তন্ত্র শিক্ষালয়

তন্ত্র শিক্ষালয় Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from তন্ত্র শিক্ষালয়, Medical and health, Dhaka.

তন্ত্র শিক্ষালয় একটি অনার্থিক প্রতিষ্ঠান ,তন্ত্র শিক্ষালয় শুধুমাত্র তান্ত্রিক শিক্ষা,চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত। কোন রাজনৈতিক ও ধর্মিয় মূল্যবোধ সম্পৃক্ত নয়। তন্ত্র শিক্ষালয় প্রাচীন উপমহাদেশীয় চিকিৎসায় বিশ্বাসী।

রাশিফলে মাঙ্গলিক দোষের প্রভাব? কোন উপায়ে প্রতিকার জেনে নিন ===========================================আজকের বিষয় মাঙ্গলি...
18/09/2025

রাশিফলে মাঙ্গলিক দোষের প্রভাব? কোন উপায়ে প্রতিকার জেনে নিন
===========================================
আজকের বিষয় মাঙ্গলিক :
বিয়ের সময় যারা কোষ্ঠী বিচারে বিশ্বাস করেন, তাঁদের কাছে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের কাছে ভৌম দোষ নামেও এটি পরিচিত। হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, পাত্র বা পাত্রীর মঙ্গলের দোষ থাকলে, তাঁর বিবাহিত জীবন সুখের হয় না। এমনকি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজনের ভৌম দোষ থাকলে, অন্যজনের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তবে ভৌম দোষ নিয়ে ভয় যেমন রয়েছে, তেমন তা কাটানোর নিদানও রয়েছে জ্যোতিষশাস্ত্রে। ভৌম দোষের কম বা বেশি হতে পারে। কার জন্মছকে মঙ্গলের উপস্থিতি কী ভাবে রয়েছে, তার উপর নির্ভর করে মঙ্গলের দোষের প্রভাব। জন্মছকের ১২টি ঘরের মধ্যে যে কোনও পাঁচটিতে মঙ্গলের উপস্থিতিই একজনকে মাঙ্গলিক বানাতে পারে। সাধারণত দেখা গিয়েছে, ৪২ শতাংশ মানুষই মাঙ্গলিক।

শুধু মঙ্গল নয়, জন্মছকে শনি এবং রবির অবস্থানের উপরও মাঙ্গলিকের দোষ নির্ভর করে। মঙ্গলের প্রভাবে দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী দু-জনেই নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্যের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না, কিন্তু কোনও ভাবে মিলমিশও হচ্ছে না। এই অবস্থায় বিবাহিত জীবনে ছাড়াছাড়ি পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। অন্যজন গুরুতর অসুখে ভুগতে পারেন, দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও স্বামী-স্ত্রী দু-জনেই মাঙ্গলিক হলে এই দোষ কেটে যায় বলে জ্যোতিষশাস্ত্রে বলা আছে। বিবাহিত জীবন ছাড়াও মঙ্গলের দোষের ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে পেশাগত জীবনেও।

মঙ্গলের প্রভাবে কী কী ক্ষতি হতে পারে -

* বিবাহিত জীবনে অশান্তি * মাঝেমধ্যে মাঙ্গলিক ব্যক্তি এমন আচরণ করতে পারেন, যার অর্থ তিনি নিজেই পরে খুঁজে পাবেন না। * প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা * কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই সমস্যা * প্রজননে অক্ষমতা * মহিলাদের ঋতু সমস্যা * ভাই-এর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি * দুর্ঘটনা * রক্ত জনিত অসুখ * সম্পত্তির ক্ষতি

তবে জ্যোতিষশাস্ত্রে মাঙ্গলিক দোষ কাটানোর নিদানও রয়েছে। আপনি যদি এই বিষয়ে বিশ্বাস করেন, তাহলে কোনও ভালো জ্যোতিষীর সঙ্গে পরামর্শ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারেন। এছাড়াও বিয়ের আগে মাঙ্গলিক পাত্র বা পাত্রীর যদি বিষ্ণুমুর্তি, গাছ বা অন্য কিছুর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ভৌম দোষ কেটে যায়। খোদ ঐশ্বর্য রাই বচ্চন মাঙ্গলিক হওয়ায় অভিষেকের সঙ্গে বিয়ের আগে তাঁকেও একটি গাছের সঙ্গে আগে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়।

জ্যোতিষ মতে ভৌম দোষ বা মাঙ্গলিক দশা বা মঙ্গলের প্রভাব বিবাহিত জীবন পুরো শেষ করে ফেলতে পারে। বিয়ের পাত্র বা পাত্রীর মধ্যে যে কোনও একজনের ভৌম দোষ থাকলে বিয়ের আগে তা প্রতিকারের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে একজন মাঙ্গলিক হলে আরেকজনের জীবন হানির পর্যন্ত আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া সম্পর্কে অবনতি থেকে ডিভোর্স হওয়াও বিচিত্র নয়।

মঙ্গলের প্রভাবের ফলে আর সমস্যা হতে পারে, তা হল-

* আগুপিছু না ভেবে এমন কাজ করা, যার জন্য পরে অনুশোচনা হবে।
* প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা
* নির্দিষ্ট কোনও কারণ ছাড়াই সমস্যা
* যৌন অক্ষমতা
* ভাইয়ের সঙ্গে গুরুতর মনোমালিন্য
* দুর্ঘটনা
* রক্তজনিত অসুখ
* সম্পত্তিহানি

কেউ মাঙ্গলিক কিনা, তা কোষ্ঠী বিচার করে জানা যাবে।
কোষ্ঠীর মাঙ্গলিক দশা কাটানোর ৯টি উপায় ।
----------------------------------------------------------
আপনি কি মাঙ্গলিক? তবে জেনে নিন দোষ কাটানোর কিছু উপায়।
মাঙ্গলিক দশা অর্থাৎ জন্মকুণ্ডলীতে মঙ্গল গ্রহের একটি বিশেষ অবস্থান থাকলে জীবনে নানা বাধা ও প্রতিকূলতা আসে। জেনে নিন এই দশা কাটানোর উপায়।
মঙ্গল দশা বা মাঙ্গলিক দশার কথা অল্প-বিস্তর জানেন সবাই। একে কুজ দশা, ভোম দশা বা অঙ্গরাখা দশাও বলা হয়। জন্মকুণ্ডলীর প্রথম, দ্বিতীয়, চতুর্থ, সপ্তম, অষ্টম ও দ্বাদশ স্থানের মধ্যে যে কোনও একটিতে যদি মঙ্গল অবস্থান করে তবে সেই জাতক বা জাতিকাকে মাঙ্গলিক বলা হয়। এই দশা থাকলে বিবাহিত জীবনে নানা সমস্যা দেখা দেয় এবং বিবাহবিচ্ছেদের সম্ভাবনা প্রবল হয়।

এছাড়া বলা হয় স্ত্রী যদি মাঙ্গলিক হন তবে স্বামীর পেশাগত জীবনে অবনতির সম্ভাবনা থাকে এবং ক্ষেত্রবিশেষে স্বামীর মৃত্যুও হতে পারে। তাছাড়া মঙ্গল দশার জন্য প্রবল অর্থক্ষয় হয় এবং জীবনে উন্নতির পথে বার বার বাধা আসতে থাকে।

এই দশা কাটানোর একাধিক উপায় রয়েছে—

১. যদি দু’জন মাঙ্গলিকের মধ্যে বিবাহ হয়, তবে দু’জনেরই এই দশা কেটে যায়।

২. কুম্ভবিবাহ নামের একটি রীতির মাধ্যমে বিয়ের আগে কাটানো হয় মঙ্গল দশা। এই রীতিতে মাঙ্গলিক জাতক বা জাতিকাকে হয় একটি কলাগাছ বা পিপুল গাছ অথবা ভগবান বিষ্ণুর একটি স্বর্ণ বা রৌপ্য মূর্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়।

৩. নিয়ম করে প্রতি মঙ্গলবার উপবাস রাখলে এবং শুধুমাত্র অড়হর ডাল সেবন করলে আস্তে আস্তে কেটে যায় এই দশা।

৪. প্রতি মঙ্গলবার নবগ্রহ মন্ত্র উচ্চারণ করলে এই দোষ কেটে যায়। আবার প্রতিদিন ১০৮ বার গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলে বা প্রতিদিন হনুমান চালিসা পাঠ করলেও কেটে যায় মঙ্গল দশা।

৫. নবগ্রহ মন্দিরে ভক্তিভরে পুজো দিলে কেটে যায় মঙ্গল দশা। কিন্তু নবগ্রহ মন্দিরের সংখ্যা একেবারেই হাতে-গোনা। মঙ্গলদেবের জন্য নির্দিষ্ট মন্দির রয়েছে তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জায়গায় এবং গুয়াহাটিতে। তাই পরিবর্তে প্রতি মঙ্গলবার শ্রীহনুমান মন্দিরে সিঁদুর ও মিষ্টি সহকারে পুজো দেওয়া ভাল। সঙ্গে জ্বালতে হবে একটি ঘিয়ের প্রদীপ।

৬. মঙ্গলবার দানধ্যান করলেও তুষ্ট হন মঙ্গলদেব। এছাড়া তলোয়ার, ছুরি, মুসুর ডাল, লাল সিল্ক, রক্তপ্রবাল ইত্যাদি লাল বস্তু নিবেদন করলেও সন্তুষ্ট হন তিনি।

৭. যাদের মঙ্গল দশা থাকে তাদের সাধারণত জ্যোতিষমতে রক্তপ্রবাল ধারণ করতে বলা হয়। তবে কোনও জ্যোতিষশাস্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনও কিছু ধারণ করা উচিত নয়।
৮) প্রত‍্যহ স্নান করে লাল বস্ত্র পরে মঙ্গল ও তার ইষ্টদেবী
মা বগলামুখীর ১০৮বার করে জপ করলে এই দোষ প্রসমিত হয়।
ক)মঙ্গলের বীজমন্ত্র :ঔঁ হূং শ্রীং মঙ্গলায় ।
খ)মা বগলামুখীর বীজমন্ত্র: ঔঁ হ্রীং ক্লীং ঔঁ বগলামু্খ‍্যৈ নমঃ ।

==একজন শিক্ষানবিস কীভাবে তন্ত্র সাধনা শুরু করতে পারেন?==➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖তন্ত্র কী?“তন্ত্র শব্দের অর্থই হলো কৌশল বা পদ...
09/09/2025

==একজন শিক্ষানবিস কীভাবে তন্ত্র সাধনা শুরু করতে পারেন?==
➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖
তন্ত্র কী?

