02/03/2025
#পবিত্র রমজানে কেমন হবে আপনার খাদ্যতালিকা?
আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর রহমত আর নেয়ামতপূর্ন রমজান মাস শুরু হয়ে গেল।সুস্হ শরীর এবং পবিত্র মন আল্লাহর একটি বিশেষ নেয়ামত।আর পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে যেমনি আমরা মনের পবিত্রতা অর্জন করতে পারি তেমনিভাবে শরীরের সুস্হতা বজায় রাখতে প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস।এ সময় আমাদের খাদ্যের মেনু এমন হওয়া উচিত যেন শরীরের পুষ্টির ঘাটতি না হয় এবং সারাদিনের রোজা শেষে শরীরে পানির ভারসাম্য যেন পূরণ হয়।
এজন্য রোজার শুরুতেই সবারই কিছু বিশেষ সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত।
বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস ,কিডনী,হৃদরোগ ,ওজনাধিক্য ইত্যাদি সমস্যায় ভূগছেন।তাদের ক্ষেত্রে রোজার আগেই শারীরিক কিছু পরীক্ষা করে নেয়া ভালো।যেমন: রক্তের গ্লুকোজ প্রোফাইল,তিন মাসের গড় গ্লুজের মাত্রা(HbA1c%),লিপিড প্রোফাইল ,ইউরিক এসিডের মাত্রা,ক্রিটিনিন লেভেল ইত্যাদি।প্রয়োজনে অবশ্যই ডাক্তার এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
রমজানে এমন একটি রহমতের মাস,সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহণ করে এই মাসে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ওজন বাড়ানো,কমানো,রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব।এজন্য আমাদের প্রয়োজন সঠিক এবং পরিকল্পিত খাদ্যাভাস।
রমজানে মূলতঃ সাহরি,ইফতার এবং রাতের খাবার এই তিনটি সময়ে আমরা খাবার খেয়ে খঅন্যান্য দিনের মত টুকটাক খাওয়ার সুযোগ নেই,তাই আসুন জেনে নেই এসময় খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত-
*সাহরি: রমজানে যেহেতু সারাদিনে প্রায় ১৩/১৪ ঘন্টা আমাদেরকে অভুক্ত থাকতে হয়,তাই সাহরির খাবারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসময় সহজপাচ্য ,কম তেল-ঝাল-মসরাযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।সব্জীর পাশাপাশি মুরগি বা মাছ রাখতে পারেন।অনেকে দুধ পছন্দ করেন,তবে সেটা যেন বেশি ঘন না হয়। আবার,যাদের দুধ হজম হয় না,তারা নির্দ্বিধায় দই খেতে পারেন।সাহরিতে ১/২টি খেজুর খাওয়া ভালো,তবে ডায়াবেটিস রোগীরা এড়িয়ে যাবেন।পর্যাপ্ত পানি খাবেন।
*ইফতার :সারাদিন রোজা রাখার পর সবার মূল আগ্রহ ই থাকে মজার সরবত এবং লোভনীয় ইফতার।কিন্তু সরবতটা যেন চিনিতে ভরপুর না হয়ে তাজা ফল যেমন:বেল,তরমুজ,ডাব,বাঙ্গি,চিড়া-পানি ,তোকমা-চিয়া-লেবুইত্যাদি স্বাস্হ্যকর পানীয় হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
এরপর ভাজাপোড়া বাদ দিয়ে কাঁচা/সিদ্ধ ছোলা-শশার সালাদ,তাজা ফল,চিড়া দই,নরম সব্জি খিচুড়ি ,সিদ্ধ ডিম,স্যুপ ইত্যাদি ইফতারে রাখলে আমাদের শরীরে পুষ্টি চাহিদা এবং পানির চাহিদা দুটোই পূরনে সহায়তা করবে।
*রাতের খাবার: ইফতার এবং রাতের খাবারের মধ্যে সময়ের পার্থক্য কম থাকায় অনেকে রাতের খাবারটা বাদ দিয়ে থাকেন।তবে এটা না করে হালকা কিছু হলেও খাওয়া উচিত।যেমন:দুইটা পাতলা রুটি সাথে সব্জি,সিদ্ধ একটা ডিম অথবা,এক কাপ ভাত,ছোট মাছ,ডাল।এক কাপ দুধ সাথে সামান্য ওটস,একটা খেজুর ইত্যাদি।
*রোজায় পানির পরিমানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত ১০-১২গ্লাস পানি/সরবত/স্যুপ ইত্যাদি মিলিয়ে যেন পূরন হয়,সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
*এ সময় যেহেতু লম্বা সময় ধরে তারাবিহর নামাজ পড়া হয় ,তাই আলাদা করে এক্সারসাইজের প্রয়োজন হয় না।তবে,ইফতারের পর হালকা হাঁটাহাঁটি করা ভাল।
*অতিরিক্ত চা-কফি এড়িয়ে চলা উচিত।সাহরিতে চা খেলে ডিহাইড্রেশন বেড়ে যেতে পারে।
এছাড়াও বিশেষ রোগে বিশেষ প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ মত খাদ্যতালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করে সুস্হতা বজায় রেখে রমজানের ইবাদত সবার অর্থবহ হোক,আমিন।
রাশিদা রহমান সোমা
পুষ্টবিদ এবং কনসালটেন্ট ডায়েটিশিয়ান
ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল নয়াপল্টন