07/12/2023
ঊষাপান
প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে শয্যাত্যাগের আধাঘন্টা বা একঘণ্টা পর যদি তিনবারে আধঘণ্টা অন্তর আধাগ্লাস করে শীতল পানি পান করা যায় তবে কোষ্ঠ পরিত্যাগে তা হয় সবিশেষ সহায়ক। আর্যঋষিরা একে বলতেন ঊষাপান। সেই সূত্রে ঊষাকালে অর্থাৎ সূর্যোদয়ের আগে পানি পান করাকে ঊষাপান বলা হয় আয়ুর্বেদশাস্ত্রে।
প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করলে তবেই প্রকৃতি দেহের যথেষ্ট দূষিত পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে বের করে দিতে সমর্থ হয়। এজন্য পানি পানই সর্বরোগের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা। কোষ্ঠ পরিস্কার করতেও জলের ক্ষমতা অসাধারণ।
মাঝে মাঝে দেহের মধ্যে এমন এক একটা লক্ষণ দেখা যায় যার কারণ আমরা সহজে ঠিক ধরতে পারি না। শরীরটা যেন কেমন কেমন করছে। কেন খারাপ লাগছে বোঝা যাচ্ছে না। তবুও অস্বস্তি, বমি বমি ভাব, অম্বল-ঢেকুর ওঠে, পেটভার হয়ে থাকে ইত্যাদি। দেহের অবসাদ নষ্ট করতে জলের বিকল্প নেই। অনেক সময় এমনও হয় যে, শরীর যেন ভেঙে আসে, মুখের হাসি নিভে যায়, রাগ-ক্ষোভ বাড়তে থাকে খুব সামান্য কারণে। এমন অস্বস্তিকর অবস্থায় এক গ্লাস শীতল পানি পান করে নিলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে অবসাদ দূর হয়ে মনটা প্রফুল্ল হয়ে ওঠে।
স্টিম ইঞ্জিন চালাতে হলে মাঝে মাঝে যেমন কয়লা ও পানির প্রয়োজন হয় তেমনই আমাদের শরীররক্ষার জন্যও খাদ্য ও পানি প্রয়োগ করতে হয়। যারা স্টিম ইঞ্জিন চালিত রেলগাড়ি দেখেছেন তারা নিশ্চয় এও লক্ষ্য করেছেন যে, রেলগাড়ি চলতে চলতে মাঝে মাঝে ইঞ্জিনে কয়লা দিতে হয় আর Watering Station এ এলে ইঞ্জিনে নতুন পানি দিতে হয়। সেই রকম রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ঘুমাতে যাবার আগে আমরা যে পানি পান করে ঘুমাই সেই পানি শরীরের উত্তাপে দেহের ভেতরেই শুকিয়ে যায়। সেজন্য ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পরে ঘুম থেকে উঠে প্রথম শয্যাত্যাগের পরপরই পানি তথা ঊষাপান আমাদের শরীরকে সতেজ এবং কর্মক্ষম করে তোলে, যা দেহের ভেতরের স্টিমকে কার্যকর অবস্থায় নিয়ে আসে।
প্রতিদিন ঝাড়ুদারেরা পানির সাহায্যে ভোরবেলায় যেভাবে শহরের নালা নর্দমা পরিষ্কার করে তদ্রূপ ঊষাপানের ফলে দেহপ্রকৃতি ও শরীরের অনিষ্টকারী বিষাক্ত পদার্থসহ অপ্রয়োজনীয় পদার্থগুলোকে মলমূত্রের সাথে শরীর থেকে নিষ্কাষিত করে দেয়।
আমাদের দেহ প্রতিনিয়ত ক্ষয় হচ্ছে। যেসব জীবকোষ নষ্ট হয়ে যায় রক্ত তা ধুয়ে নিয়ে দেহ থেকে বের করে দেয়। সারারাতে যেসব জীবকোষ নষ্ট হয় তা দূষিত হয়ে শরীরে জমা হয়ে থাকে। যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করা হয় তাহলে মূত্রের সাহায্যে তা বের হয়ে যায়। যদি সকালবেলায় পানি পান না করা হয় তাহলে রক্তে জলীয় অংশের অভাবে ঐ নষ্ট জীবকোষগুলো কিছু কিছু দেহের ভেতর থেকেই যায় এবং দূষিত বর্জ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। ঊষাপানের ফলে নতুন এবং পুরানো বহু প্রাণঘাতী রোগের আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ঊষাপানকে নিয়ে জাপানের 'সিকনেস এসোসিয়েশন' গবেষণা চালিয়ে দেখেছে যে,
ঊষাপানের ফলে বহুরোগ সহজে নিরাময় হয়ে ওঠে;
যেমন: ১. মূত্রকে নিয়মিত করে এবং কিডনিসংক্রান্ত রোগ নিরাময় হয়।
২. কোষ্ঠকাঠিন্য ও কোষ্ঠবদ্ধতা নিরসনে মন্ত্রের মতো কাজ করে। তাই ঊষাপানকে প্রাকৃতিক জোলাপও বলা হয়।
৩. পেটে জমে থাকা গ্যাস, পেটব্যথা, ক্ষুধামন্দা, অম্ল, পেপটিক অলসার, পাকস্থলি ও যকৃতের নানা দুর্বলতা দূর করে তথা পেটের গোলমাল নির্মূল করে। ডায়বেটিস রোগও উপশম হয়।
৪. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে খুব উপকার হয়।
৫. কাশি, হাঁপানি ও ক্ষয়রোগ উপশম হয়।
৬. মেয়েদের মাসিক ঋতুচক্রের অনিয়ম, ব্যথা-বেদনা, শ্বেতস্রাব প্রভৃতির নিরাময় হয়।
৭. অল্প বয়সে বা বেশি বয়সে চামড়া কুচকে বা ঝুলে যাওয়া, ত্বকের রুক্ষতা মোচনে যাদুর মতো কাজ করে।
৮. স্থূলতা, গেঁটেবাত, অর্শ, ব্রণ প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে সহায়ক হয়।
৯. চক্ষুরোগে খুব উপকার হয়।
১০. শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতায় ঊষাপান টনিকের মতো কাজ করে।