
27/05/2025
১৯২৯ সালে, এক ২৫ বছরের তরুণ ডাক্তার নিজের হাতে কাটাকুটি করে একটা ক্যাথেটার ঢুকিয়ে দিলেন নিজের হার্টে।
☕️ না ছিলো কারো অনুমতি, না ছিলো কারো তদারকি—শুধু একরাশ পাগলামো আর আত্মবিশ্বাস।
☕️মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন এক তত্ত্ব, যেটা কেউ বিশ্বাসই করত না।
☕️আর এই ‘পাগলামো’ই পরে কোটি কোটি প্রাণ বাঁচালো।
এই গল্পের নায়ক—ভেরনার ফোরসমান।
☕️মাত্র ২৫ বছর বয়সে, বার্লিনের কাছাকাছি এক ছোট্ট হাসপাতালের ইন্টার্ন ছিলেন।
☕️তাঁর মাথায় একটা অদ্ভুত ভাবনা এসেছিল—হার্টে সরাসরি না কেটে যদি ভেতর থেকে পৌঁছানো যায়?
সবার চোখে সেটা ছিল পাগলের প্রলাপ। সিনিয়ররাও শুনে উড়িয়ে দেন।
☕️কিন্তু ফোরসমান দমলেন না।
অপারেশন করার সরঞ্জাম জোগাড় করলেন, আর দরকার ছিল একটা 'টেস্ট সাবজেক্ট'।
তখনকার নার্স গার্ডা ডিটজেনকে বললেন—"তোমার শরীরে করব এই পরীক্ষা।"
আসলে মিথ্যে বলেছিলেন।
☕️শেষ মুহূর্তে নার্সকে টেবিলে বেঁধে রেখে, নিজেই নিজের হাতে কাটলেন।
☕️লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া দিয়ে নিজের বাঁ হাতের কনুইয়ের পাশে কেটে ফেললেন চামড়া।
ভেতরের শিরায় ঢুকিয়ে দিলেন ক্যাথেটার।
ধীরে ধীরে ঠেলে নিয়ে যেতে লাগলেন, হার্টের দিকে।
☕️তখন কেউ জানত না—এই কাজ করলে সে মরে যাবে কিনা।
কিন্তু সে তো থামার লোক না।
ক্যাথেটার শরীরে রেখেই নার্সকে ছেড়ে দিলেন, আর দুজনে দৌড়ে গেলেন এক্স-রে রুমে।
☕️কারণ দরকার ছিল প্রমাণ!
ফ্লুরোস্কোপ মেশিনের নিচে দাঁড়িয়ে ক্যাথেটার ঠেলতে ঠেলতে দেখলেন—ঠিকঠাক হার্ট অবধি পৌঁছেছে!
☕️সেই সময় হাসপাতাল জুড়ে হুলুস্থুল কাণ্ড!
সহকর্মীরা ছুটে এসে তাঁকে আটকাতে চাইছিল,
কিন্তু ততক্ষণে তিনি এক্স-রে তুলে ফেলেছেন।
☕️নিজের শরীরে পরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন—হার্টে না কেটেও পৌঁছানো যায়।
☕️কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়।
আরও দশ বছর পর, আমেরিকার দুই ডাক্তার—আন্দ্রে কুরনান্দ আর ডিকিনসন রিচার্ডস,
ফোরসমানের কাজ খুঁজে বের করেন।
তাঁরা সেই পদ্ধতিকে উন্নত করে দেখিয়ে দেন—এই ক্যাথেটার দিয়ে হার্টের প্রেসার মাপা, রোগ নির্ণয়, এমনকি চিকিৎসাও সম্ভব।
☕️ফোরসমানের পাগলামো যে আসলে ভবিষ্যতের পথ দেখিয়েছিল, সেটা প্রমাণ হয়ে যায়।
১৯৫৬ সালে—তিনজন একসঙ্গে পান চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার।
☕️যে কাজের জন্য চাকরি খোয়াতে হয়েছিল, সেটা-ই আজ কোটি কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছে।
☕️আজকের আধুনিক কার্ডিওলজির ভিত গড়ে দিয়েছেন এই মানুষটা।
হার্টে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে যা সম্ভব হয়েছে—তা চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব এনে দিয়েছে।
☕️শেষমেশ, ফোরসমান শুধু ডাক্তার ছিলেন না—
তিনি ছিলেন এক বিদ্রোহী, এক দুঃসাহসিক, আর এক ভবিষ্যৎদ্রষ্টা।
আর এসব করেছেন শুধু এই বিশ্বাসে—
"রোগীদের ভালো করার আরও ভালো উপায় নিশ্চয়ই আছে।"
(লেখা ও ছবি : সুতীর্থ ভট্টাচার্য এর wall থেকে সংগৃহীত )