27/04/2025
#কিডনিতে পাথর কিভাবে হয়?
কিডনিতে পাথর (Kidney Stone) হওয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হতে পারে। এটি মূলত কিছু খনিজ ও লবণের জমাট বাঁধা কঠিন পদার্থ যা কিডনিতে তৈরি হয় এবং মূত্রনালির মাধ্যমে বের হওয়ার চেষ্টা করে।
#কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রধান কারণ:-
১. পানিশূন্যতা (Dehydration)
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খেলে শরীরে পানির অভাব হয়, ফলে প্রস্রাবে খনিজ লবণ বেশি ঘন হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত খনিজ জমাট বেঁধে কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।
২. খাদ্যাভ্যাস (Dietary Habits)
★বেশি পরিমাণে অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার (যেমন মাছের মাথা,মাছ, মুরগির হাড় চিবিয়ে খেয়ে ফেলা, বিট, বাদাম, চকোলেট, চা, কফি) ইত্যাদি খেলে ক্যালসিয়ামের সাথে অক্সালেট যুক্ত হয়ে কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।
★অতিরিক্ত লবণ ও প্রোটিন গ্রহণ প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম ও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা পাথর তৈরির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
★বেশি চিনি ও প্রসেসড খাবার খেলে কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও ইউরিক অ্যাসিড (Excess Calcium & Uric Acid)
★শরীরে হাইপারক্যালসিউরিয়া (অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম নিঃসরণ) হলে প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, যা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।
★ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে (যেমন গেঁটেবাত রোগীদের ক্ষেত্রে) প্রস্রাবে স্ফটিক তৈরি হয়ে পাথর হতে পারে।
৪. বংশগত কারণ (Genetic Factors)
★পারিবারিকভাবে যদি কারও কিডনিতে পাথর হওয়ার ইতিহাস থাকে, তাহলে তার ঝুঁকিও বেশি থাকে।
৫. দীর্ঘসময় প্রস্রাব আটকে রাখা (Urine Retention)
★প্রস্রাব আটকে রাখলে প্রস্রাবের মধ্যে খনিজ পদার্থ জমে যায় এবং পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৬. কিছু ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট (Medications & Supplements)
★কিছু ওষুধ যেমন ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট, ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট ও ডাইরেটিকস দীর্ঘসময় ব্যবহার করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৭. স্থূলতা ও জীবনযাত্রার ধরন (Obesity & Lifestyle)
★অতিরিক্ত ওজন থাকলে কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, যা প্রস্রাবে অতিরিক্ত খনিজ সঞ্চিত করে পাথর তৈরির কারণ হতে পারে।
★বেশি সময় বসে থাকা বা অনিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমও পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
৮. কিছু শারীরিক সমস্যা (Medical Conditions)
★হাইপারপারাথাইরয়েডিজম (Parathyroid gland বেশি হরমোন উৎপন্ন করলে) ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, যা পাথর তৈরি করতে পারে।
★গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি বা অন্ত্রের রোগ (Inflammatory Bowel Disease - IBD) থাকলে শরীরে ক্যালসিয়াম ও অক্সালেটের শোষণ প্রক্রিয়া পরিবর্তিত হয়ে যায়, যা পাথর তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
কিডনিতে পাথরের ধরণ ও গঠন
কিডনিতে সাধারণত ৪ ধরনের পাথর হতে পারে:
⛔প্রতিরোধের উপায়:
১. প্রচুর পানি পান করা – প্রতিদিন কমপক্ষে ২.৫-৩ লিটার পানি পান করলে প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত খনিজ বের হয়ে যায়।
2. অক্সালেট ও লবণযুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করা – পালং শাক, বাদাম, চা, চকোলেট কম খাওয়া উচিত।
3. প্রোটিনের পরিমাণ কমানো – বেশি লাল মাংস, সামুদ্রিক মাছ না খাওয়া ভালো।
4. ওজন নিয়ন্ত্রণ করা – শারীরিক পরিশ্রম করা এবং সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করা প্রয়োজন।
5. প্রস্রাব আটকে না রাখা – নিয়মিত প্রস্রাব করা কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।
6. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া – যাদের বারবার কিডনিতে পাথর হয়, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ও ডায়েট মেনে চলা উচিত।
⭕কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ মূলত পানিশূন্যতা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক অসুস্থতা ও বংশগত কারণে হয়ে থাকে। সঠিক পরিমাণে পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও সচেতন জীবনযাত্রা মেনে চললে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব ।।