
05/01/2023
বাবা যেদিন বাজার থেকে আধা সের গরুর গোস্ত কিনে আনতেন সেদিন আমাদের ঘরে একটা বড় উৎসব আমেজ ভাব চলে আসত।
মা শাড়ির আঁচলকে কোমরে গুঁজে জিরা মসলা বাটতে বসে যেতেন। আমি কাঁচা গোস্তগুলোকে নেড়ে চেড়ে দেখতাম, মুখের কাছে নিয়ে গেলেই মা দিত বকুনী। বলত- "কাঁচা গিলে খাসনে, পেটে গরু হবে"।😀
আমি চোখ ড্যাব ড্যাব করে মা কে বলতাম- "গরু হলে বেশ হবে মা, রোজই তো তাহলে গোস্ত খেতে পারব চিবিয়ে চিবিয়ে"।😁
মা আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে হাসি মুখ করে বলত- "আমার পাগল ছানা একটা"।
খানিকটা দূরে বসে মা ছেলের খুনসুটি দেখে বাবা ঠোটের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসতেন।
একসময় নুনে, মরিচে মিশিয়ে মা ঝোল ঝোল করা গোস্ত চুলা থেকে নামাতেন। আমি দৌড়ে হামলে পড়তাম। একটা চামচে এক টুকরো আমায় বাড়িয়ে দিয়ে মা বলতেন- "ধর খোকা, নুন হয়েছে কিনা দেখ"। আমি প্রথম টুকরো খেয়ে দুষ্ট গাল করে বলতাম- "এক টুকরোয় কি বোঝা যায়? আরেক টুকরো দাও না মা, খেয়ে ঝটপট বলে দেই। মা আরেক টুকরো দিত। আমিও খেতাম। স্বাদ করে খেতাম। আর মায়ের শাড়ির আঁচলে আয়েশ করে মুখ মুছতাম।
সেদিন বাবা আধা সের গোশত এনেছিল। এত কম এনেছে কেন জানতে চাইলে বাবা মুখ মলিন করে বলেছিল- "আজকের গরুটা তোর মত বাচ্চা, তাই গোস্ত কম দিয়েছে"।☹️
সবে এক দুই গুণতে শিখেছি। মা যখন মসলা বাটায় ব্যস্ত তখন গোস্তগুলো ধরতে ধরতে আনমনে গুণে দেখলাম মোট পনের টুকরো গোস্ত আছে।
একসময় মা আলু মাখিয়ে ঝোল করে গোস্ত রাঁধে। তিন টুকরো আমায় দেয় নুন মরিচ পরখ করার জন্যে। আমি খেতে খেতে হিসেব রাখি আর বারো টুকরো আছে।
রাতে মা প্লেটে করে আরো পাঁচ টুকরো ভাত মাখিয়ে নলা করে আমায় খাওয়ায়। আমি খেতে খেতে হিসেব রাখি আর সাত টুকরো আছে।
এরপরের দিন সকালেও আমার প্লেটে গোস্ত আসে। দুপুরেও গোস্ত আসে।
খেতে খেতে হঠাৎ হিসেবে গন্ডগোল বেধে যায়। হিসেব করে দেখলাম বারো টুকরো গোস্তই আমার পেটে। বাবা খায়নি, মাও খায়নি!
অনেক বছর পর আমি যখন অংক করা শিখলাম, হঠাৎ অংক করতে করতে একদিন একটা অংক মেলালাম-
এক পোয়া গোস্তে যদি পনের টুকরো হয় তবে আধা কেজি গোস্তে তিরিশ টুকরো।
যদি পাঁচ টুকরো করে ভাগ করা হয় তবে তিনজনে দুই বেলা খেতে পারবে। কিন্তু যেবার বাবা আধা সের গোস্ত আনতেন প্রত্যেক বারই আমার ভাগে পাঁচ টুকরো করে মোট ছয় বেলা গোস্ত জুটতো। পাঁচ টুকরো করে ছয় বেলা।
অংকটার উত্তর:-
"বাবা-মা কোনদিনই গরুর গোস্ত খাননি"
অংকটার মন্তব্য:-
অথচ গরুর গোস্ত বাবার ভীষণ প্রিয় ছিল।
অথচ গরুর গোস্ত মায়ের ভীষণ প্রিয় ছিল।
আজ আমরা ফ্ল্যাটে থাকি তিনজন। আমি, আমার স্ত্রী ও ছেলে । প্রতিদিনই প্রায় গোস্ত কেনা হয়। আগের মত আধা সের না, ২ কেজি, ৩ কেজি। কিন্তু আগের মত সেই উচ্ছাস আর নেই! নেই মায়ের হাতের রান্নার সেই স্বাদ, নেই বাবার মুচকি হাসির মাঝে অফুরন্ত ভালবাসা।
ভালো থাকুক সবার মা, সবার বাবা!!❤️
"রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।
হে আল্লাহ্ শিশুকালে আমার মা বাবা যেমন স্নেহ মায়া মমতা ভালোবাসা দিয়ে লালন করেছিলেন, তুমিও তাঁদের সে ভাবেই লালন কর!"
প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারের বাস্তব জীবনের এই কথাগুলো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের পিতা মাতাকে সুস্থতার সাথে নেক হায়াত দান করুন❤️
#সংগৃহীত