14/12/2024
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ে আমার চার বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ সারমর্ম তুলে ধরছি এই পোস্টে। প্রত্যেক ক্যাডারেরই আর্সেনালেই নিজস্ব কিছু স্ট্র্যাটেজি থাকে; কারোরটা হুবহু ফলো করে কেউ ক্যাডার হবে না। অনেকরকম কৌশল পড়ে নিজের মত প্ল্যান বানাবেন, এটাই এই পোস্টের উদ্দেশ্য।
আমার অনুসরণকৃত বুকলিস্ট:
বাংলা: সাহিত্য+ব্যাকরণ: (শীকর প্রকাশনীর বই), বাকিটা ইন্টারনেট থেকে চর্চা।
ইংরেজি: নির্দিষ্ট কোন বই পড়িনি; নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকার কলাম ভাবানুবাদ’ করা শিখতে হবে+ ফ্রি-হ্যান্ড রচনা লেখার অভ্যাস করতে হবে+ বিভিন্ন ফরম্যাট ইন্টারনেট থেকে অনুসরণকৃত।
গণিত+মানসিক দক্ষতা: ওরাকল লিখিত গণিত+ প্রিলির বইসমূহ+ এসএসসির পূর্বতন শিক্ষাক্রমের গণিত বই + উচ্চতর গণিতের সিলেবাসের নির্দিষ্ট কিছু অধ্যায় (অবশ্যই লিখিত পরীক্ষার বিগত প্রশ্নাবলী এবং বোর্ড বইয়ের অধ্যায়গুলোর উদাহরণ ভালোভাবে দেখতে হবে)
বাংলাদেশ বিষয়াবলি: ইউনিক প্রকাশনীর বই + অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে প্রয়োজনীয় অংশ+ পত্রিকা পড়তে হবে দৈনিক।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: কনসেপচুয়াল+ইমপিরিকাল ইস্যুর জন্য কনফিডেন্স প্রকাশনীর আতিক স্যারের বই এবং ‘এনাটমি অফ ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স’- মিরাজ আলী (খুব সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা আছে অনেক টার্ম+ যেগুলো অর্থ বুঝতে সমস্যা হয় তার জন্য Investopedia/Wikipedia থেকে নোট করে নিতে হবে)
বিজ্ঞান: এস্যুরেন্স প্রকাশনী+ ইলেক্ট্রিকাল অংশ উচ্চমাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞান বই থেকে পড়েছিলাম।
আরো কিছু কথা:
- প্রচুর, প্রচুর, এবং প্রচুর হাতের লেখার চর্চা করতে হবে। কথাটার মর্ম পরীক্ষার হলে বুঝতে পারবেন। এমন প্রশ্ন কমই পাবেন যেগুলোর উত্তর একেবারেই অজানা: কিন্তু যা জানেন, তা যদি সময়ের অভাবে খাতায় লিখে না আসতে পারেন, তাহলে ঐ কষ্ট করা না করা সমান হবে। তাই খুব খেয়াল এই বিষয়টা।
- ডাটা-ফাটা নিয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে মাথা জ্যাম করার কোন দরকার নাই। ডাটা হলো তরকারিতে মসলার মতো, অল্পই ভাল। তরকারির চেয়ে মসলা যেন বেশি না হয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ টপিক অনুযায়ী ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত সহজ-সুন্দর কিছু কোটেশন, অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে প্রাসঙ্গিক কিছু ডাটা ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পারলেই যথেষ্ট হবে।
- গৎবাঁধা লেখা পড়তেও কষ্ট, মার্কিং করতেও কষ্ট। তাই আপনার লেখা যদি আমার মতো স্লো হয়ে থাকে, আপনি সেক্ষেত্রে উত্তর যথাসম্ভব পয়েন্ট করে লিখবেন, সাইডে ছোট করে ম্যাপ আঁকিয়ে দিতে পারেন বা ছক আকারে ডাটা জুড়ে দিতে পারেন। উক্তি লিখতে নীলকালি ব্যবহার করলে ভালো হবে।
- যেকোনো প্রশ্নের উত্তর চেষ্টা করবেন তিনভাগে লিখতে। (সূচনা, ব্যাখ্যা, উপসংহার- এইভাবে; টাইটেল উল্লেখ করতে হবেনা। সূচনার স্থানে হয়তো একলাইনে মূলভাবটা তুলে ধরলেন, মাঝে বিশদ ব্যাখ্যা করলেন, অতঃপর উপসংহারে একলাইনে আপনার মতামত দিলেন। তিন প্যারার মাঝে একলাইন করে গ্যাপ থাকবে।)
- গুরুত্বপূর্ণ টপিকভিত্তিক একটা নোটখাতা বানান। যেমন: ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট এবং বাংলাদেশ/ জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশ/ বর্তমানের চ্যালেঞ্জিং সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উন্নয়নে বাংলাদেশের করণীয় ইত্যাদি। এই ধরনের টপিকের ক্ষেত্রে চারটা মূল পার্ট নোট করবেন-
১। বিষয়টির ইতিহাস
২। এই থেকে দেশের কী লাভ হচ্ছে/হবে
৩। এর উন্নয়নে এখনো কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে
৪। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনার সুপারিশসমূহ।
এইভাবে টপিকভিত্তিক নোট করা থাকলে, একই পড়া একাধিক সাবজেক্টের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবেন। টপিক যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত এবং পয়েন্টভিত্তিক রাখবেন; প্রাসঙ্গিক ডাটা-কোটেশন-ম্যাপ অল্প এড করতে পারেন।
- আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ক্ষেত্রে পত্রিকায় আলোচিত+ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সংবাদপত্র, রাজধানীর নাম মুখস্ত রাখবেন (লেখার সময়ে সময়ে কাজে লাগাতে পারবেন।) ‘ভারত-বাংলাদেশ’ সম্পর্ক লেখার পরিবর্তে ‘দিল্লী-ঢাকা’ সম্পর্ক কথাটা লেখার মান বাড়াবে।
প্রচুর পড়েন, আর যত পারেন ঘড়ি ধরে মডেল টেস্ট দেন। বিশেষত প্রতি শুক্রবারে বাসায়/কোচিংয়ে অন্তত ৩-৪ ঘন্টার একটা মডেল টেস্ট দেওয়াটা বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করেন। আর যেকোন টপিক পূর্বোক্ত উপায়ে চারভাগে ভাগ করে পড়েন, নোট নেন। প্রতিদিন ইংরেজি ফ্রি-হ্যান্ড লেখার অভ্যাস করেন আর রেগুলার গণিত এবং মানসিক দক্ষতা চর্চা করতে ভুল করবেন না, ধরা খাবেন। আমার লেখার ধরন বোঝাতে আমার লেখা রচনার কয়েকটি ছবি এড করে দিলাম।
সকল পরিশ্রমীর জন্য শুভকামনা রইলো। পড়া দেখে ভয় পাবেন না; এইক্ষেত্রে কোন প্রশ্ন মুখস্ত করার চেয়ে বেশি বিষয়টা সম্পর্কে যেটুকু আইডিয়া আছে- সেটাকে যথাসাধ্য সুন্দরভাবে খাতায় তুলে আসারই কাজ। সময়ের মূল্যায়ন করুন, নিয়মিত পড়ুন আর লিখুন- ভালো কিছুই হবে ইনশাআল্লাহ।
--Navid Tasnim