
24/04/2024
অফিসের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর ফোনে কথোপকথন থেকে মনে হলো ডিম নিয়ে কিছু কথা বলতেই হয়।
তার আলাপ টা ছিল এরকম-
সে তার কোনও আত্মীয়র সাথে কথা বলছিলো। আত্মীয় টি কারও শরীর খারাপ নিয়ে কিছু বলছিলো হয়তো। সেই কথার জবাবে এদিক থেকে সেই পরিচ্ছন্নতা কর্মী বললো,
" এতো শরীর খারাপ কেমনে হইছে? যে গরম পড়ছে, এই গরমে সবাই অসুস্থ হইয়া যাইতাছে। শোন, ওরে ডিম টিম একদম দিসনা কইলাম।"
কি আশ্চর্য। ডিম এর কি দোষ বুঝলাম না।
আমাদের দেশের কিছু মানুষের কাছে ডিম একটা কালপ্রিট এর নাম।
কোলেস্টেরল বেশি- ডিম খাওয়া বন্ধ
হার্ট অ্যাটাক - ডিম খাওয়া বন্ধ
ওজন বেশি- ডিম খাওয়া বন্ধ
গরম পড়েছে- ডিম খাওয়া বন্ধ
কেন রে বাবা? ডিম এর মতো এরকম একটা পুষ্টি কর খাবার কে কেন এতো অপবাদ দেয়া?
আসলেই কি ডিম এতোটাই খারাপ?
একটু দেখা যাক, আসলে ডিম কত খানি খারাপ।
ডিমের কোলেস্টেরল -
ডিমের মধ্যে যে চর্বি আছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ হলো Unsaturated Fat,
যেটাকে আমরা ভাল চর্বি বলে থাকি। এটা আমাদের রক্তের কোলেস্টেরল বাড়াতে কোনও ভুমিকা রাখেনা। বরং রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে এটা সাহায্য করে থাকে। ডিমের কুসুমে ভাল (HDL) এবং খারাপ (LDL) দুই ধরনের কোলেস্টেরল ই আছে, তবে ভালর পরিমানই বেশি। HDL(High Density lipoprotien ) কে বলা হয় "Good Cholesterol "
এটা কে Good Cholesterol বলার কারন হলো এই চর্বি রক্ত নালীতে ভেসে বেড়ায় না। এটার ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারনে রক্ত নালীর দেয়ালে আটকে থাকে। ফলে রক্ত নালী তে ব্লক সৃষ্টি করেনা যা খারাপ চর্বি বা LDL (Low density lipoprotien) করে। HDL বেশি থাকার আর একটা সুবিধা হলো, এটা খারাপ ফ্যাট টা কে কমাতে কাজ করে।
ডিম এর সাথে হার্ট এর রোগের সম্পর্ক -
ডিম খাওয়ার কারনে হার্ট এর অসুখ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারন আমরা কিন্তু আগেই জেনেছি, যে ডিমের ফ্যাটের মধ্যে উপকারী চর্বির পরিমানটাই বেশি, যা হার্ট কে ভাল রাখে। তবে যাদের অন্য কারনে হার্টের অসুখ হয়ে যায়, তাদের কে অবশ্যই ডিম খাওয়ার ব্যাপারে একজন পুষ্টিবিদ এর পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
ওজন বাড়ার সাথে ডিমের সম্পর্ক -
ডিম খেলে ওজন বাড়েনা। তবে কিভাবে খাওয়া হচ্ছে সেটা দেখতে হবে। ডিমের সাথে যদি তেল যোগ করা হয় যেমন ডিম ভাজি বা ডিম পোচ খেলে ওজন বাড়বে। সকালের নাস্তার সাথে যদি একটা সিদ্ধ ডিম খাওয়া যায় তাহলে কিন্তু অনেক্ষন ক্ষুধা লাগবেনা। দেখা যাচ্ছে, সঠিক নিয়মে ডিম খেলে ওজন কমানো সম্ভব।
গরম কালে ডিম খাবো? -
ডিম এ এমন কিছু উপাদান আছে যা গরম বা শীত সব সময়ে আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ ভাবে উপকার করে। সেগুলো হলো-
• গরম কালে আবহাওয়ার সাথে শরীর কে মানিয়ে নিতে ডিম অনেক উপকারী। কারন এতে রয়েছে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।
• ডিম শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে যা গরমকালের জন্য উপযোগী।
• ডিম আমাদের শরীরে শক্তির যোগান দেয়, যা ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর করার জন্য অনেক প্রয়োজন।
এছাড়াও ডিমে আছে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান।
• ডিমে আছে ভিটামিন এ, যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি কে ভাল রাখে।
• ডিম হচ্ছে সম্পুর্ন প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। দ্রব্য মুল্য বৃদ্ধির এই যুগে প্রতিদিন একটা ডিম হতে পারে আদর্শ একটা খাবার।
• আয়রন আছে প্রচুর, যা রক্ত স্বল্পতা কমাতে খুবই কার্যকর।
• ভিটামিন ডি আছে যা হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে।
• আছে ভিটামিন ই(ত্বক, চুলের জন্য ভাল) ভিটামিন বি ১২(রক্তাল্পতা প্রতিরোধ ও নিউরোলজিকাল কাজে সহায়তা করে)।
• ডিমে আছে কোলিন- যা লিভারের কাজে, মস্তিষ্কের বিকাশে, স্নায়ু এবং পেশীর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সুস্থতার জন্য আমাদের পরিমান মতো সুষম খাবারের প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সব কিছুর দাম অনেক বেশি। ইচ্ছা থাকলেও সবাই শরীরের চাহিদা পুরন করার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার খেতে পারেন না।
ডিম এমন একটি পুষ্টিকর খাবার যা বর্তমান মূল্যে আর কোনো খাবারে পাওয়া যায় না।
ডিমে অ্যালার্জি না থাকলে, সুস্থ-স্বাভাবিক একজন মানুষ যে কোন বয়সে প্রতিদিন ১টা করে ডিম খেতে পারেন এবং তা স্বাস্থ্য সম্মত।