11/06/2023
#লিচুর_বিচি গলায় আটকে মারা যাচ্ছে শিশু
লিচু বা জামের বিচি গলায় আটকে শিশুমৃত্যুর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যত্রতত্র এসব ফলের বিচি ফেলা যাবে না। শিশুর গলায় বিচি আটকে গেলে, না ঘাবড়ে করণীয় ঠিক করতে হবে।
গলায় খাবার বা অন্য কিছু আটকে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে এমন পরিস্থিতিকে ডাক্তারি পরিভাষায় ‘চোকিং’ বলে। প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় এক কোটি মানুষ গলায় খাবার বা অন্য কিছু আটকে শ্বাসপ্রশ্বাসের আটকে যাওয়ার মতো ভয়ানক পরিস্থিতির শিকার হয়।
গলায় খাবার আটকে যাওয়ার মতো ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে শিশু ও প্রবীণদের ক্ষেত্রে। ৫ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে তাড়াহুড়ো করে খাবার খেতে গিয়ে দম আটকে খুব কষ্টকর পরিস্থিতির শিকার হতে দেখা যায়। আমাদের দেশে লিচুর বিচি, জামের বিচি তাতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
👉শিশুর গলায় কিছু আটকেছে, কীভাবে বোঝা যাবেঃ
খাবার হোক বা অন্য কিছু—শ্বাসনালিতে আটকে গেলে প্রথমেই শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হবে। কাশি হবে, বুকের মধ্যে হাওয়ার মতো শব্দ, বমি বমি ভাব, কথা বলতে না পারা, ঠোঁট নীল হওয়া বা জ্ঞান হারানোর মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, প্রবীণ আর ছোট শিশুদের গলার গ্যাগ রিফ্লেক্স (এটা মুখগহ্বরে একধরনের স্নায়ু ব্যবস্থাপনা) কম থাকে। ফলে গলায় খাবার আটকে যেতে পারে। শ্বাসনালির মুখে খাবার আটকে গেলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। শরীরে অক্সিজেন চলাচল কমে যায়। এমনকি পুরোপুরি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। শ্বাসনালি একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে অক্সিজেনের অভাবে হৃদ্যন্ত্র ও মস্তিষ্ক কাজ করতে পারে না। অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে আটকে যাওয়া বস্তুটি দ্রুত বের না করে দিলে রোগীকে বাঁচানো যায় না।
👉তাৎক্ষণিক করণীয়ঃ
কোনো মানুষকে হঠাৎ এ রকম পরিস্থিতিতে পড়তে দেখলে অসুস্থ ব্যক্তিকে পেছন থেকে জড়িয়ে দুহাত দিয়ে পেটের ওপরের দিকে জোরে জোরে চাপ দিলে আটকে যাওয়া বস্তুটি দ্রুত বের হয়ে যাবে। খুব ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে হাতের ওপর উপুড় করে পিঠে চাপড় দিতে হবে। অ্যাম্বুলেন্স ডেকে কাছের হাসপাতালে নিতে হবে। বস্তুটি বের না হওয়া বা হাসপাতালে চিকিৎসা না শুরু হওয়া পর্যন্ত পদ্ধতিটি চালিয়ে যেতে হবে। পুরোটা সময় সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে রোগীর জ্ঞানের মাত্রা কমে যাচ্ছে কি না, রোগীর হার্ট বন্ধ বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে যাচ্ছে কি না। তাহলে দ্রুত বুকে চাপ তথা সিপিআর শুরু করতে হবে।
👉প্রতিরোধঃ
#দেড়_দুই বছরের শিশু বাড়িতে থাকলে তার হাতের নাগালে ছোটখাটো জিনিস রাখা যাবে না। খাওয়ানোর সময় বেশি তাড়াহুড়া করা যাবে না, জোর করে শিশুর মুখে খাবার গুঁজে দেওয়া অনুচিত। অসুস্থ ও বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার দেওয়া উচিত।
👉সতর্ক থাকতে যেসব ব্যবস্থা নিতে হবে—
✅মাঝেমধ্যে আপনিও নিজেকে শিশু হিসেবে ভাবতে পারেন। একটা শিশু তার চারপাশের কোন কোন জিনিস মুখে পুরতে পারে, তা খুঁজে বের করুন এবং সেগুলো হাতের নাগালের বাইরে নিয়ে যান। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো—ছোট ব্যাটারি, বোতাম, গয়না, পুঁতি, পিন, ফলের বিচি (লিচু বা জামের বিচি), কাগজের ক্লিপ, ট্যাপ, স্ক্রু, পেরেক বা মার্বেল ইত্যাদি।
✅লিচু বা জাম খাওয়ার পর বিচিগুলো সংগ্রহ করে শিশুর নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
✅পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের শক্ত দানার কোনো খাবার এমনকি লজেন্স দেওয়াও উচিত নয়, এগুলো গলায় আটকে সংকটের সৃষ্টি করতে পারে।
✅লিচু বা জাম কম বয়সী শিশুদের বিচি ছাড়িয়ে খাওয়াতে হবে। বড়দের তত্ত্বাবধান ছাড়া তাদের এগুলো দেওয়া বা খেতে দেওয়া ঠিক নয়।
✅রেফ্রিজারেটরে চুম্বক রাখবেন না বা দেয়াল বা বোর্ডে কাগজপত্র সেঁটে রাখার জন্য পেরেক বা পিন ব্যবহার করবেন না।
✅বিশেষ করে খাবার টেবিল ও শিশুর ঘুমানোর জায়গার চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।
✅আপনার তত্ত্বাবধানে না রেখে শিশুর মুখে রাবার বেলুন দেবেন না। বেলুন শ্বাসরোধের ঝুঁকি বাড়ায়। ফিতা বা গোলাকার রাবারও শ্বাসরোধের ঝুঁকি তৈরি করে।
✅আপনার পার্স ও ডায়াপার ব্যাগ নাগালের বাইরে রাখুন। এবং নিশ্চিত করুন, ঘরের অন্য সদস্যরাও যেন একই কাজ করে।
✅আপনি যখন অন্য কারও বাড়িতে যাচ্ছেন, তখনো শিশুর দিকে বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।
✅খেয়াল রাখুন, যেন আপনার শিশু শুধু তার বয়স উপযোগী খেলনা দিয়ে খেলে। যেমন অনেক খেলনা ৩ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুর জন্য নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করে। কারণ, এসব খেলনার ছোট অংশ থাকে, যা ছিটকে যেতে পারে এবং শ্বাসরোধের কারণ হতে পারে। শিশুকে অবশ্যই বয়স উপযোগী খেলনা দিন।