“তন্ত্র শব্দের অর্থই হলো কৌশল বা পদ্ধতি” যার দ্বারা বিশেষ ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করা সম্ভব যা সাধারণ বোধ বুদ্ধি বিবেচনার ও অনুভবের উর্ধে।

অর্থাত্‍ তন্ত্র হল এমন এক প্রণালী যার সঠিক জ্ঞানের সাহায্যে আমরা নিজের শারিরীক ও মানসিক স্থিতির এমন কিছু ক্রিয়া সম্পাদন করতে পারি, যা সাধারনের তুলনায় যে কোন মানুষকে বহু গুণ ক্ষমতাশালি করে তুলতে সক্ষম।

আসলে তন্ত্র মানেই কখনো বিশাল ভয়ংকর মন্ত্র পাঠ বা পৈশাচিক ক্রিয়াকলপ নয়, তন্ত্র প্রধানত নিজের শরীর ও মনের উপর চরম নিয়ন্ত্রণ এবং অনুশাসন স্থাপন পদ্ধতি, যার উপর ভিত্তি করে সম্পুর্ন প্রক্রিয়া।

এই প্রক্রিয়া আমাদের কর্মের সাথে কোন না কোন প্রকারে গভীর ভাবে জড়িত। যেমন মেডিটেশন, যোগ অভ্যাস ও প্রাণায়াম মত শারিরীক ও মানসিক ক্রিয়া যা হইত দেখত খুবই সাধারণ তবে এর মূল স্তম্ভ হলই তন্ত্র। এছাড়া তন্ত্র কে যোগ শাস্ত্রের একটি ভাগ “তন্ত্র যোগ” বলা হয়।

এই কারণে ঋষিরা বলে গেছেন বীনা তন্ত্রে বা বীনা কৌশলে সমস্থ প্রকার অধ্যাতিক প্রক্রিয়া অসম্পুর্ন।

তন্ত্র শক্তির ব্যবহার:

তন্ত্র ক্ষমতা ব্যবহারের দ্বারা যোগী ও সিধ্য পুরুষেরা দেবতার মূর্তি মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে শক্তির আবদ্ধিকরণ, শক্তিশালী যন্ত্রম সৃষ্টি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষমতার সিদ্ধি লাভের জন্য ব্যবহার করে থাকেন।

খুব অবাক করা বিষয় হল কিছু বিশেষ প্রকৃতির তন্ত্র ব্যবহার করে মুনি ঋষিরা কয়েক হাজার বছর দীর্ঘ আয়ু লাভ করতে সক্ষম ছিলেন। কিছু তন্ত্র ক্রিয়ার সাহায্যে ঋষিরা শূন্যে ভাসমান অবস্থায বীনা জল আহার গ্রহণ করে বহু দিন থাকতে সক্ষম ।

আবার কিছু যোগীরা তন্ত্রের মন্ত্রর বলের দ্বারা আত্মজ্ঞানের চরম সীমায় পৌছেতে পেরেছেন। এছাড়াও তন্ত্র শক্তির ব্যবহার মাধ্যমে অতিপ্রাকৃতিক শক্তির আহ্বান, বিভিন্ন সিদ্ধিলাভ ইত্যাদী।

তন্ত্র সাধনা প্রণালী:

যে কোন তন্ত্র ক্রিয়ার জন্য নিজের শরীর ও মনকে উপর চরম নিয়ন্ত্রণ একান্ত প্রয়োজন।

কারণ তন্ত্র বিদ্যা নিজের প্রাণ শক্তির উপর নির্ভরকারি অভন্তরীন প্রক্রিয়া। এই ক্রিয়ার বেশির ভাগটাই মন্ত্রের আকার গঠিত এবং এর সাথে যুক্ত হয় প্রবল কল্পনা শক্তি, ও নির্দিষ্ট শক্তিকে অবধ্য করি বিশেষ যন্ত্রম স্স্থাপন ক্রিয়া। এই তিনটি জিনিসের একত্রে সম্পুর্ন হয় তন্ত্র সাধনা প্রণালী।

এছাড়াও তন্ত্র বিদ্যা নিজের প্রাণ শক্তির উপর নির্ভরকারি প্রক্রিয়া। এই কারনে যে কোন প্রকার তন্ত্র সাধনার করা হোক না কেন প্রতিটি তন্ত্র ক্ষেত্রেই প্রয়োজন প্রাণ বা প্র্রান শক্তির ধারণ-করি দ্রবাদী, যেমন – সরষে, তিল, তাজা ফুল, জীবন্ত পশু ইত্যাদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত।

তাই তন্ত্র কোন সাধারণ ক্রিয়া নয় তাই তন্ত্র শিক্ষা নিতে তন্ত্র সিদ্ধ গুরুর প্রয়োজন, বীনা জ্ঞানে তন্ত্র সাধনার অর্থ হল মৃত্যু

তন্ত্র সাধনা কত প্রকার ও কী কী?

তন্ত্র ক্রিয়া কে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, প্রথম হল আভ্যন্তরীণ যেখানে সমস্থ ক্রিয়া শরীরের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং দ্বিতীয় হল বাহ্যিক প্রক্রিয়া যেখানে নানা আচার অনুষ্ঠান ক্রিয়া সম্পন্ন করা দরকার।

এই দুই ভাগের ভিত্তি করে ভারতে কয়েক হাজার প্রকৃতির তন্ত্র সাধনা প্রণালী জন্ম যা ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এছাড়াও বহু প্রকৃতির তন্ত্র সাধন প্রণালী সম্পুর্ন গোপন ও গুরু শিষ্য পরম্পরায় লাভ হয়ে থাকে, যার লিখিত কোন পুথিপত্র নেই।

সব কিছুর মধ্যেও পরিচিত কিছু তন্ত্র প্রণালীর নাম হল কালভৈরব তন্ত্র, কুমারী তন্ত, কুণ্ডলিনী তন্ত্র, বিশুধি তন্ত্র, শৈব তন্ত্র, শাক্ত তন্ত্র, সূর্য তন্ত্র, কামধেনু তন্ত্র, নির্বান তন্ত্র, কামখা তন্ত্র, তারা তন্ত্র, কুল তন্ত্র, অভয় তন্ত্র, যোগিনী তন্ত্র ইত্যাদি।

এছাড়া আমাদের অথর্ববেদ,পুষ্করা সংহিতা, পদ্ম সংহিতা, ভৈরব সংহিতা, গুপ্ত তন্ত্র লিপি, নারদীয় সংহিতা বহু গ্রন্থ থেকে বহু তন্ত্র রীতি উল্লেখ পাওয়া যায়।

অবাক করা বিষয় হল আমরা নিজের অজান্তে প্রতিদিন বহু কাজ করে থাকি যা সম্পুর্ন রূপে তন্ত্র এর উদাহরণ হল: ঈশ্বর ভক্তি, মানুষের প্রতি গভীর বিশ্বাস ও প্রেম, ভালবাসা ইত্যাদী।

তন্ত্র সাধনা সম্পর্কিত সতর্কতা:

তন্ত্রের নামে মানুষের ভয় কে কাজে লাগিয়ে ও আশহায়তা সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ প্রতি দিন মানুষ কে বিভিন্ন আসা দেখিয়ে নানা ভাবে ঠকিয়ে চলেছেন শুধু মাত্র অর্থের লোভে তাই সতর্ক থাকুন এবং তন্ত্রের নামে ভন্ডামি করা মানুষ জনের কাছ থেকে দূরে থাকুন।

কেন ১০৮ বার মন্ত্র জপ করতে হয়? জেনে নিন ১০৮ সংখ্যার মাহাত্ম্য==========================================১০৮ মালা জপের মধ্...
31/07/2025

কেন ১০৮ বার মন্ত্র জপ করতে হয়? জেনে নিন ১০৮ সংখ্যার মাহাত্ম্য
==========================================
১০৮ মালা জপের মধ্য দিয়ে যে কোনও মানুষই ঈশ্বরের সংস্পর্শে আসতে পারেন বা ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারেন। তাই প্রতিটি মানুষেরই উচিত নিয়ম করে ১০৮ মালা জপ করা সে যে কোনও ধর্মাবলম্বী হোন না কেন।

প্রাচীন ভারতে ১০৮ সংখ্যার বিশেষ মাহাত্ম্য সম্পর্কে সে কালের মানুষেরা অবহিত ছিলেন।

সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ও চন্দ্রের পরিক্রমা ও গতি ও পারস্পরিক দূরত্বের সঙ্গে ১০৮ সংখ্যার যোগ রয়েছে।

