Consultation Shop

Consultation Shop Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Consultation Shop, Medical and health, Dhaka.

***স্ক্যাবেক্স (Scabies) কী?***স্ক্যাবেক্স হলো সারকোপ্টেস স্ক্যাবিই ভ্যার. হোমিনেস (Sarcoptes scabiei var. hominis) নামক...
21/05/2025

***স্ক্যাবেক্স (Scabies) কী?***

স্ক্যাবেক্স হলো সারকোপ্টেস স্ক্যাবিই ভ্যার. হোমিনেস (Sarcoptes scabiei var. hominis) নামক একটি ক্ষুদ্র পরজীবী মাইটের (আট পা বিশিষ্ট এক ধরনের ক্ষুদ্র জীব) দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক চর্মরোগ। এই মাইটগুলো ত্বকের উপরের স্তরে (স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম) গর্ত করে ডিম পাড়ে এবং বংশবৃদ্ধি করে, যার ফলে তীব্র চুলকানি এবং ফুসকুড়ি দেখা দেয়।

***কারণ***

স্ক্যাবেক্স রোগের মূল কারণ হলো সারকোপ্টেস স্ক্যাবিই মাইটের আক্রমণ। এই মাইটগুলো খুব ছোট হওয়ায় খালি চোখে দেখা যায় না।

***ছড়ানোর উপায়***

* সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শ (Direct Skin-to-Skin Contact): এটি স্ক্যাবেক্স ছড়ানোর প্রধান উপায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে দীর্ঘক্ষণ সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে থাকলে মাইট একজন থেকে অন্যজনের শরীরে চলে যায়। এটি সাধারণত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, পরিবার বা জনবহুল পরিবেশে (যেমন হোস্টেল, বস্তি, জেলখানা) দ্রুত ছড়ায়।
* আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র: আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাক, বিছানার চাদর, তোয়ালে, গামছা ইত্যাদি ব্যবহার করলে মাইট সুস্থ মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে। মাইট মানুষের শরীর থেকে দূরে ২-৩ দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
* অপরিচ্ছন্নতা: যারা নিয়মিত গোসল করেন না, কাপড় পরিবর্তন করেন না বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকেন না, তাদের মধ্যে এই রোগ বেশি ছড়ায়। তবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মানুষও এতে আক্রান্ত হতে পারে।
* দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল (যেমন HIV আক্রান্ত ব্যক্তি বা বয়স্ক মানুষ), তাদের ক্ষেত্রে "ক্রাস্টেড স্ক্যাবেক্স" বা নরওয়েজিয়ান স্ক্যাবেক্স (Crusted/Norwegian Scabies) নামক একটি মারাত্মক রূপ দেখা যেতে পারে, যেখানে ত্বকে হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ মাইট থাকতে পারে এবং এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে হয়।

***লক্ষণ***

সাধারণত মাইট সংক্রমণের ৪-৬ সপ্তাহ পর লক্ষণ প্রকাশ পায় যদি আগে কখনো স্ক্যাবেক্স না হয়ে থাকে। যদি পূর্বে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে লক্ষণগুলো ১-৪ দিনের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে।
প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
* তীব্র চুলকানি: এটি স্ক্যাবেক্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। বিশেষ করে রাতে বা গরম লাগলে (যেমন গোসল করার পর, ঘুমানোর সময়) চুলকানি অনেক বেড়ে যায়।
* ত্বকের ফুসকুড়ি ও ছোট ছোট লাল দানা (Papules): আক্রান্ত স্থানে ছোট ছোট লাল দানা বা ফুসকুড়ি দেখা যায়, যা দেখতে পিম্পলের মতো হতে পারে।
* মাইট দ্বারা সৃষ্ট গর্ত বা বুরো (Burrows): মাইটগুলো ত্বকের উপরের স্তরে যে সরু, আঁকাবাঁকা, ধূসর-সাদা বা ত্বকের রঙের রেখা তৈরি করে, সেগুলোকে বুরো বলে। এগুলো সাধারণত ১-১০ মিলিমিটার লম্বা হয় এবং একটি পেন্সিলের দাগের মতো দেখায়। তবে, এই বুরো গুলো খালি চোখে সব সময় দেখা নাও যেতে পারে, কারণ মাইটের সংখ্যা কম হতে পারে।
* ক্ষত বা ঘা (Sores): তীব্র চুলকানির কারণে ত্বক আঁচড়ে গেলে ক্ষত বা ঘা হতে পারে। এই ক্ষতগুলো ব্যাকটেরিয়ার (যেমন Staphylococcus aureus বা Streptococcus) দ্বারা সেকেন্ডারি ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারে, যা ইম্পিটিগো (Impetigo) বা অন্যান্য গুরুতর জটিলতার (যেমন রক্তের সংক্রমণ-সেপটিসেমিয়া, কিডনি বা হার্টের সমস্যা) কারণ হতে পারে।

*** আক্রান্ত হওয়ার সাধারণ স্থান***

* আঙুলের ফাঁকে এবং হাতের কব্জির ভেতরের দিকে।
* বগল, কনুইয়ের ভাঁজ, হাঁটুর পিছন দিক।
* কোমরের চারপাশে, নিতম্ব, নাভি।
* পুরুষদের যৌনাঙ্গে, মহিলাদের স্তনের বোঁটায়।
* শিশুদের ক্ষেত্রে মাথা, মুখ, ঘাড়, হাতের তালু এবং পায়ের তলায় বেশি দেখা যায়।

***রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি***

* ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা (Clinical Examination): রোগীর লক্ষণ (তীব্র চুলকানি, ফুসকুড়ি) এবং ত্বকের নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে মাইট দ্বারা সৃষ্ট বুরো বা ক্ষত দেখে রোগ নির্ণয় করা হয়। একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তির লক্ষণ থাকলে এটি স্ক্যাবেক্স হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
* ডার্মোস্কোপি (Dermoscopy): এটি একটি হ্যান্ডহেল্ড ম্যাগনিফাইং ডিভাইস যা দিয়ে ত্বকের উপরিভাগ পরীক্ষা করা হয়। এর মাধ্যমে মাইট বা তাদের ডিম ও মল দেখা যেতে পারে।
* স্কিন স্ক্র্যাপিং (Skin Scraping): এটি সবচেয়ে নিশ্চিত ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি। আক্রান্ত ত্বকের সন্দেহজনক স্থান থেকে একটি ছোট স্ক্র্যাপ (আঁচড়ানো নমুনা) সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করা হয়। এতে মাইট, ডিম বা মাইটের মল দেখা গেলে স্ক্যাবেক্স নিশ্চিত হয়।
* বুরো ইঙ্ক টেস্ট (Burrow Ink Test): সন্দেহজনক বুরো এর উপর কালি লাগিয়ে মুছে ফেলা হয়। যদি মাইটের গর্ত থাকে, তাহলে কালি সেই গর্তে ঢুকে একটি আঁকাবাঁকা রেখা তৈরি করবে, যা দেখে বুরো নিশ্চিত করা যায়।
রক্তের পরীক্ষা সাধারণত অন্যান্য সম্ভাব্য রোগ (যেমন অ্যালার্জি বা একজিমা) বাতিল করার জন্য করা যেতে পারে, কিন্তু সরাসরি স্ক্যাবেক্স মাইট শনাক্ত করার জন্য নয়। যদি সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়, তাহলে সেই সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য রক্তের কিছু পরীক্ষা (যেমন CBC – শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি দেখতে) করা যেতে পারে, কিন্তু এটি স্ক্যাবেক্সের সরাসরি নির্ণয় নয়।

***চিকিৎসা***

স্ক্যাবেক্সের চিকিৎসা খুবই সহজ এবং কার্যকর। সঠিক ওষুধ ব্যবহার করলে মাইটগুলো মারা যায়।
সাধারণত ব্যবহৃত ওষুধ:
* পারমেথ্রিন ক্রিম (Permethrin Cream 5%): এটি স্ক্যাবেক্সের জন্য সবচেয়ে কার্যকর এবং প্রথম সারির চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত।
* ব্যবহার পদ্ধতি: ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীরে (মাথা বাদে) এই ক্রিম লাগাতে হয়। ছোট শিশু বা খুব বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাথায়ও লাগাতে হতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে ক্রিম লাগিয়ে ৮-১২ ঘণ্টা রাখতে হয়, তারপর সকালে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হয়।
* পুনরাবৃত্তি: এক সপ্তাহ পর (৭ দিন পর) আবার একই নিয়মে একবার ক্রিম লাগাতে হয়, কারণ প্রথমবারে মাইটের ডিমগুলো নাও মরতে পারে। দ্বিতীয় প্রয়োগ নতুন ডিম ফোটা মাইটদের মেরে ফেলে।
* সতর্কতা: গর্ভবতী মহিলা এবং ২ মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অপরিহার্য।
* বেনজিল বেনজোয়েট লোশন (Benzyl Benzoate 25%): এটিও একটি কার্যকর বিকল্প।
* ব্যবহার পদ্ধতি: সাধারণত টানা ৩ দিন রাতে ঘুমানোর আগে লাগানো হয় এবং সকালে ধুয়ে ফেলা হয়।
* সালফার অয়েন্টমেন্ট (Sulfur Ointment 2-12.5%): এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং কম ব্যয়বহুল, বিশেষ করে ছোট শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
* ব্যবহার পদ্ধতি: সাধারণত ৩-৫ দিন রাতে লাগিয়ে সকালে ধুয়ে ফেলতে হয়।
* আইভারমেক্টিন (Ivermectin) ট্যাবলেট: গুরুতর ক্ষেত্রে, যেমন ক্রাস্টেড স্ক্যাবেক্স বা যখন টপিক্যাল চিকিৎসা কার্যকর হয় না, তখন মুখে খাওয়ার আইভারমেক্টিন ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি সাধারণত একক ডোজ হিসেবে দেওয়া হয় এবং এক সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োজন হতে পারে। (গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের এবং ১৫ কেজি ওজনের কম শিশুদের জন্য সুপারিশ করা হয় না)।

***গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা নির্দেশিকা***

* একসাথে পরিবারের সবার চিকিৎসা: স্ক্যাবেক্স অত্যন্ত ছোঁয়াচে হওয়ায়, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সব সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের (এমনকি যাদের এখনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি) একই সময়ে চিকিৎসা করা অপরিহার্য। অন্যথায় বারবার সংক্রমণ হতে পারে।
* পোশাক ও বিছানাপত্র পরিষ্কার: চিকিৎসা শুরু করার সাথে সাথেই আক্রান্ত ব্যক্তির এবং পরিবারের সকলের পোশাক, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি গরম পানি (৫০° সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রার) দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে বা শুকনো করে ইস্ত্রি করতে হবে। যে জিনিসপত্র ধোয়া সম্ভব নয়, সেগুলো একটি মুখবন্ধ প্লাস্টিকের ব্যাগে কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা (৩ দিন) রেখে দিতে হবে, কারণ মাইট মানুষ ছাড়া বেশিদিন বাঁচে না।
* চুলকানি পরবর্তী ব্যবস্থাপনা: মাইট মারা যাওয়ার পরও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চুলকানি থাকতে পারে, যা মাইটের প্রতি শরীরের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিহিস্টামিন বা ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
* সেকেন্ডারি ইনফেকশনের চিকিৎসা: যদি ত্বক আঁচড়ে সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়ে থাকে, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে।

