Dr. Md. Amir Hossain

Dr. Md. Amir Hossain Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Dr. Md. Amir Hossain, Doctor, Nabakalash, Wapda, Matlab Gonj,, Matlab Bazar.

06/05/2025

তুমি আল্লাহ তা‘আলার (বিধি-নিষেধের) রক্ষা করবে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে রক্ষা করবেন।

‎حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ مُوسَى، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ،
أَخْبَرَنَا لَيْثُ بْنُ سَعْدٍ، وَابْنُ، لَهِيعَةَ عَنْ قَيْسِ بْنِ الْحَجَّاجِ، قَالَ وَحَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَخْبَرَنَا أَبُو الْوَلِيدِ، حَدَّثَنَا لَيْثُ بْنُ سَعْدٍ، حَدَّثَنِي قَيْسُ بْنُ الْحَجَّاجِ الْمَعْنَى، وَاحِدٌ، عَنْ حَنَشٍ الصَّنْعَانِيِّ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كُنْتُ خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا فَقَالَ ‏ "‏ يَا غُلاَمُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ وَلَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে তরুণ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি- তুমি আল্লাহ তা‘আলার (বিধি-নিষেধের) রক্ষা করবে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ তা‘আলাকে তুমি কাছে পাবে। তোমার কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহ তা‘আলার নিকট চাও, আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহ তা‘আলার নিকটেই কর। আর জেনে রাখো, যদি সকল উম্মাতও তোমার কোন উপকারের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। অপরদিকে যদি সকল উম্মাত তোমার কোন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে একতাবদ্ধ হয়, তাহলে ততটুকু ক্ষতিই করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তোমার তাক্বদিরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে।

সহীহঃ মিশকাত (৫৩০২), যিলালুল জান্নাত (৩১৬-৩১৮)।

ফুটনোট: আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।

জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫১৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

18/09/2024

পরিবার গঠনে করণীয়
ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম |

স্বামীর নিকটে স্ত্রীর অধিকার :

স্বামীর কাছে স্ত্রীর কিছু হক বা অধিকার আছে, যেগুলি আদায় করা স্বামীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। এই অধিকারগুলি যথাযথভাবে প্রদান করলে স্বামীর প্রতি স্ত্রী যেমন অনুগত হয় তেমনি তার প্রতি স্ত্রীর ভালবাসা-মহববত অটুট থাকে। নিম্নে স্ত্রীর কিছু হক বা অধিকার উল্লেখ করা হ’ল।-

১. আশ্রয় দান : স্ত্রীকে আশ্রয় দান করা স্বামীর জন্য আবশ্যক। যেখানে স্ত্রী থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ও নিরাপদ ভাবে সেখানে তার আবাসনের ব্যবস্থা করা স্বামীর জন্য করণীয়। আল্লাহ বলেন, أَسْكِنُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ مِنْ وُجْدِكُمْ وَلاَ تُضَارُّوْهُنَّ لِتُضَيِّقُوْا عَلَيْهِنَّ- ‘তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস কর সেখানে তাদেরকেও বাস করতে দিয়ো। তাদেরকে সঙ্কটে ফেলার জন্য কষ্ট দিয়ো না’ (তালাক্ব ৬৫/৬)।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইদ্দত পালনকালে স্ত্রীকে বাড়ী থেকে বের করে দেওয়া যাবে না। আল্লাহ বলেন,لاَ تُخْرِجُوْهُنَّ مِنْ بُيُوْتِهِنَّ وَلاَ يَخْرُجْنَ إِلاَّ أَنْ يَأْتِيْنَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ- ‘তোমরা তাদেরকে তোমাদের বাড়ী-ঘর থেকে বের করে দিয়ো না এবং তারাও বের হবে না। যদি না তারা কোন স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়’ (তালাক্ব ৬৫/১)।

