01/05/2025
যৌথ পরিবার নাকি একক পরিবার—সন্তান লালনপালনে কোনটা ভালো?
এই প্রশ্নটা হয়তো আপনি নিজেও নিজের মনে করেছেন। অনেক মা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে এই প্রশ্ন—“আপু, আপনি কী মনে করেন? আমি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।”
আসলে সরাসরি কোনটা ভালো বলা যায় না। এটা নির্ভর করে আপনি আপনার সন্তানকে কেমন মানুষ হিসেবে দেখতে চান, এবং আপনার আশেপাশের মানুষগুলো কেমন—তার উপরে।
যৌথ পরিবার যদি ইসলামিক হয়—তাহলে তা অনেক বড় নিয়ামত।
দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, খালা-নানী… সবাই মিলে যে ভালোবাসা আর নিরাপত্তার একটা পরিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়, সেটা সন্তানকে মানসিকভাবে খুব স্ট্রং করে তোলে। সেখানে যদি নামাজ, ইসলামিক শিষ্টাচার, কুরআন তেলাওয়াত, হালাল-হারামের সচেতনতা থাকে—তাহলে সন্তান এমন একটা পরিবেশে বড় হবে, যেখানে দ্বীন থাকবে তার আশেপাশেই।
একজন মা হিসেবে রান্না বা অন্য কাজ সামলানোর সময় যদি কেউ বাচ্চাকে একটু কোলে নেয়, ঘুম পাড়ায়—তাতে জীবনের ভার অনেক হালকা হয়ে যায়।
কিন্তু যদি সেই পরিবার ইসলামিক আদর্শ থেকে অনেক দূরে থাকে?
তাহলে একজন সচেতন মুসলিম মায়ের জন্য ওটাই হয় সবচাইতে বড় যুদ্ধক্ষেত্র।
অনেকে বলে, “এখনো ছোট… বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে।”
কেউ কেউ ফোনে ইউটিউব ধরিয়ে দেয়, “কান্না করছিল তো! শান্ত হয়েছে তো!”
বা বলে, “এত নামাজ নামাজ করো কেন? এত ধর্ম ধুয়ে খাবে?”
সেই পরিবেশে একজন মা বুঝে যান—শুধু বাইরের যুদ্ধ না, ভেতরের যুদ্ধটা আরও কঠিন। নিজের পরিবারে ইসলামী আদর্শ ধরে রাখতে গিয়ে চুপ থাকতে হয়, কষ্ট চেপে রাখতে হয়, আবার সন্তানের মনটাও বাঁচিয়ে চলতে হয়।নিজের আমল আমলাকেও ভাটা পড়ে।
সেইখানেই একক পরিবারের মূল্য বোঝা যায়।
একক পরিবারে হয়তো আপনি একা। সব কাজ, সব দায়িত্ব আপনার। হয়তো একা রাত জেগে বাচ্চাকে ঘুম পাড়ান, আবার সকালে উঠে রান্না করেন।
কিন্তু…
আপনার বাচ্চাকে কী শিখাবেন, কী খাওয়াবেন, কোন সময়ে কী শেখাবেন—সব কিছু আপনি ঠিক করতে পারেন নিজের আদর্শ অনুযায়ী।মা বাবা দুজনই ইসলামি জীবনযাপন করলে সন্তানও একই পথে এগিয়ে যাবে। একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম হিসেবে সন্তানকে গড়ে তোলা তুলনামূলক সহজ হবে।
একজন মা যদি সত্যিই নিজের সন্তানকে আল্লাহভীরু, পর্দাশীল, দ্বীনদার হিসেবে গড়ে তুলতে চান—তাহলে তার প্রয়োজন হয় একটি সাপোর্টিভ বা অন্তত “non-interfering” পরিবেশ। কেউ যদি মায়ের দ্বীনী চেষ্টাকে কষ্ট না দেয়, তাহলে সে একাই হলেও অনেক কিছু করে ফেলতে পারে, ইনশাআল্লাহ।
সত্যি বলতে, সন্তান বড় করা মানে শুধু পড়াশোনা আর খেলাধুলা না।
ওকে তৈরি করতে হবে আখিরাতের জন্য। ওকে বানাতে হবে এমন একজন, যে আল্লাহকে ভয় করে, মানুষকে ভালোবাসে, সমাজের বোঝা না হয়ে সমাজের আলো হয়।
তাই আপনার সিদ্ধান্ত হোক আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী।
যদি বড় পরিবার দ্বীনদার হয়—তাহলে সেটা অনেক বরকতের জায়গা।
আর যদি না হয়—তাহলে একাকীত্বের কষ্ট সহ্য করেও, ধীরে ধীরে নিজের মতো করে একটা ইসলামিক পরিবেশ গড়ে তোলা উত্তম।
সবশেষে একটাই কথা, মা ইচ্ছা করলেই একা একা একটি মুসলিম প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারেন—যদি তার মধ্যে থাকে তাওয়াক্কুল, ধৈর্য আর সচেতনতা।
জয়-পরাজয় অনেক বড় কিছু না।
আল্লাহর কাছে সফল মা সেই—যে নিজের সন্তানের আখিরাত নিয়ে আন্তরিক।