23/04/2025
Collected & Edited ( Non Political Post)
অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দীর্ঘায়ু হয়েছেন। মৃত্যুর সময় ওনার সঠিক বয়েস ছিল ৯৪… ৯৪ বছর একটিভ লাইফ আসলেই রেয়ার এবং বি চৌধুরী স্যার ৯৪ বছর পর্যন্তই মোটামুটি কর্মক্ষমই ছিলেন। তারপরও উনি যাবার জন্যে রেডি ই ছিলেন এবং যখন ওনার ডাক এসেছে - উনি যে কোন মূল্যে এই পৃথিবীর মাটি ঘেঁষে পরে থাকার চেষ্টা করেন নি।
আমি ওনার অসুখের ডিটেইল জানি না। ধরে নিলাম বার্ধক্য জনিত রোগ। যখন অসুস্থ হলেন - উনি কি করেছেন আর কি করেন নি তার একটা লিস্ট দেই আপনাদের:
১. উনি ভর্তি হয়েছে নিজের তৈরী হাসপাতাল - উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
২. উনার চিকিৎসার দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওনার স্টুডেন্টদের - যাঁদের কে উনি চিকিৎসা সেবা শিখিয়েছেন। কোন মেডিকেল বোর্ড, ধানাই পানাই নেই ।
৩. উনি প্রথমেই একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করে দিয়েছেন ওনার চিকিৎসকদের - বাবারা আমার বয়েস ৯৪। এখন আমার যাবার সময়। তোমরা আমার কমফোর্ট এনসিউর করো - কোন সার্জারি, ডেইলি খোঁচা খুঁচি, একগাদা ঔষধ কিছু লাগবে না। অক্সিজেন যদি আমাকে কমফোর্ট দেয় - শুধুই অক্সিজেন দাও। আমি আমার জীবন যাপন করেছি পরিপূর্ন ভাবে। আল্লাহ আমাকে যদি আয়ু আরো দেন দেবেন, ওই কয়টা দিন যাতে একটু কম্ফোর্টেবল থাকতে পারি - এই বয়সে এসে একদিন বেশি বাঁচার জন্যে সারা দুনিয়ার বিনিময়ে যমের সাথে রেসলিং করার আগ্রহ আমার নেই।
৪. ওনার কমফোর্ট নিশ্চিত করা হয়েছে - উনি নামাজ কালাম পড়েছেন। উনি রবীন্দ্র সংগীত পছন্দ করতেন। তরুণ চিকিৎসকরা / ওনার ছাত্রীরা পাশে বসে গান শুনিয়েছে যখন উনি যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। এই একই কাজটা পশ্চিমা দেশের অধিকাংশ রুগীই করেন।
এবার বলি উনি কি করেন নি -
👉 উনি সিএমএইচ এ পাঠানোর জন্যে বায়না ধরেন নি। নিজের হাতে গড়া চিকিৎসক ও হাসপাতালের উপর আস্থা রেখেছেন।
👉দুনিয়ার সব ডাক্তার ডেকে এনে দৈনিক মেডিকেল বোর্ড এর মতো একটা সার্কাস এর সাবজেক্ট করেন নি নিজেকে।
👉কর্পোরেট হাসপাতালে গিয়ে আশ্রয় নেন নি।
👉এয়ার এম্বুলেন্স এ করে ব্যাংকক / সিঙ্গাপুর যাওয়ার বায়না ধরেন নি।
👉পই পই করে বলে দিয়েছেন যে, না, ভেন্টিলেশন না। আইসিইউ বেডে হাত বাধা অবস্থায় - শরীরের সবগুলো ওপেনিংয়ে একটা করে টিউব ঢোকানো অবস্থায় না, মৃত্যু টা যেন হয় মর্যাদার সাথে, পিসফুলি।
আইসিইউ চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি এবং অনেক ক্ষেত্রে আইসিইউতে চিকিৎসা দিয়ে প্রচুর অর্থব্যয় ছাড়া আউটকাম এর কোন পরিবর্তন হয় না। একবার বা দু’বার না, অন্তত একশোর বেশি ঘটনা বাংলাদেশে রিপিট হতে দেখেছি ।
একজন নব্বই উর্ধ্ব প্রপিতামহ অসুস্থ হয়ে জীবনের শেষ একটা মাস হাসপাতালে কাটালেন, মৃত্যু পর্যন্ত। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত প্রপিতামহ জানলেন কিংবা বুঝলেন কিনা জানি না যে তার ভালো চিকিৎসা হল আইসিঊতে কিন্তু তার ভালো চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পুরো পরিবারটা অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু হয়ে গেলো। আইসিইউর লিমিটেড বেড আর রিসোর্স গুলো দখল হয়ে থাকল একজনের জন্য যার জীবন এমনিতেই শেষ প্রান্তে যে কি না ডিমেনশিয়া আর নানাবিধ রোগে শয্যাশায়ী বছরের পর বছর ধরে। আইসিইউ লিমিটেড রিসোর্সটা ব্যবহার করা যেতে পারতো একজন বিশ বছর বয়সী তরুণ রুগীর জন্য।
আরেকজন এই কাজ করেছেন কিছুদিন আগে, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। নিজের হাসপাতাল ছেড়ে বিদেশ মুখী হন নি। লাইফ সাপোর্টেও থাকতে চান নি। এই উইজডম ডা. বি চৌধুরী বা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছিল। অধ্যাপক বি চৌধুরী অনেক উচ্চ শিক্ষিত, উঁচু পরিবারের, উচ্চ রুচির মানুষ। এঁরা আমাদের সামনে যে উদাহরণ তৈরী করে গেলেন- জাতিগত ভাবে তা আমরা কি ফলো করতে পারবো? ফলো করবো? নাকি চিরাচরিত প্রথায় ব্যাংকক থেকে কাঠের বাক্সে করে দেশে ফিরবো?
ওঁনাদের এই লাস্ট এক্টগুলো কি আমাদের এই ব্যয়বহুল জাতিগত স্বভাব কালচারে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনতে পারবে?
—————————————————————————————
লেখা: রুমি আহমেদ খইউ এমডি এফসিসিপি
ইন্টারনাল মেডিসিন, ক্রিটিকাল কেয়ার, পালমোনারি, নিউরোক্রিটিকাল কেয়ার, ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার বোর্ড সার্টিফায়েড ও বিশেষজ্ঞ , যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অস্টিন এর অধ্যাপক।