29/10/2024
Motivate everyone to act every day and be 'The theme for World Stroke Day 2024, The World Stroke Congress.
আজ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস- প্রতিবছর ২৯ অক্টোবর দিনটি বিশ্ব ব্যাপী উদযাপিত হয়। অনেকেই জানেন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কোনো কারণে বিঘ্নিত হলে স্ট্রোক সংঘটিত হয়। বিশেষ করে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে চলাচল বন্ধ হয়ে কিংবা রক্তনালী ফেটে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে এই রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। রক্তে থাকে অক্সিজেন আর কোষের জন্য প্রোয়োজনীয় পুষ্টি। ফলে অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাবে মস্তিষ্কের কোষ বা টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা স্হায়ীভাবে নস্ট হয়ে যায় । স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণ হলো উচ্চরক্তচাপ। সারাবিশ্বে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। বছরে আক্রান্ত হচ্ছে ৬ কোটি এবং মারা যাচ্ছে ২ কোটি মানুষ। স্ট্রোকের কারণে দেড় কোটি লোক পঙ্গু হচ্ছে। আগে বলা হত প্রতি ৬ জনে ১ জনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে।এখন সেটা প্রতি ৪ জনে ১ জন, চিন্তা করুন কত ভয়াবহ ঝুকিতে আমরা। স্ট্রোকে আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ ভাগ মারা যায়, আর ৩০ ভাগ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সচেতনতার অভাব, শারীরিক পরিশ্রম বিহীন আধুনিক জীবন ব্যবস্তা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, অত্যাধিক মানসিক চাপ ও উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারনে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বয়স্ক ব্যক্তিরা সহ এখন তরুনরাও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ব্যাপক হারে, করোনা মহামারীও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। আমাদের দেশে এখন মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে।
আরও একটি চিন্তার বিষয় বাচ্চারও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ইদানীং , বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বাচ্চাদের স্ট্রোকের পরিমাণ বেশী, আমাদের দেশে স্ট্রোকের ১০ শতাংশই নাকি শিশু। সুতরাং এখন স্ট্রোক আর বয়স্কদের রোগে সীমাবদ্ধ নেই।
স্ট্রোক সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উদযাপিত হয়।
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওজন নিয়ন্ত্রণ, পরিমিত আহার, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, নিয়মিত হাঁটা ( কমপক্ষে ৩০-৪০ মিনিট প্রতি দিন বা ৪/৫ দিন ) ও শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে আমরা এই ভয়াবহ রোগ থেকে পরিএান পেতে পারি। আমরা কেউই যেন ঐ ৪ জনের ১ জন না হই।
স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক উপসর্গ বা লক্ষণগুলো চিনতে পারলে এবং দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারলে রোগীকে মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব৷ যা আমাদের প্রতেকেরই জানা উচিত। স্ট্রোকের ৪ টি ফ্যাক্ট বা অক্ষর আমরা সবাই মনে রাখতে পারি যা হল F.A.S.T.যা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ তিনটি ও সময়কে নির্দেশ করছে।
১.
F.> FACE Dropping >মুখের এক দিকে বেঁকে যাওয়া বা অর্ধেক অসাড় হয়ে পড়া।
২.
A.> ARM Weakness > একটি বাহুতে দুর্বলতা-
স্ট্রোকের আরেকটি স্পষ্ট লক্ষণ হলো কোনো একটি বাহুতে এমন দুর্বলতা বা অসাড়তা যে আপনি তা মাথার ওপর টেনে তুলতে পারছেন না।
৩.
S.> SPEECH Difficulties > কথা বলায় অস্পষ্টতা-আপনি যদি হঠাৎ করেই কথা বলতে অসুবিধে বা অস্পষ্টতা লক্ষ করেন।
৪.
T.> TIME to Call > মানে সময়কে বঝানো হয়েছে, উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা গেলে কোন ভাবেই সময় নষ্ট করা চলবে না - প্রতিটি সেকেন্ড তখন খুবই মূল্যবান। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্ট্রোক রোগী ব্যবস্হাপনায় দক্ষ হাসপাতালে বা চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে রোগীকে দ্রুত জরুরী চিকিৎসার আওতায় নিতে হবে।
আরও ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণের মধ্যে
১.দেহের একপাশে দুর্বলতা বা
প্যারালাইসিস।
২. ঝাপসা দৃষ্টি-স্ট্রোকের আরেকটি লক্ষণ হলো আপনার কোনো একটি চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা। মস্তিষ্কের যে অংশ আপনার দৃষ্টি সম্বন্ধীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে সে অংশে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে এমনটা ঘটতে পারে।
৩.তীব্র মাথাব্যথা- উল্লেখিত লক্ষণের সাথে তীব্র মাথা ব্যথাও স্ট্রোকের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
ইমারজেন্সি চিকিৎসা ব্যবস্হাপনার পর স্ট্রোক পরবর্তী যেসব শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো সমাধানে যত দ্রুত সম্ভব রিহ্যাবিলিটেশন ট্রিটমেন্ট বা পূনর্বাসন চিকিৎসা শুরু করতে হবে। যেমন ফিজিওথেরাপিী, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, , আকুপাংচার, সাইকোথেরাপি ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ।
মাল্টিডিসিপ্লিনারি ম্যানেজমেন্টে
নিউরো ফিজিশিয়ানদের ব্যবস্হাপনার সাথে সাথে স্ব- স্ব ক্ষেএে কোয়ালিফাইড চিকিৎসক ও হেলথ্ প্রফেশনালগন রোগীর ডিসএবিলিটি এসেসমেন্ট করে রিহ্যাবিলিটেশন বা পূনর্বাসন চিকিৎসা নির্ধারণ করেন ও প্রয়োগ করেন এতে রোগী দ্রুত সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবনে ফিরে আসে। তাই পূনর্বাসন চিকিৎসাও যত দ্রুত সম্ভব শুরু করতে হবে।
আসুন স্ট্রোক প্রতিরোধ, আক্রান্ত ব্যক্তির জরুরী চিকিৎসা ও পরবর্তী পূনর্বাসন চিকিৎসা কোন ক্ষেএেই অবহেলা না করে সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিটি জীবনকে করি সুস্থ, সুন্দর ও পক্ষাঘাতহীন।
জনসচেতনতায়-
ডাঃ মাকসুদুল আলম( মাকসুদ)
বাত,ব্যথা, প্যারালাইসিস ও অর্থোপেডিক ফিজিওথেরাপী বিশেষজ্ঞ
চিফ কনসালটেন্ট ও কোওর্ডিনেটর
ফিজিক্যাল থেরাপি, নিউরো এন্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন ডিভিশন
হলি কেয়ার ও দনিয়া মেডিহোপ।
Cell no. +8801711344068
E-mail: dr.maksudulalam@gmail. Com