মন্ত্রপাঠ বা মন্ত্রোচ্চারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। মনে করা হয় আমাদের দেশে ৩০০০ বছরেরও আগে বৈদেক সংস্কৃত ভাষায় প্রথম মন্ত্রের সৃষ্টি হয়। নিয়মিত মন্ত্রোচ্চারণ করলে তার প্রভাবে আমাদের শরীর, মন ও আত্মার পরিবর্তন হওয়া সম্ভব। কিন্তু মন্ত্রোচ্চারণের সময় সর্বদা ১০৮ বার মন্ত্র পাঠ করা উচিত। তবেই সেই মন্ত্রপাঠের যথোপযুক্ত ফল পাওয়া যায়।

এখন প্রশ্ন হল কেন ১০৮ বার মন্ত্র পাঠ করার পরামর্শ দেওয়া হয়? এই ১০৮ সংখ্যাটির মাহাত্ম্য জেনে নিন।

হিন্দুদের জপের মালায় সব সময় ১০৮টি পুঁতি থাকে। গুরুমন্ত্র জপ করা হয় যে মালায়, তার মধ্যেও ১০৮টি পুঁতি থাকে। আমাদের প্রাচীন ভারতে ১০৮ সংখ্যার বিশেষ মাহাত্ম্য সম্পর্কে সে কালের মানুষেরা অবহিত ছিলেন। সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ও চন্দ্রের পরিক্রমা ও গতি ও পারস্পরিক দূরত্বের সঙ্গে ১০৮ সংখ্যার যোগ রয়েছে। কোনও মন্ত্র ১০৮ বার উচ্চারণ করলে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে যে তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছে, তার সঙ্গে সাযুজ্য রক্ষা হয়।

বৈদিক সমাজেপ প্রখ্যাত সব গণিতবিদরা দেখিয়েছেন কী ভাবে কোনও কিছুর উপস্থিতিকে সম্পূর্ণ করে ১০৮ সংখ্যা। সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবী সঙ্গেও ১০৮ সংখ্যার যোগ আছে। সূর্য এবং চাঁদের থেকে পৃথিবীর পার্থক্য় হল এদের পরিধির থেকে ১০৮ গুণ বেশি। আমাদের হদয় চক্রকে ঘিরে থাকে ১০৮টি এনার্জি লাইন। তার মধ্যে একটি সুষুম্না ক্রাউন চক্রের সৃষ্টি করে। যখন কোনও কিছু বারবার রিপিট করা হয়, তখন তার থেকে একটা এনার্জি তৈরি হয়। এই এনার্জি আমাদের আত্মপোলব্ধিতে সাহায্য করে। ১০৮ বার মন্ত্র উচ্চারণ করলে তা আমাদের ক্রাউন চক্র উন্মুক্ত করতে সাহায্য করে। ক্রাউন চক্র উন্মুক্ত হলে আমাদের আত্মপোলব্ধি বিকশিত হতে পারে।

জ্যোতির্বিদ্যাগত ভাবে, আমাদের ছায়াপথের মধ্যে ২৭টি নক্ষত্রপুঞ্জ রয়েছে এবং প্রত্যেকের মধ্যে ৪টি করে দিক রয়েছে অর্থাৎ ২৭x৪= ১০৮, এককথায় বলতে গেলে ১০৮ নম্বরটি সম্পূর্ণ ছায়াপথকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে।

ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, ৯ সংখ্যাটি ভগবান ব্রহ্মা (মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা)র বলে মনে করা হয়। হিন্দু ধর্মে, সংখ্যা ৯ এর খুবই গুরুত্ব। তাই ৯ নম্বরের গুরুত্ব বিবেচনা করে ঋষি ব্যাস ৯টি পুরাণ, ১০৮টি মহাপুরাণ (উপনিষদ) তৈরি করেছিলেন। মহাভারতে ১৮টি অধ্যায় রয়েছে। গীতাতেও ১৮টি অধ্যায় রয়েছে, ভাগবতে রয়েছে ১ লক্ষ ৮ হাজার শ্লোক। ভারতীয় বেদে, সূর্যকে ঈশ্বর হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং সূর্যের ১২ টি চিহ্ন (রাশিচক্র চিহ্ন) রয়েছে। যজুর্বেদে, সূর্য ব্রহ্মার সঙ্গে সম্পর্কিত। সূর্যের ১২ সংখ্যা এবং ব্রহ্মার ৯ সংখ্যা গুনিত করলে ১০৮ হয়। অতএব, ভগবানের উপাসনার জন্য ১০৮ সংখ্যাটি খুবই গুরুতবপূর্ণ ও পবিত্র।

ব্রহ্মের মায়াশক্তি "মা কালী"------------------------------------------------------‘ওঁ খড়্গং চক্রগদেষুচাপপরিঘান শূলং ভু...
14/07/2025

ব্রহ্মের মায়াশক্তি "মা কালী"
---------------------------
---------------------------

‘ওঁ খড়্গং চক্রগদেষুচাপপরিঘান শূলং ভুসূণ্ডিং শিরঃ।
শঙ্খং সন্দধতীং করৈস্ত্রিনয়নাং সর্বাঙ্গভূষাবৃতাম্।।
নীলাশ্মদ্যুতিমাস্যপাদদশকাং সেবে মহাকালিকাম্।
যামস্তৌচ্ছয়িতে হরৌ কমলজো হন্তুং মধুং কৈটভম্।।’
-মার্কণ্ডেয় চণ্ডীর প্রথম চরিত্র শ্রী শ্রী মহাকালীর ধ্যানমন্ত্রে পাওয়া যায়।

কালী সনাতন ধর্মে আরাধ্যা দেবী। যাঁর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। প্রধানত শাক্ত ধর্মাবলম্বীরা কালীর পূজা করেন।
তন্ত্রশাস্ত্রের মতে, তিনি দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত তন্ত্রমতে পূজিত প্রধান দশ জন দেবীর মধ্যে প্রথম দেবী। শাক্তরা কালীকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ মনে করে। বাঙালি সনাতনী হিন্দু সমাজে দেবী কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়।
পুরাণ ও তন্ত্র গ্রন্থগুলিতে কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে সাধারণভাবে তাঁর মূর্তিতে চারটি হাতে খড়্গ, অসুরের ছিন্নমুণ্ড, বর ও অভয়মুদ্রা; গলায় মানুষের মুণ্ড দিয়ে গাঁথা মালা; বিরাট জিভ, কালো গায়ের রং, এলোকেশ দেখা যায় এবং তাঁকে তাঁর স্বামী শিবের বুকের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ব্রহ্মযামল মতে, কালী বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। কালীর বিভিন্ন রূপভেদ আছে। যেমন – দক্ষিণাকালী, শ্মশানকালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, চামুণ্ডা ইত্যাদি। আবার বিভিন্ন মন্দিরে “ব্রহ্মময়ী”, “ভবতারিণী”, “আনন্দময়ী”, “করুণাময়ী” ইত্যাদি নামে কালীপ্রতিমা প্রতিষ্ঠা ও পূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জাঁকজমক সহকারে পালিত হয়। এছাড়া মাঘ মাসে রটন্তী কালীপূজা ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালীপূজাও বিশেষ জনপ্রিয়। অনেক জায়গায় প্রতি অমাবস্যা এবং প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবারে কালীপূজা হয়ে থাকে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় অনেক কালীমন্দির আছে। তাই ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে কালীকে “কলকাত্তাওয়ালি” (কলকাতানিবাসী) বলা হয়। কলকাতার সবচেয়ে বিখ্যাত কালীমন্দিরটি হল কালীঘাট মন্দির। এটি একটি সতীপীঠ। এছাড়া দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি, আদ্যাপীঠ, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি ইত্যাদি কলকাতা অঞ্চলের বিখ্যাত কয়েকটি কালী মন্দির। এছাড়া লালনার সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ময়দা কালীবাড়ি, উত্তর চব্বিশ পরগনার হালিশহরের রামপ্রসাদী কালী মন্দির ইত্যাদি পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত কয়েকটি কালীমন্দির। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের অধুনা ধ্বংসপ্রাপ্ত রমনা কালীমন্দির ছিল খুবই প্রাচীন একটি কালীমন্দির। ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির নতুন দিল্লি কালীবাড়ি একটি ঐতিহ্যপূর্ণ কালীমন্দির।

‘কালী’ শব্দটি ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ, যার অর্থ “কৃষ্ণ, ঘোর বর্ণ” (পাণিনি ৪।১।৪২)। মহাভারত অনুসারে, এটি দুর্গার একটি রূপ (মহাভারত, ৪।১৯৫)। আবার হরিবংশ গ্রন্থে কালী একটি দানবীর নাম (হরিবংশ, ১১৫৫২)।
‘কাল’, যার অর্থ ‘নির্ধারিত সময়’, তা প্রসঙ্গক্রমে ‘মৃত্যু’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এর সমোচ্চারিত শব্দ ‘কালো’র সঙ্গে এর কোনও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। কিন্তু লৌকিক ব্যুৎপত্তির দৌলতে এরা পরস্পর সংযুক্ত হয়ে গেছে। মহাভারত-এ এক দেবীর উল্লেখ আছে যিনি হত যোদ্ধা ও পশুদের আত্মাকে বহন করেন। তাঁর নাম কালরাত্রি বা কালী। সংস্কৃত সাহিত্যের বিশিষ্ট গবেষক টমাস কবার্নের মতে, এই শব্দটি নাম হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে আবার ‘কৃষ্ণবর্ণা’ বোঝাতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।

