
03/11/2023
🚫 ☢ ইতিহাস সম্পর্কে সুষুপ্ত পাঠকের মহা অজ্ঞতা হাতেনাতে ধরা পড়লঃ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে বাগদাদের খলিফা আসল কিভাবে? কেন ২১ জন মুঘল সম্রাটদের ১জনও হজ্ব পালন করতে পারেননি তথা করেননি? ☢ 🚫
❎ ইতিহাস সম্পর্কে সুষুপ্ত পাঠকের মহা অজ্ঞতাঃ মুঘল সম্রাটরা বাগদাদের খলিফাকে উপঢৌকন পাঠাতেন। ঔরাঙ্গজেব তার পিতা সম্রাট শাহজাহানকে বন্দী করে রেখেছিলেন বলে বাগদাদের খলিফা ঔরাঙ্গজেবের পাঠানো বিপুল পরিমাণ উপঢৌকন ফিরিয়ে দেন।
🎇 প্রকৃত সত্যঃ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে বাগদাদের কোনো খলিফা ছিল না, খলিফা ছিল তুরস্কের কনস্টান্টিনোপলের যা বর্তমানে ইস্তানবুল বলে সুপরিচিত। প্রমাণ দেখে নিনঃ
✅ ০১) মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকাল ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দ।
সূত্রঃ www.britannica.com/biography/Aurangzeb
✅ ০২) তুর্কি অটোমানদের শাসনকাল ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ।
সূত্রঃ www.britannica.com/place/Ottoman-Empire
✅ ০৩) বাগদাদের শেষ খলিফা ছিলেন আল মুস্তাসিম যিনি হালাকু খানের হাতে ১২৫৮ সালে পরাজিত হন। সম্রাট আওরঙ্গজেব এর আবির্ভাব এর ঠিক ৪০০ বছর পরে যখন বাগদাদের কোনো খলিফা ছিলই না।
al-Mustaʿṣim, (born 1212—died 1258), the last ʿAbbāsid caliph in Baghdad (reigned 1242–58).
The caliph and 300 officials hurried to present their surrender and, 10 days later, were all put to death. This left Islām without a caliph for the first time in its history.
সূত্রঃ www.britannica.com/biography/al-Mustasim
Abbāsid authority was partially restored in the 12th century, but the caliphate ceased with the Mongol destruction of Baghdad in 1258.
সূত্রঃ www.britannica.com/topic/caliph
✅ ০৪) ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দের পর ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত নামমাত্র খলিফ (Puppet caliph) ছিলেন যারা, তারা বাগদাদে নয় বরং মিশরের কায়রোতে ছিলেন। দেখুনঃ
A scion of the family was invited a few years later to establish a puppet caliphate in Cairo that lasted until 1517, but it exercised no power whatsoever. From the 13th century onward a variety of rulers outside Cairo also included caliph among their titles, although their claims to universal leadership of the Muslim community seem to have been more notional than real.
সূত্রঃ www.britannica.com/place/Caliphate/The-Abbasid-caliphate
✅ ০৫) ১৫৩৪ খ্রিষ্টাব্দে সঙ্ঘটি বাগদাদের যুদ্ধে তুর্কি অটোমানদের সাথে পার্সিয়ান সাফাভিদদের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে অটোমানেরা জয়যুক্ত হয় এবং ১৯১৭ সালে ব্রিটিশদের কাছে পরাজয়ের আগ পর্যন্ত বাগদাদ অটোমানদের দখলে থাকে।
Battle of Baghdad, (1534). The Ottoman capture of Baghdad occurred during the first campaign of a twenty-year war between the Ottoman (Turkish) Empire and the Persian (Iranian) Safavid Empire of Shah Ṭahmāsp I. The famous city was to remain in Ottoman hands almost continuously until it was captured by the British in 1917.
সূত্রঃ www.britannica.com/event/Battle-of-Baghdad-1534
অটোমানদের রাজধানী ছিল তুরস্কের কনস্টান্টিনোপল এলাকায় যা বর্তমানে ইস্তানবুল নামে সুপরিচিত।
Constantinople (now Istanbul), which henceforth served as the Ottoman capital.
সূত্রঃ www.britannica.com/summary/Ottoman-Empire
সুতরাং, ‘বাগদাদের খলিফা’ ও তথাকথিত ‘বাগদাদের খলিফার কাছে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের উপঢৌকন পাঠানো’ – দুটোই সুষুপ্ত পাঠকের মনগড়া আবিষ্কার তথা গাঁজাখুরি গল্প। ইতিহাসে একদমই অজ্ঞ, অনভিজ্ঞ বা কাঁচা না হলে তথা গুগল-জ্ঞানী না হলে কেউ এসব আবোল তাবোল ভক্কর চক্কর লিখতে পারে?