২. ভরণ-পোষণ : স্ত্রীর ভরণ-পোষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্বামীর। আল্লাহ বলেন, لِيُنْفِقْ ذُوْ سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آَتَاهُ اللهُ لاَ يُكَلِّفُ اللهُ نَفْساً إِلاَّ مَا آَتَاهَا سَيَجْعَلُ اللهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْراً- ‘সচ্ছল ব্যক্তি তার সচ্ছলতা অনুসারে ব্যয় করবে। আর যার রিযক সীমিত করা হয়েছে, সে ব্যয় করবে আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাত্থেকে। আল্লাহ যাকে যতটা দিয়েছেন তার অতিরিক্ত বোঝা তার উপর চাপান না। আল্লাহ কষ্টের পর সহজ করে দিবেন’ (তালাক্ব ৬৫/৭)। তিনি আরো বলেন,وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ‘আর জন্মদাতা পিতার দায়িত্ব হ’ল ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রসূতি মায়েদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা’ (বাক্বারাহ ২/২৩৩)।

হাকীম ইবনু মু‘আবিয়াহ আল-কুশাইরী থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল!مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ قَالَ أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ أَوِ اكْتَسَبْتَ وَلاَ تَضْرِبِ الْوَجْهَ وَلاَ تُقَبِّحْ وَلاَ تَهْجُرْ إِلاَّ فِى الْبَيْتِ. ‘আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক রয়েছে? তিনি বললেন, তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোষাক পরিধান করলে তাকেও পোষাক দিবে। তার মুখমন্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না। আর তাকে পৃথক রাখতে হ’লে ঘরের মধ্যেই রাখবে’।[1] তিনি আরো বলেন,إِذَا أَعْطَى اللهُ أَحَدَكُمْ خَيْرًا فَلْيَبْدَأْ بِنَفْسِهِ وَأَهْلِ بَيْتِهِ- ‘তোমাদের কাউকে যখন আল্লাহ কল্যাণ (সম্পদ) দান করেন তখন সে নিজের এবং তার পরিবারস্থ লোকজনকে দিয়ে (ব্যয়) শুরু করবে’।[2]

কারো সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সে যদি তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করতে কৃপণতা করে তাহ’লে সে পাপী হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوْتُ، ‘কেউ পাপী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার উপর নির্ভরশীলদের রিযিক্ব নষ্ট করে’।[3] অন্যত্র তিনি আরো বলেন, كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يَحْبِسَ عَمَّنْ يَمْلِكُ قُوْتَهُ ‘কোন ব্যক্তির পাপের জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, যাদের খোরপোষ তার দায়িত্ব সে তাদের খোরাকী আটকিয়ে রাখবে’।[4] এ ধরনের লোককে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللهَ سَائِلٌ كُلَّ رَاعٍ عَمَّا اسْتَرْعَاهُ أحَفِظَ ذلِكَ أمْ ضَيَّعَهُ حَتّى يَسأَلَ الرَّجُلَ عنْ أهْلِ بَيْتِهِ- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। সে তা সংরক্ষণ করেছে, না তাতে অবহেলা করেছে? এমনকি পুরুষকে তার স্ত্রী (পরিবার-পরিজন) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’।[5] পক্ষান্তরে পরিবারের জন্য খরচকৃত অর্থের ফযীলত অনেক বেশী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أَفْضَلُ دِيْنَارٍ يُنْفِقُهُ الرَّجُلُ دِيْنَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى عِيَالِهِ، ‘উত্তম হ’ল ঐ দীনার যা কোন ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে’।[6] অন্যত্র তিনি বলেন,ديْنَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، دِينَارٌ فِي الْمَسَاكِيْنِ، وَدِيْنَارٌ فِيْ رَقَبَةٍ، وَدِيْنَارٌ فِيْ أَهْلِكَ، أَعْظَمُهَا أَجْرًا الدِّيْنَارُ الَّذِيْ تُنْفِقُهُ عَلَى أَهْلِكَ، ‘এক দীনার যা তুমি আল্লাহর পথে খরচ কর। এক দীনার দরিদ্রদের জন্য, এক দীনার গোলাম আযাদ করার জন্য এবং এক দীনার তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য। এসবগুলির মধ্যে সর্বাধিক ছওয়াব অর্জনকারী ঐ দীনার, যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য খরচ কর’।[7] আর পরিবারের জন্য খরচ করা অর্থ ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا أَنْفَقَ الرَّجُلُ عَلَى أَهْلِهِ يَحْتَسِبُهَا فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ. ‘কোন ব্যক্তি স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য পুণ্যের আশায় যখন ব্যয় করে তখন সেটা তার জন্য ছাদাক্বা হয়ে যায়’।[8]