***প্রতিরোধ***

স্ক্যাবেক্স প্রতিরোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গুরুত্বপূর্ণ:
* ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা: নিয়মিত গোসল করা, পরিষ্কার কাপড় পরা এবং হাত ধোয়া স্ক্যাবেক্স প্রতিরোধে সহায়ক।
* সরাসরি সংস্পর্শ এড়ানো: স্ক্যাবেক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
* জিনিসপত্র শেয়ার না করা: আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাক, বিছানার চাদর, তোয়ালে, গামছা ইত্যাদি শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ: বাড়ির পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, বিশেষ করে জনবহুল পরিবেশে যেখানে একাধিক মানুষ বসবাস করে, সেখানে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি।
* দ্রুত চিকিৎসা: যদি স্ক্যাবেক্সের লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা ছড়ানো রোধ করতে সাহায্য করে।
* গণ-চিকিৎসা (Mass Treatment): ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বা যেখানে স্ক্যাবেক্সের প্রকোপ বেশি, সেখানে প্রয়োজনে গণ-চিকিৎসা কর্মসূচীর মাধ্যমে সবাইকে একযোগে চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।

**পাইলস (Piles)/হেমোরয়েড (Hemorrhoid)/অর্শ (Orsho) (বাংলায় প্রচলিত নাম)**একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যেখানে মলদ্বারের...
21/05/2025

**পাইলস (Piles)/হেমোরয়েড (Hemorrhoid)/অর্শ (Orsho) (বাংলায় প্রচলিত নাম)**

একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যেখানে মলদ্বারের ভেতরের এবং বাইরের দিকের রক্তনালীগুলো ফুলে যায় এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই স্ফীত রক্তনালীগুলো বিভিন্ন অস্বস্তিকর উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।

***পাইলস কেন হয়? (কারণ)****

পাইলস হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে প্রধানগুলো হলো:

* মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ: কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে বা অন্য কোনো কারণে মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে মলদ্বারের রক্তনালীগুলোর উপর চাপ পড়ে এবং সেগুলো ফুলে যেতে পারে।

* দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া: দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার কারণে মলদ্বারের রক্তনালীগুলোতে চাপ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।

* গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হওয়ার কারণে মলদ্বারের রক্তনালীগুলোর উপর চাপ পড়ে এবং হরমোনের পরিবর্তনও এর জন্য দায়ী হতে পারে।

* স্থূলতা (Obesity): অতিরিক্ত ওজন মলদ্বারের রক্তনালীর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

* দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকা: দীর্ঘ সময় ধরে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে মলদ্বারের রক্তনালীতে রক্ত জমা হতে পারে।

* বার্ধক্য: বয়স বাড়ার সাথে সাথে মলদ্বারের টিস্যু দুর্বল হয়ে যায়, যা পাইলসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

* বংশগতি: কারো পরিবারে পাইলসের ইতিহাস থাকলে তার পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

* ভারী জিনিস তোলা: নিয়মিতভাবে ভারী জিনিস তোলার কারণে পেটের ভেতরের চাপ বাড়ে, যা পাইলসের কারণ হতে পারে।

***পাইলসের আসলে কি ঘটে?***

পাইলসের মূল ঘটনা হলো মলদ্বারের ভেতরের এবং বাইরের দিকের শিরা (veins) এবং তার surrounding টিস্যু ফুলে যাওয়া এবং স্ফীত হওয়া। এই শিরাগুলো মলদ্বার এবং নীচের মলাশয় (re**um) থেকে রক্ত বহন করে। যখন এই শিরাগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, তখন সেগুলো প্রসারিত হয় এবং স্থিতিস্থাপকতা হারায়। এর ফলে শিরাগুলো ফুলে ওঠে এবং ছোট ছোট মাংসপিণ্ডের মতো (hemorrhoids) দেখা দেয়। এই স্ফীত শিরাগুলো রক্তপাত, ব্যথা এবং অস্বস্তির কারণ হতে পারে।

***পাইলস প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে***

* অভ্যন্তরীণ পাইলস (Internal Hemorrhoids): এগুলো মলদ্বারের ভেতরে তৈরি হয় এবং সাধারণত দেখা যায় না। এগুলোতে ব্যথা কম থাকে তবে রক্তপাত হতে পারে।

* বাহ্যিক পাইলস (External Hemorrhoids): এগুলো মলদ্বারের বাইরের দিকে ত্বকের নিচে তৈরি হয়। এগুলোতে ব্যথা, চুলকানি এবং রক্ত জমাট বেঁধে তীব্র ব্যথা হতে পারে (thrombosed external hemorrhoid)।

***পাইলস হলে কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে? লক্ষণ গুলো কেন হয়?***

পাইলসের লক্ষণগুলো নির্ভর করে পাইলসের ধরণ এবং তীব্রতার উপর। কিছু সাধারণ লক্ষণ এবং তাদের কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

