
22/08/2025
শিশুর চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া মানেই কি সাধারণ জন্ডিস? এর আড়ালে থাকতে পারে যকৃতের নীরব প্রদাহ বা হেপাটাইটিস, যা সঠিক সময়ে শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা অত্যাবশ্যক।
হেপাটাইটিস বলতে মূলত যকৃতের প্রদাহ (Inflammation of the Liver) বোঝানো হয়, যা একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে ভাইরাল হেপাটাইটিস নির্মূল করা। এই লক্ষ্য পূরণে শিশুদের সুরক্ষিত রাখা আমাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।
শিশুদের ক্ষেত্রে প্রধানত দুই ধরণের ভাইরাল হেপাটাইটিস বেশি দেখা যায়— হেপাটাইটিস 'এ', যা দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায় (Feco-oral route); এবং হেপাটাইটিস 'বি', যা আক্রান্ত মায়ের শরীর থেকে (Vertical Transmission) বা দূষিত রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। জন্ডিস (Jaundice) হলো হেপাটাইটিসের একটি প্রধান লক্ষণ, রোগ নয়। এর পেছনের কারণ নির্ণয় করা তাই অত্যন্ত জরুরি।
✅ যেভাবে প্রতিরোধ করবেন (প্রতিরোধই সর্বোত্তম প্রতিকার):
১. কার্যকরী টিকাদান: আপনার শিশুকে হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘বি’-এর টিকা সময়মতো দিন। জন্মের পরপরই দেওয়া হেপাটাইটিস ‘বি’ টিকার প্রথম ডোজ শিশুর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা।
২. বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার: শিশুকে সর্বদা বিশুদ্ধ বা ফোটানো পানি পান করান। বাইরের খোলা, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় থেকে বিরত রাখুন। খাওয়ার আগে ও শৌচাগার ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৩. মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষা: গর্ভাবস্থায় সকল মায়ের হেপাটাইটিস ‘বি’ (HBsAg) পরীক্ষা করা আবশ্যক। মা পজিটিভ হলে, নবজাতককে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই টিকা এবং হেপাটাইটিস ‘বি’ ইমিউনোগ্লোবুলিন (HBIG) দেওয়ার মাধ্যমে প্রায় ৯৫% সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৪. রক্ত গ্রহণে সতর্কতা: যেকোনো প্রয়োজনে শিশুকে রক্ত দেওয়ার আগে তা হেপাটাইটিসসহ অন্যান্য ভাইরাস থেকে মুক্ত কি না (Screened Blood), তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
৫. নিরাপদ ইনজেকশন ও ব্যক্তিগত ব্যবহার্য: সর্বদা জীবাণুমুক্ত বা ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার নিশ্চিত করুন। অন্যের ব্যবহার করা নেইল কাটার, ব্লেড বা টুথব্রাশ ব্যবহারেও নিরুৎসাহিত করুন।
⚠️ যে লক্ষণগুলো অবহেলা করা যাবে না (সত্বর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন):
হেপাটাইটিসের লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ ভাইরাল জ্বরের মতো মনে হতে পারে। তবে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন:
১. জন্ডিসের প্রকাশ: চোখ, ত্বক ও জিহ্বার নিচের অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া এবং প্রস্রাবের রঙ গাঢ় (সরিষার তেলের মতো) হওয়া।
২. পাচনতন্ত্রের সমস্যা: তীব্র ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া এবং পেটের ডান দিকের উপরের অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি বোধ করা।
৩. শারীরিক দুর্বলতা: শিশু অস্বাভাবিকভাবে দুর্বল বা ক্লান্ত হয়ে পড়লে, খেলাধুলায় আগ্রহ হারিয়ে ফেললে বা সারাক্ষণ নিস্তেজ হয়ে থাকলে।
৪. জ্বর ও শরীর ব্যথা: தொடர்ச்சியாக অল্প থেকে মাঝারি জ্বর থাকা এবং গা, হাত-পায়ে ব্যথা অনুভব করা।
৫. মলের রঙ পরিবর্তন: শিশুর মলের রঙ স্বাভাবিকের চেয়ে ফ্যাকাশে বা প্রায় সাদাটে হয়ে যাওয়া।
সন্তানকে বড় করে তোলার এই সুন্দর ও চ্যালেঞ্জিং যাত্রায় প্রতিটি অভিভাবকের প্রতি রইলো আমার গভীর সম্মান। মনে রাখবেন, এই পথচলায় আপনারা একা নন। আপনার সন্তানের বেড়ে ওঠা ও স্বাস্থ্য নিয়ে যেকোনো জিজ্ঞাসায় বা প্রয়োজনে, একজন শিশু চিকিৎসক ও আপনাদের পথের সঙ্গী হিসেবে আমার সহযোগিতা সবসময়ই থাকবে।
~ডাঃ মোঃ হুমায়ুন শিকদার
🩺 এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
🎓 এফসিপিএস (শিশু চিকিৎসা), এফসিপিএস (নবজাতক)
শিশু ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা
📍 চেম্বার:
শিলমুন স্পেশালাইজড হাসপাতাল
১৮৮, শিলমুন, টংগী-পূবাইল রোড, টংগী, গাজীপুর, বাংলাদেশ
📞 সিরিয়ালের জন্য যোগাযোগ: 01880-884417 / 01777-656476
📞 Hotline Number: 10612
🕓 রোগী দেখার সময়:
শনিবার ও বুধবার: বিকেল ৪টা – রাত ৮টা
সোমবার ও বৃহষ্পতিবার: দুপুর ২.৩০–৩.৩০
#হেপাটাইটিস_সচেতনতা #জন্ডিস #লিভারের_যত্ন