
28/08/2025
হয়ত মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা হেদায়েত দিবেন কিংবা শাস্তি দিবেন জন্যই আমাদের এই পোস্টটি আপনাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। কেননা, কোন সতর্ককারী প্রেরণ না করে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সাধারণত শাস্তি দেন না।
ফ্যাক্টঃ বাংলাদেশে সরকারী, আধা-সরকারী বা সমগোত্রীয় চাকরীগুলোতে পেনশনের যে টাকা দেয়া হয় তাতে সুদের টাকা মিশ্রিত থাকে। আর সুদ অবশ্যই হারাম।
কিভাবে জানবোঃ এটা মূলত প্রত্যেক পদের বিস্তারিত বিবরণে কিংবা সংশ্লিষ্ট চাকুরীর কাগজপত্রে কিংবা টাকা গ্রহণের সময় স্বাক্ষরকৃত কাগজপত্রে শতকরা হিসেবসহ স্পষ্ট উল্লেখ থাকে। (সুতরাং অস্বীকার করার কোনই উপায় নেই)
সমাধানঃ হারাম থেকে বাঁচতে হলে এই সুদের টাকা অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে, কিংবা সওয়াবের আশা ছাড়াই দান করে দিতে হবে।
বি।দ্র। আমাদের পছন্দ অনুযায়ী ইসলাম চলবে না, বরং ইসলামের বিধান অনুযায়ী আমাদের পছন্দ ও কাজ-কর্মকে শুদ্ধ করতে হবে। এগুলোই দুনিয়ার পরীক্ষা আর যার ফলাফল জান্নাত কিংবা জাহান্নাম।
“নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত”। (সূরা আত-তওবা, আয়াত ১১১)
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ মহান আল্লাহ যদি কারও শাস্তি আর অবাধ্যতা অবধারিত করেন, তবে তাকে বুঝানোর ক্ষমতা আমাদের কেন-স্বয়ং রসূল (স) এরও ছিল না।
فَاِنۡ عَصَوۡكَ فَقُلۡ اِنِّیۡ بَرِیۡٓءٌ مِّمَّا تَعۡمَلُوۡنَ
তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, ‘তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত’। (আল কুর’আন-২৬, ২১৬)
রেফারেন্সসমূহঃ
«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِيْنَ، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوْا فَأْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهِ»
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট রয়েছে তা বর্জন করো যদি তোমরা মু’মিন হওয়ার দাবি করে থাকো। আর যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও’’। (সূরা বাক্বারাহ্ : ২৭৮-২৭৯)
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত (অভিসম্পাত) করেন সুদের সাথে সংশ্লিষ্ট চার (প্রকারের) ব্যক্তিসমূহকে। তারা হচ্ছে: সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও সুদের লেনদেনের সাক্ষী যারা থাকে ! (সহীহ মুসলিম-৩৯৮৫)
لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ.
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত (অভিসম্পাত) করেন সুদের সাথে সংশ্লিষ্ট চার (প্রকারের) ব্যক্তিসমূহকে। তারা হচ্ছে: সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও সুদের সাক্ষী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: তারা সবাই সমপর্যায়ের দোষী’’।
(মুসলিম ১৫৯৮; তিরমিযী ১২০৬; আবূ দাউদ ৩৩৩৩; ইবন মাজাহ্ ২৩০৭; ইবন হিববান ৫০২৫; আহমাদ ৬৩৫, ৬৬০, ৮৪৪, ১১২০, ১২৮৮, ১৩৬৪, ৩৭২৫, ৩৭৩৭, ৩৮০৯, ৪৩২৭, ১৪৩০২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
الرِّبَا ثَلَاثَةٌ وَّسَبْعُوْنَ بَابًا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: حُوْبًا، أَيْسَرُهَا مِثْلُ أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ، وَإِنَّ أَرْبَى الرِّبَا عِرْضُ الرَّجُلِ الْـمُسْلِمِ.
‘‘সুদের তিয়াত্তরটি গুনাহ্ রয়েছে। তার মধ্যে সর্বনিম্ন গুনাহ্ হচ্ছে, কোন ব্যক্তির নিজ মায়ের সঙ্গে ব্যভিচার করার সমতুল্য গুনাহ্। (ইবন মাজাহ্ ২৩০৪, ২৩০৫; হা’কিম : ২/৩৭ সাহীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৫৩৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
دِرْهَمُ رِبَا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَّثَلَاثِيْنَ زَنْيَةً.
‘‘সুদের একটি টাকা জেনেশুনে খাওয়া ছত্রিশবার ব্যভিচার চাইতেও মারাত্মক’’। (আহমাদ : ৫/২২৫ সাহীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৩৭৫)
***সুদের সম্পদ যত বেশিই হোক না কেন তাতে কোন বরকত নেই***
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«يَمْحَقُ اللهُ الرِّبَا وَيُرْبِيْ الصَّدَقَاتِ، وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيْمٍ»
’’আল্লাহ্ তা‘আলা সুদে কোন বরকত দেন না। তবে তিনি দানকে অবশ্যই বাড়িয়ে দেন। বস্ত্তত: আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক কৃতঘ্ন পাপীকে ভালোবাসেন না’’। (বাক্বারাহ্ : ২৭৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيْرُ إِلَى قُلٍّ.