* মলত্যাগের সময় রক্তপাত: অভ্যন্তরীণ পাইলস ছিঁড়ে গেলে বা আঘাত পেলে উজ্জ্বল লাল রঙের রক্তপাত হতে পারে। ফুলে যাওয়া রক্তনালীগুলোর পাতলা দেয়াল মলের চাপে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

* মলদ্বারের বাইরে মাংসপিণ্ড ঝুলে আসা (Prolapse): অভ্যন্তরীণ পাইলস বড় হয়ে গেলে মলত্যাগের সময় বা অন্য সময় মলদ্বার থেকে বাইরে ঝুলে আসতে পারে। স্ফীত টিস্যু এবং রক্তনালীগুলো মলদ্বারের চাপে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে।

* মলদ্বারে ব্যথা বা অস্বস্তি: বাহ্যিক পাইলসে রক্ত জমাট বাঁধলে (thrombosed hemorrhoid) তীব্র ব্যথা হতে পারে। অভ্যন্তরীণ পাইলসে সাধারণত ব্যথা কম থাকে, তবে ঝুলে আসলে অস্বস্তি হতে পারে। স্ফীত এবং প্রদাহযুক্ত টিস্যু স্নায়ু রিসেপ্টরগুলোকে উত্তেজিত করে ব্যথার অনুভূতি সৃষ্টি করে।

* চুলকানি: মলদ্বারের আশেপাশে চুলকানি হতে পারে, বিশেষ করে যদি পাইলস ঝুলে আসে এবং মিউকাস নিঃসরণ হয়। ভেজাভাব এবং প্রদাহের কারণে চুলকানি অনুভূত হয়।

* মলদ্বারে জ্বালা: প্রদাহ এবং স্ফীত টিস্যুর কারণে জ্বালা অনুভূত হতে পারে।

* মল বের হতে বাধা অনুভব: বড় আকারের পাইলস মল বের হতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

* মলদ্বারে ভেজা ভেজা ভাব: অভ্যন্তরীণ পাইলস থেকে মিউকাস নিঃসরণের কারণে এমন অনুভূতি হতে পারে।

***পাইলস নির্ণয় কি কি পরীক্ষা দেওয়া হয়?***

পাইলস নির্ণয়ের জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো করা হয়:

* শারীরিক পরীক্ষা (Physical Examination): ডাক্তার প্রথমে রোগীর লক্ষণ এবং চিকিৎসা ইতিহাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। এরপর মলদ্বারের বাইরের অংশ পরীক্ষা করবেন।

* ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন (Digital Re**al Examination - DRE): ডাক্তার গ্লাভস পরে lubricated আঙ্গুল মলদ্বারের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে কোনো অস্বাভাবিকতা (যেমন - ফোলা অংশ) অনুভব করার চেষ্টা করবেন। এটি অভ্যন্তরীণ পাইলস নির্ণয়ের একটি প্রাথমিক ধাপ।

* অ্যানোস্কোপি (Anoscopy): এটি একটি ছোট, ফাঁপা টিউবের মতো যন্ত্র (অ্যানোস্কোপ) যা মলদ্বারের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। এর মাধ্যমে ডাক্তার মলদ্বারের ভেতরের অংশ এবং অভ্যন্তরীণ পাইলস সরাসরি দেখতে পারেন।

* সিগময়ডোস্কোপি (Sigmoidoscopy): এটি একটি সরু, নমনীয় টিউবের মতো যন্ত্র যার মাথায় ক্যামেরা লাগানো থাকে। এটি মলদ্বারের এবং মলাশয়ের (সিগময়েড কোলন) নিচের অংশের ভেতরের দিকটি দেখার জন্য ব্যবহার করা হয়। যদি রক্তপাতের অন্য কোনো কারণ সন্দেহ হয়, তবে এই পরীক্ষাটি করা হতে পারে।

* কলোনোস্কোপি (Colonoscopy): এটি সিগময়ডোস্কোপির মতোই, তবে এটি পুরো মলাশয় (কোলন) দেখার জন্য ব্যবহার করা হয়। সাধারণত বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে বা অন্য কোনো পেটের সমস্যার লক্ষণ থাকলে এই পরীক্ষাটি করা হয়, যাতে রক্তপাতের অন্য কোনো গুরুতর কারণ (যেমন - পলিপ, ক্যান্সার) বাদ দেওয়া যায়।

***পরীক্ষা রেজাল্ট কি ধরনের ভেরিয়েশন আসতে পারে?***

পরীক্ষার ফলাফলে নিম্নলিখিত ধরনের ভেরিয়েশন আসতে পারে:

* শারীরিক পরীক্ষা ও DRE: ডাক্তার মলদ্বারের বাইরে ফোলা অংশ বা স্পর্শকাতরতা অনুভব করতে পারেন। অভ্যন্তরীণ পাইলসের ক্ষেত্রে হয়তো DRE-তে তেমন কিছু নাও পাওয়া যেতে পারে, বিশেষ করে যদি পাইলস prolapse না করে।

* অ্যানোস্কোপি: এই পরীক্ষায় অভ্যন্তরীণ পাইলসের আকার, সংখ্যা এবং prolapse-এর মাত্রা দেখা যাবে। পাইলস প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ ডিগ্রীর হতে পারে, যা prolapse-এর তীব্রতার উপর নির্ভর করে।

