13/06/2025
ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিস: এক নীরব সমস্যা ও তার সমাধান:-
আপনার কি কখনো কব্জি থেকে বুড়ো আঙুল পর্যন্ত ব্যথা অনুভূত হয়েছে? কিংবা কিছু তুলতে গেলে ব্যথা বেড়ে যায়? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে এটি হতে পারে ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিস। এই রোগটি আপনার দৈনন্দিন জীবনকে বেশ জটিল করে তুলতে পারে, বিশেষ করে যাদের পেশাগত কারণে হাতের অতিরিক্ত ব্যবহার করতে হয়। চলুন, এই নীরব অথচ যন্ত্রণাদায়ক সমস্যাটি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানি।
ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিস কী?
ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিস হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে কব্জি এবং বুড়ো আঙুলের গোড়ায় থাকা টেন্ডনগুলোর আশেপাশের টিস্যুতে (টেনোসাইনোভিয়াল শীথ) প্রদাহ দেখা দেয়। এই প্রদাহের ফলে টেন্ডনগুলোর চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়, যা ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে। সাধারণত এই অবস্থাটি বেশি দেখা যায় তাদের মধ্যে, যারা হাত এবং কব্জির ওপর অতিরিক্ত চাপ দিয়ে কাজ করেন।
কেন হয় ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিস?
ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিসের পেছনে প্রধান কারণগুলো হলো:
অত্যধিক বা পুনরাবৃত্তিমূলক হাতের ব্যবহার: যেসব কাজ বারবার হাতের নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে চাপ সৃষ্টি করে, যেমন টাইপ করা, লেখা, বা ভারি জিনিস তোলা, সেগুলো এই অবস্থার ঝুঁকি বাড়ায়।
কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার: যারা দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
শারীরিক আঘাত: হাত বা কব্জিতে আঘাত পেলে বা টান লাগলে টেন্ডনে প্রদাহ দেখা দিতে পারে, যা পরবর্তীতে ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিসে রূপ নিতে পারে।
হরমোনাল পরিবর্তন: গর্ভাবস্থার পর বা মেনোপজের সময় মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়, কারণ এই সময়ে হরমোনের পরিবর্তন টেন্ডনের নমনীয়তায় প্রভাব ফেলে।
ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিসের লক্ষণ:
ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিসের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
বুড়ো আঙুলের গোড়া থেকে কব্জি পর্যন্ত ব্যথা।
ব্যথার পাশাপাশি ফোলাভাব বা ফুলে যাওয়া।
কিছু ধরার সময় বা বুড়ো আঙুল নড়ানোর সময় ব্যথা বেড়ে যাওয়া।
কব্জির নড়াচড়ায় অস্বস্তি এবং কঠোরতা।
হাতের ওপর চাপ দিলে বা কিছু তুলতে গেলে ব্যথা তীব্র হওয়া।
কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিস নির্ণয়ের জন্য একটি সাধারণ পরীক্ষা হলো #ফিঙ্কেলস্টেইন_টেস্ট। এই টেস্টে রোগীকে তার বুড়ো আঙুল মুঠোর মধ্যে রাখার পর কব্জিকে ছোট আঙুলের দিকে বাঁকাতে বলা হয়। এই অবস্থায় ব্যথা হলে, তা ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিসের লক্ষণ হতে পারে।
ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিসের চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনা :
এই অবস্থার চিকিৎসা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় কাজ এবং চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করে:
হাতকে বিশ্রাম দিন: প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে হাতের ওপর চাপ কমানো এবং যতটা সম্ভব হাতকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত।
আইস প্যাক প্রয়োগ: ফোলাভাব এবং ব্যথা কমাতে আইস প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফিজিওথেরাপি: একজন ফিজিওথেরাপিস্টের সাথে নিয়মিত থেরাপি সেশন ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এর মধ্যে হালকা স্ট্রেচিং, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, এবং নির্দিষ্ট ম্যানুয়াল থেরাপি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
স্প্লিন্টিং: ক্ষতিগ্রস্ত অংশে চলাচল সীমাবদ্ধ করতে এবং প্রদাহ কমাতে স্প্লিন্ট ব্যবহার করা হতে পারে। এটি হাতকে স্থির রেখে নিরাময়ে সাহায্য করে।
ওষুধ: ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে কখনো কখনো অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে।
ইনজেকশন থেরাপি : কখনো কখনো কোর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
অস্ত্রোপচার: যদি উপরের পদ্ধতিগুলো কাজ না করে, তবে চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিতে পারেন। এটি সাধারণত শেষ বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ডি কুয়েরভেন টেনোসাইনোভাইটিস একটি সাধারণ কিন্তু উপেক্ষিত সমস্যা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনা আপনার জীবনে এই সমস্যার প্রভাব কমাতে পারে। নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন থাকা এবং হাতের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ কমানোই এই সমস্যার প্রধান প্রতিরোধক।