03/07/2025
দুরন্ত শৈশব ছিল আমার, মাঠ–ঘাট দাপিয়ে বেড়ানো, সীমান্তরেখা পেরিয়ে ভিনদেশে ঢুকে পড়া, পাখির বাসা-ডিম-ছানার প্রতি তীব্র আকর্ষণ, বর্ষা ধোয়া বিকেলে দলবল আর কুকুরের পাল নিয়ে শিয়াল-বেজিদের পিছু ধাওয়া, ছিপ-বড়শি দিয়ে জলা মাঠে মাছ ধরা—শৈশবের এই নস্টালজিয়া আজও তাড়া করে ফেরে, মাঝরাতে ঘুমের ঘোরে হাতছানি দেয় হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিরা।
আমার শৈশব কেটেছে এক ছোট্ট গ্রামে — নাম তার কাগজুর। যেখানে সকাল মানে ছিল মোরগের ডাক, আর বিকেল মানেই ধানখেতের মাঝখান দিয়ে হাওয়া খাওয়া। গ্রামে ঘড়ির সময় কেউ মানতো না, সূর্য উঠলেই দিন শুরু, আর ডুবে গেলেই রাত।
আমাদের বাড়ির পাশেই ছিল একটা নদী। গ্রীষ্মকাল এলেই আমরা বন্ধুরা দল বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়তাম পানিতে। কার কেমন সাঁতার, তাতে কিছু আসে যায় না। ঠাঁই ঠাঁই শব্দে শুধু হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে যেত চারপাশে।
বিকেল হলেই শুরু হতো হাডুডু, বৌচি, গুলতি দিয়ে পাখি মারা কিংবা বালির ভিতর গুপ্তধন খোঁজার খেলা। পা ভেঙে যেত, জামা ছিঁড়ে যেত, কিন্তু আনন্দ কমতো না একটুও।
গ্রামের মাটির ঘ্রাণ, গরুর গাড়ির শব্দ, মাঠে ছুটে বেড়ানো, খেজুর গাছের রসের অপেক্ষায় ভোরবেলা উঠে যাওয়া — সবই ছিল শৈশবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাজারে গেলে এক টাকায় দিতেন খৈনির মোয়া, আর সেটা নিয়েই চলতো সবার সঙ্গে ভাগাভাগি।
সন্ধ্যা নামলেই কুয়াশায় ভরে যেত মাঠঘাট। সবাই বাসায় ফিরত — কেউ খালি হাতে, কেউ গলা জুড়ে বুনো ফুলের মালা নিয়ে। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসত খুন্তির শব্দ, আর আম্মার ডাক — “তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে খেতে আয়!”
আমার গ্রামের শৈশব মানেই ছিল প্রকৃতির কোলে, ভালোবাসার ছায়ায় বেড়ে ওঠা এক সোনালি সময়। সেখানে ছিল না ইন্টারনেট, ছিল না মোবাইল — কিন্তু ছিল প্রকৃতি, মায়া, বন্ধুত্ব, আর নির্মল আনন্দ।
আজ শহরের কংক্রিটের ভিড়ে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করলে এখনো টের পাই, খালি পায়ে মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার অনুভবটা। গ্রাম তো ছাড়লাম, কিন্তু শৈশব? সেটা এখনো বুকের ভেতরই বেঁচে আছে।
#গ্রাম