* প্রথম ডিগ্রী: রক্তপাত হয়, কিন্তু পাইলস ঝুলে আসে না।

* দ্বিতীয় ডিগ্রী: মলত্যাগের সময় পাইলস ঝুলে আসে, কিন্তু আপনাআপনি ভেতরে চলে যায়।

* তৃতীয় ডিগ্রী: মলত্যাগের সময় পাইলস ঝুলে আসে এবং হাত দিয়ে ভেতরে ঢোকাতে হয়।

* চতুর্থ ডিগ্রী: পাইলস স্থায়ীভাবে ঝুলে থাকে এবং হাত দিয়েও ভেতরে ঢোকানো যায় না।

* সিগময়ডোস্কোপি ও কলোনোস্কোপি: এই পরীক্ষাগুলোতে মলাশয়ের ভেতরের অবস্থা দেখা যাবে এবং পাইলস ছাড়া অন্য কোনো রোগ (যেমন - প্রদাহ, পলিপ, টিউমার) আছে কিনা তা নির্ণয় করা যাবে। ফলাফলে স্বাভাবিক মলাশয় বা পাইলসের উপস্থিতি উল্লেখ থাকতে পারে। যদি অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়, তবে তার বিবরণ এবং প্রয়োজনে বায়োপসির ফলাফল উল্লেখ করা হবে।

***পাইলসের চিকিৎসা বিস্তারিতভাবে***

পাইলসের চিকিৎসা নির্ভর করে পাইলসের ধরণ, তীব্রতা এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো লক্ষণগুলো উপশম করা এবং জটিলতা প্রতিরোধ করা। চিকিৎসার পদ্ধতিগুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:

১. রক্ষণশীল চিকিৎসা (Conservative Treatment): হালকা থেকে মাঝারি ধরনের পাইলসের ক্ষেত্রে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে এই চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

* জীবনযাত্রার পরিবর্তন:

* উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ: ফল, সবজি, শস্য এবং মটরশুঁটি সমৃদ্ধ খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং মল নরম হয়, ফলে মলত্যাগে চাপ কম লাগে।

* পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করলে মল নরম থাকে।

* নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করলে হজমক্ষমতা বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।

* দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে না থাকা: কাজের প্রয়োজনে দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে হলে মাঝে মাঝে বিরতি নিন এবং হাঁটাহাঁটি করুন।

* মলত্যাগের তাড়না পেলে দেরি না করা: মলের বেগ এলে সঙ্গে সঙ্গে টয়লেটে যাওয়া উচিত। চাপ দিয়ে মলত্যাগ করা উচিত নয়।

* টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ না থাকা: মলত্যাগের জন্য খুব বেশি সময় ধরে টয়লেটে বসে থাকা উচিত নয়।

* সিটজ বাথ (Sitz Bath): দিনে কয়েকবার (বিশেষ করে মলত্যাগের পর) গরম পানিতে (তলপেট পর্যন্ত ডোবানো) ১০-১৫ মিনিট বসে থাকলে মলদ্বারের মাংসপেশি শিথিল হয় এবং ব্যথা কমে।

* পাইলসের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হয়, যা পাইলসের লক্ষণ উপশম করতে এবং জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। ওষুধগুলো সাধারণত মলম, সাপোজিটরি এবং ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। নিচে কিছু বহুল ব্যবহৃত ওষুধ এবং তাদের কাজ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

স্থানীয়ভাবে ব্যবহার্য ওষুধ (মলম ও সাপোজিটরি):

* কর্টিকোস্টেরয়েড (Corticosteroids): হাইড্রোকর্টিসোন (Hydrocortisone) এর মতো স্টেরয়েডযুক্ত মলম বা সাপোজিটরি প্রদাহ, চুলকানি এবং ফোলা কমাতে সাহায্য করে। এগুলো সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।

* অ্যানেস্থেটিক (Local Anesthetics): লিডোকেইন (Lidocaine) বা বেনজোকেইন (Benzocaine) যুক্ত মলম বা সাপোজিটরি ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে এবং সাময়িকভাবে ব্যথা ও অস্বস্তি কমায়।

* অ্যাস্ট্রিনজেন্ট (Astringents): হেমামেলিস (Witch Hazel) যুক্ত মলম বা প্যাড টিস্যু সংকুচিত করতে এবং রক্তপাত কমাতে সাহায্য করতে পারে।

* অ্যান্টিসেপটিক (Antiseptics): কিছু মলমে জীবাণুনাশক উপাদান থাকে যা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে।

খাওয়ার ওষুধ (ট্যাবলেট):

* ফ্ল্যাভোনয়েড (Flavonoids): ডায়াসমিনোস্পিরিন (Diosmin Hesperidin) এর মতো ট্যাবলেট রক্তনালীকে শক্তিশালী করে, রক্ত প্রবাহ উন্নত করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এগুলো পাইলসের তীব্রতা কমাতে এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হয়।তীব্র আক্রমণে প্রথম ৪ দিন দিনে ৩ বার, পরের ৩ দিন দিনে ২ বার, তারপর দিনে ১ বার খেতে হয়। দীর্ঘস্থায়ী পাইলসে দিনে ২ বার ১টি করে খাওয়া যেতে পারে। তবে সঠিক ডোজের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি।

* ব্যথানাশক (Pain relievers): প্যারাসিটামল (Paracetamol) বা আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) এর মতো সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ পাইলসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে এগুলো পাইলসের মূল চিকিৎসা নয়।

