16/10/2022
সাম্প্রতিক সময়ে চোখ উঠা রোগটা ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে আসুন জেনে নেই এই চোখ উঠা সম্পর্কে বিস্তারিত-
Conjunctivitis বা চোখ উঠা কী ?
Conjunctivitis বা চোখ উঠা হলো কেরাটাইটিস বা হারপেম সিমপেক্স ভাইরাসজনিত ইনফেকশন। এই ইনফেকশনে সাধারণত এক চোখ আক্রান্ত হয়ে থাকে পরবর্তীতে দুচোখেও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চোখ উঠার লক্ষণ সমূহঃ
চোখ জ্বলবে, চোখের ভেতর অস্বস্থি শুরু হয়, সামান্য ব্যথা হয়। রোদে বা আলোতে তাকাতে কষ্ট হয় ও অতিমাত্রায় পানি পড়ে। চোখ লাল হয়ে ফুলে উঠে। ঘুম থেকে উঠার পর চোখের পাতা দুটি একত্রে লেগে থাকে। চোখ থেকে শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ বের হতে থাকে ও হলুদ রঙের পুঁজ সৃষ্টি হয়। সাধারণত ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো কমে আসে। কিন্তু দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। মণি বা কর্নিয়াতে সাদা দাগ পড়ে যায়। খালি চোখে দেখে বোঝা যায় না। সবগুলো উপসর্গ রোগীর ক্ষেত্রে একসাথে দেখা নাও যেতে পারে।
এটি একটি জটিল রোগ। দেরি করে চিকিৎসা করালে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। তবে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিলে খুব সহজেই সেরে যায়।
এই ভাইরাস যেভাবে ছড়ায়ঃ
চোখে ভাইরাস দিয়ে প্রদাহ হলে চোখের পানিতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায়। যখন এই অশ্রু মুছতে যাই, তখনই এটি আমাদের হাতে এসে যায়। এরপর থেকেই সেই হাত দিয়েই আমরা যা কিছুই ছুঁই না কেন, সেখানে ভাইরাস চলে আসে। যেমন কারোর সঙ্গে করমর্দন, টিভি/এয়ারকন্ডিশনার রিমোট, ব্যবহৃত তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, এমনকি মুঠোফোন ইত্যাদিতে চলে আসতে পারে। এ জন্যই আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই সময়ে বাসায় থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়। তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রও কিছুটা আলাদা রাখা ভালো।
ভুল ধারণাঃ
আক্রান্ত রোগীর চোখের দিকে তাকালেই কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হবে; এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে। যা সম্পূর্ণ একটি কুসংস্কার বা অন্ধ বিশ্বাস।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ
চোখ উঠলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে যা সেবনীয়ঃ
১. Lubgel (১ ফোটা করে দিনে ৪ বার।)
২. Herpigel (১ ফোটা করে দিনে ৫ বার।)
৩. Fexofex 120 (চোখ চুলাকলে) ১+০+০
৪. Reset plus/Napa/Ache (চোখে ব্যাথা করলে) ১+১+১
৫. Moxquin (১ ফোটা করে দিনে ৪ বার।)
যা করনীয়ঃ
● কালো চশমা ব্যবহার করুন।
● চোখে পানি লাগাবেন না।
● চোখের পানি বা ময়লা মোছার জন্য আলাদা তোয়ালে বা রুমাল ব্যবহার করা।
● পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। অপরিষ্কার রুমাল ব্যবহার করা যাবে না।
● এই সময়ে কালো চশমা পরা যেতে পারে, এতে বাইরের ধুলাবালু বা বাহ্যিক আঘাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
● বাইরের পানি দিয়ে ঝাপটা দেওয়া যাবে না।
● চোখের পাতা বেশি ফুলে গেলে বরফ দেওয়া যেতে পারে।
● চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ওষুধ খাওয়া উচিত।
●চোখে ব্যাথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আই অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
● হাত না ধুয়ে যখন-তখন চোখ ঘষা বা চুলকানো যাবে না।
● চোখ ওঠা শিশুদের আলাদা বিছানায় শোয়াতে হবে।
বিশেষ সতর্কতাঃ
যেসব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তা হলো-ধুলাবালি, আগুন-আলো-রোদে কম যাওয়া, ময়লা-আবর্জনাযুক্ত স্যাতসেঁতে জায়গায় না যাওয়া, পুকুর বা নদী-নালায় গোসল না করা, চোখে কালো চশমা ব্যবহার করা, টেলিভিশন না দেখা। সম্ভব হলে ১০ থেকে ১৫ দিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেয়া এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া। সংক্রমিত রোগীদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা।
জানেন কি ?
চোখের কনজাঙ্কটিভাইটিস রোগটি বাংলাদেশে পরিচিত
“চোখ উঠা” নামে তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এটির আরেক নাম "জয় বাংলা রোগ"। এতে জড়িয়ে আছে এদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য যোগসূত্র!
১৯৭১ সালে মহামারী আকারে পশ্চিম বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিলো। রোগটি পূর্ব বাংলায় চলা মুক্তিযুদ্ধের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসা বাঙালি শরণার্থীদের কারণেই ছড়িয়েছিলো বলে এর নাম দেয়া হয় ‘জয় বাংলা’ রোগ! ‘জয় বাংলা’র প্রকোপ ছিলো এতোটাই, যে সেসময় ৫০ লাখেরও বেশি লোক এই রোগে ভুগেছেন।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, উইকিবাংলা
তথ্য সংগ্রহেঃ মাসুদুর রহমান
রিসিপশনিস্ট-কাম-কম্পিউটার অপারেটর
আশা সমন্বিত স্বাস্থ্য কেন্দ্র,
রূপদিয়া, যশোর (সদর)।