রূপভেদ
তন্ত্র ও পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপভেদের কথা পাওয়া যায়। তোড়ল তন্ত্র মতে কালী অষ্টধা বা অষ্টবিধ। যথা – দক্ষিণাকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, ভদ্রকালী, চামুণ্ডাকালী, শ্মশানকালী ও শ্রীকালী। মহাকাল সংহিতা অনুসারে আবার কালী নববিধা। এই তালিকা থেকেই পাওয়া যায় কালকালী, কামকলাকালী, ধনদাকালী ও চণ্ডিকাকালীর নাম।

দক্ষিণাকালী

দক্ষিণাকালীর কালীর সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ মূর্তি। ইনি প্রচলিত ভাষায় শ্যামাকালী নামে আখ্যাতা। দক্ষিণাকালী করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভূজা এবং মুণ্ডমালাবিভূষিতা। তাঁর বামকরযুগলে সদ্যছিন্ন নরমুণ্ড ও খড়্গ; দক্ষিণকরযুলে বর ও অভয় মুদ্রা। তাঁর গাত্রবর্ণ মহামেঘের ন্যায়; তিনি দিগম্বরী। তাঁর গলায় মুণ্ডমালার হার; কর্ণে দুই ভয়ানক শবরূপী কর্ণাবতংস; কটিদেশে নরহস্তের কটিবাস। তাঁর দন্ত ভয়ানক; তাঁর স্তনযুগল উন্নত; তিনি ত্রিনয়নী এবং মহাদেব শিবের বুকে দণ্ডায়মান। তাঁর দক্ষিণপদ শিবের বক্ষে স্থাপিত। তিনি মহাভীমা, হাস্যযুক্তা ও মুহুর্মুহু রক্তপানকারিনী।

তাত্ত্বিকের তাঁর নামের যে ব্যাখ্যা দেন তা নিম্নরূপ: দক্ষিণদিকের অধিপতি যম যে কালীর ভয়ে পলায়ন করেন, তাঁর নাম দক্ষিণাকালী। তাঁর পূজা করলে ত্রিবর্ণা তো বটেই সর্বোপরি সর্বশ্রেষ্ঠ ফলও দক্ষিণাস্বরূপ পাওয়া যায়।

সিদ্ধকালী

সিদ্ধকালী কালীর একটি অখ্যাত রূপ। গৃহস্থের বাড়িতে সিদ্ধকালীর পূজা হয় না; তিনি মূলত সিদ্ধ সাধকদের ধ্যান আরাধ্যা। কালীতন্ত্র-এ তাঁকে দ্বিভূজা রূপে কল্পনা করা হয়েছে। অন্যত্র তিনি ব্রহ্মরূপা ভুবনেশ্বরী। তাঁর মূর্তিটি নিম্নরূপ: দক্ষিণহস্তে ধৃত খড়্গের আঘাতে চন্দ্রমণ্ডল থেকে নিঃসৃত অমৃত রসে প্লাবিত হয়ে বামহস্তে ধৃত একটি কপালপাত্রে সেই অমৃত ধারণ করে পরমানন্দে পানরতা। তিনি সালংকারা। তাঁর বামপদ শিবের বুকে ও বামপদ শিবের উরুদ্বয়ের মধ্যস্থলে সংস্থাপিত।

গুহ্যকালী

গুহ্যকালী বা আকালীর রূপ গৃহস্থের কাছে অপ্রকাশ্য। তিনি সাধকদের আরাধ্য। তাঁর রূপকল্প ভয়ংকর: গুহ্যকালীর গাত্রবর্ণ গাঢ় মেঘের ন্যায়; তিনি লোলজিহ্বা ও দ্বিভূজা; গলায় পঞ্চাশটি নরমুণ্ডের মালা; কটিতে ক্ষুদ্র কৃষ্ণবস্ত্র; স্কন্ধে নাগযজ্ঞোপবীত; মস্তকে জটা ও অর্ধচন্দ্র; কর্ণে শবদেহরূপী অলংকার; হাস্যযুক্তা, চতুর্দিকে নাগফণা দ্বারা বেষ্টিতা ও নাগাসনে উপবিষ্টা; বামকঙ্কণে তক্ষক সর্পরাজ ও দক্ষিণকঙ্কণে অনন্ত নাগরাজ; বামে বৎসরূপী শিব; তিনি নবরত্নভূষিতা; নারদাদিঋষিগণ শিবমোহিনী গুহ্যকালীর সেবা করেন; তিনি অট্টহাস্যকারিণী, মহাভীমা ও সাধকের অভিষ্ট ফলপ্রদায়িনী। গুহ্যকালী নিয়মিত শবমাংস ভক্ষণে অভ্যস্তা।

মুর্শিদাবাদ-বীরভূম সীমান্তবর্তী আকালীপুর গ্রামে মহারাজা নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত গুহ্যকালীর মন্দিরের কথা জানা যায়। মহাকাল সংহিতা মতে, নববিধা কালীর মধ্যে গুহ্যকালীই সর্বপ্রধানা। তাঁর মন্ত্র বহু – প্রায় আঠারো প্রকারের

মহাকালী

তন্ত্রসার গ্রন্থমতে, মহাকালী পঞ্চবক্ত্রা ও পঞ্চদশনয়না। তবে শ্রীশ্রীচণ্ডী-তে তাঁকে আদ্যাশক্তি, দশবক্ত্রা, দশভূজা, দশপাদা ও ত্রিংশল্লোচনা রূপে কল্পনা করা হয়েছে। তাঁর দশ হাতে রয়েছে যথাক্রমে খড়্গ,চক্র,গদা,ধনুক,বাণ,পরিঘ,শূল,ভূসুণ্ডি,নরমুণ্ড ও শঙ্খ। ইনিও ভৈরবী; তবে গুহ্যকালীর সঙ্গে এঁর পার্থক্য রয়েছে। ইনি সাধনপর্বে ভক্তকে উৎকট ভীতি প্রদর্শন করলেও অন্তে তাঁকে রূপ, সৌভাগ্য, কান্তি ও শ্রী প্রদান করেন।
ভদ্রকালী

ভদ্রকালী নামের ভদ্র শব্দের অর্থ কল্যাণ এবং কাল শব্দের অর্থ শেষ সময়। যিনি মরণকালে জীবের মঙ্গলবিধান করেন, তিনিই ভদ্রকালী। ভদ্রকালী নামটি অবশ্য শাস্ত্রে দুর্গা ও সরস্বতী দেবীর অপর নাম রূপেও ব্যবহৃত হয়েছে। কালিকাপুরাণ মতে, ভদ্রকালীর গাত্রবর্ণ অতসীপুষ্পের ন্যায়, মাথায় জটাজুট, ললাটে অর্ধচন্দ্র ও গলদেশে কণ্ঠহার। তন্ত্রমতে অবশ্য তিনি মসীর ন্যায় কৃষ্ণবর্ণা, কোটরাক্ষী, সর্বদা ক্ষুধিতা, মুক্তকেশী; তিনি জগৎকে গ্রাস করছেন; তাঁর হাতে জ্বলন্ত অগ্নিশিখা ও পাশযুগ্ম।

গ্রামবাংলায় অনেক স্থলে ভদ্রকালীর বিগ্রহ নিষ্ঠাসহকারে পূজিত হয়। এই দেবীরও একাধিক মন্ত্র রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ চতুর্দশাক্ষর মন্ত্রটি হল – ‘হৌঁ কালি মহাকালী কিলি কিলি ফট স্বাহা’।

চামুণ্ডাকালী

চামুণ্ডাকালী বা চামুণ্ডা ভক্ত ও সাধকদের কাছে কালীর একটি প্রসিদ্ধ রূপ। দেবীভাগবত পুরাণ ও মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর বর্ণনা অনুযায়ী, চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামক দুই অসুর বধের নিমিত্ত দেবী দুর্গার ভ্রুকুটিকুটিল ললাট থেকে উৎপন্ন হন। তাঁর গাত্রবর্ণ নীল পদ্মের ন্যায়, হস্তে অস্ত্র, দণ্ড ও চন্দ্রহাস; পরিধানে ব্যাঘ্রচর্ম; অস্তিচর্মসার শরীর ও বিকট দাঁত। দুর্গাপূজায় মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে আয়োজিত সন্ধিপূজার সময় দেবী চামুণ্ডার পূজা হয়। পূজক অশুভ শত্রুবিনাশের জন্য শক্তি প্রার্থনা করে তাঁর পূজা করেন। অগ্নিপুরাণ-এ আট প্রকার চামুণ্ডার কথা বলা হয়েছে। তাঁর মন্ত্রও অনেক।

শ্মশানকালী

কালীর “শ্মশানকালী” রূপটির পূজা সাধারণত শ্মশানঘাটে হয়ে থাকে। এই দেবীকে শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনে করা হয়। তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ রচিত বৃহৎ তন্ত্রসার অনুসারে এই দেবীর ধ্যানসম্মত মূর্তিটি নিম্নরূপ:

শ্মশানকালী দেবীর গায়ের রং কাজলের মতো কালো। তিনি সর্বদা বাস করেন। তাঁর চোখদুটি রক্তপিঙ্গল বর্ণের। চুলগুলি আলুলায়িত, দেহটি শুকনো ও ভয়ংকর, বাঁ-হাতে মদ ও মাংসে ভরা পানপাত্র, ডান হাতে সদ্য কাটা মানুষের মাথা। দেবী হাস্যমুখে আমমাংস খাচ্ছেন। তাঁর গায়ে নানারকম অলংকার থাকলেও, তিনি উলঙ্গ এবং মদ্যপান করে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন।