* মল নরমকারক (Stool softeners): ডকুসেট সোডিয়াম (Docusate Sodium) বা ল্যাকটুলোজ (Lactulose) এর মতো ওষুধ মল নরম করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে, যা পাইলসের অন্যতম প্রধান কারণ।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

* ডাক্তারের পরামর্শ: পাইলসের চিকিৎসার জন্য কোন ওষুধটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, তা নির্ধারণ করার জন্য অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তার আপনার পাইলসের ধরন, তীব্রতা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য বিবেচনা করে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করবেন।

* নিজের ইচ্ছামত ওষুধ ব্যবহার করবেন না: ফার্মেসি থেকে নিজে কিনে ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ ভুল ওষুধ ব্যবহার করলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।

* জীবনযাত্রার পরিবর্তন: ওষুধের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা, ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার মতো স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনাও পাইলসের চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মনে রাখবেন, পাইলসের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে এবং ওষুধ তার একটি অংশ। ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ

২. ন্যূনতম আক্রমণাত্মক চিকিৎসা (Minimally Invasive Procedures): যদি রক্ষণশীল চিকিৎসায় উন্নতি না হয় বা পাইলস মাঝারি থেকে তীব্র হয়, তবে এই পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে:

* রাবার ব্যান্ড লিগেশন (Rubber Band Ligation): এটি অভ্যন্তরীণ পাইলসের জন্য একটি সাধারণ পদ্ধতি। একটি ছোট রাবার ব্যান্ড পাইলসের গোড়ায় পরানো হয়, যা রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। কয়েক দিনের মধ্যে পাইলস শুকিয়ে ঝরে পড়ে। এটি সাধারণত কয়েক দফায় করা হয়।

* Sclerotherapy: এই পদ্ধতিতে পাইলসের মধ্যে একটি রাসায়নিক দ্রবণ ইনজেক্ট করা হয়, যা রক্তনালীকে সংকুচিত করে এবং পাইলসকে সঙ্কুচিত করে। এটি ছোট থেকে মাঝারি আকারের অভ্যন্তরীণ পাইলসের জন্য কার্যকর।

* ইনফ্রারেড কোয়াগুলেশন (Infrared Coagulation): ইনফ্রারেড আলো ব্যবহার করে পাইলসের রক্তনালীগুলোতে তাপ প্রয়োগ করা হয়, যার ফলে সেগুলো জমাট বেঁধে যায় এবং পাইলস সঙ্কুচিত হয়। এটি ছোট থেকে মাঝারি আকারের অভ্যন্তরীণ পাইলসের জন্য ব্যবহৃত হয়।

* ক্রায়োথেরাপি (Cryotherapy): এই পদ্ধতিতে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করে পাইলসকে জমাটবদ্ধ করে ধ্বংস করা হয়। তবে এটি তেমন প্রচলিত পদ্ধতি নয়।

৩. সার্জিক্যাল চিকিৎসা (Surgical Treatment): তীব্র বা জটিল পাইলসের ক্ষেত্রে, অথবা যখন অন্যান্য চিকিৎসায় কাজ হয় না, তখন সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। কিছু প্রচলিত surgical পদ্ধতি হলো:

* হেমোরয়েডেক্টমি (Hemorrhoidectomy): এটি পাইলস অপসারণের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। বিভিন্ন উপায়ে (যেমন - scalpel, laser, electrocautery) পাইলসের স্ফীত টিস্যু কেটে বাদ দেওয়া হয়। এটি বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয় ধরনের পাইলসের জন্যই প্রযোজ্য। এই পদ্ধতিতে কিছুটা ব্যথা হতে পারে এবং পুনরুদ্ধারে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

* হেমোরয়েডোপেক্সি (Stapled Hemorrhoidopexy): এই পদ্ধতিতে একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে ঝুলে যাওয়া অভ্যন্তরীণ পাইলসকে তার সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনা হয় এবং রক্ত সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে ব্যথা সাধারণত কম হয় এবং পুনরুদ্ধারের সময়ও কম লাগে। এটি মূলত তৃতীয় ও চতুর্থ ডিগ্রী অভ্যন্তরীণ পাইলসের জন্য ব্যবহৃত হয়।

* থ্রম্বেক্টমি (Thrombectomy): যদি বাহ্যিক পাইলসে রক্ত জমাট বেঁধে তীব্র ব্যথা হয় (thrombosed external hemorrhoid), তবে স্থানীয়ভাবে এনেস্থেশিয়া দিয়ে ছোট একটি incision করে জমাট বাঁধা রক্ত বের করে দেওয়া হয়। এটি দ্রুত ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, তবে এটি পাইলসের মূল চিকিৎসা নয়।

***পাইলস প্রতিরোধের উপায়***

পাইলস প্রতিরোধ করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

* কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলুন: উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত জল পান করার মাধ্যমে মল নরম রাখুন।

* মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ পরিহার করুন: তাড়াহুড়ো না করে স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগ করুন।

* দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা এড়িয়ে চলুন: কাজের প্রয়োজনে দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে হলে মাঝে মাঝে বিরতি নিন।

* নিয়মিত ব্যায়াম করুন: হালকা ব্যায়াম হজমক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

* স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন: অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলুন।

* ভারী জিনিস তোলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন: ভারী জিনিস তোলার সময় সঠিক নিয়ম মেনে চলুন যাতে পেটের উপর চাপ কম পড়ে।

* মলত্যাগের তাড়না পেলে দেরি না করা: মলের বেগ এলে সঙ্গে সঙ্গেই টয়লেটে যান।

মনে রাখবেন, পাইলসের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক রোগ নির্ণয় এবং সময়োপযোগী চিকিৎসার মাধ্যমে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

