18/09/2025
আসতে পারি ?
Please আসুন।
কি নাম ? স্যার নীলা। বয়স ? ২৬ বছর ।
আমি তার নামটি প্রেসক্রিপশন পেডে লিখতে লিখতে জানতে চাইলাম,
আপনার সমস্যা ? বলুন….
মুখে হাসি, মিষ্টি চেহারা হিজাব পরা ভদ্র মহিলা কোনও কথা না বলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় তার Skin lesions গুলো দেখাচ্ছিলেন।
Vitiligo শ্বেতী রোগ ।
ভালো হবে তো স্যার ?
হ্যাঁ ভালো হবে তবে কিছুটা সময় লাগবে।
কত দিন ?
কারো কারো ক্ষেত্রে কয়েক মাস আবার কারো বছর।
আমি দেখলাম Generalised Vitiligo. ভালো হবার সম্ভাবনা আছে।সাধারণত Acro facial Vitiligo অর্থাৎ ঠোঁট ও হাতের তালু, পায়ের তালু ,যেখানে চুল নেই সেখানে Vitiligo হলে ভালো হতে চায় না।শরীরের যে সব জায়গায় চুল আছে বিশেষ করে মুখমণ্ডলে শ্বেতী হলে এবং সঠিক চিকিৎসা নিলে ভালো হয়ে যায়।
⁃ তবে তো সেরেছে, আমাকে ছেড়ে দিবে ।
⁃ ছেড়ে দিবে মনে ? কে ছেড়ে দিবে?
আমার স্বামী বলেছে বাপের বাড়ি চইলা যা, ঐ খানে চিকিৎসা করা, আর ভালো না হইলে আর আসবি না।
আমি বললাম, যদি আপনার স্বামীর এই রোগ হতো, তখন ? আমি লক্ষ্য করলাম ভদ্র মহিলার চোখ দুটো আস্তে আস্তে জলে ভিজে যাচ্ছে …..
মিষ্টি হাসি সাথে চোখের নোনা জল, কোন এক গভীর থেকে উঠে আসা অদ্ভুত কষ্ট উনার পুরো অবয়বে ফুটে উঠেছে…..
আপনার পরিবারে কে কে আছেন ?
আমার বাবা মা কেউ নেই, ভাই ভাবির সংসার, আমার কি কোনো যায়গা আছে স্যর।
না মানে আপনার ছেলে মেয়ে?
আমার একটাই মেয়ে আছে। আমি লক্ষ্য করলাম নিজের স্বামী সন্তানের পরিবারকে তিনি আর নিজের সংসার ভাবতে পারছেন না।
আপনি কি করেন ?
আমি কিছু করিনা স্যার, আমি গৃহিনী॥
আমি ভদ্র মহিলাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম এবং বললাম, শ্বেতী রোগ আসলে কঠিন কোনও রোগ নয়, দেখতে কিছুটা ভাল না লাগলেও শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না, Auto Immune Disease এটা, কখনো ছোঁয়াচে রোগ নয়।
আমার চিকিৎসা ওনাকে কতটা আশ্বস্ত করতে পেরেছে সেটা আমি বুঝতে পারিনি কিন্তু তিনি যাবার সময় বার বার দোয়া করে বলেছিলেন, হে আল্লাহ আমার রোগটি ভালো করে দাও, আমাকে রক্ষা করো, আমার সংসারটা রক্ষা করো, আমার সন্তান কে ফিরিয়ে দাও।
ওনার এই আকুতি আমাকে স্পর্শ করলো…
অনেক রুগীর ভীড়ে আমি ওনার চলে যাওয়া দেখতে পাচ্ছিলাম এবং ভাবছিলাম….
একজন মানুষ, একজন নারী, একজন স্ত্রী, একজন মা কতটা অসহায় ।
মানুষ আসলে দুই রকম,
১.পুরুষ ২.নারী
পুরুষ সব সময় সে মানুষ, তারা দায়িত্ব নেয়, উপার্জন করে,সংসার চালায়, সে গৃহ কর্তা, ঘরের মালিক..
তাই প্রয়োজনে অন্যকে ঘর থেকে বের করে দিতে পারে, পারে কি ?
পুরুষদের Status কখনো Declined করে না,
সে পুরুষ, সে মানুষ, সব সময় সে মানুষ॥
কিন্তু নারী ! কোন কোনোও সময় হয়তো নারী মানুষ আবার কখনো সে মেয়ে মানুষ। যিনি গৃহিণী, তিনি আসলে কি করেন ? সারাদিনেই তো FB চালায়,টিভি দেখে,তাদের আবার কাজ কি?
সংসারে নারী পুরুষের সম্পর্ক অনেক সময় কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি যেন, থাকা খাওয়ার বিনিময়ে পুরুষের ভোগের বস্তু,পুরুষের বাড়ি ঘর দেখভাল করা, রান্না বান্না করা, সন্তান লালনপালন করা, শশুর শাশুড়ি দেবর ননদের দেখভাল করা …
এতো কিছুর পরেও নারী আসলে কি করে ?
২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টা কাজ করেও তাদের Status হচ্ছে গৃহিনী।
গৃহিনী নাম হলেও আসলে তাদের কোন গৃহ নেই।
মন চাইলে যে কোন সময় সেই নারী কে গৃহ থেকে বের করে দিতে পারে আবার চাইলে কমপক্ষে ৪জন আবার কোন কোনো সময় ১৭ জনকে সেই গৃহে প্রবেশ করাতে পারে।
এই আধুনিক সমাজ পুরুষদের সেই লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে কিন্তু নারী ?
সে কি পারে?
পুরুষ হয়তো কোনো কোন সময় তার সখের নারীকে ভালোবাসে, সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে , নিজের উপর অন্যকে স্থান দেয় ।
মনে রাখবেন সবাই কিন্তু নিতা আম্মানি নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায়, অসহায়, নির্যাতিত॥
সমাজে পুরুষের সব সময়ের Status হচ্ছে পুরুষ মানুষ…..
কিন্তু নারী সব সময় মানুষ নয়, তারা Status হচ্ছে মেয়ে মানুষ….
তাই প্রতিটি বাবার উচিৎ তার রাজকন্যাকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা যেন সে নিজেই নিজের দায়িত্ব নিতে পারে, নিজের একটা ঘর হয়। নিজের আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে ।প্রদীপ হয়ে উঠতে পারে, আলোকিত মানুষ হতে পারে।
আর গৃহিণী নামে গৃহহীন না হয়ে পরে।
কৃতজ্ঞতা 🙏
ডাঃ মোঃ আমজাদ হোসেন ভূঁইয়া॥
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ॥