20/02/2025
স্বৈরাচারী আ.লীগের ঘুষ ও দুর্নীতিবাজ বিএভিএস এর উপ-পরিচালক নজরুল এখন কোটিপতি
স্বৈরাচারী আ.লীগের ঘুষ ও দুর্নীতিবাজ বিএভিএস এর উপ-পরিচালক নজরুল এখন কোটিপতি
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মা ও শিশু সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বিএভিএসের উপ-পরিচালক অর্থ (সাময়িক বরখাস্তকৃত)নজরুলের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছে বিএভিএস এর ৯২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, সম্প্রতি উপপরিচালক নজরুলের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানববন্ধন বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করছে বিএভিএস এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে। নজরুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন বিএভিএস নোয়াখালী ব্রাঞ্চে, পরবর্তীতে ওনার দূর সম্পর্কের চাচা জয়েন্ট চিফ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং প্রভাব খাটিয়ে অনৈতিকভাবে পদোন্নতি নিয়ে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেন, বিএভিএস এর সার্ভিস রুলস-এ ডি.ডি ফাইনান্স পদ না থাকা সত্তে¡ও তিনি সেই পদ তৈরি করে সেই পদে আসিন হন। অবৈধভাবে নিজের ছোট ভাই ইমামুল ইসলাম শাহীনকে নিজের ক্ষমতা বলে পদোন্নতি দেন, অন্যান্য যোগ্য কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে তাঁর খালাতো ভাই মনির কে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বিএভিএস প্রধান কার্যালয়ে পদোন্নতি দেন। নোয়াখালী বিএভিএস মা ও শিশু হাসপাতালে ৪১ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর মধ্যে ৩২ জনকে উনি অবৈধভাবে ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেন, এবং এই অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে তাঁর ছোট ভাই ইমামুল ইসলাম শাহিন জড়িত এবং জনপ্রতি তিনি তিন থেকে চার লক্ষ টাকা করে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। নোয়াখালীতে ছোট ভাই থাকার সুবাদে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে বাজেট বরাদ্দ দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী কর্মকর্তা সংবাদ দিগন্ত কে জানান, নজরুল সাহেবের ছোট ভাই শাহীন আমার কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে চাকরি দেন, ভদ্রমহিলা আরো জানান তার দরিদ্র পিতার জমি বিক্রির টাকা সেই চাকরির জন্য দেন, তাকে শাহীন বলেন এই টাকা উপরের সব কর্মকর্তাদেরকে ভাগ করে দিতে হবে তাহলেই তোমার চাকরি হবে। এই কথা বলে টাকা নিয়ে তারা দুই ভাই মিলে আত্মসাৎ করে, এবং শাহীন নোয়াখালী ব্রাঞ্চের বিভিন্ন নারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের যৌন হয়রানি করেন এবং বলেন আমাদের হাত অনেক উপরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমার ভাইয়ের বন্ধু এই ভয়ে আজ পর্যন্ত কোন নারী তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি। অভিযোগ আছে নোয়াখালীতে ব্যাংক হিসাব পরিচালনার জন্য নোয়াখালী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে যৌথ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রেও শিথিলতা রাখেন, নজরুল সাহেব বিএভিএস এর আত্মসাৎকৃত অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে ছোট ভাই শাহীন ও তার স্ত্রীর নামে এফডিআর করে রেখেছেন । নোয়াখালীর হাতিয়ার চরে দরিদ্র কৃষকের চার সন্তানের মধ্যে শুধুমাত্র স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে নজরুল সাহেব বাকি তিন ভাইকে বিএভিএসে চাকরি দেন, পরবর্তীতে ঘুষ দুর্নীতির টাকায় নোয়াখালী মাইজদীতে গড়ে তুলেছেন একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি, অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানের চারজন কর্মচারীকে নিজের বাসায় কাজের লোক হিসেবে নিয়োগ দেন অথচ তাঁদের মাসিক বেতন বিএভিএস এর ফান্ড থেকে দেওয়া হয় এবং তাঁরা শুধুমাত্র বেতন নেওয়ার জন্য একদিন অফিসে আসেন, এবং তার বাসায় কাজ করার সুবাদে ওই চার ব্যক্তিকে তিনি অবৈধভাবে পে স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করেন। নজরুলের প্রভাব খাটিয়ে খুলনা শাখায় মামুনুর রশিদ (পিয়ন) কে অবৈধভাবে ব্রাঞ্চ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতি মাসে অর্থ নেন। কথিত আছে এই মামুনুর রশিদ তাঁর ভায়রার ছেলে, এবং মামুনুর রশিদ এর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন নজরুলের ভাতিজা রফিকুল ইসলাম রায়হান (অফিস সহকারী)।
