13/07/2025
Well said
গুগল AI -এর ডায়েট চার্ট, নতুন রোগের বাজার ঘাট!
হ্যাঁ যারা কথায় কথায় অতি তুচ্ছ তাচ্ছিল্যতার সাথে তেমন গুরুত্বপুর্ণ বা প্রয়োজনীয় নয় মনে করে, ডায়েটিশিয়ান থেকে ফ্রি ডায়েট চার্ট চান, বা বলেন এটা নিতে এত টাকা লাগবে কেন? ইন্টারনেট বা এআই থেকেইত নিতে পারি! তারা কি জানেন? বিনা শ্রমে অর্জন করা যায়, এমন কিছু নাই যা সত্যিকারে দামী!
একটু ব্যাখ্যা না দিলে বুঝা যাবেনা। ধরুন এক পেশেন্টের ফ্যাটি লিভার গ্রেড- ১, ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল বেশ বেশি,ভালো ফ্যাট (HDL) আবার কম সাথে ইউরিক এসিডের পরিমান বেশি।
এই রোগীর ডায়েট চার্ট কেমন হবে? গুগল ডায়েটিশিয়ান কি সেটা দিতে পারবে?
# হ্যাঁ, ফেসবুকের কল্যানে আমরা সাধারণ মানুষ শুনি যে, বিটরুট লিভারের জন্য ভালো। যেহেতু রোগীর ফ্যাটি লিভার আছে, তাহলে তাকে বিটরুট দেওয়া যাবে। তাতে হয়ত তার লিভারের উপকার হবে। গুগল ডায়েটিশিয়ানের মাধ্যমে আমরা অনেকে এই কথা শুনেছি।
* কিন্তু পেশেন্টের একই সাথে Hyperuricemia মানে শরীরে ইউরিক এসিড বেশি আছে । এখন লিভার ভালো হবে ভেবে যদি তাকে বিটরুট দেওয়া হয় নিয়মিত, তাতে হাই অক্সালেট যুক্ত ফুড খেয়ে তার ইউরিক এসিড আরও বাড়বে! ফলে রোগীর হাড়ের জয়েন্টে ইউরিক এসিড জমে গাউট বা গিটেবাতের অসহ্য ব্যথা শুরু হয়ে যাবে।
# আবার যেহেতু রোগীর HDL মানে ভালো ফ্যাট কম, সেটা যেমন বাড়াতে হবে, সাথে কোলেস্টেরল ও নরমাল লেভেলে আনতে হবে ডায়েটের মাধ্যমে। আবার যেহেতু টিজি বেশি আছে সেহেতু ট্রান্সফ্যাট বা বারবার তেলে ভাজা খাবার দেওয়া যাবেনা। সেক্ষেত্রে কী করা? সব মিলিয়ে ভালো ব্যাবস্থা হলো তার স্ন্যাকস এ হেলদি অপশন, বাদাম আর ফাইবার যুক্ত বীজ রাখা।
# কিন্তু তাতেও সমস্যা, কারণ রোগীর আবার ইউরিক এসিড বেশি আছে। ফলে অবাধে বাদাম বীজ রোগী খেতে পারবে না, তাহলে অন্য অপশনে যেতে হবে। সেটা আবার কে বুঝিয়ে দিব?
* এতক্ষনে আমরা কী বুঝলাম? একটা রোগীর ডায়েটে প্ল্যান দিতে যদি একজন ডায়েটিশিয়ানের এতো মাথা খাটাতে হয়, তাহলে এমন শতশত জটিল রোগীর ডায়েট চার্ট করতে কত প্রেশানিতে পড়তে হয়? যেখানে রোগে রোগে আর খাবারে খাবারে দ্বন্দের শতশত উদাহরণ রয়েছে- যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, পিসিওএস, আইবিএস ইত্যাদি। এহেন অসংখ্য রোগ এবং রোগীর গল্প বা ইতিহাস আছে যা গুগল ডায়েটিশিয়ান বা গুগল ডাক্তারও সমাধান দিতে পারে না। হয়তো ইতিমধ্যে আপনাদের মাথায় বুঝা না বুঝার এক বোঝা চেপে গেছে।
* আসলে একটা ডায়েট চার্ট শুধু এমন নয় যে, কোনটা খাওয়া যাবে আর কোনটা খাওয়া যাবে না, তা লিখে দেওয়া। প্রতিটা খাবার দেয়ার আগে রিসার্চ বেজ্ড চিন্তা করতে হয়, এইটা গুগল ডায়েটিশিয়ান এমন কি এআইও পারে না। প্রতিটা খাবার রোগীর শরীরে কেমন প্রভাব ফেলবে, সেটা জেনে বুঝে চার্ট করতে হয়, যা শুধু নাম মাত্র ডায়েটিশিয়ান হলেই হবেনা। একজন অভিজ্ঞ এবং আধুনিক ডায়েট প্ল্যানের সাথে সরাসরি জড়িত এবং রোগের রিসার্চে আপডেটেড ডায়েটিশিয়ান প্রয়োজন। কারণ একটা রোগের জন্য যে খাবার ভালো, আরেকটা রোগের জন্য সে খাবার বিষও হতে পারে। এইটা ভেবে রোগীর সবগুলো সমস্যা মাথায় রেখে একেক রোগীর জন্য একেক রকম ডায়েট চার্ট করতে অনেক অভিজ্ঞতা আর প্রজ্ঞার দরকার হয়। তাই ডায়েটিশিয়ান এর যথাযথ পারিশ্রমিক শুধু তার প্রাপ্যই না, সম্মান এবং অধিকারও বটে।
#পুনশঃ ডায়েট মানে ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর যে ধারণা তৈরি হয়েছে, সেটা নয়। বরং সেটা সর্ববই ভুল ধারনা মাত্র। ডায়েটের অর্থ অনেক ব্যপক এবং ডায়েটিশিয়ানের কাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রতিটা রোগের লক্ষন এবং জটিলতা সব মাথায় রেখে ডায়েট চার্ট করতে হয়।
তাই ডায়েটিশিয়ানদের সম্মানি, সম্মান এবং সামাজিক মর্যাদা অনন্য।
ডা. এস. এম আকমাল আলী
এ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ডায়াবেটিক কাউন্সেলর
প্রতিষ্ঠাতা - বাংলাদেশ ডায়াবেটিক নেটওয়ার্ক (বিডিএন)
#ডায়াবেটিক #ডায়াবেটিস #স্বাস্থ্য #চিকিৎসা #ডায়াবেটিসসেন্টার