15/03/2025
/Piles (পাইলস):
✍️পাইলস (Hemorrhoids) হল মলদ্বারের আশপাশে বা মলদ্বারের ভিতরে স্ফীত শিরা বা শিরাগুচ্ছ। এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মাঝেই দেখা যায়।
✅ পাইলস (Hemorrhoids)-কে সাধারণত ৪টি গ্রেডে ভাগ করা হয়, যা তাদের তীব্রতা বা অবস্থার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। প্রতিটি গ্রেডের বিস্তারিত:
১. গ্রেড -১ (Grade 1):
এটি হচ্ছে সবচেয়ে প্রাথমিক স্তর, যেখানে মলদ্বারের ভিতরে স্ফীত শিরাগুলো থাকে, কিন্তু এগুলো বাইরে আসে না। এখানে সাধারণত মলত্যাগের সময় সামান্য রক্তপাত হতে পারে, তবে তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি থাকে না।
২. গ্রেড -২ (Grade 2):
এই স্তরে মলদ্বারের শিরাগুলো মলত্যাগের সময় বেরিয়ে আসে, তবে পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। কিছু সময় মলত্যাগের পর সামান্য রক্তপাত হতে পারে, তবে ব্যথা বা অস্বস্তি কম থাকে।
৩. গ্রেড- ৩ (Grade 3):
এই স্তরে মলদ্বারের শিরাগুলো মলত্যাগের সময় বেরিয়ে আসে এবং সেগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারে না, বরং হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে এগুলোকে আবার ভিতরে প্রবেশ করাতে হয়। এই অবস্থায় বেশিরভাগ সময় ব্যথা এবং রক্তপাত হতে পারে।
৪. গ্রেড -৪ (Grade 4):
এটি সবচেয়ে গুরুতর স্তর, যেখানে মলদ্বারের শিরাগুলো স্থায়ীভাবে বাইরে চলে আসে এবং এগুলো হাত দিয়ে ঠেলেও ভিতরে প্রবেশ করানো সম্ভব হয় না। এই অবস্থায় তীব্র ব্যথা, রক্তপাত এবং অন্যান্য জটিলতা যেমন সংক্রমণ বা থ্রম্বোসিস (রক্ত জমাট বাঁধা) হতে পারে।
প্রতিটি গ্রেডের জন্য চিকিৎসা ভিন্ন হতে পারে, এবং প্রাথমিক পর্যায়ে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
📌 কারণসমূহ (Causes):
পাইলস বা হেমোরয়েডস হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ হল:
👉 দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা: দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার কারণে মলদ্বারের শিরাগুলিতে চাপ পড়ে এবং পাইলস হতে পারে।
👉আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া।
👉 মেদ বা স্থুলতা।
👉 কঠিন মল ত্যাগ করা: মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দিলে মলদ্বারের শিরাগুলো স্ফীত হয়ে পাইলস হতে পারে।
👉গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় মায়ের পেটে চাপ পড়ে, যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
👉অতিরিক্ত শারীরিক চাপ: ভারী কাজ বা ওজন তোলার কারণে মলদ্বারের শিরাগুলোতে চাপ পড়ে।
👉আলসার বা ডায়রিয়া: দীর্ঘ সময় ধরে আলসার বা ডায়রিয়ার সমস্যা থাকলে পাইলস হতে পারে।
👉জিনগত: অনেক সময় এটি পারিবারিকভাবে প্রদর্শিত হতে পারে।
📌 লক্ষণ (Symptoms):
পাইলসের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
👉 রক্তপাত: মলত্যাগের সময় মল বা টিস্যুর সাথে রক্ত পড়া।
👉ব্যথা বা অস্বস্তি: মলদ্বারের আশপাশে ব্যথা বা তীব্র অস্বস্তি অনুভব করা।