‘‘সুদ যদিও দেখতে বেশি দেখা যায় তার পরিণতি কিন্তু ঘাটতির দিকেই’’। (হা’কিম : ২/৩৭ সাহীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৫৪২; ইবন মাজাহ্ ২৩০৯)
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ الرِّبَا لَا يَقُوْمُـوْنَ إِلاَّ كَمَا يَقُوْمُ الَّذِيْ يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْـمَسِّ، ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوْا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا، وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا»
‘‘সুদখোররা (কিয়ামতের দিন) শয়তানে ধরা ব্যক্তির ন্যায় মোহাবিষ্ট হয়ে দাঁড়াবে। আর তা এ কারণেই যে, তারা বলে: ব্যবসা তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম’’। (সূরা বাক্বারাহ্ : ২৭৫)
আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন:
«وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُؤُوْسُ أَمْوَالِكُمْ، لَا تَظْلِمُوْنَ وَلَا تُظْلَمُوْنَ، وَإِنْ كَانَ ذُوْ عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَى مَيْسَرَةٍ، وَأَنْ تَصَدَّقُوْا خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ»
‘‘আর যদি তোমরা সুদ খাওয়া থেকে তাওবা করে নাও তা হলে তোমাদের জন্য রয়েছে শুধু তোমাদের মূলধনটুকু। তোমরা কারোর উপর অত্যাচার করবে না এবং তেমনিভাবে তোমাদের উপরও কোন অত্যাচার করা হবে না। আর যদি ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি খুব অভাবগ্রস্ত হয়ে থাকে তাহলে তার স্বচ্ছলতার প্রতীক্ষা করো। আর যদি তোমরা তোমাদের মূলধনটুকুও দরিদ্র ঋণগ্রস্তদেরকে দান করে দাও তা হলে তা হবে তোমাদের জন্য আরো কল্যাণকর। যদি তোমরা তা জানো বা বুঝে থাকো তা হলে তা অতিসত্বর বাস্তবায়ন করো’’। (সূরা বাক্বারাহ্ : ২৭৯-২৮০)
সুদ খাওয়া, খাওয়ানো, লেখা ও সে ব্যাপারে সাক্ষী দেয়া যেমন হারাম অথবা কবীরা গুনাহ্ তেমনিভাবে সুদী ব্যাংকে টাকা রাখা, পাহারাদারি করা অথবা সুদী ব্যাংকের সাথে জড়িত থাকা কিংবা যে কোন ধরনের লেনদেন করাও শরীয়ত বিরোধী কাজ তথা অবৈধ।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«تَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى، وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ، وَاتَّقُوْا اللهَ، إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ»
‘‘তোমরা নেক কাজ ও আল্লাহ ভীরুতায় পরস্পরকে সহযোগিতা করো। তবে পাপাচার ও অত্যাচার করতে কাউকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই তিনি কঠিন শাস্তিদাতা’’। (সূরা মা’য়িদাহ্ : ২)
***সুদের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তারা অবশ্যই যালিম***
আর-
وَ لَا تَحۡسَبَنَّ اللّٰهَ غَافِلًا عَمَّا یَعۡمَلُ الظّٰلِمُوۡنَ ۬ؕ اِنَّمَا یُؤَخِّرُهُمۡ لِیَوۡمٍ تَشۡخَصُ فِیۡهِ الۡاَبۡصَارُ ﴿ۙ۴۲﴾
যালিমরা যা করছে সে ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে কক্ষনো উদাসীন মনে কর না। তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত ঢিল দিচ্ছেন যেদিন ভয়ে আতঙ্কে চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম আয়াতঃ ৪২)
আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র এবং তিনি একমাত্র পবিত্র বস্ত্তই গ্রহণ করে থাকেন। আর সুদ হচ্ছে অপবিত্র। সুতরাং তিনি তা কখনোই গ্রহণ করবেন না। সুদের টাকা খাদ্য, পানীয়, পোশাক-পরিচ্ছদ, গাড়ি, বাড়ি ইত্যাদির খাতে অথবা স্ত্রী-সন্তান এবং মাতা-পিতার ভরণ-পোষণ তথা কোন কাজেই ব্যয় করা যাবে না। তেমনিভাবে হজ্জ্ব কিংবা যাকাত আদায়সহ এরকম কোনক্ষেত্রেই তা ব্যয় করা যাবে না।
পুনশ্চঃ মানুষকে খুশি করা আমাদের কাজ নয়(!) আমাদের কাজ মহান আল্লাহকে খুশি করা, তাঁর সত্য বাণী পৌঁছিয়ে দেয়া পর্যন্তই। নিজের পছন্দ না হলেও মহান আল্লাহর বিধান অন্তরে মেনে নেয়া-মুখে স্বীকার করা ও সে অনুযায়ী আমল করার নামই প্রকৃত ঈমান, আর যারা এটা করতে পারবে তারাই মূলত মুসলিম।
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ
(সূরা আল ইমরান, আয়াত ১০২)
الله أعلم