***অতিরিক্ত তথ্য***

সিটজ বাথ (Sitz Bath) হলো একটি পদ্ধতি যেখানে কোমর থেকে নিতম্ব পর্যন্ত অংশ উষ্ণ পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। এটি মলদ্বার (a**s) এবং পেরিনিয়ামের (perineum - যৌনাঙ্গ ও মলদ্বারের মধ্যবর্তী এলাকা) বিভিন্ন সমস্যায় আরাম পেতে এবং দ্রুত নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। এর পদ্ধতি, নিয়ম কানুন নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

পদ্ধতি:

সিটজ বাথ নেওয়ার জন্য দুটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে:

১. সিটজ বাথ টাব বা বেসিন ব্যবহার করে: বাজারে সিটজ বাথের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ছোট প্লাস্টিকের টাব বা বেসিন পাওয়া যায়। এগুলো টয়লেটের সিটের উপর বসানো যায়।

* প্রস্তুতি:

* সিটজ বাথ টাব বা বেসিনটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।

* উষ্ণ পানি ভরুন। পানির তাপমাত্রা আরামদায়ক হতে হবে, খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা যেন না হয়। সাধারণত হালকা গরম (কুসুম গরম) পানি উপযুক্ত। আপনি চাইলে পানিতে কিছু উপাদান মেশাতে পারেন (নিচে দেখুন)।

* টয়লেটের সিটের উপর সিটজ বাথ টাব বা বেসিনটি বসান। এটি ভালোভাবে স্থিতিশীল হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।

* সিটজ বাথ নেওয়া:

* সাবধানে টাব বা বেসিনে বসুন, যাতে আপনার নিতম্ব এবং পেরিনিয়াম পানিতে ডুবে থাকে। আপনার হাঁটু ভাঁজ করে বুকের কাছাকাছি রাখতে পারেন।

* ১৫ থেকে ২০ মিনিট এভাবে বসে থাকুন। এই সময়টুকুতে আপনি চাইলে বই পড়তে পারেন বা অন্য কোনো হালকা কাজ করতে পারেন।

* সময় শেষ হলে ধীরে ধীরে উঠুন।

* নরম এবং পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে আলতো করে ওই এলাকা শুকিয়ে নিন। ঘষাঘষি করবেন না।

২. বাথটাব ব্যবহার করে: যদি সিটজ বাথ টাব না থাকে, তবে আপনি আপনার বাথটাবের অল্প পানিতে বসেও সিটজ বাথের সুবিধা পেতে পারেন।

* প্রস্তুতি:

* বাথটাব ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।

* অল্প পরিমাণে উষ্ণ পানি ভরুন (প্রায় ৪-৬ ইঞ্চি)। পানির তাপমাত্রা আরামদায়ক হতে হবে।

* চাইলে পানিতে কিছু উপাদান মেশাতে পারেন (নিচে দেখুন)।

* সিটজ বাথ নেওয়া:

* সাবধানে বাথটাবের পানিতে বসুন, যাতে আপনার নিতম্ব এবং পেরিনিয়াম ডুবে থাকে। আপনার পা দুটো বাথটাবের বাইরে বা ভেতরের দিকে ছড়ানো থাকতে পারে।

* ১৫ থেকে ২০ মিনিট এভাবে বসে থাকুন।

* সময় শেষ হলে ধীরে ধীরে উঠুন।

* নরম এবং পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে আলতো করে ওই এলাকা শুকিয়ে নিন।

নিয়ম কানুন:

* পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: সিটজ বাথ নেওয়ার আগে এবং পরে টাব বা বেসিন ভালোভাবে পরিষ্কার করুন জীবাণুর সংক্রমণ এড়াতে।

* পানির তাপমাত্রা: পানি অবশ্যই উষ্ণ হতে হবে, তবে ত্বকের জন্য আরামদায়ক। খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার করা উচিত নয়।

* সময়: প্রতিবার ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে সিটজ বাথ নেওয়া উচিত।

* ফ্রিকোয়েন্সি (কতবার): সাধারণত দিনে ২-৩ বার বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সিটজ বাথ নেওয়া যেতে পারে। মলত্যাগের পর এটি বিশেষভাবে উপকারী।

* শুকানো: সিটজ বাথ শেষ করার পর ওই এলাকা ভালোভাবে শুকনো করা জরুরি। ভেজা থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। নরম তোয়ালে ব্যবহার করুন এবং ঘষাঘষি করবেন না।

* ব্যক্তিগত ব্যবহার: সিটজ বাথ টাব বা বেসিন ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা উচিত। অন্যের ব্যবহার করা জিনিস ব্যবহার করা উচিত নয়।

* সংক্রমণ থাকলে: যদি মলদ্বার বা পেরিনিয়ামে কোনো সক্রিয় সংক্রমণ থাকে, তবে সিটজ বাথ নেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কিছু ক্ষেত্রে এটি সংক্রমণ ছড়াতে সাহায্য করতে পারে।

* অ্যালার্জি: যদি পানিতে মেশানোর কোনো উপাদানে আপনার অ্যালার্জি থাকে, তবে সেটি ব্যবহার করা উচিত নয়।

পানিতে মেশানোর জন্য কিছু উপাদান (ঐচ্ছিক):

কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী উষ্ণ পানিতে নিম্নলিখিত উপাদানগুলো মেশানোর পরামর্শ দিতে পারেন আরাম বৃদ্ধি এবং নিরাময় প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য:

