22/06/2025
যাদের ওজন বাড়াতে চাচ্ছেন, তবে কোনো খাবার খেতে একদমই ইচ্ছা করে না, রুচি নেই, সবসময় পেট ভরা লাগে বা ক্ষুধা অনুভব করতে পারেন না আজ আপনাদের জন্য সমাধান লিখবো।
গতকাল রুচি কমানো নিয়ে একজন রোগীর প্রশ্নোত্তরের পোস্ট দেয়ার পর অনেকেই রুচি বাড়ানোর জন্য কি করবেন এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন।
রুচি কম থাকা বা ক্ষুধামন্দার কারণগুলোকে মূলত ৩ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:
১। Physiological: শরীরে বিশেষ কিছু পুষ্টি উপাদানের অভাব, বদহজম, গ্যাস্ট্রিক, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন (মুখগহ্বর, খাদ্যনালী ও পরিপাকতন্ত্রে) এর কারণে হতে পারে।
২। Emotional: ক্রনিক স্ট্রেস, ডিপ্রেশন, মানসিক অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা।
৩। Pathological: ক্রনিক রোগ যেমন: লিভারের অথবা হার্টের রোগ, আলসার, আইবিএস, আইবিডি, ক্যান্সার ইত্যাদি কারণেও হতে পারে।
ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য কিছু সাপ্লিমেন্ট আছে। কিছু ভিটামিন ও মিনারেলের সাহায্যে রুচি বাড়ানো যায়, স্বাস্থ্যকর উপায়েই সেটা সম্ভব। আর কেউ যদি চান সাপ্লিমেন্ট নিবেন না তারা এই ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে রুচি বাড়াতে পারেন।
১। ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন: দেহে থায়ামিনের ঘাটতি থাকলে আপনি রুচিহীনতায় ভুগতে পারেন, একদমই ক্ষুধা পাচ্ছে না বা খেতে ইচ্ছা করছে না এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ক্ষুধা ও রুচি বাড়াতে ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন খাবারে থায়ামিন পেতে পারেন যেমন: দই, আলু, মটরশুটি, ডাল, মাছ, বাদাম ও বীজ, ফরটিফাইড সিরিয়ালস ইত্যাদি।
২। জিঙ্ক: জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট রুচি বাড়াতে বেশ ভালো কাজ করে। ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলোর সাথে সরাসরি কাজ করে জিঙ্ক দেহে খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি করে। জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট কিন্তু মন ভালো রাখতেও বিশেষ কার্যকরী। জিঙ্ক যেসব খাবারে পাওয়া যায় তা হলো: মুরগির মাংস, গরুর মাংস, খাসির মাংস, দুধ ও দুধের তৈরি যেকোন খাবার, ডাল, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার, ডিম, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি।
৩। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স: ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বিশেষত ভিটামিন বি৬ এবং বি ১২ রুচি ও ক্ষুধা বাড়ানোর কাজ করে। এই ভিটামিনগুলো রুচি নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুর উপরে প্রত্যক্ষ কাজ করে। এছাড়াও হেলদি ডাইজেশনে ভূমিকা রাখে ফলে পেট ভরা ভাব কমে যায়। এভাবেই ক্ষুধামন্দা কমিয়ে আনে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যেসব খাবারে পাবেন: গরুর মাংস, খাসির মাংস, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, মুরগির মাংস, দই, চিজ, কলিজা, কলা, ইত্যাদি।
৪। ভিটামিন সি ও ডি: সরাসরি জড়িত না হলেও পরোক্ষভাবে ভিটামিন সি এবং ডি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ভিটামিন সি আয়রনের সঠিক শোষণ নিশ্চিত করে। দেহে আয়রনের সঠিক শোষণ রুচি ও টেস্ট বাডের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে। আবার, অনেক সময় ভিটামিন ডি এর লেভেল কম থাকলেও রুচিহীনতা দেখা যায়। ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার: যেকোন টক ফল, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম, দুধ, মাশরুম ইত্যাদি।
রুচি বাড়ানোর পুষ্টি উপাদানগুলো একই ধরনের খাবারে পাওয়া যায় তাই খাবারের মাধ্যমে সমাধান করতে উপরে উল্লেখিত খাবারগুলোর লিস্ট বানিয়ে ফেলুন, এবার এই লিস্ট থেকে কমপক্ষে একটি খাবার প্রতিদিন খাবেন। আর সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে সমাধান করতে চাইলে অবশ্যই আপনার দেহের জন্য পরিমিত ডোজ জানতে প্রফেশনাল কারো সাহায্য নিন। আমাকে নক দিতে পারেন।
এভাবেই স্বাস্থ্যকর উপায়ে রুচিহীনতা বা ক্ষুধামন্দার সমাধান করতে পারেন।
✍️ পুষ্টিবিদ সাদিয়া শাহরিণ শিফা
নিউট্রিশন এন্ড ডায়েট কনসালটেন্ট, মাইটোসিস ল্যাব লিমিটেড, ডায়েটিশিয়ান, সাইক ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক ল্যাব