শ্মশানকালীর আরেকটি রূপে তাঁর বাঁ-পাটি শিবের বুকে স্থাপিত এবং ডান হাতে ধরা খড়্গ। এই রূপটিও ভয়ংকর রূপ। তন্ত্রসাধকেরা মনে করেন, শ্মশানে শ্মশানকালীর পূজা করলে শীঘ্র সিদ্ধ হওয়া যায়। রামকৃষ্ণ পরমহংসের স্ত্রী সারদা দেবী দক্ষিণেশ্বরে শ্মশানকালীর পূজা করেছিলেন।

কাপালিকরা শবসাধনার সময় কালীর শ্মশানকালী রূপটির ধ্যান করতেন। সেকালের ডাকাতেরা ডাকাতি করতে যাবার আগে শ্মশানঘাটে নরবলি দিয়ে শ্মশানকালীর পূজা করতেন। পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রাচীন শ্মশানঘাটে এখনও শ্মশানকালীর পূজা হয়। তবে গৃহস্থবাড়িতে বা পাড়ায় সর্বজনীনভাবে শ্মশানকালীর পূজা হয় না। রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছিলেন, শ্মশানকালীর ছবিও গৃহস্থের বাড়িতে রাখা উচিত নয়।

শ্রীকালী গুণ ও কর্ম অনুসারে শ্রীকালী কালীর আরেক রূপ। অনেকের মতে এই রূপে তিনি দারুক নামক অসুর নাশ করেন। ইনি মহাদেবের শরীরে প্রবেশ করে তাঁর কণ্ঠের বিষে কৃষ্ণবর্ণা হয়েছেন। শিবের ন্যায় ইনিও ত্রিশূলধারিনী ও সর্পযুক্তা।

কালীপূজা
গৃহে বা মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীপ্রতিমার নিত্যপূজা হয়। এছাড়াও বিশেষ বিশেষ তিথিতেও কালীপূজার বিধান আছে। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপূজা, মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে রটন্তী কালীপূজা এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে ফলহারিনী কালীপূজা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও শনি ও মঙ্গলবারে, অন্যান্য অমাবস্যায় বা বিশেষ কোনো কামনাপূরণের উদ্দেশ্যেও কালীর পূজা করা হয়। দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই উৎসব সাড়ম্বরে আলোকসজ্জা সহকারে পালিত হয়। তবে এই পূজা প্রাচীন নয়। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যাবিধি গ্রন্থে এই পূজার সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতকে তাঁর সকল প্রজাকে শাস্তির ভীতিপ্রদর্শন করে কালীপূজা করতে বাধ্য করেন। সেই থেকে নদিয়ায় কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্রও বহু অর্থব্যয় করে কালীপূজার আয়োজন করতেন।

কালীমাতা তত্ত্ব

কালী কে?
যে কাল সর্বজীবের গ্রাসকারী, সেই কালেরও যিনি গ্রাসকারিণী তিনিই কালী। কালেরও নিয়ন্ত্রী শক্তি আছে। একথা সত্য যে, কালশক্তি-প্রভাবেই জগতের উৎপত্তি ও স্থিতি; মহাপ্রলয়ের সেই মহাকালই পুনশ্চ সমগ্র সৃষ্টিকে গ্রাসকারী। কিন্তু মহাকাল সেও পরিণামের অধীন। মহাপ্রলয়ে কালশক্তি মহাকালীর ভিতরেই নিঃশেষ লীন হয়ে যায়।
আদ্যাশক্তি
কালী আদ্যাশক্তিরূপিণী। কারণ তিনিই নিখিল বিশ্বের আদি শক্তি, শক্তির বীজ। ঋগ্বেদে ১০:১২৯:৩ মন্ত্রে বলা আছে- তৎকালে পৃথিবীও ছিল না, আকাশও ছিল না; তা হতে উন্নত স্থলও ছিল না। তবে কিছুই কি ছিল না?… এক সুগভীর আতিহীন, অন্তহীন অন্ধকার ছিলো।
এই অনাদি অন্ধকারকে তন্ত্রশাস্ত্র নাম দিয়েছে আদ্যাশক্তি কালীরূপে।
সংহারমূর্তি কী?
বলা হয় মা কালীল মূর্তি সংহারকারীণি মূর্তি। সংহারের প্রকৃত অর্থ- সংহরণ, নিজের ভেতর প্রত্যাকর্ষণ। যেমন সমুদ্র থেকে উৎপন্ন ঢেউ সমুদ্রেই লীন হয়, যেমন মাকড়সা স্বীয় জাল ইচ্ছানুসারে নিজের ভেতরেই গুটিয়ে নিতে পারে তেমনি। জেলে যেভাবে জাল বিস্তার করে পুনরায় নিজের দিকে টেনে নেয় তেমনি। (শ্যামা কি তুই জেলের মেয়ে- নজরুল)। অর্থাৎ এই সংহার মানে পুনসৃষ্টি কেবলই ধ্বংস নয়। এই সংহার অর্থ নির্ভয় আশ্রয় মাতৃকোলে ও মাতৃবক্ষে সন্তানের প্রত্যাবর্তন। নিখিল সৃষ্টি বিশ্বপ্রসবিণী মায়ের উদর হতেই আর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমরা সেখানেই ফিরে যাই।
শিবের বুকে কেন কালী?
শিবের বুকে কালী কেননা শিব রূপে মা কালী নির্গুণ ঈশ্বর আর সগুণ রূপে তিনি সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের নিয়ন্ত্রী। মা কখনো নিস্ক্রিয়া- যখন কোনো সৃষ্টিই ছিল না তখন নিস্ক্রিয়া। কখনো সক্রিয়া- যখন সৃষ্টির প্রবল ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছে তখন সগুণ সক্রিয়া। নির্গুণ ঈশ্বরের বুকে যখন শক্তির প্রকাশ ঘটে তখনই তা সৃষ্টি সক্ষম হয়ে ওঠে। তাই নির্গুণ শিবের বুকে শক্তিরূপিণী মা। তিনিই শিব, তিনিই কালী।

মা কেন দিগম্বরী?
মা দিগাম্বরী, বসনহীন। কেননা ঈশ্বর সর্বব্যাপী, সর্ববৃহৎ তাকে আচ্ছাদিত করার মতো আর বৃহৎ কিছু নেই। তাই মা বসনহীন। এই আচ্ছাদন অবিদ্যা ও অহং এর প্রতীক। সকল অবিদ্যা, মোহ ও অহমিকার আচ্ছাদন পরিত্যাগ করলে তবেই ঈশ্বরের দেখা মেলে।

মায়ের গলায় কেন মুণ্ডমালা?
মায়ের গলায় মুণ্ডমালা। কারণ মা বাগীশ্বরী, শব্দব্রহ্মময়ী। তার কণ্ঠে পঞ্চাশ মুণ্ড, পঞ্চাশটি বর্ণের প্রতীক। জগতের সকল জ্ঞান ও তত্ত্বের প্রকাশ হয় এই বর্ণ তথা ধ্বনির মাধ্যমে। মা সকল জ্ঞানশক্তির আধার তাই তার গলায় মুণ্ডমালা। মস্তিষ্ক হচ্ছে জ্ঞানের আধার। মায়ের হাতে ঝুলন্ত মস্তিষ্ক আমাদের জ্ঞানশক্তিতে বলিয়ান হতে শিক্ষা দেয়। জ্ঞান দ্বারাই আমরা অজ্ঞানকে ছেদন করতে পারি।

মায়ের কটিদেশে কেন কাটা হাত?
মায়ের কটিদেশে কাটা হাত। হাত হচ্ছে কর্মের প্রতীক। জীবের জন্ম-জন্মান্তর প্রক্রিয়া এই কর্মের দ্বারাই নির্ধারিত। সকাম কর্ম বন্ধনের কারণ তাই কর্তিত হাত মায়ের যোনিদেশের কাছাকাছি। অর্থাৎ সকাম কর্মকে পরিত্যাগ না করতে পারলে জন্মান্তর অবশ্যম্ভাবী। একারণেই মা ছিন্ন হস্ত কটিদেশে ধারণ করে আছেন।

কেন মা চতুর্ভুজা?
শ্রীশ্রী কালী চতুর্ভুজা। সকাম ও নিষ্কাম, সাধক সাধারণত এই দুই প্রকার। সকাম সাধন সংসারে সাফল্য চান আর নিষ্কাম সাধক চান মুক্তি। মায়ের দক্ষিণ হাতে সকাম সাধককে অভয় ও বর দিচ্ছেন আর বাম হাতে খড়গ দ্বারা নিষ্কাম সাধককে মোহপাশ ছিন্ন করতে বলছেন। কালো কেশ আকর্ষণ করে মা তমোগুণকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলছেন। যেহেতু রক্ত রাজসিক গুণের প্রতীক তাই মা মস্তিষ্ক থেকে অসারিত রুধির ধারা শোষিত করে সত্ত্বগুণে উন্নীত হতে শিক্ষা দিচ্ছেন।

