03/11/2025
এই দম্পতি আমাদের কাছে আসেন ২০২৩ সালে, তখন ফিমেল পার্টনারের বয়স ৩৫+। ওভারীতে ডিমের সংখ্যা বেশ কম, AMH আসে ০.১৭ ( দশমিক এক সাত)। আমরা কাউন্সেলিং করে বললাম, নিজেরা চেষ্টা করতে, কোন চিকিৎসাতেই খুব আশা জাগানিয়া ফলাফল হবেনা। ওনারা ২ জনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সেটা মেনে নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় মনোনিবেশ করলেন ও ক্যারিয়ারে আরও উচ্চতর পড়াশোনার প্ল্যান করলেন।
২০২৫ সালে হঠাৎ যোগাযোগ করলেন, ওনাদের ন্যাচারাল প্রেগন্যান্সি, আমার কাছে আসতে চান। ৩৭+ বছর বয়স মায়ের, বেশী বয়সে ক্রোমোজোমাল ত্রটিযুক্ত বাচ্চা জন্মানোর ঝুঁকি থাকে, আমরা সেগুলো স্ক্রিনিং করে নিলাম ১৩ সপ্তাহে, এরপর জরায়ুমুখ ছোট হবার জন্য Cervical Cerclage দিলাম, Placenta নীচের দিকে থাকার জন্য অনেক বেশী ব্লিডিং নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও থাকেন কয়েকদিন।
এই মা, প্রেগন্যান্সির ৩৬ সপ্তাহে আমাকে একটা আবেগঘন টেক্সট পাঠান, আমি অনুমতিক্রমে হুবহু তা তা তুলে সবার সাথে শেয়ার করছি। শেষ পর্যন্ত তারা একটি সুস্থ ছেলে সন্তান নিয়ে বাড়ি গেছেন ❤️❤️❤️
আমার প্রিয়তম শান্তাপা,
৩৬ সপ্তাহ চলছে আমার।
দিন-রাত আমি এখন ভয়ের মধ্যে বাস করি।
অথচ ব্যক্তিত্বে আমি এর সম্পূর্ণ বিপরীত। ডাকাবুকো, বেদম সাহসী বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সুনাম-দুর্নাম দুটোই আছে। আর এখন? চোখভর্তি জল আর বুকভরা ভয় আমার সারাক্ষণের সঙ্গি। রাতে ঘুমোতে পারিনা কতদিন সেই হিসেবও এখন রাখিনা। প্রকৃতি এমনভাবে আমাকে বদলে দিয়েছে যে আমি নিজেকে নিজেই আর চিনতে পারিনা। অনুক্ষণ একটা চাওয়াই গুমরে গুমরে ওঠে-- আমার সন্তান যেন সুস্থ, সবল, পূর্ণাঙ্গভাবে এই পৃথিবীতে আসে। আমি যেমন জানি, আপনিও ততটাই জানেন, ও মিরাকল বেবি। আপনি নিজেও বলেছেন কয়েকবার।
আমার শারীরিক অক্ষমতা যা IVF-এও পূরণীয় নয়, জানার পর আমরা আর পরবর্তী চিকিৎসা বা চেষ্টার জন্য আপনার কাছে গেলামনা। আমরা টোনা-টুনি নিজেদের শর্তে-স্বপ্নে বাঁচতে চাইলাম। শিক্ষকতা, দেশ-বিদেশ ভ্রমণ, বাইরে গিয়ে পিএইচডি করার রূপরেখায় গুছিয়ে নিলাম জীবনকে। আমরা সুখী ছিলাম।
আল্লাহও যে কী কারণে এতটা খুশি হয়ে একটা রহমতের দলা আমার ভেতর পাঠালেন তা তো জানিনা আপা, তবে আমরা নতুন করে জানলাম absolute happiness কাকে বলে! ছুটে গেলাম আপনার কাছে। আপনি, দ্য ম্যাজিশিয়ান, এখন পর্যন্ত জাদুমন্ত্রবলে আমাকে কঠিন রাস্তা পার করিয়ে দিচ্ছেন।
সম্রাট বাবরের মতোই আমি প্রার্থনা করি আপা। জীবনের বিনিময়ে জীবন। আমার জীবনের বিনিময়ে সুস্থ-সবল সন্তানের জন্ম। আল্লাহকে বলি, আমার জানালার বাইরে দাঁড়ানো বিশাল গাছগুলোকে বলি, বৃষ্টিকে বলি, আকাশ আর মেঘকে বলি। মধ্যরাতে আমি গুনগুন করে আপনাকেও বলি, আপনি শুনতে পান আপা?
একটা ছোট্ট চাওয়া আছে আমার ম্যাজিশিয়ানের কাছে। আমি যদি মরে যাই তাহলে চেতনার শেষ মুহূর্তে যেন আমি বুঝতে পারি আমার শান্তাপা আমাকে ছুঁয়ে আছে। আর যদি বেঁচে থাকি তাহলে যেন দেখি আমার শান্তাপা আমার সন্তানকে ছুঁয়ে আছে। আমার এই বোকা-বোকা চাওয়াটা আপনাকে সামনাসামনি আমি বলতে পারতামনা, আমার বরের সামনে আরও বলা যেতনা। আপনার বাড়ির ঠিকানা জেনে নিয়ে একটা নীলখামে চিঠি লিখে পাঠাতে চেয়েছি ডাকযোগে। সেখানেও ব্যর্থ।
তাই এই খোলা চিঠি। এখন আমার খুব লজ্জা করছে আপা, চিঠি শেষ করি।
আপনাকে ভালোবাসি, শান্তাপা। অসংখ্য মানুষ আপনাকে এভাবেই ভালোবাসে, আমার মতো নগণ্যজনের ভালোবাসাও এতে যুক্ত হোক।
( চিঠি ও ছবি পোস্ট অনুমতিক্রমে)