12/05/2025
গরমে সচেতন হোন – সুস্থ থাকুন!
গ্রীষ্মকালীন স্বাস্থ্য ঝুঁকি, রোগ, প্রতিকার ও করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল মানেই প্রচণ্ড রোদ, উষ্ণতা, ঘাম আর ক্লান্তি। এই মৌসুমে একটু অসাবধানতা আপনাকে অসুস্থ করে দিতে পারে। তাই আসুন জেনে নেই গরমে কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, কীভাবে তার প্রতিকার করবেন, আর সুস্থ থাকতে কী করণীয়।
---
গরমকালীন স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও রোগসমূহ:
১. হিটস্ট্রোক (Heat Stroke):
অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। লক্ষণ:
মাথা ঘোরা
তীব্র মাথাব্যথা
বমি বমি ভাব বা বমি
দ্রুত হৃদস্পন্দন
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
২. ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা):
প্রচুর ঘাম ও কম পানি পানের ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে যায়। লক্ষণ:
ক্লান্তি
মাথা ধরানো
মূত্রের পরিমাণ কমে যাওয়া
ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া
৩. ত্বকের সমস্যা (ঘামাচি, চুলকানি, ফোড়া):
ঘাম জমে ত্বকে সংক্রমণ সৃষ্টি করে ঘামাচি বা র্যাশ হতে পারে।
৪. খাদ্যজনিত রোগ (ফুড পয়জনিং, ডায়রিয়া):
গরমে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়, ফলে অসতর্ক হলে পেটের রোগ দেখা দেয়।
৫. সর্দি-কাশি ও ভাইরাল ইনফেকশন:
হঠাৎ ঠান্ডা পানি পান করা বা ঠান্ডা ঘরে যাওয়া-আসার ফলে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।
---
চিকিৎসা ও প্রতিকার:
হিটস্ট্রোক: ঠান্ডা স্থানে নিয়ে যান, মাথায় পানি ঢালুন, দ্রুত ওরস্যালাইন বা লবণ-চিনি মিশ্রিত পানি দিন। প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালে নিন।
ডিহাইড্রেশন: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। প্রতিবার ঘামলে পানি বা ওরস্যালাইন পান করুন।
ত্বকের সমস্যা: পরিষ্কার জামা পরুন, ত্বক শুষ্ক রাখুন, অ্যান্টিসেপটিক পাউডার ব্যবহার করুন।
ফুড পয়জনিং: স্যালাইন পান করুন, প্রচুর বিশ্রাম নিন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ভাইরাল ফ্লু: পর্যাপ্ত বিশ্রাম, হালকা খাবার, গরম পানির ভাপ নিন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
---
গরমে করণীয়:
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। ওরস্যালাইন বা ফলের রস খাওয়া উপকারী।
২. রোদ এড়িয়ে চলুন:
দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সম্ভব হলে বাইরে বের হবেন না। বের হলে ছাতা, হ্যাট বা সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
৩. হালকা ও সুতি কাপড় পরুন:
এতে ঘাম সহজে শুকায় এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪. স্বাস্থ্যকর খাবার খান:
বাসি বা বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন। পাকা ফল, শসা, তরমুজ, লেবু জাতীয় খাবার বেশি খান।
৫. শিশু ও বৃদ্ধদের যত্ন নিন:
তারা গরমে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই তাদের পর্যাপ্ত পানি ও সঠিক খাবার নিশ্চিত করুন।
৬. ঠান্ডা পানি দিয়ে বারবার মুখ-মাথা ধুয়ে নিন:
এতে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং ক্লান্তি কমে যায়।
---
শেষ কথা:
গরম কোনো রোগ নয়, কিন্তু গরমের অসতর্কতা থেকেই রোগ হয়। তাই সচেতন থাকুন, নিজে সুস্থ থাকুন, অন্যকেও সচেতন করুন। আমার পেজে লাইক দিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয়ক আপডেট পেতে থাকুন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
ডা. মোঃ জাবের আবেদীন
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমডি (মেডিসিন)
কনসালটেন্ট, মেডিসিন
২৫০ শয্যা সদর হাসপাতাল, ফেনী
প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা
(মঙ্গল ও শুক্রবার বন্ধ)
ফেনী ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টার
জহিরিয়া মসজিদের বিপরীতে,ফেনী।