🎲 সিদ্ধান্তঃ ১৫৩৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত খলিফা ছিলেন তুরস্কের কনস্টান্টিনোপলের বা ইস্তানবুলের অটোমান শাসকেরা, বাগদাদের কেউ নন। তাহলে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব বাগদাদের কারো কাছে উপঢৌকন পাঠাবেন কোন যুক্তিতে? প্রশ্নই ওঠে না।
এবার আসা যাক ২য় ইস্যুতে। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ১৯ জন মুঘল সম্রাটদের কেউই হজ্ব পালন করতে পারেননি তথা করেননি। এর কারণঃ
✅ ০১) মুঘল-অটোমান আমলে গাড়ি কিংবা বিমান ছিল না অর্থাৎ যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল চরম খারাপ। সমুদ্রপথ কিংবা স্থল পথ ধরে মক্কায় যেতে ১ বছর (ভারতবর্ষ থেকে মক্কা) কিংবা কয়েক মাস (তুরস্ক থেকে মক্কা) পর্যন্ত লেগে যেত। অর্থাৎ ফিরে আসতেও আরো ১ বছর বা কয়েক মাস লেগে যেত। অর্থাৎ মক্কায় গমন ও মক্কা থেকে ফিরে আসা মিলিয়ে ১ থেকে ২ বছর লেগে যেত। এই দীর্ঘ সময় একজন সম্রাট বা খলিফার পক্ষে তার সামাজ্য ও রাজকার্য ছেড়ে মক্কায় অবস্থান করা একদমই অসম্ভব বা বাস্তবতাবিবর্জিত। কেননা এই সুযোগে প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারত এবং যখন সম্রাট ফিরে আসতেন, তখন তিনি দেখতে পেতেন যে তার স্থলে অন্য কেউ সেই এলাকা শাসন করছে।
✅ ০২) যদি সম্রাটের উজির, সেনাপতি ও উচ্চপদস্থরা বিদ্রোহ দমনও করতেন, তারপর রাজকার্য পরিচালনা বা তা স্থিতিশীল অবস্থায় রাখা দুরূহ হয়ে পড়ত। কারণ দক্ষ প্রশাসক ছাড়া একটি সাম্রাজ্য সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না।
✅ ০৩) অনেক সময় সম্রাটের পুত্র কিংবা নিকট আত্মীয়দের মধ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বা লড়াই থাকে। ফলে সিংহাসন ফেলে সম্রাটদের জন্য মক্কায় হজ্ব করা মোটেই বিচক্ষণতার কাজ ছিল না।
✅ ০৪) সম্রাটের অনুপস্থিতির সুযোগে অন্য সাম্রাজ্য দ্বারা আক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাব্যতা ছিল।
✅ ০৫) হজ্ব গমনের দীর্ঘযাত্রা থেকে রোগাক্রান্ত বা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি ছিল।
✅ ০৬) সমুদ্রপথে জাহাজডুবি হওয়া তথা মৃত্যুর ভয় ছিল।
✅ ০৭) উষর মরুভূমিতে বাঁচার প্রয়োজনে লুটপাট করতে বাধ্য হওয়া বেদুঈনদের দ্বারা অপহরণ ও লুটতরাজের শিকার হওয়ার আশংকা ছিল।
✅ ০৮) সভাসদ ও সেনাদের নিয়ে হজ্বে গেলে অপহরণ ও লুটতরাজের শিকার না হলেও তাতে বিপুল পরিমাণের খাদ্য, পোষাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্তু বহন করা লাগত তথা বিপুল অংকের অর্থ খরচ করা লাগত।
🎲 সিদ্ধান্তঃ উপরিউক্ত কারণে সম্রাটদের ক্ষেত্রে হজ্ব করার অনুকূলে ন্যূনতম বাস্তবিকতা ছিল না। তাই সম্রাটগণ তাদের সাম্রাজ্যেই অবস্থান করতেন। তবে সম্রাটগণ তার পরিবারের সদস্য ও তার প্রতিনিধিত্বকারী দূতকে পাঠিয়ে বিপুল ও মূল্যবান উপঢৌকন সহকারে মক্কায় হজ্ব করতে পাঠিয়ে দিতেন। অথচ সুষুপ্ত পাঠকের উদ্দেশ্য ছিল কিভাবে মুঘল শাসকদের ভীরু, ভীতু, কাপুরুষ, অধার্মিক, ধর্মান্ধ ইত্যাদি প্রতিপন্ন করবে, সেটি!
👉 এই বিষয়ে কেউ বিস্তারিত জানতে চাইলে Michael Naylor Pearson রচিত Pilgrimage to Mecca: The Indian Experience, 1500-1800 পড়ে দেখতে পারেন।
সূত্রঃ https://archive.org/details/pilgrimage-to-mecca-the-indian-experience-1500-1800
আশা করি সুস্পষ্ট হয়েছে সুষুপ্ত পাঠক ও আমার লেখার পার্থক্য কতটুকু। সুষুপ্ত পাঠকের লেখা লাইক, শেয়ার করা লোকজন চরম অজ্ঞ, অনভিজ্ঞ, অসৎ, অনৈতিক, অবুঝ ও অন্ধ প্রকৃতির। এদের কাছে বারবার সঠিক তথ্য, সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হলেও এরা এদের মজ্জাগত স্বভাব থেকে অপব্যাখ্যা, অতিরঞ্জন ও মিথ্যাচার পরিপূর্ণ প্রোপ্যাগান্ডামূলক পোস্টগুলো লাইক শেয়ার করেই যাবে। এরা কী মানুষের বাচ্চা নাকি অন্যকিছু – সচেতন মানসের কাছে এটাই আমার একমাত্র প্রশ্ন! প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয় কিন্তু মেধা ও মননশীলতা না থাকলে মানুষ হয় না।