21/08/2025
২১শে অগাস্ট, ২০০৬
আলহামদুলিল্লাহ।
২৫ তম বিসিএস এর মাধ্যমে সুদূর কুড়িগ্রামের এক অজপাড়াগাঁ রাজিবপুর উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে যোগদান করেছিলাম এই দিনে।
ঐ অঞ্চলের পথঘাট কিছুই চিনতাম না। রাতের বাসে রওনা দিয়ে ভোরে পৌঁছলাম কুড়িগ্রাম জেলা সদরে। নেমে শুনি শেরপুর দিয়ে আসলে সুবিধা হতো। চিলমারী গিয়ে ট্রলারে করে যেতে হবে কুড়িগ্রাম থেকে। সেভাবেই গিয়ে পৌঁছাতে পারলাম। আমরা ৫ জন যোগদান করলাম। আমাদের পেয়ে ২৪ বিসিএস এর দুই বড় ভাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো!
টিএইচএ নুরুল ইসলাম স্যার একসাথে এতো ডাক্তার পেয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
হাসপাতাল কম্পাউন্ডে কোয়ার্টারে উঠলাম এক রুমে দুজন করে। গ্রামীণ পরিবেশে ফ্রেশ খাবার। বিকেলে মাঠে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন করলাম নিজেরা। সন্ধ্যা রাতে কার্ড খেলা! সদ্য এমবিবিএস পাস করা আমি জীবনের প্রথম চেম্বারে গেলাম ঐ এলাকায় এক ঔষধের দোকানে। ৫০ টাকা ভিজিটে রুগী দেখে টাকা পেলাম, সরাসরি রোগী দেখে নিজের প্রথম উপার্জন!
টিএইচএ স্যার একদিন দাওয়াত দিয়ে বাসায় খাওয়ালেন আমাদের। বিশাল আনন্দে খেলাম আমরা।
কুড়িগ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোকে দেখে খুব ভালো লাগতো। আউটডোরে সবাই মিলেমিশে রোগী দেখতাম অনেক। প্রথম প্রথম রোগী দেখা সেটাও অনেক ভালো লাগতো, চেষ্টা করতাম মনোযোগ দিয়ে তাদের চিকিৎসা করতে।
সেই দিনগুলো স্মরণ করে এখনো অন্যরকম অনুভূতি হয়। সেই কলিগদের সাথে আজও যোগাযোগ হয়, কথা হয়। সেই ঔষধের দোকানের মালিক খোকনের সাথেও যোগাযোগ হয়। মালিকানা পরিবর্তন হয়ে আমিই নাকি ছিলাম তার দোকানের প্রথম চেম্বার করা ডাক্তার। তাই সে আমার কাছ থেকে পরবর্তীতে ছবি চেয়েছিলো চেম্বারে টানিয়ে রাখবে বলে!
বিদায়বেলায় নুরুল ইসলাম স্যারের কাছে দোয়া নিয়ে এসেছিলাম। পরবর্তীতে স্যারের মৃত্যু সংবাদ পাই হেড ক্লার্ক ইসমাইল এর কাছ থেকে, আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসীব করুন।
রাজিবপুরে কাটানো সেই দিনগুলোর কথা স্মৃতির মণিকোঠায় রয়ে যাবে।
ডা. শরীফ মোহাম্মদ ওয়াসিম উদ্দীন কলিন্স
সহকারী অধ্যাপক, ইউরোলজী বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।