08/10/2024
আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ একই জেনেটিক তথ্য বহন করে। সবার মাঝেই বাবা ও মায়ের কাছ থেকে আসা একই ২৩ জোড়া ক্রোমোজম আছে। প্রতিটি কোষেই ডিএনএ এর তথ্য একই। তাহলে কেন শরীরের বিভিন্ন কোষ আলাদা? কেন কাজ আলাদা? কেন মাংসপেশীর কোষ আর মস্তিষ্কের কোষ একই ডিএনএ বহন করা সত্ত্বেও দেখতে একেবারে আলাদা, কাজে আরও বেশি আলাদা? কেন একটিমাত্র ভ্রুণ কোষ লক্ষ লক্ষ বিচিত্র বৈচিত্রময় কোষের সম্ভার তৈরি করে এই জটিল শরীর যন্ত্র গঠন করে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুজছিলেন আমেরিকান বিজ্ঞানী ভিক্টর এম্ব্রোস ও গ্যারি রাভকেন। ১৯৮০ সালের দিকে তারা পোস্ট ডক্টরেট করার সময়ে একটি গোল কৃমির নানা কোষ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তারা আবিষ্কার করেন lin-4 নামের একটি মাইক্রো RNA, ঐ গোল কৃমির ডিএনএ এর lin-14 নামের একটি জিনকে কন্ট্রোল করে, প্রকাশে বাধা দেয়। ফলে গোল কৃমির কোষে কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখা দেয়। এই ঘটনা তারা ১৯৯৩ সালে পাবলিশ করেন বিখ্যান Cell জার্নালে।
পরবর্তীতে তাদের এই কাজ জীববিজ্ঞানের গবেষণার নতুন দুয়ার তৈরি করে দেয়। দেখা যায় সব প্রাণীতেই নানা ধরনের মাইক্র আরএনএ বিদ্যমান। কিছু আরএনএ বিবর্তনের লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সংরক্ষিত। যেমন lin-7 মাইক্রোআরএনএ প্রণীজগতে ৫০০ মিলিয়ন বছর ধরে সংরক্ষিত এবং এটি মানুষ, ইদুর, ক্যাঙ্গারু, মাছ, তারা মাছ সহ বহু প্রাণীতে বিদ্যমান। এইসব মাইক্রোআরএনএ শরীরর গঠন, বিশেষায়িত জৈবিক কার্যক্রম এবং অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্যেও দায়ী। চিকিৎসাবিজ্ঞানে মাইক্রোআরএনএ এর ব্যবহার নিয়ে চলছে গবেষণা। ক্যান্সার, ALS, সোরিয়াসিস, হার্ট ফেইলিওর সহ নানা রোগে মাইক্রোআরএনএ চিকিৎসার ট্রায়াল চলছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
এই দুজন বিজ্ঞানী এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।
~ডা. মো: মারুফুর রহমান
চিকিৎসক ও গবেষক
দ্যা ইউনিভার্সিটি অফ শেফিল্ড, যুক্তরাজ্য