03/10/2023
#মানসিক_রোগ
◻️স্বাস্থ্য বলতে শুধু দৈহিক সুস্থতাই বুঝায় না। একজন লোকের স্বাস্থ্য বলতে তার
▪️শারীরিক
▪️মানসিক
▪️ও সামাজিক সুস্থতা বুঝায়।
শারীরিক অসুস্থতায় যেমন মানসিক অশান্তি ঘটে, মানসিক অশান্তির জন্য তেমনি শারীরিক অসুস্থতা হয়ে থাকে।
স্বাস্থ্য বলতে তাই শরীর ও মন উভয়ের সুস্থতা বুঝায়, কেননা শরীর ও মন মূলত অভিন্ন।
◻️বিভিন্ন রোগের মতই মানসিক রোগগুলোও যে কোন বয়সের লোকের হতে পারে। বিভিন্ন রোগ এবং পরিবেশের স্ত্রী কিংবা পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
সমাজে মানসিক রোগাক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি বিরূপ ধারণা পোষন করা হয়। এর কারণ সামাজিক কুসংস্কার এবং অজ্ঞতা।
অন্যান্য রোগের মতই বিভিন্ন মানসিক রোগেরও চিকিৎসা আছে এবং অনেকাংশে রোগ প্রতিরোধ করাও সম্ভব। সময়মত চিকিৎসা ও পরামর্শ গ্রহণ করলে রোগ নিরাময় হয় এবং রোগীর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর কষ্ট দূর হয়।
#মানসিক_সমস্যার_কারণ:
👉 মানসিক রোগের কারণ সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ধারণা :
প্রচলিত ধারণায় যতক্ষণ কোন লোক অস্বাভাবিক বা খাপছাড়া আচার-আচরণ না করে ততক্ষণ তাকে মানসিক রোগী বলে মনে করা হয় না।
কিন্তু খুব কম রোগীর বেলাই অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখা যায়। বেশির ভাগ রোগী সুস্থ মানুষের মতই স্বাভাবিক আচার-আচরণ করে।
সমাজে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস আছে জ্বিন, পরী, ভূত-প্রেতের খারাপ নজর পড়া বা আছর হওয়া, বাণ মারা, টোনা করা, খারাপ হাওয়া লাগা, বায়ুর দোষ, তাবিজ করা, যাদু করা, প্রতিবেশীর দ্বারা খারাপ কিছু খাওয়াইয়া নষ্ট করা প্রভৃতির দ্বারা মানসিক ব্যাধির সৃষ্টি হয়। এই ধারণাগুলো সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন।
দেশে ও বিদেশে জরিপ এবং বৈজ্ঞানিক | পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে এসব আদি ভৌতিক বিশ্বাসের সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক নাই।
◻️মানসিক রোগের বিজ্ঞানসম্মত কারণ বলে মনে করা হয় :
🔹দ্বন্দ্ববহন কলহময় পারিবারিক অশান্তি সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা প্রভৃতি কারণে
মানসিক রোগ হতে পারে।
🔹 ব্যক্তিগত মানসিক সমস্যা : বিভিন্ন ধরণের দুশ্চিন্তা এবং দ্বিধা-দ্বন্দ্ব হতেও মানসিক রোগের উৎপত্তি হয়।
🔹বংশগত প্রভাব :যদিও মনে করা হয়ে থাকে যে বংশগত প্রভাবে মানসিক ব্যাধি হয়, তথাপি দেখা গিয়েছে যে বেশির ভাগ রোগের ক্ষেত্রেই এই বংশগত প্রভাব অন্যান্য কারণের সঙ্গে একযোগে কাজ করে।
🔹দৈহিক কারণ :বিভিন্ন দৈহিক কারণে মানসিক রোগ হতে পারে।
যেমন-
(ক) অল্প বয়সে পুষ্টিহীনতা,ভিটামিনের অভাব.
