23/10/2024
এগ্রেশন ও আচরণ: আক্রমণাত্মক আচরণের মনস্তাত্ত্বিক কারণ
আক্রমণাত্মক আচরণ বা এগ্রেশন মানব সমাজের একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি ব্যক্তির মনে, সামাজিক পরিবেশে এবং সম্পর্কের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে। আক্রমণাত্মক আচরণের মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলি বোঝা মানে একাধিক দিক থেকে মানুষের আচরণকে বিশ্লেষণ করা।
ক. আক্রমণাত্মক আচরণের সংজ্ঞা
আক্রমণাত্মক আচরণ হল এমন একটি কার্যকলাপ যা অন্যের প্রতি শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। এটি বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত হতে পারে, যেমন:
শারীরিক সহিংসতা (যেমন মারধর, লড়াই)
মানসিক সহিংসতা (যেমন গালি দেওয়া, অপমান)
খ. মনস্তাত্ত্বিক কারণ
১. জিনগত প্রভাব:
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, জিনগত উপাদান আক্রমণাত্মক আচরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। পারিবারিক ইতিহাস, বিশেষ করে বাবা-মা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের আক্রমণাত্মক আচরণ, সন্তানের আচরণে প্রতিফলিত হতে পারে।
২. পরিবেশগত প্রভাব:
সামাজিক পরিবেশ এবং সংস্কৃতি আক্রমণাত্মক আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে। যেসব পরিবেশে সহিংসতা সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য, সেখানে মানুষদের মধ্যে আক্রমণাত্মক আচরণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
৩. মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ:
জীবনের চাপ, হতাশা, এবং উদ্বেগ আক্রমণাত্মক আচরণের প্রধান কারণ। যখন কেউ মানসিক চাপ অনুভব করে, তখন তারা ক্রমাগত অসন্তোষ এবং বিরক্তির মধ্যে থাকতে পারে, যা আক্রমণাত্মক আচরণের দিকে ধাবিত করে।
৪. সামাজিক শিখন তত্ত্ব:
আলবার্ট বন্দুরা (Albert Bandura) এর গবেষণা অনুযায়ী, মানুষ অন্যদের আচরণ দেখে শিখে এবং মডেলিং করে। যদি একজন ব্যক্তি সহিংস আচরণ দেখেন, তাহলে তিনি সেটি গ্রহণ করতে পারেন।
৫. আবেগের অভাব:
যখন কেউ তাদের আবেগকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারে, তখন তারা আক্রমণাত্মক আচরণের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। ক্ষোভ বা রাগ সংবরণের অভাব আক্রমণাত্মক আচরণ তৈরি করতে পারে।
৬. মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তন:
কিছু গবেষণা দেখিয়েছে যে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট রাসায়নিক, যেমন সেরোটোনিনের কম স্তর আক্রমণাত্মক আচরণের সাথে যুক্ত। মস্তিষ্কের কিছু অংশ, যেমন অ্যামিগডালা, আবেগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. আচরণগত ফলাফল
আক্রমণাত্মক আচরণ সমাজের জন্য বেশ কিছু নেতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসে:
সম্পর্কের অবনতি: আক্রমণাত্মক আচরণ মানুষের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়, যা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণ হতে পারে।
আইনি সমস্যা: শারীরিক সহিংসতা আইনত অপরাধ হিসাবে গণ্য হয়, যা ব্যক্তির জীবনে জটিলতা সৃষ্টি করে।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: আক্রমণাত্মক আচরণের ফলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন উদ্বেগ, অবসাদ বৃদ্ধি পায়।
আক্রমণাত্মক আচরণ একটি জটিল বিষয়, যার পেছনে নানা মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে। এটি ব্যক্তির জীবনে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলে, যা সমাজের জন্যও হুমকি। আক্রমণাত্মক আচরণ প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে সহানুভূতি ও সংবেদনশীলতার উন্নয়ন ঘটালে, আক্রমণাত্মক আচরণের হার কমানো সম্ভব। ©
সাব্বির আহমদ জুয়েল
কনসালট্যান্ট (সাইকোলজি)
অটিজম ও এনডিডি সেবাদান কেন্দ্র, যশোর