20/07/2025
আমি ব্যাক্তিগতভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত নই। আমি সর্বদা অন্যায়, জুলুম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করি, তা যেকোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীই হোক না কেন।
জুলাই বিপ্লবের পর এনসিপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই দলের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ সরাসরি ওই ঐতিহাসিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে এনসিপির প্রতি এক ধরনের আশা ও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
আমরা চাই, এনসিপি দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এমন একটি মানবিক ও নৈতিক ভিত্তিসম্পন্ন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করুক, যেখানে অন্যায়, দমন-পীড়ন ও দুর্নীতির কোনো স্থান থাকবে না। এমন একটি রাজনৈতিক দল গড়ে উঠুক, যেখান থেকে মানুষ শিখতে পারবে, যার আদর্শ হবে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা ও দেশের প্রতি নিষ্ঠা।
কিন্তু সম্প্রতি গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আমাদের অনেককেই ব্যথিত ও মর্মাহত করেছে। কয়েকটি মূল্যবান জীবন অকালে ঝরে গেছে। অন্যায়ভাবে কোনও মৃত্যুই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ঘটনায় দায়ভার কে নেবে — এনসিপি নাকি সরকার?
গোপালগঞ্জবাসী মূলত আওয়ামী লীগের নাম নয়, তারা শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার প্রতি আবেগ ও আনুগত্য প্রকাশ করে। অতএব, যেকোনো বিরুদ্ধমত সেখানকার মানুষের কাছে এক ধরনের প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে পারে — এটি স্বাভাবিক এবং তা রাজনৈতিকভাবে বোঝা দরকার ছিল। এনসিপির বেশিরভাগ নেতাকর্মী, যারা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল, তাদের হয়তো আরও কৌশলী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ ছিল।
স্বীকার করতেই হবে, দেশের প্রতিটি জেলার মতো গোপালগঞ্জেও তাদের সাংবিধানিকভাবে প্রচার-প্রচারণার অধিকার রয়েছে। তবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা ও সামগ্রিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য।
ঘটনার পর এনসিপি-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা “মুজিববাদীদের অস্তিত্ব রাখবে না”। এই বক্তব্য অত্যন্ত বিতর্কিত ও উদ্বেগজনক। কারণ, গোপালগঞ্জে যদি বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের মুজিববাদী হিসেবে দেখে, তাহলে এ বক্তব্য কী তাদের প্রতি হুমকি নয়?
আমার বিশ্বাস, মানবিক ও সহনশীল রাজনীতি একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। কোনো আদর্শ বা মতবাদের বিরোধিতা করতে হলে তা যুক্তি, ধৈর্য ও নৈতিক উচ্চতায় করতে হবে। হিংসা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি দিয়ে কখনোই একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়।
অতএব, আমি আশা করব এনসিপি ভবিষ্যতে আরও বেশি কৌশলী, মানবিক ও দূরদর্শী হবে। তারা যেন এমন এক রাজনীতি চর্চা করে, যেখানে জনগণের প্রাণহানি নয়, বরং তাদের আস্থা ও সমর্থন অর্জনই প্রধান লক্ষ হয়।
এই কামনায়
সালাহ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ
ফরিদপুর।