17/09/2025
আপনার নবজাত শিশুটি বা ৩/৪ মাস বয়স এর শিশু সন্তানটি কী কোনো কারণ ছাড়াই অনবরত কেঁদে যাচ্ছে। আপনি বুঝতে পারছেনই না কি কারনে এমনটা হতে পারে? হতে পারে আপনার শিশুটি কলিক বেবি।
অর্থাৎ শিশুদের কলিক (Colic) বলতে বোঝায়, বিশেষ করে নিউবর্ন বা ৩–৪ মাস বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, অস্বাভাবিকভাবে বেশি কান্না করা ও পেটের ব্যথাজনিত অস্বস্তি। এটা সাধারণত শিশুর জন্য ক্ষতিকর বা মারাত্মক রোগ নয়, তবে বাবা–মায়ের জন্য খুব কষ্টকর অভিজ্ঞতা। আপনাদের সুবিধার্থে নিচে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরলাম:
---
🍼 কলিক কি?
কলিক মূলত এমন একটি অবস্থা যেখানে শিশু প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে অকারণে কাঁদে।
সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি শিশু দিনে ৩ ঘণ্টার বেশি, সপ্তাহে ৩ দিন বা তার বেশি, এবং এভাবে অন্তত ৩ সপ্তাহ ধরে কাঁদে, সেটিকে কলিক ধরা হয়।
---
🐣 কোন বয়সে হয়?
সাধারণত ২ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়,
৬ সপ্তাহে বেশি হয়,
৩–৪ মাস বয়সের পর ধীরে ধীরে কমে যায়।
---
⚠️ কেন হয়? (সম্ভাব্য কারণ)
এখনও সঠিক কারণ জানা যায়নি, তবে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ হলো:
1. পেটের গ্যাস জমা হওয়া – শিশুর হজম সিস্টেম পুরোপুরি তৈরি না থাকায় দুধ হজমে সমস্যা হয়।
2. অতিরিক্ত বায়ু গেলা – দুধ খাওয়ার সময় বা কান্নার সময় বাতাস পেটে ঢুকে যায়।
3. ইম্যাচিউর ডাইজেস্টিভ সিস্টেম – জন্মের পর হজমপ্রণালী ঠিকমতো কাজ না করার কারণে ব্যথা হয়।
4. অতিরিক্ত উদ্দীপনা (Overstimulation) – চারপাশের পরিবেশের শব্দ, আলো বা বেশি নড়াচড়া শিশুকে অস্বস্তিতে ফেলে।
5. ফুড সেনসিটিভিটি – কখনও কখনও মায়ের খাওয়ার কিছু খাবার (দুধ, কফি, ঝাল খাবার) বুকের দুধে গিয়ে শিশুর অস্বস্তি বাড়ায়।
---
🩺 যে লক্ষন গুলো খেয়াল করবেন:-
🔸হঠাৎ করে অসংযত কান্না শুরু করা (বেশি করে বিকেল বা রাতে হয়)।
🔸শিশুর কান্না তীক্ষ্ণ ও চিৎকারের মতো।
🔸পা ভাঁজ করে পেটের দিকে টেনে নেয়।
🔸মুখ লাল হয়ে যায়, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।
🔸পেট শক্ত মনে হয়, গ্যাস বের হতে কষ্ট হয়।
---
🧸 কি করলে উপকার হয়? বা আপনার সন্তানটি আরাম বোধ করবে।
1. ঢেঁকুর তোলা – খাওয়ানোর পর ভালোভাবে ঢেঁকুর তুলিয়ে দিন।
2. গ্যাস রিলিফ পজিশন – শিশুকে পেটের উপর কোলের ওপর শোয়ান, অথবা হাঁটুর উপর উপুড় করে আলতো করে চাপড় দিন।
3. হালকা পেট ম্যাসাজ – ঘড়ির কাঁটার দিকে হালকা করে পেট ম্যাসাজ করলে গ্যাস বের হতে পারে।
4. সোয়াডলিং – কাপড়ে ভালোভাবে জড়িয়ে নিলে আরাম পেতে পারে।
5. রিদমিক নড়াচড়া – কোলের মধ্যে হালকা দোলানো, গাড়িতে চড়ানো বা হোয়াইট নয়েজ (ফ্যানের শব্দ) কিছু শিশুর ক্ষেত্রে উপকার করে।
6. খাওয়ানোর পদ্ধতি ঠিক করা –
বোতলে খাওয়ালে নিপলের সাইজ ঠিক কিনা দেখুন।
বুকের দুধ খাওয়ালে উভয় স্তন থেকে সঠিকভাবে খাওয়াতে হবে।
7. শিশুকে হালকা কুসুম গরম সেক দেয়া।
8. মায়ের ডায়েট পরিবর্তন – যদি শিশু এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিড হয়, তবে মায়ের দুধে গ্যাস তৈরি করে এমন খাবার (কফি, বাঁধাকপি, ডাল, দুধ) সীমিত করতে হতে পারে।
---
💊 চিকিৎসা
সাধারণত ওষুধের দরকার হয় না।
🚨 কবে ডাক্তার দেখাবেন?
যদি শিশুর সাথে নিচের কোনো উপসর্গ থাকে:
জ্বর, বমি, ডায়রিয়া বা রক্তযুক্ত পায়খানা।
শিশুর ওজন না বাড়া।
খুব দুর্বল বা অস্বাভাবিকভাবে ঘুমায়।
খাওয়ায় আগ্রহ নেই।
👉 কলিক শিশুদের একটি সাধারণ, সাময়িক এবং ক্ষতিকর নয় এমন অবস্থা। ধৈর্য, সঠিক খাওয়ানো ও পরিচর্যার মাধ্যমে বেশিরভাগ শিশুই ৩–৪ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
#কলিকবেবি
#শিশুরস্বাস্থ্য
#নবজাতকেরযত্ন
#শিশুরকান্না
#শিশুরগ্যাসসমস্যা
#সুস্থশিশু