01/02/2025                                                                            
                                    
                                                                            
                                              
( সাইকো নিউরোসিস বা উদ্বেগঘটিত মানসিক ব্যধি)
Psycho Neurosis এক ধরনের মানসিক পীড়া। এই পীড়ায় রোগী তার অবস্থা জানে এবং বোঝে। কোন  অস্বস্তিকর ঘটনার আশংকার ফলে অন্তরের উদ্বেগ ঘটে এবং তাহার বাহ্যিক প্রকাশ স্বরুপ পেশী দৃঢ় হইয়া, ঘাম ঝাঁকুনি দেখা দেয়, হাত পা কাপে, হৃদঘাতের স্পন্দন বৃদ্ধি পায়। যদিও ইহা সাময়িক পীড়া, ইহাকে একধরণের Psycho Neurosis বলে।
 #কারণ : -
১) জন্মগতভাবে অনেকের এই পীড়া হইতে পারে। পূর্বপুরুষদের মধ্যে এই মানসিক পীড়া থাকিলে পরবর্তী বংশধরের মধ্যেও দেখা যাইতে পারে।
২) প্রতিকূল পরিবেশে লালিত শিশুর সুস্থ মানসিকতা না গড়িয়া উঠার ফলে শিশু উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাযুক্ত মানসিকতা নিয়া গড়িয়া উঠে এবং সামান্য মানসিক আঘাতেই পীড়া লক্ষণ প্রকাশ পায় ।
৩) সাময়িক উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, অবসাদ, হতাশা, শোক, হঠাৎ সাময়িক আঘাত প্রভৃতি কারণে পীড়া হইতে পারে ।
৪) পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া. প্রেমঘটিত ব্যর্থতা, বেকারত্ব প্রভৃতি কারণে ।
৫) বাল্যকালে কোনও অতৃপ্তি বা মানসিক আঘাত হইতে পরবর্তী জীবনে এই পীড়া সৃষ্টি হইতে পারে ।
৬) যে সকল শিশু শান্ত গৃহ পরিবেশ পায় না বা স্নেহ-ভালবাসা পায় না, তাহাদের জীবনেও পরে এই অবস্থা সৃষ্টি হইতে পারে ।
৭) স্নায়বিক দুর্বলতা অধিক হওয়ার কারণে।।
 #সাইকোনিউরোসিসের_লক্ষণাবলী:
 ১) অহেতুক ভয়, অমঙ্গলের আশংকায় রোগী কোথাও যাইতে ভীত হয় কাজকর্মে অনিচ্ছা, উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ। যানবাহনে চড়িলে আতঙ্কিত হইয়া উঠে।
২) মানসিক অস্থিরতা, কোন কাজে মনস্থির করিতে পারে না। সামান্য কারণে উত্তেজিত হয়। মনে হয় সে পাগল হইয়া যাইবে। অথবা আত্মহত্যা করিবে। প্রকৃত পক্ষে কিছুই করে না। ৩) ক্রমাগত উৎকণ্ঠায় কর্মোদ্যম ও অধ্যবসায় নষ্ট হয়।
৪) সব সময় একটা আতঙ্ক বা ভয় অথবা রাগের ভাব বা যে সব রোগ নাই। সেই সব রোগ হইয়াছে মনে করা ভাব দেখা দেয়। 
৫) রোগী সব সময় নির্জন স্থানে একা থাকিতে ভালবাসে। কোন বিষয়েই
পড়াশোনা, কাজকর্ম, প্রভৃতিতে মনসংযোগ করিতে পারে না। কর্মে অনাসক্তি দেখা
দেয়।
৬) রোগী ক্রমাগত হাত মোচড়াইতে থাকে, কাপড়ে পাক দিতে থাকে, দেহের পেশীগুলি শক্ত হইয়া উঠে, আঙ্গুলে মৃদু ধরণের কম্পন দেখা দেয়।
৭) নাড়ীর গতি বৃদ্ধি পায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়ে। ঘনঘন মলমূত্র ত্যাগ করিতে চায়। মাঝে মাঝে শিরঃপীড়া দেখা দেয়। বমি ভাব হয়। পেট ফাঁপে ও মাথাঘোরা দেখা দেয়, ক্ষুধামান্দ্য, অম্ল প্রভৃতি দেখা দেয়। দেহের ওজন কমিতে থাকে, বেশী ঘুম হয় না, সহজেই ঘুম ভাঙিয়া যায়।
