03/06/2025
বহি:বিভাগ ২০৩ নং রুম।
চাচী রুগী দেখা চেয়ারে বসলেন। ১০-১২ টা বোলতায় কামড় ( বল্লা) দিয়েছে। ডান হাতে একটা ঘাঁ হয়েছে। কিছুটা বিশ্রি। সারছে না।
বেশ ভুষায় মার্জিত, কথা বার্তায় শিক্ষিত মনে হল। ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে বললাম। উনি পারবেন না বললেন।
৫০ টাকার সামান্য একটা পরীক্ষা করতে পারবে না শুনে রাগ করলাম। চাচী বললেন.. আমার কাছে টাকা নেই।
বললাম... চাচা বেচে নেই?? .. নাহ, উনি গত বছর মারা গেছে। স্ট্রোক করেছিল।
:::: ছেলে মেয়ে নেই??... একটা মেয়ে আছে শুধু। কোন ছেলে নেই।
:::; মেয়ে কি করে?... কলেজে পড়ে।
::::: সংসার চলে কিভাবে? .... মেয়েটা টিউশুনি করে কিছু টাকা পায়, তাই দিয়ে চাউল কিনি। গত দুই দিন আমারা কিছু কিনতে পারি নি। গত রাত থেকে কিছু খাই নি।
প্রথম দিকে নির্বিকার ভাবে বললেও শেষের দিকে কেঁদে ফেললেন।
পৃথিবীতে হাজার রকমের কষ্ট আছে মানুষের। না খেয়ে থাকার মত তীব্র কষ্ট আর একটিও নেই। এই কষ্ট জীবনে যে একটিবারের জন্যও পায় নি, তাকে কোন কিছুর বিনিময়ে বুঝানো সম্ভব না।
আপনি ডায়েটিং করেন, আপনি উপোস দেন, এগুলো শখের না খেয়ে থাকা। ঘর ভর্তি খাবার নিয়ে মানুষ এগুলো করে। কিন্তু যে ব্যক্তি জানে না সে কখন খাবে, সেই কষ্ট কোন কিছু দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।
পুরোটা দিন মন খারাপ করে কাটিয়েছি। ২৪৩৫ ডলার মাথাপিছু আয়ের এই দেশে কেউ টাকার অভাবে না খেয়ে আছে, মনটা মানতেই চাচ্ছিল না। ছোট বেলায় আমাদের আশে পাশের বেশির ভাগ মানুষ না খেয়ে থাকত। শুধু তেতুল পাতা খেয়ে একটা দিন কাটিয়ে দিতে দেখেছি। উপকুলে আমাদের সভ্যতা বলে কিছু ছিলনা। প্রায় অসভ্য আমাদের সেই সমাজে সেটা ছিল একদম স্বাভাবিক। আধুনিক চকচকে এই শহরেও মানুষ টাকার অভাবে না খেয়ে আছে তাহলে।
মন ভার করে রাতে একটা ওটি করতে গেলাম। চেম্বারে যখন দেখেছিলাম, রুগীর Fistula with abscess ছিল। DRE করে অন্য কিছু পাইনি।
রুগী অজ্ঞান করার পরে যন্ত্র দিয়ে দেখি মলদ্বারের ( Re**um) উপরের দিয়ে একটা টিউমার। ক্যান্সার হওয়ার চান্স প্রায় শতভাগ।
অল্প বয়স রুগীর। নিজেরই অজান্তে কান্না চলে আসল।
লাটিমের মত বিরামহীন আমাদের এই ছুটে চলার সবকিছুই নিরর্থক। বিশাল এই দুনিয়া কারো কারো জন্য অত্যন্ত ছোট হয়ে যায়। বেচে থাকার এই প্রতিটা পরীক্ষা কারো কারো জন্য অনেক কঠিন।