(খ) শারীরিক অসুস্থতা যেমন-টাইফয়েড, সিফিলিস, মস্তিষ্কের প্রদাহ, মস্তিষ্কে আঘাত ইত্যাদি
(গ) বিভিন্ন বিষক্রিয়ার প্রভাবে মানসিক রোগ হতে পারে।
🔹রোগ ভীতি (Hypo Ondreasis):- অনেক সুস্থ মানুষ এমনটি ভাবে যে আমার ক্যান্সার হয়েছে। যে কোন কারণে বা তার শরীরের যে কোন রোগে সে ক্যান্সার বা অন্য রোগ মনে করে এবং এটা প্রতিনিয়ত চলতে থাকলে মানসিক রোগ।
🔹শোক (Bereavement) :- হঠাৎ প্রিয়জন বিয়োগ অথবা অপ্রত্যাশিত কোন বিশেষ ব্যক্তিকে খোয়ানোও একটি মস্তবড় কারণ। আবার কাছে পেয়েও কিছু হারানোর মত অবস্থায় এটা বেশ দেখা যায়।
🔹নেশাগ্রস্ততা (Dependency) :- বিশেষ বিশেষ নেশার পরবর্তী অবস্থায় মানসিক ভারসাম্য অনেকাংশে লোপ পায় এবং বিকারগ্রস্ত রোগীর মত আচরণ করে।
#লক্ষণ/চিহ্ন_(Sign/Symtom) :
মানসিক রোগের কতিপয় প্রধান লক্ষণ :
🔸অতি- উত্তেজনা (Agetation) : চঞ্চলতা, প্রলাপ বকা, বিক্ষুদ্ধ ও আক্রমণাত্মক আচরণ প্রভৃতি উপসর্গ হতে পারে, জিনিস পত্র নষ্ট কিংবা ক্ষতি করতে পারে।
🔸উদাসীনতা (Reterdation) : চুপ হয়ে যাওয়া, ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া না করা, একা একা বিড় বিড় করে কথা বলা কিংবা অকারণে নিজে নিজে হাসা ইত্যাদি উপসর্গ | একসঙ্গে থাকতে পারে।
🔸 অশাস্তি (Depression Crices Intervention): বিষণ্ণ ভাব, কিছু ভাল না লাগা, অস্থিরতা, অনিদ্রা, হাত-পা ও মাথায় জ্বালা-পোড়া, নিজেকে অসহায় ও ছোট মনে করা, আত্মহত্যার চিন্তা কিংবা প্রবণতা, বুক ধরফড় করা এবং অন্যান্য শারীরিক উপসর্গ হতে পারে। অনেক সময় যৌন দূর্বলতাও থাকে।
🔸অতি উদ্বেগ (Thoyght Disorde) : অস্থিরতা, বুক ধরফড় করা, বদ হজম বা অরুচি, অকারণ ভীতি, দূর্বলতা, ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে।
🔸যৌন দুর্বলতা ( Sexual Inability) :- বিভিন্ন যৌন দুর্বলতা অনেক অশান্তির কারণ হয় এবং এই সম্পর্কে ভীতি সমস্যাকে আরও জটিল করে। কুসংস্কার ও ভুল ধারণা হতে উদ্বেগের জন্যই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই রোগের সৃষ্টি হয়।
🔸সংজ্ঞাহীনতা (ফিট হওয়া):- দুই ধরণের রোগের জন্য ফিট হতে পারে।
🔻মানসিক রোগঃ- হিষ্টিরিয়ার জন্য ফিট হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সাধারণত কোন মানসিক অশান্তির কারণে এবং কোন ঘটনা বা অশান্তিকে কেন্দ্র করে ফিট হয়। এই ধরণের ফিট জাগ্রত অবস্থায় এবং অন্য লোকের উপস্থিতিতে হয়ে থাকে। ফিটের সময় রোগী শরীরে কোন রকম আঘাত পায় না। প্রসাব হয় না। লোক থাকলে আরও বেশি ফিট হয়। বন্ধ করার জন্যে শক্তি প্রয়োগ করলে আরও জোর করে।
