21/10/2022
অপরিপক্ক ও কম ওজনের বাচ্চাদের যত্ন কিভাবে নিবেন?
অপরিপক্ক শিশু : বাংলাদেশে প্রায় ৩০ শতাংশ নবজাতক কম ওজন নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। এসব কম ওজনবিশিষ্ট নবজাতকের স্বাভাবিক জন্ম ওজন নিয়ে জন্মানো নবজাতকের তুলনায় সংক্রমণ ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুহার বেশি । যেসব নবজাতক আড়াই কেজির কম ওজন নিয়ে ও ৩৭ সপ্তাহ এর আগে জন্মায়, তাদেরকে অপরিপক্ক ও কম ওজনের বাচ্চা বলে ।
অপরিপক্ক ও কম ওজনের বাচ্চা কেন জন্ম গ্রহন করে: মায়ের অপুষ্টি, রক্তাল্পতা, অল্প বয়সে সন্তান ধারণ, জরায়ুস্থ সংক্রমণ, ক্রোমোজোম অস্বাভাবিকতা, উচ্চ রক্তচাপ, একাধিক গর্ভধারণ (দু’টি অথবা তিনটি শিশু)
কম ওজনের নবজাতকের যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে:
জন্মের পর পরই হওয়া সমস্যা
ফুসফুসের গঠন ঠিকঠাক মত না হওয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, বিলিরুবিনের মাত্রা বেশী থাকায় জন্ডিস দেখা দেয়া, অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, হৃদপিন্ডে ছিদ্র ।
১. হাসপাতালে কম ওজনের শিশুর যত্ন:
জন্মের পর কম ওজনের নবজাতকের সুস্থতার জন্য প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। কম ওজনের নবজাতকের ফুসফুসের গঠন ঠিকঠাক মত না হবার ফলে জন্মের পর এদের অনেকক্ষেত্রে শ্বাস কষ্ট দেখা দিতে পারে। হাসপাতালে এসময় ভেন্টিলেটরের সাহায্যে সাময়িক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হয়।
জন্মের পর বেশির ভাগ কম ওজনের শিশুর বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি থাকে।এই বিলিরুবিনের মাত্রাই জন্ডিসের নির্দেশক। শিশুদের এ ধরনের জন্ডিস ফটোথেরাপী অর্থাৎ আলোর নিচে রেখে চিকিৎসা করা হয়।
২. বাসায় নিয়ে আসার পর যত্ন :
হাপাতালে যখন বাচ্চা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে এবং অন্যান্য শিশুর মত মায়ের বুকের দুধ খেতে শিখে এবং শিশুর ওজন বাড়তে থাকলে তখন তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আলো বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় শিশুকে রাখতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা যাতে স্বাভাবিক থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৩ . বাচ্চার বৃদ্ধির দিকে খেয়াল রাখুন।
জন্মের পর শিশুর পাকস্থলীর আকার খুবই ছোট থাকে। ফলে, একবারে বেশি পরিমাণ খেতে পারে না। এজন্য, শিশুকে ঘন ঘন খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে শালদুধ অবশ্যই দিতে হবে (যদি খেতে পারে)। কারণ, এতে রোগ প্রতিরোধকারী অনেক উপাদান থাকে, সাথে অল্প দুধের মধ্যে প্রচুর শক্তির উৎস থাকে। শালদুধকে শিশুর টীকা বলা হয়।
৪. ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টিকর ঔষধ খাওয়ান।
অপরিণত ও স্বল্প ওজনের শিশুর বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত ভিটামিন ও মিনারেল (খনিজ লবন) প্রয়োজন হয়। এর সম্পুর্ণ অংশ বুকের দুধ থেকে পাওয়া যায় না। ফলে, চিকিৎসকরা কিছু ভিটামিন ও মিনারেল খেতে দেয়। এগুলো নিয়ম মত খাওয়াতে হয়। এর মধ্যে সাদারণত ফলিক এসিড, আয়রন, এবং মাল্টিভিটামিন থাকে।
৫. ইনফেকশন প্রতিরোধ করুন।
নবজাতক শিশুরা অতি সহজেই ইনফেকশন (সংক্রমণ) এর শিকার হয়। এজন্য সাবধান থাকতে হবে। প্রথম কাজ হবে শিশুকে যারা কোলে নিবে তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা। শিশুকে কোলে নেয়ার আগে হাত ধুয়ে নেয়া, বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। হাতের নখ ছোট করে কেটে রাখতে হবে। এর সাথে সাথে অসুস্থ লোকজনের থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে।
পরবর্তী সময়ে হওয়া সমস্যা
হাড়ের সমস্যা,চোখের সমস্যা, বৃদ্ধি কম হওয়া এবং বিকাশ বাধাগ্রস্থ হওয়া, সেরেব্রাল পালসি জাতীয় স্নায়ুর সমস্যা যা প্রতিবন্ধীত্বে রুপ নেয় ।
কখন বাচ্চাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন?
১। যদি বাচ্চা খাওয়া বন্ধ করে দেয়।
২। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে।
৩। গায়ে কোন ঘা/ক্ষত হলে।
৪। মাথার চান্দি ফুলে গেলে।
৫। খিচুনি হলে।