গীতায় বর্ণিত সাতশত শ্লোকের যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান তাই লুকায়িত আছেন মা কালীর প্রতিমায়। গীতায় অর্জুনকে উপদেশ ছলে নিষ্কাম কর্ম শিখিয়েছেন ভগবান আর চণ্ডীতে বর্ণিত মাতৃরূপের এই প্রতিমা আমাদেরকে প্রতীক ও ব্যঞ্জনায় গীতার সমগ্র দর্শনকেই ধারণ করছে। কালী কৃষ্ণে নেই কোনো প্রভেদ-
ইত্থং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতি।
তদা তদাবতীর্যাহং করিষ্যাম্যরি সংক্ষয়ম। (চণ্ডী, ১১ : ৫৫)
অনুবাদ: এইরূপে যখনই যখনই জগতে দানবের অত্যাচার হবে, তখনই তখনই আমি পুনঃপুনঃ আবির্ভূতা হয়ে জগতের সেই শত্রুগণকে ধ্বংস করবো।
অন্যদিকে গীতার সেই অভয়বাণী-
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্ ॥ (গীতা, ৪:৭)
অনুবাদ: হে ভারত! যখনই ধর্মের হানি ও অধর্মের বৃদ্ধি হয়, তখনই আমি নিজেকে সৃষ্টি করি।
সকল দেবতা যেমন শ্রীকৃষ্ণের শরীরে অবস্থিত- এমন বিশ্বরূপ দেখেছিলেন অর্জুন, তেমনি চণ্ডীতে মা দুর্গাও সেইরূপই প্রকট হয়েছেন।
একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মমাপরা।
পশ্যৈতাদুষ্ট ময়্যেব বিশন্ত্যো মদ্বিভূতয়ঃ॥ (চণ্ডী, ১০:৫)
অনুবাদ: এই জগতে আমি একা আছি, আমি ভিন্ন দ্বিতীয় আর কে আছে? … ব্রহ্মণী প্রভৃতি শক্তি আমারই অভিন্না বিভূতি, উহারা আমাতেই প্রবেশ করিতেছে।

আরও অনেককিছু না বলাই থেকে গেলো। শুধু এতটুকু ভাববার ঈশ্বরের কত নিগূঢ় ও গভীর দার্শনিক চিন্তা আমাদের ঋষিরা করেছিলেন। কী অসম্ভব তত্ত্ব, জীবন ও জগতের কী অভাবনীয় প্রকাশ এই প্রতিমা! আশ্চর্য হতে হয় আমাদের ধর্মে এই উচ্চস্তরের চিন্তাচেতনার কথা মনে করলে। কিন্তু যদি আমরা এগুলো সঠিক ভাবে হৃদয়ে ধারণ করতে না পারি, যদি দার্শনিক চিন্তা চেতনাগুলোকে মানুষের মাঝে উপস্থাপন না করতে পারি তবে সবই অর্থহীন হয়ে যায়। বিদ্যার্থী সংসদ সেইসব চিন্তার প্রসার ও প্রচার কাজ করুক। মায়ের পূজার এই তিথিতে এই হোক সকলের ব্রত।
(ঋণস্বীকার : স্বামী নিম্র্মলানন্দ, দুইদেবী)

কোন সাধনায় সিদ্ধিলাভ করলে কি ফল পাওয়া যায়==============================================================অলৌকিক ক্ষমতালাভে...
07/07/2025

কোন সাধনায় সিদ্ধিলাভ করলে কি ফল পাওয়া যায়
===============================
===============================
অলৌকিক ক্ষমতালাভের জন্য তন্ত্রে শব সাধন, পাদুকা সাধন, কর্ণপিশাচী দেবতার সাধন ইত্যাদি তো আছেই, তাছাড়াও ভূতপ্রেত পিশাচ সাধনও আছে।

উপদেবী মধুমতী প্রসঙ্গে তন্ত্রশাস্ত্রে এই দেবীর বর্ণনায় আছে : ‘ইনি স্বীয় রূপলাবণ্যে ত্রিভুবন মোহিত করতে পারেন। গৌরবর্ণা বিচিত্র বস্ত্রবিধারিনী বিচিত্র অলঙ্কারে বিভূষিতা নর্ত্তকীর বেশধারিণী’।…

‘সাধনকালে, দেবী অর্দ্ধরাত্রি সময়ে আগমন করিয়া সাধককে ভয়প্রদর্শন করেন, তাহাতে সাধক ভীত না হইয়া মন্ত্র জপ করিতে থাকিবে। দেবী সাধককে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জানিয়া তাহার আলয়ে গমন করেন এবং বলিয়া থাকেন যে তোমার অভিলষিত বরপ্রার্থনা কর। সাধক দেবীর বাক্য শ্রবণ করিয়া মনে মনে স্থির করিয়া আপন ইচ্ছানুসারে মাতা ভগিনী অথবা ভার্য্যা বলিয়া সম্বোধন তদনুরূপ সাধন করিবে। পরে সাধক নটিনীকে ভক্তি দ্বারা সন্তুষ্ট করিবে। নটিনী তাহাতে সন্তুষ্টা হইয়া সাধকের মনোরথ পরিপূর্ণ করেন। যদি সাধক দেবীকে মাতৃভাবে ভজনা করে, তবে দেবী তাহাকে পুত্রবৎ পালন করেন এবং প্রতিদিন শতসংখ্যা সুবর্ণমুদ্রা ও অভিলাষিত দ্রব্য প্রদান করিয়া থাকেন। আর যদি ভগিনীরূপে সম্ভাষণ করেন, তাহা হইলে দেবী প্রতিদিন নাগকন্যা ও রাজকন্যা আনিয়া দেন। সাধক এই সাধনবলে অতীত ও ভবিষ্যৎ ঘটনা সকল জানিতে পারে। আর যদি সাধক দেবীকে ভার্য্যাভাবে ভজনা করে তাহা হইলে দেবী প্রতিদিন বিপুল ধন প্রদান করিয়া থাকেন।….

দেবী বিশুদ্ধ স্ফটিকের ন্যায় শুভ্রবর্ণা ও নানাবিধ অলংকারে সুশোভিতা এবং নূপুর হার, কেয়ূর ও রত্ননির্ম্মিত কুণ্ডলে পড়িমণ্ডিতা। (মধুমতীর) পূজা ও জপ করিলে প্রভাত সময়ে দেবী সাধকের নিকট আগমন করেন এবং সন্তুষ্ট হইয়া রতি ও ভোজন দ্রব্যদ্বারা সাধককে পরিতোষিত করিয়া থাকেন। …সাধক দেবীর বরে সর্ব্বজ্ঞ, সুন্দর কলেবর ও শ্রীমান হয়, সর্বত্র গমনাগমনে সাধকের শক্তি জন্মে। সাধক এইরূপে যোগিনী সাধন করিয়া প্রতিদিন দেবীর সহিত ক্রীড়া কৌতুকাদি করিয়া থাকে। এই সর্ব্বসিদ্ধিদায়িনী মধুমতী দেবী অতিগুহ্য’।…

ধীমান বিশ্বামিত্র মুনি মধুমতীদেবীর সাধন করেছিলেন।

তন্ত্রশাস্ত্রে যতগুলি বিশিষ্ট দেবদেবীর সাধনা আছে তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দশ মহাবিদ্যার সাধনার উপরে। দশ মহাবিদ্যা কিংবা কোনও উপদেবী অথবা কোনও যোগিনী সাধনায় আকাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় অতিদ্রুত। মাতৃরূপে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করলে সাধককে সন্তানের মতো রক্ষা ও পালন করে জাগতিক কাম্যবস্তু প্রদান করেন।

সংসারক্ষেত্রে নানান ধরনের কাজে সম্পূর্ণরূপে সাধককে সহায়তা করে থাকেন দেবীকে মিত্ররূপে সিদ্ধিলাভ করলে।

দেবী অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিষয়ে সম্যক জ্ঞানদান করে থাকেন সাধককে যদি সাধক সিদ্ধিলাভ করেন পত্নীরূপে সাধনা করে।

তন্ত্রে জাগতিক সমৃদ্ধিলাভের জন্য অনেক উপদেবতার সাধনপ্রণালী বর্ণিত আছে। তবে এ সাধনায় আধ্যাত্মিক পরমার্থ লাভ হয় না। এই উপবিদ্যার সাধনা মূল ব্রহ্মবিদ্যালাভের সাধনা থেকে অনেক সহজসাধ্য এবং অল্পদিনের মধ্যেই এর সিদ্ধিলাভ হয়। উপবিদ্যায় সিদ্ধ সাধক অতি অদ্ভুতভাবে ইন্দ্রজালের মতো চমকপ্রদ প্রত্যক্ষ ফল তার শরণাপন্ন অর্থীকে অল্পকালের মধ্যেই দিতে পারেন অনায়াসে।

অলৌকিক ক্ষমতালাভের জন্য তন্ত্রে শব সাধন, পাদুকা সাধন, কর্ণপিশাচী দেবতার সাধন ইত্যাদি তো আছেই, তাছাড়াও ভূতপ্রেত পিশাচ সাধনও আছে।

কর্ণপিশাচী হল উপদেবতা। দেবতার স্তরে নয় এরা তবে তাদের মতো অনেক শক্তিই ধারণ করে। অপদেবতা নয়। ভূত প্রেত পিশাচকে বলে অপদেবতা। এই দেবীর সাধনায় আপেক্ষিক সর্বজ্ঞতা লাভ হয়। অপরের মনে কি চিন্তার উদয় হয়েছে কিংবা প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তর দেবী অন্যের অগোচরে সাধকের কানে কানে জানিয়ে দেন।

যেমন প্রশ্নকর্তার কি নাম, কোথা থেকে আসছে, কি উদ্দেশ্যে, কি প্রশ্ন নিয়ে, কবে কি হবে, কি করলে ভালো হবে এই সব আর কি।

