে এবং নিরাশা দূর করবে।