16/04/2025
🩺 শরীরের ওপর গরম আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব☀️কিডনির প্রতি অবহেলা করবেন না 🩺
❤️🩹 শরীরের ওপর গরম আবহাওয়ার অনেক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে যেমন সূর্যদগ্ধ হওয়া (Sunburn), পানিশূন্যতা, অজ্ঞান হয়ে পড়া ইত্যাদি। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো- গরম আবহাওয়া এবং এর ফলে সৃষ্ট অসুস্থতা কিডনিকে প্রভাবিত করে। এই ঝুঁকির কারণে, যাদের কিডনির সমস্যা আগে থেকেই আছে, তাদের জন্য গ্রীষ্মকালে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
❤️🩹 গরমজনিত অসুস্থতা সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার ওপরে উঠলে ঘটে এবং এর সূচনা হয় তীব্র পানিশূন্যতা দিয়ে। পানিশূন্যতা শরীরের নানা অঙ্গ ও সিস্টেমকে দুর্বল করে, যার ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
❤️🩹 যাদের কিডনির সমস্যা নেই, তারাও অতিরিক্ত গরমের প্রভাবে স্বল্পমেয়াদে কিডনির সমস্যায় ভুগতে পারেন বা দীর্ঘমেয়াদে ক্রনিক কিডনি ডিজিজের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। আর যাদের ইতোমধ্যে কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো আরও খারাপ হতে পারে, ফলে শরীরের বর্জ্য ও অতিরিক্ত পানি ছেঁকে ফেলার ক্ষমতা আরও হ্রাস পায়।
❤️🩹 গরমজনিত অসুস্থতা কিডনিতে নানাভাবে প্রভাব ফেলে, যেমন:
⚠️ কিডনিতে রক্ত প্রবাহ হ্রাস: অতিরিক্ত ঘাম হলে শরীরে পানিস্বল্পতা ঘটে, যে কারণে লো ব্লাড প্রেসার সৃষ্টি হয় এবং কিডনীতে রক্তপ্রবাহ কমে যায়, যা মারাত্মক পর্যায়ে গেলে আকস্মিক কিডনি ক্ষতির (Acute Kidney Injury- AKI) কারণ হতে পারে। একাধিকবার এ ধরনের সমস্যা হলে তা দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে রূপ নিতে পারে।
⚠️ ইউরোলিথিয়াসিস (কিডনিতে পাথর): অতিরিক্ত গরমের কারণে ক্যালসিয়াম ও ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্ব বেড়ে যায়, যা কিডনিতে পাথরের সৃষ্টি করে এবং এতে সময়ের সাথে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
⚠️ মূত্রনালিতে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি: অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে প্রস্রাব উৎপাদন কমে যায়, ফলে দেহ থেকে রোগজীবাণু দূর করা কঠিন হয়। গরম আবহাওয়ায় প্রস্রাবে জীবাণুর পরিমাণও বাড়ে। দুর্বল কিডনির ক্ষেত্রে এই জীবাণুদের শরীর থেকে দূর করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে, যার ফলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) হতে পারে।
⚠️হিট স্ট্রোক ও কিডনি বিকল হওয়া: চরম গরমে হিট স্ট্রোক হলে হার্ট ফেলিওর ও শকের মতো জটিল অবস্থা তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত কিডনি ফেলিওর পর্যন্ত গড়াতে পারে।
❤️🩹 বয়স্ক এবং খুব অল্পবয়সীরা সবচেয়ে বেশি গরমজনিত কিডনি সমস্যার ঝুঁকিতে থাকেন।বয়স্কদের মধ্যে প্রায়ই হার্ট ডিজিজের মতো অন্যান্য সমস্যাও থাকে, যা তাদের গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ায়। অনেকে এমন ওষুধ গ্রহণ করেন যা পানিশূন্যতা বাড়ায়, চলাফেরার ক্ষমতা কমে যায়।
❤️🩹 অন্যদিকে, শিশুদের দেহের আকার ছোট হওয়ায় তারা তাড়াতাড়ি তাপ শোষণ করে বলে তাদের জন্য ঝুঁকি বেশি। তাই কখনোই তাদের গরম গাড়ি বা হাওয়াবিহীন ছোট ঘরে একা ফেলে রাখা উচিত নয়।
❤️🩹 এছাড়াও তীব্র গরমে বাইরে কাজ করেন বা খেলাধুলা করেন, এমন ব্যক্তিরাও কিডনী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়েন।
❤️🩹 গরমে কিডনির ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া যেমন জরুরি, তেমনি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।নিচের বিষয়গুলো মনে রাখুন:
⚠️ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয়, অ্যালকোহলিক বেভারেজ কম গ্রহণ করুন: এ দুটি পানিশূন্যতা ঘটায়। খেলে সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
⚠️ NSAID জাতীয় ওষুধ এড়িয়ে চলুন: মটরিন, অ্যাডভিল, অ্যালিভ ইত্যাদি ওষুধ কিডনির ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে যাদের কিডনি রোগ আছে। ব্যথা কমানোর জন্য বিকল্প ওষুধ সম্পর্কে কিডনি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
⚠️ প্রখর রোদে বাইরে বের হলে সঙ্গে ছোট্ট পানির স্প্রে বোতল রাখুন: চলাফেরার সময় নিজেকে ঠান্ডা রাখার দারুণ উপায় এটি!
💧পানি পান করুন: আবারও বলি, হাইড্রেটেড থাকা সব সময়ই সর্বোত্তম উপায়। গরমে সব সময় সঙ্গে পানি রাখার চেষ্টা করুন 💦
❤️🩹 যদি আপনার কোনো দীর্ঘমেয়াদি কিডনি সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, গরমের সময় সুস্থ থাকার বিষয়ে আপনার নেফ্রোলজিস্ট-এর সঙ্গে পরামর্শ করুন।
ডাঃ তানিয়া মাহবুব
কনসালট্যান্ট নেফ্রোলজিস্ট, প্রাভা হেলথ ॥