🔻স্নায়বিক কারণঃ- স্নায়বিক কারণে ফিট হয় এবং মৃগীরোগ নামে এটা পরিচিত। এই রোগী ফিট হলে তার শরীরে খিঁচুনী হতে পারে। রোগী সাধারণত অজ্ঞান হয়ে যেখানে সেখানে পড়ে যায় এবং শরীরে আঘাত পায়। ফিটের সময় প্রসাব হতে পারে। অনেকের মুখে ফেনা গড়ায়। জিহবা কাটে। কোন কোন ক্ষেত্রে খিঁচুনী ছাড়াও অজ্ঞান হতে পারে।
🔸জিনের আছরঃ হাওয়া লাগা কিংবা বাণ মারা ইত্যাদিতে যারা ভুগছে বলে মনে করা হয় তারাও আসলে মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত। এসব রোগীর বেলায় উপরে বর্ণিত লক্ষণ সমূহ থাকে।
🔸অঙ্গ-প্রতঙ্গের অস্বাভাবিক আচরণ (Motor disorder):- হঠাৎ শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের অপ্রত্যাশিত নড়াচড়া, মুদ্রাদোষ এবং একটু হেঁটে থামা এগুলোও মানসিক রোগের পর্যায়।
🔸আত্মহত্যার প্রবণতা (Suicidal Tendency) :হঠাৎ কোন ভাবে একটু দুঃখ ব্যথায় বারবার আত্মহত্যার প্রবণতা জাগলে মানসিক রোগ।
🔸বেশি বা অনর্গল কথা বলে (Pressure of Speech) :অনর্গল কথা বলা দেখা যায় কথা বলার বিষয়ের সাথে কোন মিল নেই, একটা থেকে অন্যটায় চলছে। সমাজে এরকম মানুষ প্রায়ই দেখা যায়।
🔸সন্দেহ প্রবণতা (Pressure of Speech): এটার সংখ্যা অনেক এবং উভয় প্রকার স্ত্রী ও পুরুষের ভেতর দেখা যায়। যদি স্ত্রী কোন প্রয়োজনে অন্য পুরুষের সাথে কথা বলে, তাহলে স্বামীর মেজাজ খারাপ হয়। এমনকি স্ত্রীকে মারধরও বিচিত্র নয়। পক্ষান্তরে স্বামীকে অপরিচিত কোন মহিলার বা তার সন্দেহাহিত মহিলার সাথে কথা বলে থাকলে স্ত্রী | সন্দেহে ভোগেন। প্রচন্ড মারামারি পর্যন্ত হতে পারে। সংসার বা ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সম্পর্কও নষ্ট হতে পারে। খুন করা পর্যন্ত দেখা গিয়েছে।
#প্রাথমিক_চিকিৎসাঃ-
মানসিক রোগের চিকিৎসায় ঔষধ এবং পরামর্শ সমভাবে প্রয়োজনীয়। অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিগত সমস্যা মানসিক ব্যাধির মূল কারণ হিসেবে থাকতে পারে। অন্যদিকে অস্বাভাবিক ব্যবহারের জন্য তার আত্মীয়-স্বজন ভীতিগ্রপ্ত হয়।
যে কোন মানসিক ব্যাধিতে সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণ সমূহ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা প্রয়োজন, অনেকের ধারণা বিবাহ দিলে রোগ ভাল হবে। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মারাত্মক ভুল ধারণা। এতে সমস্যা আরও জটিল হয়।
উপরের লক্ষ্মণ গুলো প্রকাশ পেলে দ্রুত একজন মানসিক ডাক্তারের সরনাপন্ন হয়।
#মানসিক_সমস্যা_সমাধানে_আপনি_যে_কাজগুলো_করতে_পারেন:
🔸সোজা হয়ে চলুন
গবেষণায় প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে যখন আপনি মাথা উঁচু করে সোজাভাবে মেরুদন্ড সোজা রেখে চলবেন, তখন আপনার শরীরে পজিটিভ এনার্জি প্রবাহিত হবে। এই কারণে আপনাকে তখন সোজা হয়ে চলতে হবে।
🔸শরীরের ঘাম ঝরিয়ে ফেলুন