এমনকি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যে পানি পান করায় তার জন্যও তার নেকী রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا سَقَى امْرَأَتَهُ مِنَ الْمَاءِ أُجِرَ. ‘নিশ্চয়ই কোন ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীকে পানি পান করায় তখন সে তার বিনিময়ে ছওয়াব পায়’।[9]

স্বামী সাধ্যমত স্ত্রীকে পোষাক-পরিচ্ছদ দান করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوْا إِلَيْهِنَّ فِىْ كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ ‘আর তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তোমরা (যথাসম্ভব) তাদের পোষাক-পরিচছদ ও আহারের সুব্যবস্থা করবে’।[10] অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, সমাজে এমন অনেক দায়িত্বহীন মানুষ আছে, যারা নিজ স্ত্রী ও সন্তানকে ভাল ও মানসম্মত পোষাক কিনে দেয় না। অথচ নিজে মূল্যবান পোষাক পরিধান করে।

৩. স্ত্রীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা : স্বামীর উপরে স্ত্রীর অন্যতম অধিকার হ’ল তার নিরাপত্তার সুব্যবস্থা করা, যাতে তার জান-মাল, ইয্যত-আব্রু, মান-সম্ভ্রম বজায় থাকে এবং সে ঐ পরিবেশে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। সেই সাথে দ্বীনী যাবতীয় কর্মকান্ড সুচারুরূপে পালন করতে পারে। অনুরূপভাবে তাকে সকল প্রকার ফিৎনা থেকে রক্ষা করা। যেমন দুরাচারী মহিলাদের সাথে মেশার সুযোগ না দেওয়া, প্রেক্ষাগৃহে না নিয়ে যাওয়া, বাদ্য-বাজনা সম্বলিত অশ্লীল গান না শুনানো, তাকে বেপর্দা ও অর্ধ নগ্ন হয়ে চলতে বাধ্য না করা, গায়ের মাহরাম পুরুষ (দেবর-ভাসুর, বন্ধু-বান্ধব)-দের সাথে মিশতে বাধ্য না করা। তদ্রূপ তাকে কোন চাকুরী করতে বাধ্য না করা, যাতে সে পরপুরুষের সাথে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মিশতে বাধ্য হয়। আর এসবের মাধ্যমে নারীরা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে ও পাপাচারে লিপ্ত হয়। যার শেষ পরিণতি হচ্ছে বিচ্ছেদ।

৪. স্ত্রীকে সন্দেহ না করা : স্ত্রীকে অযথা সন্দেহ করা স্বামীর উচিত নয়। কারণ স্ত্রীকে সন্দেহ করলে দাম্পত্য জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর সুখী-সুন্দর দাম্পত্য জীবনের জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়ের বিশ্বস্ততা, আমানতদারিতা, সততা-সত্যবাদিতা, আন্তরিকতা, অনাবিল প্রেম, অকৃত্রিম ভালবাসা, নম্রতা, সুস্মিত ব্যবহার ও বাক্যালাপ, একে অপরের উপকার স্বীকার করা ইত্যাদি গুণ উভয়ের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। আর সন্দেহ এসব কিছুকে ধবংস করে ফেলে। কারণ সন্দেহ এমন জিনিস যার সূক্ষ্মতম শিকড় একবার মনের গভীরে প্রোথিত হয়ে গেলে যতক্ষণ না তাকে উপড়ে ফেলা হয়, ততক্ষণ সে প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করতে থাকে। এই সন্দেহ-সংশয়ের ফলে পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। সংসার পরিণত হয় এক প্রকার জাহান্নামে। এরূপ সংসার স্থায়ী হয় না।

এক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী প্রত্যেক স্বামীর মনে রাখা উচিত। তিনি বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلاَدِكُمْ عَدُوًّا لَكُمْ فَاحْذَرُوْهُمْ وَإِنْ تَعْفُوْا وَتَصْفَحُوْا وَتَغْفِرُوْا فَإِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ- ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের (পার্থিব ও পারলৌকিক বিষয়ের) শত্রু। অতএব তাদের ব্যাপারে তোমরা সতর্ক থেকো। অবশ্য (পাপ থেকে তওবা করলে ও পার্থিব অন্যায়ে) তোমরা যদি তাদেরকে মার্জনা কর, তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দাও তাহ’লে জেনে রাখ যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (তাগাবুন ৬৪/১৪)।

স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য :

পরিবারে স্ত্রীর দায়িত্ব-কর্তব্যও কম নয়। স্ত্রী একটি পরিবারের কর্ত্রী হয়ে থাকে। সে তার দায়িত্ব ভালভাবে পালন করলে পরিবার ভাল চলে, সবাই সুখী হয়। কিন্তু স্ত্রী তার দায়িত্বে অবহেলা করলে কিংবা দায়িত্ব পালনে অলসতা করলে পরিবারে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি মেনে আসে। তাই স্ত্রীকে দায়িত্ব সচেতন ও কর্তব্যপরায়ণ হওয়া যরূরী। নিম্নে স্ত্রীর কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য উল্লেখ করা হ’ল।-

১. ধৈর্যশীলা হওয়া : স্বামী প্রদত্ত কষ্ট ও তার দুর্ব্যবহারে ধৈর্য ধারণ করা এবং একে ছওয়াবের কারণ মনে করা উচিত। তার পক্ষ থেকে খারাপ আচরণ পেলেও তা সহ্য করা এবং তার শয্যা পরিত্যাগ না করা স্ত্রীর জন্য কর্তব্য। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ ‘কোন লোক যদি নিজ স্ত্রীকে বিছানায় আসতে ডাকে আর স্ত্রী অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর কষ্ট নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহ’লে ফেরেশতাগণ এরূপ স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত লা‘নত করতে থাকে’।[11] অন্যত্র তিনি বলেন,إِذَا بَاتَتِ الْمَرْأَةُ مُهَاجِرَةً فِرَاشَ زَوْجِهَا لَعَنَتْهَا الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تَرْجِعَ- ‘যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীর শয্যা ছেড়ে অন্যত্র রাত্রি যাপন করে তাহ’লে যতক্ষণ না সে তার স্বামীর শয্যায় ফিরে আসে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তার ওপর লা‘নত বর্ষণ করতে থাকে’।[12]

২. স্বামীর পরিবারের উত্তম সংরক্ষক হওয়া : স্বামীর পরিবারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা এবং তার অনুপস্থিতিতে তার সম্পদের সংরক্ষণ করা স্ত্রীর কর্তব্য। আর জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয় না করা। যেমন আল্লাহ বলেন,وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا، إِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْا إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوْرًا- ‘আর তুমি মোটেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ’ (বানী ইসরাঈল ১৭/২৬-২৭)। তিনি আরো বলেন, وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْا إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ ‘আর তোমরা খাও ও পান কর। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না’ (আ‘রাফ ৭/৩১)।

পক্ষান্তরে স্বামীর সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে স্ত্রীকে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ وَهِىَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، ‘নারী তার স্বামীর পরিবার ও সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল, সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’।[13]

মূলতঃ স্ত্রী সংসারের কর্ত্রী। স্বামীর ধন-সম্পদ ও সংসার তার রাজত্ব এবং এগুলো স্বামীর আমানত। তাই তার যথার্থ হেফাযত করা এবং যথাস্থানে সঠিকভাবে তা ব্যয় করা স্ত্রীর অন্যতম প্রধান কর্তব্য। অন্যায়ভাবে গোপনে ব্যয় করা ও স্বামীর বিনা অনুমতিতে আত্মীয়-স্বজনকে উপহার-উপঢৌকন দেওয়া আমানতের খেয়ানত। এসব কারণে অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। যা স্থায়ী হয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়। অবশ্য স্বামী ব্যয়কুণ্ঠ বা কৃপণ হ’লে এবং স্ত্রী ও সন্তানের প্রয়োজনীয় খরচ না দিলে, স্ত্রী গোপনে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই নিতে পারবে। এর বেশী নিলে তা অবৈধ হবে।[14]