⏩ সাইকোনিউরোসিসের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা  
 #ব্যবস্থাপনা : 
রোগীকে এমনভাবে বুঝাইতে হইবে যে তাহার কোন রোগ নাই। গান বাজনা, খেলাধূলা, আনন্দ প্রভৃতির দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করিতে হইবে। পূর্ণ বিশ্রাম এবং কিছু দিনের জন্য রোগীকে চেঞ্জে পাঠাইলে ভাল হয়।
হালকা পুষ্টিকর আহার, মাছ, ডিম, শাক শব্জী, কলা, আপেল, টমেটো প্রভৃতি খাদ্য উপকারী। 
এই রোগের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দ্বারা আরোগ্য করা সহজ।
১) একোনাইট 6 - 
মানসিক উদ্বেগ, অত্যন্ত ভয়, মৃত্যু ভয়, রোগী মনে করে যে অবশ্যই মরিবে। জনসভার ভয়, রাস্তা অতিক্রম করিতে ভয়। অস্থিরতা বেশী, এপাশ ওপাশ করে, চমকাইয়া উঠে। পরিবর্তনশীল মন-এই হাসি, এই কারা। পাগল হইয়া যাওয়ার ভয়, রোগী মনে করে যে যাহা কিছু করিতেছে, স্বপ্নাবিষ্ট হইয়া করিতেছে।
২) এ্যাগ্রিলিয়া 6
 নৈরাশ্য ও জীবনে বিতৃষ্ণা, জীবনের প্রতি মমতাশূণ্য। অপ্রিয় বিষয় লইয়া চিন্তা করে। অতিশয় বিষাদ এবং বিষণ্নতার পরই মানসিক উত্তেজনা। একাকী থাকিতে চায়, লোক সঙ্গে ভয়। রোগী অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির। গান বাজনা শ্রবণে মাথায় রক্ত উঠে। কল্পনায় অঙ্গ প্রত্যঙ্গহীন অদ্ভূত বিকৃত দর্শন দেহধারীদেখে। রাতে ঘুম হয় না। কি কারণে হয় না তাহা বুঝে না। রোগী মনে করে সে পাগল হইয়া যাইবে। এই ভয়ে ভীত হয়।
৩) এনাকার্ডিয়াম 30c
- মস্তিষ্কের অবসন্নতা ও স্মৃতিলোপ। কোন কিছুতেই মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। রাত্রির প্রথমার্ধে কল্পনা শক্তি অতি বৃদ্ধি ও উত্তেজনা, ধীরে ধীরে চিন্তা শক্তি কমিয়া যায়। রোগী মনে করে তাহার দুইটি ইচ্ছা শক্তি আছে। কোন বিষয়ে বদ্ধমূল ধারণা। চলিতে মনে হয় কেউ পিছনে হাঁটিতেছে। সব বিষয়ের মন্দ দিকটা ভাবে। মনে করে পৃথিবীর সকলের সঙ্গ হইতে বিচ্যুত হইয়াছে। নিজেকে সকল কাজের অনুপযুক্ত মনে করে। শপথ করার ও অভিশাপ দেওয়ার দুর্দমনীয় প্রবৃত্তি।
৪) আর্সেনিক 6 
- অস্থিরতা ও মানসিক উদ্বেগ। মৃত্যু ভয়, একা থাকিতে ভয়। উদ্বেগ ও অস্থিরতায় দুপুর রাতে শয্যা হইতে উঠিয়া যাইতে হয়। কোথাও শান্তি পায় না। মাথায় গোলমাল, বিষণ্ন ও ক্রন্দনশীল। কাহারও সাথে দেখা করিতে চায় না, মনে করে অতীতে তাহাকে মনে আঘাত দিয়াছে। মুঠা মুঠা কাল্পনিক ছারপোকা বা মশা ছুড়িয়া ফেলিতে থাকে। অলীক গন্ধ পায়, আত্মহত্যার প্রবৃত্তি।
৫) অরাম মেট 30c
জীবনের উপর বিতৃষ্ণা, আত্মহত্যার চিন্তা করে, মরণ চেষ্টা। মৃত্যু ভয়ও যথেষ্ট, মানসিক বিকৃতি, লোকসঙ্গে ভয়। কোন কাজ তাড়াতাড়ি করিতে পারে না। ধর্মোন্মত্ততা ও সদা প্রার্থনারত। কল্পনার দেওয়ালে কুকুর বা একটি হাত দেখে। প্রশ্নের পর পশ্ন করিয়া যায়, উত্তরের অপেক্ষা করে না। এই আনন্দময় পরক্ষণেই খিটখিটে ও ক্রুদ্ধ।
এই পীড়ায় লক্ষণানুসারে ব্যারাইটা কার্ব, আর্জেন্ট নাইট, এগারিকাস মাস্ক, একটিয়া রেসিমোসা, ক্যানাবিস ইন্ডিকা, টিউবারকুলিনাম, চায়না, হায়োসিয়ামস, ইগ্লেসিয়া, পালসেটিলা, প্রভৃতি ঔষধও ব্যবহৃত হয়।