তন্ত্রের কর্ণপিশাচী সাধনায় সিদ্ধ এক সাধকের সান্নিধ্যলাভ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তখন দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত আমি। ঠিক ‘দিন চলে না মাস বত্রিশ’ এমন দশা। রাস্তায় ঘুরি কুকুরের মতো। মানুষ হয়ে বাঁচার ইচ্ছা প্রায় সব মানুষেরই আছে। আমারও ছিল, কিন্তু সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তখন আমার দিন কাটতো সকালে খবরের কাগজ বেচে, বিকেলে বেচতাম নিজের হাতে আঁকা ছবি নিয়ে ফুটপাথে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিটা কোনও কাজে লাগবে না বলেই মা মিউজিয়ামের মতো যত্নে রেখেছিলেন সেই পুরনো দিনের ঠাকুমার বেনারসীর মতো।

তখন আমার বয়েস ২৫/২৬ হবে। আমার শাস্ত্রীয় শিক্ষাগুরুকে আমি মাস্টারমশাই ডাকতাম। হুগলি জেলার অন্তর্গত শিয়াখালায় কর্ণপিশাচী সাধনায় সিদ্ধ একজন সাধক থাকতেন। নাম বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়। এটা মাস্টারমশাই জানতেন এবং তিনি নিজেও একবার তাঁর সঙ্গ করেছেন। আমার সার্বিক কষ্টের কথা তাঁর অজানা ছিল না। একদিন তাঁর মেজ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে পাঠালেন শিয়াখালায়। কারণ ওপথের আমি কিছু চিনি না, জানিও না। যতদূর মনে পড়ে শিয়ালদা থেকে ট্রেনে ডানকুনি, ওখান থেকে বাসে শিয়াখালা।

যথাসময়ে পৌঁছে গেলাম। বাড়িতে ঢোকার মুখেই দেখি এক ভদ্রলোক যেন আমারই অপেক্ষায়। আমাকে দেখামাত্রই বললেন,

– আপনি কি শিবশংকরবাবু? নারকেলডাঙ্গা থেকে আসছেন?

কথাটা শুনে উত্তর দেওয়ার ক্ষমতাটা হারিয়ে ফেলেছি। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লাম। ভদ্রলোক এবার বললেন,

– আপনার ডাক পড়েছে। ভিতরে আসুন।

কোনও কথা না বলে অনুসরণ করলাম। ভিতরে দেখলাম কিছু লোক বসে আছে। বৈদ্যনাথবাবু একটু আলাদাভাবে। হাতটা কানের পাশে যেন টেলিফোনে কথা হবে। আমি কিছু বলার আগেই তিনি ইশারায় বসতে বললেন। মিনিট কয়েক পর মিচকে হেসে অতি ধীর কণ্ঠে বললেন,

– টেলিফোন এসেছে। তোমার কাগজ বেচার দিন ফুরিয়ে এল। কাগজে লেখার দিন আসছে। ভয় নেই, একটু ধৈর্য ধর। এখনও তোমার একটু কষ্ট আছে কপালে তারপর তোমার জীবনে…

বৈদ্যনাথবাবুর প্রত্যেকটা কথা ফলেছে অব্যর্থভাবে। আজ আমি যে কর্মে লিপ্ত তা বৈদ্যনাথবাবুরই বলা, যা ছিল আমার স্বপ্নেরও বাইরে। আমার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরও অনেক কথাই বলেছেন। আমি জানি, প্রতিটা কথাই ঠিকঠাক হবে যথাসময়ে। শুধু সময়ের জন্য অপেক্ষা করা।

যাই হোক, সকলে চলে যাওয়ার পর অনেক কথা হল। কথা প্রসঙ্গে জানতে পেরেছিলাম বৈদ্যনাথবাবু কর্ণপিশাচী সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। কোনও প্রশ্নকর্তা তার কাছে যাওয়ার আগেই দেবী সকলের অগোচরে বৈদ্যনাথবাবুর কানে কানে বলে দিতেন প্রশ্নকর্তার কি নাম, কোথা থেকে আসছে, কি উদ্দেশ্য, কি প্রশ্ন নিয়ে, কবে কি হবে, কি করলে ভালো হবে ইত্যাদি।

বৈদ্যনাথবাবু আজ আর নেই। কিন্তু কথাগুলো আমার জীবনে প্রতিটা পদক্ষেপে সত্য হয়েছে। তবে এ সত্যতা বৈদ্যনাথবাবুর নয়, এ সত্যতা তার সাধনের, ভারতীয় তন্ত্রের সঠিক প্রক্রিয়ায় নিয়মমাফিক প্রয়োগের মাধ্যমে করায়ত্ত শক্তির।

কর্ণপিশাচী সাধনা কি? এ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করলে সাধক কি ফল পেয়ে থাকেন, আসা যাক সেই প্রসঙ্গে।

কর্ণপিশাচীর আকার কেমন? তন্ত্রশাস্ত্রে দেবীর বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘দেবীর দেহ কৃষ্ণবর্ণ, লোচনত্রয় রক্তাভ, আকার খর্ব্ব, উদর বৃহৎ এবং জিহ্বা বন্ধুকপুষ্পের ন্যায় অরুণবর্ণ। দেবীর চারি হস্ত, এক হস্তে বরমুদ্রা, দ্বিতীয় হস্তে অভয়মুদ্রা এবং অপর হস্তদ্বয়ে দুইটি নরকপাল আছে। শরীর হইতে ধুম্রবর্ণ জ্বালা বহির্গত হইতেছে। ইনি উর্দ্ধবদনা, জটাভারমন্ডিতা ও চঞ্চলপ্রকৃতি। কর্ণপিশাচীদেবী সর্ব্ববিষয়ে অভিজ্ঞা ও শবহৃদয়ে বাস করিতেছেন। এইরূপ আকৃতি বিশিষ্ট দেবীকে নমস্কার করি’।

কর্ণপিশাচীদেবীর সাধনায় সিদ্ধিলাভ হলে সাধক যখন মনে মনে কোনও প্রশ্ন করে, তৎক্ষণাৎ দেবী সাক্ষাৎ এসে প্রশ্নের সঠিক ও যথার্থ উত্তর দিয়ে থাকেন। দেবীসাধনায় সিদ্ধসাধক তাঁর পিঠে আরোহণ করে দর্শন করতে পারে ভূত ভবিষ্যৎ বিষয় সকল, বর্তমানও। এই দেবীর সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে অচিরকালে সর্বজ্ঞতা লাভ করেছিলেন মহামতি বিশালবুদ্ধি লক্ষশ্লোক মহাভারত রচয়িতা বেদব্যাস।

গুপ্তযুগের কর্তৃপুর-ই আজকের কাংড়া অঞ্চল। হিমাচল প্রদেশের এই অঞ্চলে আছে জ্বালামুখী, চিন্তাপুর্ণী ও নয়নাদেবী প্রভৃতি সাতটি দেবীস্থান। তার মধ্যে অন্যতম জ্বালামুখীতে পড়েছিল সতীর দেহাংশ জিহ্বা। দেবীর ভৈরব এখানে উন্মত্ত ভৈরব নামে স্থিত আছেন, মতান্তরে অম্বিকেশ্বর মহাদেব।

কারুকার্যখচিত মুখ্য দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই একেবারে সামনে পড়ল একটি চারকোণা কুণ্ড। বাঁধানো কুণ্ডের দেওয়াল থেকে বেরচ্ছে দুটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা। রুপোর জালে ঘেরা সবচেয়ে বড় সুশোভিত শিখাটিকে মহাকালীর রূপ বলা হয়ে থাকে। এটিই পূর্ণব্রহ্মজ্যোতি জ্বালামুখী নামে প্রসিদ্ধ। দেবীর কোনও বিগ্রহ নেই। জ্বালামুখী মায়ের কল্পরূপই হল এই অনিবার্য নীলাভ লেলিহান অগ্নিশিখা। এর একটু নিচে দ্বিতীয় জ্যোতির্ময় শিখাটির নাম দেবী অন্নপূর্ণা।

কুণ্ডের এক পাশেই বসে আছেন পূজারি। একের পর এক আসছেন তীর্থযাত্রী। তাদের আনা পূজাদ্রব্য নিয়ে ধরছেন প্রজ্বলিত অগ্নিশিখায়। দেবীর প্রসাদ করে ফিরিয়ে দিচ্ছেন তীর্থকামীদের হাতে।

পাহাড়ের গায়ে চারটি স্তম্ভের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে মন্দিরটি। কারুময় শ্বেত পাথরের দেওয়াল, মেঝে। দেওয়ালের গায়ে আরও কয়েকটি জায়গা থেকেও বেরচ্ছে অগ্নিশিখা। মোট নয়টি শিখায় মূল দেবীমন্দিরটি সুশোভিত। তৃতীয় শিখাটি শত্রু বিনাশকারিনী চণ্ডী নামে প্রসিদ্ধ। চতুর্থ শিখাটি ব্যাধিনাশিনী দেবী হিংলাজ, পঞ্চমটি শোকনিবারনী দেবী বিন্ধ্যবাসিনী, ষষ্ঠটি ধনদেবী মহালক্ষ্মী, সপ্তমটি বিদ্যাদেবী মহাসরস্বতী, অষ্টমটি সন্তানসুখদায়িনী দেবী অম্বিকা এবং নবম জ্যোতিটি দেবী অঞ্জনার, যিনি আয়ু আরোগ্য ও সুখ প্রদান করেন।