* লবণ: সাধারণ লবণ (Epsom salt নয়) এক চা চামচ পরিমাণ মেশানো যেতে পারে। এটি ফোলা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

* এপসম সল্ট (Epsom Salt): ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সমৃদ্ধ এই লবণটি পেশি শিথিল করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

* পভিডোন আয়োডিন (Povidone-iodine): যদি সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, তবে অল্প পরিমাণে পভিডোন আয়োডিন মেশানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)।

* বেকিং সোডা (Baking Soda): চুলকানি কমাতে সামান্য বেকিং সোডা মেশানো যেতে পারে।

* হামামেল (Witch Hazel): প্রদাহ এবং অস্বস্তি কমাতে অল্প পরিমাণে হামামেল মেশানো যেতে পারে।

**কখন সিটজ বাথ নেওয়া উচিত**

সিটজ বাথ নিম্নলিখিত সমস্যাগুলোতে আরাম দিতে পারে:

* পাইলস (Hemorrhoids)

* মলদ্বারে ফাটল (A**l Fissures)

* মলদ্বার বা পেরিনিয়ামের অস্ত্রোপচারের পর

* এপিসিওটমি (Episiotomy - সন্তান প্রসবের সময় কাটা)

* পেরিনিয়াল টিয়ার (Perineal Tears - সন্তান প্রসবের সময় ফেটে যাওয়া)

* প্রোস্টাটাইটিস (Prostatitis - প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ)

* যোনিপথে সংক্রমণ (Vaginal Infections)

* মূত্রাশয় সংক্রমণ (Urinary Tract Infections)

* মলদ্বারে চুলকানি (A**l Itching)

যদি আপনার কোনো নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তবে সিটজ বাথ শুরু করার আগে এবং পানিতে কোনো উপাদান মেশানোর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। তারা আপনার অবস্থার জন্য সঠিক পদ্ধতি এবং নিয়মাবলী নির্ধারণ করে দিতে পারবেন।

*****পাইলসের কিছু লক্ষণ অন্যান্য রোগের সাথে মিলে যেতে পারে, যার ফলে কনফিউশন সৃষ্টি হতে পারে। এই রোগগুলো হলো*****

* অ্যানাল ফিশার (A**l Fissure): এটি মলদ্বারের ভেতরের দিকে একটি ছোট চিড় বা ফেটে যাওয়া। এর লক্ষণ হলো মলত্যাগের সময় তীব্র ব্যথা এবং রক্তপাত, যা পাইলসের লক্ষণের মতো হতে পারে। তবে অ্যানাল ফিশারের ব্যথা সাধারণত মলত্যাগের পরেই বেশি অনুভূত হয় এবং তীক্ষ্ণ হতে পারে।

* অ্যানাল অ্যাবসেস (A**l Abscess) ও ফিস্টুলা (Fistula): মলদ্বারের আশেপাশে ফোড়া (অ্যাবসেস) হলে ব্যথা, ফোলা এবং পুঁজ বের হতে পারে। ফিস্টুলা হলো মলদ্বারের ভেতরের সাথে ত্বকের একটি অস্বাভাবিক সংযোগ, যা থেকেও পুঁজ বা তরল বের হতে পারে। পাইলসে সাধারণত পুঁজ বের হয় না।

* কলোরেক্টাল ক্যান্সার (Colorectal Cancer): মলাশয় বা মলদ্বারের ক্যান্সারও রক্তপাত এবং মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তনের মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে, যা পাইলসের সাথে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। তবে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অন্যান্য লক্ষণ যেমন - ওজন হ্রাস, পেটে ব্যথা, ক্লান্তিবোধ ইত্যাদিও থাকতে পারে।

* Proctitis: এটি মলদ্বারের প্রদাহ, যার কারণে রক্তপাত, ব্যথা এবং মলত্যাগের সময় অস্বস্তি হতে পারে। এর কারণ সংক্রমণ, প্রদাহজনক পেটের রোগ (IBD) বা রেডিয়েশন থেরাপি হতে পারে।

* রেক্টাল প্রোলাপস (Re**al Prolapse): এই অবস্থায় মলাশয়ের ভেতরের অংশ মলদ্বার দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। এটি পাইলসের ঝুলে আসার (প্রোল্যাপস) মতো মনে হতে পারে, তবে রেক্টাল প্রোলাপসে সাধারণত বৃহত্তর অংশ এবং অন্য ধরনের টিস্যু বেরিয়ে আসে।

* স্কিন ট্যাগ (Skin Tag): মলদ্বারের আশেপাশে ছোট, নরম মাংসপিণ্ড দেখা যেতে পারে, যা বাহ্যিক পাইলসের মতো মনে হতে পারে। তবে স্কিন ট্যাগ সাধারণত ব্যথাহীন হয় এবং রক্তপাত ঘটায় না।

* প্রুরাইটিস অ্যানি (Pruritus Ani): এটি মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি, যা পাইলসের কারণেও হতে পারে, তবে অন্যান্য কারণেও হতে পারে (যেমন - ত্বকের সমস্যা, অ্যালার্জি, পরজীবী সংক্রমণ)।

এই কারণে, মলদ্বারে কোনো অস্বাভাবিকতা বা লক্ষণ দেখা দিলে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। ডাক্তার শারীরিক পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে পাইলস এবং অন্যান্য রোগের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবেন।

Address

Dhaka

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Consultation Shop posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram