10/08/2025
এনজিওর দায়দেনা থেকে মুক্ত হতে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ
জুনায়েদ কামাল - ব্যুরো চীফ
নোয়াখালীর সদর উপজেলার ১৯নং পূর্ব চরমটুয়ায় কিস্তির টাকার বোঝা ঝেড়ে ফেলতে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। নিহতের ভাইদের দাবি, আব্দুশ শহিদ মাত্র দুই বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়েছে স্ত্রী নাছিমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। ২০২৩ সালে ধর্মীয় রীতি মেনে নাছিমার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান। কিন্তু সুখের বদলে শুরু হয় টাকার দাবিদাওয়া। শশুরবাড়ি থেকে টাকা না পেয়ে শহিদ একের পর এক ৭টি এনজিও থেকে নেয় ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ। আর সেই ঋণের বিধিমালায়—ঋণগ্রহীতা মারা গেলে টাকা ফেরত দিতে হয় না—এমন সুযোগই নাকি হয়ে ওঠে হত্যার প্রেরণা।
মামলার সুত্রে জানা যায়, গত ২৬ তারিখ গভীর রাতে ঘুমন্ত স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ পাশের পুকুরে ফেলে দেন শহিদ। ভোরে শিশুকন্যার কান্না ও প্রতিবেশীর চিৎকারে গ্রামবাসী ছুটে এসে পুকুরে ভাসমান বিবস্ত্র নাছিমার দেহ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়। প্রথমে শহিদের পরিবার ঘটনাটিকে ‘জ্বীন-ভূতের আক্রমণ’ বলে চালানোর চেষ্টা করলেও, পরে উঠে আসে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, এর আগেও শহিদের প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুটি একই রকম রহস্যজনক পরিস্থিতিতে ঘটেছিলো। এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মনে জন্ম নিয়েছে আরও গভীর সন্দেহ—এ কি কেবলই কাকতালীয় মৃত্যু, নাকি ধারাবাহিকভাবে সাজানো শীতল মাথার খুন? ইতিমধ্যে নাছিমার মা জুলেখা বেগম ছয়জনকে আসামি করে নোয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আর গ্রামজুড়ে চলছে ফিসফাস, “দুই দুইবার কি একইভাবে মৃত্যু ঘটে?”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুশ শহিদ বলেন, ঘটনার দিন দিবাগত রাত আমার দোকানে কেউ না থাকায় আমি রাত তিনটার দিকে আমার দোকানে চলে আসি। সকাল বেলায় আমার মেয়ে জানায় তার মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি বললাম দেখ হয়তো তোর দাদুর বাড়িতে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর জানতে পারি আমার স্ত্রী নাছিমার বিবস্ত্র দেহ পুকুরে ভাসছে। পরে বিষয়টি আমরা আমার শশুর বাড়ীর লোকদের জানাই। তারা এসে নাছিমার মৃত্যুটি স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়ে লাশ দাফন করে। ঘটনার দুদিন পর আমি জানতে পারি, আমার শশুর বাড়ীর লোকজন মানুষের কান কথা শুনে নাছিমার মৃত্যুর জন্য আমাকে দোষী করছেন। এটা সম্পূর্ণ অসত্য। নাছিমার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। তার মৃত্যুর সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী সুধারাম মডেল থানার কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুর খবর শুনে আমি তাৎক্ষণিক এসআই আমিনুল শিকদারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠাই। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মৃত ব্যক্তির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পায়নি। নাছিমার ভাই ও স্থানীয়রা মৃত্যুটি স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে বলে দাবি করেন। লাশ দাফনের পরের দিন নাছিমার ভাই মাওলানা ইসমাইল হোসেন ও ইব্রাহীম জানায়, তারা স্থানীয়ভাবে জানতে পারেন নাছিমার স্বামী আব্দুস শহীদ কিস্তির টাকার দায়দেনা থেকে মুক্তি পেতে নাছিমাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করছে। আদালতের নির্দেশ পেলে লাশ উত্তোলন করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।