জ্বালামুখী মন্দিরের বাঁপাশেই বাঁধানো সিঁড়ি উঠে গিয়েছে ওপরে। তার পাশে জ্বালামুখী মন্দিরের কার্যালয়। সিঁড়িতে ওঠার মুখেই লাল গণেশ আর ভৈরবের কালো বিগ্রহ, বাঁদিকে একেবারে কোণে পাথরের মূর্তিটি আচার্য শঙ্করের। সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতেই বাঁয়ে পড়ল চোদ্দভুজা দুর্গার বিগ্রহ। ডানদিকে রাধাকৃষ্ণ আর গনেশজি। এ ছাড়াও মহাবীর, মহাকাল, বালকনাথ ও কালভৈরব প্রভৃতির বিগ্রহে দোতলা জমজমাট। দোতলার ডাইনের অংশটি ‘গোরখ ডিব্বা’ নামে পরিচিত। ভিতরে লেখা আছে শ্রীগুরু গোরখনাথজি কা ধুনা’। ধুনীর পাশে একটি ত্রিশূলও পোঁতা আছে। অনুমান, দশম শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করেন গোরখনাথ। নাথ সম্প্রদায়ের সাধুদের বিশ্বাস, গোরখনাথজির এক সময়ের তপস্যাক্ষেত্র এটি। গোরখ ডিব্বার সামনেই রাধাকৃষ্ণের ছোট্ট মন্দির।

দেখলাম জনা পাঁচেক সাধুবাবা বসে আছেন ধুনীটা ঘিরে। কারও মাথায় লম্বা, কারও মাথায় ছোট জটা। প্রত্যেকেই লালচে গেরুয়ায় মোড়া। কথা বলাবলি করছে নিজেদের মধ্যে। এরা সকলেই হিন্দিভাষী। এই পাঁচ-ছজন বাদে আর একজন আছে তবে এদের সঙ্গে নয়, আলাদাভাবে বসে আছেন দেওয়ালের পাশে। মুখের দিকে তাকাতেই চোখের ইশারায় ডাকলেন। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসলাম মুখোমুখি হয়ে।

প্রণাম করলাম। লাল কাপড়ে মোড়া দেহ। মাথার জটা কাঁধ ছাড়িয়ে। মাঝারি গড়ন। টানা টানা চোখ। টিকালো নাক। গায়ের রং ময়লা। উচ্চতায় আমার ধারণা সাড়ে পাঁচ ফুট হলেও হতে পারে। কোথায় থাকি, কি করি, জ্বালামুখীতে কেন এসেছি সবই জানালাম সাধুবাবাকে। কথা বলতে বলতে জেনে নিলাম এই সাধুবাবা নাথ সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী। খুব ছোট বেলায় গৃহত্যাগ করেছেন। বর্তমান বয়েস আটচল্লিশ (১৯৮১ সালে)। ভারতের অসংখ্য তীর্থ পরিক্রমা করেছেন। জ্বালামুখীতে আছেন মাস খানেক। এরপর এখান থেকে তিনি কোথায় যাবেন তা তাঁর জানা নেই। সাধুবাবা জানালেন, ‘দেবী কামেশ্বরী যোগিনী যেখানে নিয়ে যাবেন, সেখানেই তিনি যাবেন’।

‘কামেশ্বরী যোগিনী’র কথা বলায় বুঝে গেলাম এখানে কোনও রহস্য একটা লুকিয়ে আছে। বললাম,

– বাবা, কামেশ্বরী দেবী কে, কোথায় থাকেন তিনি, আপনার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কই কি? দয়া করে এ বিষয়ে খোলাখুলি কিছু বলবেন।

সাধুবাবার সঙ্গে নানান বিষয়ে কথা বলতে বলতে এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় আধঘণ্টা। তাঁর ভাবটা প্রসন্ন। তবে আমার প্রশ্নের উত্তরটা এড়িয়ে যেতে চাইছিলেন। আমি সাধু বশ করার ফর্মুলাটা প্রয়োগ করলাম। ঝপ করে পা দুটো চেপে ধরে বললাম,

– বাবা, দয়া করে বলুন না, আপনার ক্ষতি তো কিছু হবে না। সাধুসঙ্গ করে তাদের জীবন সম্পর্কে জানাটাই আমার একমাত্র নেশা।

সাধুবাবা মাথা নেড়ে জানালেন তিনি এ ব্যাপারে কিছু বলতে নারাজ। আমি তাঁর পা দুটো না ছেড়ে সমানে অনুরোধ করতে লাগলাম। প্রায় মিনিট সাত আটেক পর মুখ খুললেন,

– বেটা, তন্ত্রে বিভিন্ন উপদেবী তথা যোগিনীর সাধনার কথা উল্লেখ আছে। ছোটবেলায় আমার জীবন কাটে বড় কষ্টের মধ্যে দিয়ে। জাগতিক সমস্ত দুঃখ ও দুর্ভোগ ছাড়া কোনও সুখ ভোগই আমার কপালে জোটেনি। তাই ভারতের তীর্থে তীর্থে সেই গুরুর সন্ধান করতে লাগলাম, যে আমার পার্থিব জীবনের সমস্ত চাওয়া পাওয়ার বাসনা মিটিয়ে দেবে। বেটা, একদিন সত্যি সত্যিই গুরু মিলে গেল গয়াতে, ব্রহ্মযোনি পাহাড়ে। তাঁর কাছে অন্তরের সমস্ত কথা বললাম প্রাণ খুলে। জানালাম, ভগবানকে লাভ করার বাসনা আমার এতটুকুও নেই। আমি চাই জাগতিক সমস্ত রকম সুখভোগ। বেটা, একথা শুনে গুরু একটু হাসলেন। কিছু বললেন না। দীক্ষা দিয়ে শিখিয়ে দিলেন কামেশ্বরী যোগিনীর সাধন ও সিদ্ধিলাভের প্রক্রিয়া।

একটু থামলেন। এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নিলেন একবার। তারপর বেশ আনন্দের সঙ্গে বললেন,

– বেটা, গুরুর শিখিয়ে দেওয়া পদ্ধতিতে লেগে পড়লাম সাধনায়। অচিরেই সিদ্ধিলাভ হল। বেটা, আমি গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী, গাড়ি বাড়ি ধনদৌলত, কোটি কোটি টাকা, এসব দিয়ে আমার হবে কি? শুধু এটুকু বলি, একজন ধনবান মানুষ সংসার জীবনে থেকে যা কিছু ভোগ করে থাকে, তার থেকেও অনেক বেশি পেয়েছি পেয়ে যাব যতদিন বেঁচে থাকব আমি।

এরপর আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হল আরও প্রায় ঘণ্টা খানেক। তবে একেবারে দিনের বেলায় ‘গোরখ ডিব্বায়’ আরও সাধুদের অবস্থান কারণে দেবী কামেশ্বরী যোগিনীর অলৌকিক কোনও ঘটনা সেদিন দেখিনি, সাধুবাবাকে দেখানোর জন্য অনুরোধ করিনি। তবে সাধুসন্ন্যাসীদের কথায় আমার বিশ্বাস ষোলোআনা নয়, আঠারো আনা। এক সময় কথা শেষ হল। সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করলাম। উঠে দাঁড়িয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে মুখে বললেন,

– জয় হো বেটা, সদা আনন্দমে রহো।

যথাসময়ে ফিরে এলাম বাড়িতে। তন্ত্রশাস্ত্রটা খুলে দেখলাম, নানান ধরনের যোগিনী সাধনার মধ্যে আছে, সুরসুন্দরী যোগিনী সাধন, মনোহরা যোগিনী সাধন, কনকারতি যোগিনী সাধন, কামেশ্বরী যোগিনী সাধন, রতিসুন্দরী যোগিনী সাধন, পদ্মিনী যোগিনী সাধন, নটিনী যোগিনী সাধন ইত্যাদি।

এখন দেখা যাক, নাথ সম্প্রদায়ের এই সন্ন্যাসী কামেশ্বরী সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে কি পেয়েছিলেন, কাকে পেয়েছিলেন? ভারতীয় তন্ত্রশাস্ত্র কি বলে? তন্ত্রের কথায় –

যোগিনী সাধনের ক্ষেত্রে দেবীর বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘কামেশ্বরী দেবীর আকার এইরূপ ইনি শশাঙ্কবদনা, দেবীর লোচন খঞ্জনের ন্যায় চঞ্চল এবং সর্বদা চঞ্চল গমনে সঞ্চরণ করেন। ইহার হস্তে কুসুমময় বাণ আছে। এইরূপে ধ্যান করিয়া পূজা ও জপ করিলে দেবী আগমন করেন এবং সন্তুষ্টা হইয়া সাধককে বলেন, তোমার কি আজ্ঞা প্রতিপালন করিতে হইবে? তৎপরে সাধক দেবীকে স্ত্রীভাবে পাদ্যাদি দ্বারা পূজা করিবে। তাহাতে দেবী সুপ্রসন্না হইয়া সাধককে পরিতুষ্ট করেন এবং অন্নাদি বিবিধ ভোজনীয় দ্রব্যদ্বারা পতিবৎ প্রতিপালন করিয়া থাকেন। দেবী সাধকের নিকট রাত্রি যাপন করিয়া ঐশ্বর্য্যাদি সুখভোগসামগ্রী, বিপুল ধন ও নানাপ্রকার অলঙ্কার প্রদানপূর্বক প্রভাতকালে প্রতিগমন করিয়া থাকেন। এই প্রকারে প্রতিদিন সাধকের অভিলাষানুসারে সিদ্ধি প্রদান করেন।’

https://www.nilkantho.in/

Address

Dhaka
1210

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when তন্ত্র শিক্ষালয় posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram