
14/02/2025
মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী কারা?
একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য অনেকগুলো বিষয়ের সাথে জড়িত। যেমন, পরিবারে তার বেড়ে ওঠার ইতিহাস, জৈবিক গড়ন, পিতামাতা বা অন্য অভিভাবক/পরিচর্যাকারীর সাথে তার বন্ধন, সামাজিকীকরণ, শিক্ষা ও পেশাগত দক্ষতা, প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে চলার সক্ষমতা ইত্যাদি। তাই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় সমাধান আসে বহুমাত্রিক ব্যবস্থাপনায়। অর্থাৎ একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যে ব্যাঘাত ঘটলে একাধিক পেশাদারের সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে। কী ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে তা নির্ভর করছে সমস্যার গভীরতার ওপর। সাধারণ মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবিদের নিয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাব লক্ষণীয়। সেই স্বচ্ছতার জন্য নিচে সকল পেশাজীবীদের সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দিচ্ছি। কার কোন কাজ ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার সময় আপনার কী কী অধিকার রয়েছে তা এখান থেকে জানতে পারবেন—
সাইকিয়াট্রিস্ট বা মনঃচিকিৎসক
মনঃচিকিৎসক সাধারণত এমবিবিএস ডিগ্রী সম্পন্ন করার পর মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক রোগের ওপর নিবিড় পড়াশোনা এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। তাঁরা মানসিক রোগ সনাক্ত করেন এবং এর ভিত্তিতে ঔষধের পরামর্শ দেন। ক্ষেত্র বিশেষে প্রশিক্ষিত অনেক মনঃচিকিৎসক কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপীও করে থাকেন।
কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট
সাইকোলজি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে কাউন্সেলিং সাইকোলজি নিয়ে মাস্টার্স এবং এমফিল ডিগ্রী অর্জন করতে হয়। মাস্টার্স এবং এমফিল পর্যায়ে নিবিড় প্রশিক্ষণ, সুপারভিশন আর সরাসরি ক্লায়েন্ট দেখতে হয়। একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট মানসিক স্বাস্থ্যের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করে থাকেন। মনস্তত্বের জৈবিক, সামাজিক, ও পরিবেশগত দিক পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্লায়েন্টের বর্তমান মানসিক অবস্থার ওপর ধারণা করেন এবং সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত কাউন্সেলিং পদ্ধতি ব্যবহার করেন। কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টদের সেবা শুধু মানসিক রোগীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। যেকোনো মানুষ জীবনের যেকোনো পর্যায়ে কাউন্সেলিং সেবা নিতে পারে। তাঁরা কোনো ধরনের ঔষধের পরামর্শ দেন না। তবে সমস্যার ধরন অনুযায়ী অনেকক্ষেত্রে তাঁরা মনঃচিকিৎসকের কাছে ক্লায়েন্টকে রেফার করেন। একটি কাউন্সেলিং সেশন সাধারণত ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা ব্যাপি হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং সাইকোলজির ওপর বিশেষায়িত মাস্টার্স এবং এমফিল ডিগ্রী করার সুযোগ আছে।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট
সাইকোলজি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি নিয়ে মাস্টার্স এবং এমফিল ডিগ্রী অর্জন করতে হয়। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টকেও মাস্টার্স এবং এমফিল পর্যায়ে নিবিড় প্রশিক্ষণ, সুপারভিশন আর সরাসরি ক্লায়েন্ট দেখতে হয়। তারাও কোনো ঔষধের পরামর্শ দেন না। মনঃচিকিৎসকের পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরাও মানসিক রোগের চিকিৎসায় মনোবৈজ্ঞানিক সেবা যেমন কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপী দিয়ে থাকেন।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি’র ওপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত মাস্টার্স এবং এমফিল ডিগ্রী করার সুযোগ আছে।
এডুকেশনাল অথবা স্কুল সাইকোলজিস্ট
শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় নানাবিধ মানসিক অসুবিধা মোকাবেলায় এডুকেশনাল বা স্কুল সাইকোলজিস্ট কাজ করে থাকেন। শিশুর বেড়ে ওঠা, শিক্ষণজনিত সমস্যা, শিক্ষা প্রক্রিয়া, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর জন্য কারিকুলাম ও শিক্ষা পদ্ধতির জন্য পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। এডুকেশনাল সাইকোলজিস্টরা শিশু, স্কুল, শিক্ষক এবং অভিভাবকের সাথে যৌথভাবে সেবা দিয়ে থাকেন। এদেরও সাইকোলজি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে এডুকেশনাল বা স্কুল সাইকোলজি নিয়ে মাস্টার্স এবং এমফিল ডিগ্রী অর্জন করতে হয়।
এডুকেশনাল বা স্কুল সাইকোলজি’র ওপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত মাস্টার্স এবং এমফিল ডিগ্রী করার সুযোগ আছে।
কাউন্সেলর
সাইকোলজিতে স্নাতক বা উচ্চতর ডিগ্রী না নিয়েও মনোবৈজ্ঞানিক সেবার বিভিন্ন তত্বের ওপর নিবিড় প্রশিক্ষণ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকেন। এদেরকে মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলর বলা হয়ে থাকে। সমস্যার ধরন দেখে এরা যথাযথ পেশাদারের কাছে ক্লায়েন্টকে রেফার করে থাকেন।
ক্লিনিক্যাল সোস্যাল ওয়ার্কার
মানসিক অসুস্থতার প্রাথমিক মূল্যায়ন, সনাক্তকরণ, প্রয়োজনীয় সেবার দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সমাজ কর্ম বিষয়ে স্নাতক সহ ক্লিনিক্যাল সোস্যাল ওয়ার্কে উচ্চতর ডিগ্রী আর প্রশিক্ষণ থাকতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে পড়ার সুযোগ আছে।