যখন আপনি মানসিকভাবে তোলপাড় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তখন আপনি শারীরিক চর্চা করুন। আপনার সুবিধামতো সকাল-বিকেল একটা সময় বেছে নিয়ে শরীরচর্চায় ঘাম ঝরিয়ে নিন। নেতিবাচক প্রভাব শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে।
🔸সম্পর্ক বুঝে দূরে থাকুন
টানাপোড়েনের সম্পর্ক যাদের সঙ্গে, তাদের কাছ থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখুন। যাদের সঙ্গে আপনার মূল সমস্যা বা যাদের নিয়ে আপনার চিন্তা, তাদের চেয়ে কিছুদিন একটু দূরত্ব বজায় রাখুন। খুব জরুরি কথাবার্তা ছাড়া বাকি কথা এড়িয়ে চলুন।
🔸সময় মতো ঘুমিয়ে পড়ুন
ঘুম ঠিকমতো না হলে এই মানসিক চাপ আরও বাড়তে থাকে এবং তার শরীরে প্রভাব ফেলে। তাই প্রয়োজন হলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০ মিনিট আগেই বিছানায় চলে যান এবং উল্টো গুনতি করতে করতে মানসিক স্থিরতা নিয়ে আসুন। ঘুম তো আসবেই এবং আপনার শরীরের এবং মানসিক চাপ অনেকটাই কমিয়ে আনবে।
🔸হারিয়ে যাওয়া শখ- অনুশীলন করুন
যখন আপনি পারিপার্শ্বিক-এ ব্যতিব্যস্ত হয়ে নিজে বিধ্বস্ত হয়ে পড়বেন, তখন আপনি নিজের ভালোলাগা গুলিকে কয়েকটি বেছে নিয়ে তাতে সময় দিন। সিনেমা দেখা, গান শোনা, খেলাধুলা বা অন্য কোনও উপায়ে যদি আপনি নিজেকে রিফ্রেশ করতে পারেন, বা আপনার হবি যা রয়েছে, যেগুলো নিয়মিত চর্চা করা হয় না, সেগুলিতে মনোযোগ দিন।
🔸ডিজিটাল ডিভাইস থেকে একটু দূরত্ব রাখুন
ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল ডিভাইস থেকে একটু দূরত্ব রাখতে হবে। ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামের মত সোশ্যাল সাইটে বেশি মনোযোগ দেবেন না। যদি ডিজিটাল ডিভাইস এর উপর আপনার কর্মজীবন জড়িয়ে থাকে তাহলে সেটুকু বাদ দিয়ে বাকি সময়ে তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
🔸একসঙ্গে একটিই কাজ করুন
দৌড়ঝাঁপ এর মধ্যে কাজ করতে হলেও একসঙ্গে একটিই কাজ করুন। দু'তিনটে কাজ নিয়ে বসবেন না এবং একটি কাজ শেষ করে আরেকটি কাজ ধরুন। অফিসের কাজ একসঙ্গে একাধিক থাকলে তা বুদ্ধি করে একের পর এক সাজিয়ে ফেলুন।
এই টিপগুলি প্রত্যেকের জীবন অনুযায়ী আলাদাভাবে কার্যকর হতে পারে। তবে সবগুলি অনুশীলন করতে পারলে, সাতদিনে পার্থক্য নজরে আসবে।
সর্বোপরি একটা কথা নিয়মিত নামাজ আদায় করুন ও ধার্মিক জীবন যাপন করুন।
তথ্যসুত্র:principles and practice of medicine,Wikipedia, Oxford Academy ,time of india,Britannica,Sellular health.
বিঃদ্রঃ স্বাস্থ্যগত যেকোন প্রয়োজনে ঘরে বসে অনলাইনে ডাক্তার দেখাতে অথবা স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোন পরামর্শের জন্য ইনবক্স করুন
এর পেজে।