21/12/2024
আজ দীর্ঘতম রাত।
হস্পিটালের গেটে যখন নামলাম তখন রাত ২ টা বেজে ৩১ মিনিট।
হস্পিটালের গেটের দোকানগুলা তরকারি রাধা শুরু করেছে নানা রকমের। সকালের প্রস্তুতি নাকি দীর্ঘতম রাতে পথ হারিয়ে আমার মতো অনেকেই খাওয়ার জন্য ঢুকবে?
একটা এম্বুলেন্স সাই করে ঢুকে গেল সাইরেন বাজাতে বাজাতে। জীবন মরন খেলা চলছে ভেতরে নিশ্চয়।
ইমার্জেন্সির সামনে কামাল মামার দোকানে দাড়ালাম৷ তিনি বিক্রি করেন সর্বোচ্চ স্বাদের খাবার। খিচুড়ি আর মুরগি দিতে বললাম। মামা খিচুড়ির সাথে গরু দিয়ে বললেন- সলিড মাংস৷ ৫০ টাকা পরে দিয়েন। শীতের কুয়াশা চারিদিকে ছেয়ে ফেলেছে। তার মধ্যে মামার হাসিহাসি মুখ থেকে খাবার নিতে নিতে দেখলাম এক অপূর্ব দৃশ্য।
এক তরুনী! কতো বয়স কে জানে। একটা টুলের উপর চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছে। তার পায়ের কাছে এক তরুন বসে খুব মনোযোগ দিয়ে আগুন ধরাচ্ছে। সেই আগুনের আলোতে দেবীর মতো ফুটতে থাকা তরুনী তার ফোনে বাজিয়ে চলছে একের পর এক মন খারাপ করা গান৷ শব্দ বুঝতে পারছি না ঠিক। কিন্তু সুর শুনেই মনে হচ্ছে গায়ক এই বুঝি কেদে দিবে৷ সাথে আগুনে জ্বলতে থাকা তরুনীও। দীর্ঘতম রাতে দুক্ষে ধরেছে তাকে। বিষাদ উদযাপনে পায়ের কাছে আগুনের কুন্ডুলি নিয়ে বসে থাকার জন্য এর চেয়ে ভালো রাত আর হতে পারে না।
আরেকটু এগোলাম - রিডিং রুমের দোতালা থেকে কন্ঠ ভেসে আসছে। শীতের রাত। এক বড় ভাই খুব দরকষাকষি করছেন কারোর সাথে। কুয়াশার সাথে মিশে সেই দর কষাকষি জমে পুরা ক্ষীর। আমাকে তাকাতে দেখে হাত নাড়লেন ভাই। দীর্ঘতম শীতের রাতে মনদেওয়া নেওয়ার এই মধুরতম মুহুর্তে আমাকে সাক্ষী মানলেন ভাই। আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে পা বাড়ালাম।
হলের গেটের অল্প দূরে আর্মি ক্যাম্প। তারা তিনজন পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু কাছাকাছি দাঁড়িয়ে গল্প করছে। দেখে মনে হচ্ছে পুলিশ বা আনসার। আর্মি সটান দাঁড়িয়ে থাকবে সীনা টান করে - এই বোধ ভেংগে যাচ্ছে আমরা। দীর্ঘতম রাত - তিনজন সেনা কর্মকর্তার সীনাকে টেনে বাকিয়ে দিয়েছে বুঝি!
আমি আর সাহস পাইলাম না দীর্ঘতম রাতে মানবসংস্পর্শহীন হাটাহাটি করতে। এই রাত আমার সীনাকে যদি ধনুকের মতো বাকিয়ে দেয়, তবে সেই বাকানো আমিত্ব নিয়ে আমি কোথায় যাব?
একুশ ডিসেম্বর রাত
জুলাই ২৪ হল,
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