২০০৮ ইং সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে নজরুল সাহেবের বাড়ি নোয়াখালী হওয়ার সুবাদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং প্রচার করেন ওবায়দুল কাদের তাকে ছোট ভাইয়ের মতো দেখেন, সেই প্রভাব খাটিয়ে নিজের স্ত্রী আয়েশা আক্তার কে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করেন এবং তাঁর ছেলে অনিক উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ শাখা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোর গ্যাং এর প্রধান, তাঁর আপন শ্যালক ইসমাইল হোসেন টঙ্গী থানার ৩৫ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন, গত ৫ ই আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন হলে টঙ্গীর ছাত্রজনতার গণপিটুনিতে শ্যালক ইসমাইল ঘটনাস্থলে নিহত হন, স্ত্রী আয়েশা আক্তার আহত অবস্থায় পালিয়ে যান এবং ছেলে অনিক গা ঢাকা দেন। গাজীপুর টঙ্গী ও উত্তরা বিভিন্ন ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই অনিক ও তার মামা ও তাঁর মায়ের প্রভাবে অনেকে নিঃস্ব করেছেন এবং বিভিন্ন মামলা ও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। বিএভিএস এর কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী সংবাদ দিগন্তকে বলেন এ নজরুল ইসলাম গত ১৫ বছর যাবত আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে বিএভিএস কে ধ্বংস করে দিয়েছে এখানে শুধু তার পরিবারতন্ত্র চলত সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি বিএভিএস প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শাখায় তার আত্মীয়-স্বজন ও নিজস্ব লোককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। যারাই তাঁর প্রতিবাদ করেছেন হয় চাকরি হারিয়েছে এবং বিভিন্ন অত্যাচার ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। পিয়ন মীর আহমেদ(২০০৬ ইং সালে) ও অফিস সহকারি তোরাব আলী ২০২০ ইং সালে মারা গেলেও ব্যক্তিগত ফাইল না পাওয়ার অজুহাতে অদ্যবধি তাদেরকে প্রাপ্য গ্রাচুইটির অর্থ প্রদান করা হয়নি। প্রশাসককে অবজ্ঞা করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রভিডেন্ট ফান্ড ৯ লক্ষ টাকা ও গ্রাচুইটি তহবিল থেকে ২০ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন। তার বন্ধু, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (অর্থ) কর্মকর্তা নুর নবীকে বিএভিএস এর প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ৬ মে ২০১৮ সালে ৩০ লক্ষ টাকা প্রদান করেন যা এখন পর্যন্ত রিফান্ড করা হয়নি। অথচ বিএভিএস প্রতিষ্ঠান এর কর্মকর্তা কর্মচারীদের আট মাসের বেতন ভাতা বকেয়া থাকার পরও গচ্ছিত তহবিল প্রভিডেন্ট ফান্ড হতে লোন চাইলে কাউকেই প্রদান করেননি। নজরুল সাহেব ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ২৪ বছর যাবত কর্মরত থাকা ভিজিটিং কনসালটেন্ট ডাক্তার আফরোজা মনোয়ারকে বিএভিএস মেটারনিটি হাসপাতাল হতে বের করে দেন। বিএভিএস প্রধান কার্যালয়ের একটি মাইক্রোবাস ঢাকা মেট্রো চ-৫১-৫০৫৩ গাড়িটি প্রভাব খাটিয়ে সচল গাড়ি কে অচল দেখিয়ে নামমাত্র মূল্যে ৬০,০০০/= টাকায় তার ভাতিজা মওদুদ আহমেদের নিকট সুকৌশলে বিক্রয় দেখালেও মূলত গাড়িটি তার পরিবারের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হয়। গাড়িটির বর্তমান বাজার মূল্য ১০ লক্ষ টাকা যা সংস্থার আর্থিক ক্ষতি ও স্বার্থপরিপন্থী কাজ বলে বিবেচিত। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অফিস সময় ৯ টা থেকে ৫ টা হলেও তিনি হাসপাতালের কর্মচারীদের রাত বারোটা পর্যন্ত তার ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নিতেন এবং কোন ধরনের ওভারটাইম প্রদান করতেন না, এছাড়াও নজরুল ইসলামের নামে নিয়োগ বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রেও অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের কর্মরত আয়ারা/ ওয়ার্ডবয় দীর্ঘ ১৫-২০ বছর যাবত কর্মরত থাকলেও তাদের বেতন সর্বসাকুল্যে ১০,২৫০/= টাকা অথচ উক্ত পদে তার নিকট আত্মীয়-স্বজনকে শুরুতেই ১৩ হাজার টাকা বেতন প্রদান করেন এবং দুই মাসের ব্যবধানে সরকারি বেতন স্কেল-এ অন্তর্ভুক্ত করে নেন। নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিএভিএস এর অন্তর্ভুক্ত দুইটি দোকান তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু জিহাদ উদ্দিন এর ছেলেকে নামমাত্র মূল্যে ভাড়া দিয়ে প্রতিষ্ঠানের বিশাল অংকের আর্থিক ক্ষতি করেছেন এবং তিনি বিভিন্ন খরচের ভাউচার দেখিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
গত পাঁচ আগস্ট’ ২০২৪ ইং স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন হলেও স্বৈরশাসক নজরুলের পতন হয়নি এবং ক্ষমতার দাম্ভিকতা কোনোভাবেই কমেনি, বিএভিএস এর প্রধান কার্যালয় নজরুলের ছেলে অনিক ও তার শ্যালক ইসমাইল সহ অনেকেই বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক আড্ডা ও বিভিন্ন ধরনের মিটিং করতেন এবং নজরুল হাসপাতালের ফান্ড থেকে তাদের যাওয়া আসার গাড়ি ভাড়া ও ওই মিটিং এর আপ্যায়নের খরচ দিয়ে দিতেন, কয়েকজন কর্মচারী বলেন অনিক বেশিরভাগ সময়ই মাতাল অবস্থায় হাসপাতালে এবং আসতো সব সময় তার কোমরে অবৈধ অস্ত্র থাকতো অধিকাংশ সময় ভয়ে কেউ তাঁর কোন কথা বলতো না। গোপন সূত্রের ভিত্তেতে গত ১০/০২/২০২৫ ইং তারিখে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও মিরপুর মডেল থানার পুলিশ এর অভিযানে বিএভিএস হসপিটাল থেকে নজরুল সাহেবের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রফিকুল ইসলামের লকার থেকে অবৈধ দেশি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেন। অনুসন্ধানে জানা যায় এই অস্ত্রের মূল মালিক হচ্ছেন নজরুল ইসলামের ছেলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা অনিক, এবং এই অস্ত্র দিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর হামলা চালিয়েছেন।
অভিযোগ আছে নজরুল ইসলাম প্রকাশ্যে কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আওয়ামী লীগ চলে গেছে তাতে কি হয়েছে!! সকল মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের সর্বস্তরে আমাদের লোক রয়েছে এবং আমাদের ক্ষমতা এখনো অটুট রয়েছে। হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন হলেও বিএভিএসে এখনো স্বৈরশাসকরা বহাল তবিয়তে আছেন এবং ওনাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও উনি উনার প্রভাব খাটিয়ে পুনরায় বিএভিএস এ ফিরে আসবেন। আর তিনি যদি ফিরে আসেন তাহলে অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী চাকরি হারাবেন এবং বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার ও হয়রানীর শিকার হবেন। ইতিমধ্যেই মোবাইল ফোনে ও বিভিন্নভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন প্রতিমুহূর্তে আমরা আতংকে দিন যাপন করছি, স্বৈর শাসক শেখ হাসিনার যদি ৫ ই আগস্ট পতন না হত তাহলে যেমন ছাত্র-জনতা নির্বিচারে হত্যা করা হতো ঠিক তেমনি এই বিএভিএস এ নজরুল ইসলাম যদি পুনরায় তার পদে ফিরে আসেন তাহলে অনেকেই সে রকম গণহত্যা অত্যাচার হয়রানি ও এবং অনেকেই চাকরি হারাবেন।
এই অভিযোগের বিষয়ে নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমি অসুস্থ আপনাকে আধা ঘন্টা পরে ফোন দিচ্ছি” এরপরে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি এবং তাকে ক্ষুদ্র বার্তা পাঠানোর পরও কোন ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি। দুর্নীতির অর্থে গড়া নজরুল ইসলামের অর্থ সম্পদ ও তার ক্ষমতার উৎস কি এবং তিনি কাদের প্রভাবে