26/07/2025
কবে যে আমরা মানুষ হিসেবে সামান্যতম হলেও দ্বায়িত্বশীল আচরন করতে শিখব?
আজকে ইনস্টিটিউট এ ঢোকার সময় মনে হলো আমি এ কোথায় আসছি! উৎসুক জনগনকে নিয়ন্ত্রণে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাজ করতে হচ্ছে।
কোথাও কোন দুর্ঘটনা হলে সাহায্য করার লোক অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হয়, অথচ তামাশা দেখার লোকজনের অভাব হয় না।হালের যা ট্রেন্ড, জনগনকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হবে আর পকেট থেকে ফোন বের করে ভিডিও নিতে হবে,কারন ভিউ তো বাড়াতে হবে!
অথচ একজন পুড়ে যাওয়া রোগীর জন্য সবচেয়ে জরুরী হলো কোলাহলমুক্ত, ভীড় থেকে দূরে, সংক্রমনমুক্ত আইসোলেটেড একটা পরিবেশ। পুড়ে যাওয়া রোগীর সবথেকে বড় শত্রু হলো Infection. আমাদের রোগীদের বলতে গেলে প্রায় 99% রোগী শেষ পর্যন্ত মারা যায় ইনফেকশন হয়ে Septicemia হয়ে। কারন নানা কারনে পুড়ে যাওয়া রোগীর জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি কম থাকে। একজন সাধারণ সুস্থ মানুষের শরীর তার শরীরে ঢুকে যাওয়া জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবাণু মেরে ফেলে। পুড়ে যাওয়া রোগীর পক্ষে এটা প্রায় অসম্ভব থাকে অনেক ক্ষেত্রে। তারউপর যত্রতত্র antibiotics ব্যবহারের কারনে প্রায় সব জীবাণু multidrug resistance. সাধারণ এন্টিবায়োটিক এখানে কাজ করে না বললেই চলে। সব মিলিয়ে পুড়ে যাওয়া রোগীর অবস্থা থাকে ভয়াবহ। এর ভেতরে যদি জনগন কারনে অকারনে এভাবে হাসপাতালে ভিড় জমাতে থাকে তাহলে এর consequences কি হবে বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি জানি না পৃথিবীর কোন হাসপাতালে মানুষ এভাবে ইচ্ছেমত ঢুকতে পারে। উন্নত পৃথিবীর যে কয়টি দেশের হাসপাতালে clinical attachment এ কিছুটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, ওগুলো এতটাই শান্ত আর আইসোলেটেড, মনে হয়েছে পৃথিবীর কোলাহল এর একদম বাইরে কোথাও এদের অবস্থান।
এরপর দেখলাম সারাদিন ধরে পুড়ে যাওয়া রোগীদের জন্য রক্ত সংগ্রহের জন্য যত আয়োজন। কি একটা অবস্হা। যেন সব রোগীকে এখনই ব্যাগের পর ব্যাগ রক্ত দিতে হবে। এমনিতেই তো হৈচৈ করে সবাই কে জানান দেয়া ছাড়া আমরা কোন কাজ ই করতে পারি না। রক্তদান অবশ্যই খুব ভাল কাজের মধ্যে একটি। কত রোগী অপারেশন আগে রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খায়। কিন্তু আগুনে পোড়া রোগীর প্রথমদিন রক্তের কোন প্রয়োজন নেই। প্রথম 24 ঘন্টা তো কখনোই না। পুড়ে যাওয়া রোগী প্রথম ২৪ ঘন্টা শুধুমাত্র হিসেব করে স্যালাইন পাবে। এরপর আমরা রোগীকে এসেস করব, Baseline investigations গুলো দেখব, তারপর প্রয়োজন অনুয়ায়ী add করব অন্যান্য কিছু। নানা কারনে পুড়ে যাওয়া রোগীর Albumin লেভেল কমে যায়, তাদেরকে আমরা দেই Fresh Frozen Plasma(FFP), কিন্তু সেটা প্রথম 24 ঘন্টায় কখোনই না। এরপর আরও পরে যখন আমরা তাদের definitive operation করব, কমবেশি রক্ত লাগবে তখন। তাই অগ্নিদূর্ঘটনা হলে সাথে সাথেই রক্ত দেবার জন্য হাসপাতালের ভিড় করার কোন প্রয়োজন নেই।
তাই, সবার প্রতি অনুরোধ, আসুন আমরা সবাই দ্বায়িত্বশীল আচরণ করতে শিখি। কোথাও কোন দূর্ঘটনা হলে সেটা শুধুমাত্র কৌতুহল থেকে দেখতে কিংবা ভিডিও না করে দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত মানুষদের জন্য তাদের কাজ নির্বিঘ্নে করতে পারার পরিবেশ নিশ্চিত করি। কারনে অকারনে হাসপাতালের ভিড় না করি। ডাক্তার, নার্স সহ হাসপাতালের সকল কর্মীদের তাদের কাজ ঠিকঠাক করতে দেই। সর্বোপরি রোগীদের প্রাইভেসীকে সম্মান করি এবং তাদের জন্য জীবাণুমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়তা করি।
সবাই বাচ্চাগুলির জন্য দোয়া করবেন। পরম করুনাময় তাদের কষ্ট কমিয়ে দিন, তাদেরকে খুবই তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলবেন এটাই প্রার্থনা।
আর হ্যাঁ, পুড়ে যাওয়া রোগীর জন্য প্রথম কাজ হলো প্রচুর পানি ঢালা, সাধারণ তাপমাত্রার ট্যাপের পানি, কমপক্ষে 20 মিনিট। এটি বার্ন এর ভয়াবহতা অনেক কমিয়ে দেবে।
ধন্যবাদ।
ডা. নূরুন্নাহার লতা
প্লাস্টিক,রিকন্সট্রাক্টিভ ও হ্যান্ড সার্জন।