
08/07/2025
মানুষ যখন হয়ে যায় জীবন্ত গাছ! 🌳 করুন এক সত্য ঘটনা
কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আপনার হাত-পা যদি গাছের বাকল বা ডালপালার মতো হয়ে যেত? যদি আপনার শরীরটা ধীরে ধীরে পরিণত হতো এক বৃক্ষে? 😥 এটা কোনো কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়, বরং এক ভয়ংকর বাস্তবতার নাম— "ট্রি ম্যান সিন্ড্রোম" (Tree Man Syndrome)।
বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম “এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফর্মিস (Epidermodysplasia Verruciformis)”। এটি এমন এক বিরল জেনেটিক রোগ, যেখানে মানুষের ত্বক গাছের মতো হয়ে যায়।
এর পেছনে রয়েছে দুটি প্রধান কারণ:
১. জেনেটিক ত্রুটি:
আমাদের শরীরে “EVER1” এবং “EVER2” নামে দুটি জিন থাকে, যা ত্বককে ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। কিন্তু এই রোগে আক্রান্তদের শরীরে এই জিনগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। এটি একটি “অটোসোমাল রিসেসিভ (autosomal recessive)” রোগ, অর্থাৎ বাবা-মা উভয়ের কাছ থেকে পাওয়া ত্রুটিপূর্ণ জিনের কারণেই এই রোগ হয়।
২. HPV ভাইরাসের ভয়ংকর রূপ:
“হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV)” আমাদের আশেপাশে থাকা একটি সাধারণ ভাইরাস। সুস্থ মানুষের শরীরে এটি তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারে না, কারণ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Immunity) একে আটকে দেয়। কিন্তু “ট্রি ম্যান সিন্ড্রোম”-এ আক্রান্তদের দুর্বল জেনেটিক গঠনের কারণে তাদের শরীর এই ভাইরাসের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে। ভাইরাসটি তাদের ত্বকের কোষকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়াতে থাকে, যার ফলে জন্ম নেয় গাছের শেকড় বা বাকলের মতো ভয়ংকর আঁচিল (Wart)।
কী কী লক্ষণ দেখা যায়?
❥ হাত-পা ও মুখে গাছের বাকলের মতো
❥ প্রথমে ছোট ছোট আঁচিল হিসেবে শুরু হলেও ধীরে ধীরে এগুলো বড় ও শক্ত হয়ে পুরো হাত-পা এমনকি মুখমণ্ডলকেও ঢেকে ফেলে।
❥ অনেক সময় নখের চারপাশ থেকেও এগুলো গজাতে শুরু করে।
❥ এই আঁচিলগুলো শুধু ত্বকের উপরেই থাকে না, বরং ভেতরের দিকেও গাছের শিকড়ের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে।
❥ আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য দৈনন্দিন কাজ, যেমন—খাওয়া, পোশাক পরা বা হাঁটাচলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এই রোগটি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক এবং সামাজিকভাবেও একজন মানুষকে পঙ্গু করে দেয়:
● ধীরে ধীরে শরীরের স্বাভাবিক ত্বক এই আঁচিলে ঢেকে যায়, যা দেখতে অত্যন্ত ভয়ংকর।
● সবচেয়ে ভয়ের কথা হলো, এই আঁচিলগুলোর প্রায় ৩০-৬০% ক্ষেত্রেই “স্কিন ক্যান্সারে” রূপান্তরিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, বিশেষ করে সূর্যের আলো লাগলে।
● হাত-পা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি পুরোপুরি অচল হয়ে যেতে পারে।
● সমাজের চোখে “অদ্ভুত” হয়ে ওঠার কারণে রোগীরা প্রায়ই একাকী ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত জীবন কাটান।
দুর্ভাগ্যবশত, এই রোগের কোনো স্থায়ী নিরাময় এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হয়:
⊙ অপারেশনের মাধ্যমে গাছের মতো গজিয়ে ওঠা অংশগুলো কেটে ফেলা হয়। তবে বারবার ফিরে আসার ঝুঁকি থাকে।
⊙ ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে এবং আঁচিলের বৃদ্ধি ধীর করতে কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
⊙ রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ থেরাপি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের ‘বৃক্ষমানব’—“আবুল বাজানদার”! 🇧🇩
সারা বিশ্ব এই রোগটি সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জানতে পারে বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা “আবুল বাজানদারকে” দেখে। তার হাত-পায়ের ভয়ংকর অবস্থা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার শরীরে ‘২৫ বারেরও বেশি অস্ত্রোপচার’ করা হয়। চিকিৎসার কষ্ট এবং রোগের পুনরাগমনের কারণে তার লড়াই ছিল অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। আবুল বাজানদারের মাধ্যমে আমরা এই রোগের ভয়াবহতা খুব কাছ থেকে দেখেছি।
অনুবাদ: AH Abubakkar Siddique
সোর্স:
১. National Center for Biotechnology Information (NCBI) - Epidermodysplasia Verruciformis
২.. The Daily Star - Articles on Abul Bajandar
Follow - BLACK - HOLE