👉চুলকানি বা জ্বালা: মলদ্বারের আশপাশে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া অনুভূতি।
👉ফুলে যাওয়া বা স্ফীতি: মলদ্বারের চারপাশে বা ভিতরে ফুলে যাওয়া বা স্ফীত শিরাগুচ্ছ দেখা যেতে পারে।
👉মলদ্বারের বাইরে একটি গঠন অনুভূতি: কিছু ক্ষেত্রে মলদ্বারের বাইরে একটি টিউমারের মতো কিছু অনুভূত হতে পারে।
📌 জটিলতা (Complications):
পাইলসের কারণে কিছু জটিলতা হতে পারে:
👉মলদ্বারে রক্তপাত: রক্তপাত হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী হলে রক্তশূন্যতার কারণ হতে পারে।
👉থ্রম্বোসিস: পাইলসের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধলে থ্রম্বোসিস হতে পারে, যার ফলে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
👉মলদ্বারের সংকুচিত হওয়া: দীর্ঘস্থায়ী পাইলসের কারণে মলদ্বারের সংকুচিত হতে পারে, যা মলত্যাগে অসুবিধা সৃষ্টি করে।
👉সংক্রমণ: পাইলসের আঘাত বা সংক্রমণের কারণে ইনফেকশন হতে পারে।
📌পরীক্ষা (Investigation):
পাইলসের সঠিক নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা করা যেতে পারে:
👉শারীরিক পরীক্ষা: ডাক্তার মলদ্বারের ভিতর-বাহির পরিদর্শন করবেন।
👉অ্যানোস্কোপি: এটি একটি বিশেষ যন্ত্র যা মলদ্বারের ভিতরের শিরাগুলো পরীক্ষা করতে ব্যবহার করা হয়।
👉রেকটাল এক্সামিনেশন: মলদ্বারের অভ্যন্তরে কোন সমস্যা আছে কি না তা জানার জন্য এটি করা হয়।
👉কোলোনোস্কোপি: কখনো কখনো কোলোনোস্কোপি করতে হতে পারে যদি পাইলসের লক্ষণ অন্য কোন সমস্যা দ্বারা উদ্ভূত হয়।
📌 ব্যবস্থাপনা (Management):
পাইলসের চিকিৎসা নির্ভর করে এর তীব্রতার ওপর। এটি সাধারণত দুটি ধরনের হতে পারে:
রোগের প্রাথমিক স্তরে ব্যবস্থাপনা:
👉ডায়েট পরিবর্তন: বেশি বেশি আঁশজাত খাবার এবং পানি খাওয়া। এটি মল নরম রাখতে সাহায্য করে এবং মলত্যাগে সহায়ক হয়।
👉ক্রীম বা মলম: মলদ্বারের জ্বালা বা ব্যথা উপশমের জন্য ক্রীম বা মলম ব্যবহার করা।
👉গরম পানিতে স্নান: গরম পানিতে মলদ্বারের অংশ ডুবিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
👉ওষুধ: লক্ষনভিত্তিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।
(পাইলসের প্রথম শ্রেণির কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ - AESC, ALOE, COLL, GRAPH, HAM, LYC, NIT-AC, NUX-V, PAEON, SULPH, etc)
✅ সার্জিক্যাল চিকিৎসা:
যদি পাইলস খুব গুরুতর হয় এবং অন্যান্য চিকিৎসায় ফল না পাওয়া যায়, তবে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে:
👉হেমোরইডেকটমি: এটি একটি সার্জিক্যাল পদ্ধতি যার মাধ্যমে স্ফীত শিরাগুলো সরিয়ে ফেলা হয়।
👉লাইগেশন বা ব্যান্ডিং: এতে একটি rubber band ব্যবহার করে শিরাগুলোর রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করা হয়, যার ফলে শিরাগুলো মরে যায় এবং পরে পড়ে যায়।
সঠিক সময়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে পাইলসের সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
©
Dr. N.U. Arif
BHMS (1st Place) Dhaka University.
BHS (Upper)
Dr. Malati Allen Noble Award (India)
Chamber- Similia Homoeo Clinic (Dhaka)