আর স্বামী দানশীল হ’লে ও দানের জন্য সাধারণ অনুমতি থাকলে স্ত্রী যদি তার অনুপস্থিতিতে দান করে, তাহ’লে উভয়েই সমান ছওয়াবের অধিকারী হবে।[15]

৩. শ্বশুর-শাশুড়ীর প্রতি উত্তম ব্যবহার করা : স্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য হ’ল স্বামীকে সন্তুষ্ট করা। সেজন্য স্ত্রীর উচিত স্বামীর পিতা-মাতার সাথে উত্তম আচরণ ও তাদের সেবা করে স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করা। সেই সাথে স্বামীকেও তার পিতা-মাতার সন্তুষ্টি অর্জনে সাহায্য করা। অপরদিকে স্বামীর ভাইদের সাথে পর্দা বজায় রেখে নিজের ইয্যত-আব্রু ও লজ্জাস্থান হেফাযতের চেষ্টা করা যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ. فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ يَا رَسُولَ اللهِ أَفَرَأَيْتَ الْحَمْوَ. قَالَ الْحَمْوُ الْمَوْتُ- ‘মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনছার ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! দেবরের ব্যাপারে কী হুকুম? তিনি বললেন, দেবর হচ্ছে মৃত্যুতুল্য’।[16] দেবর বলতে স্বামীর নিজের ছোট ভাই (সহোদর বা সৎ), চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাইদের বুঝায়। সেই সাথে স্বামীর বড় ভাইয়ের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ থেকে বিরত থাকাও যরূরী। অনুরূপভাবে স্ত্রী তার চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাইদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ এটা পর্দা রক্ষা ও লজ্জাস্থান হেফাযতের জন্য অতীব যরূরী।

৪. অন্যের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ না করা : স্ত্রীর যাবতীয় সাজসজ্জা ও শোভা-সৌন্দর্য কেবল স্বামীর জন্য হবে। অন্যের জন্য তার সৌন্দর্য প্রকাশ ও প্রদর্শন করা বৈধ নয়। আল্লাহ বলেন, وَلاَ يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُوْلَتِهِنَّ ‘আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের স্বামীর নিকটে ব্যতীত’ (নূর ২৪/৩১)। রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল,أَىُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ قَالَ الَّتِى تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ. ‘কোন নারী উত্তম? তিনি উত্তরে বললেন, যে স্বামীকে আনন্দিত করে যখন সে (স্বামী) তার দিকে তাকায়’।[17] সুতরাং স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্য অঙ্গসজ্জা করা ও তা প্রদর্শন করা বৈধ নয়। পক্ষান্তরে এরূপ-লাবণ্য ও সাজসজ্জা অন্যের জন্য করা হ’লে সেটা তার অকল্যাণের কারণ হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوْا مِنْ رِيْحِهَا فَهِىَ زَانِيَةٌ- ‘যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করল অতঃপর লোকদের পাশ দিয়ে এ উদ্দেশ্যে অতিক্রম করল যে, তারা যেন তার সুঘ্রাণ পায়, তাহ’লে সে ব্যভিচারী’।[18]

আদর্শ নারীর সদা চিন্তা স্বামীর মনোতুষ্টি। কারণ তার আনন্দেই স্ত্রীর সুখ। স্বামী সুখী না হ’লে স্ত্রী নিজের সুখ কল্পনাই করতে পারে না। তাই স্বামীর প্রয়োজনের প্রতি সদা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেওয়া স্ত্রীর কর্তব্য। যেমন স্বামী বাইরে থেকে আসলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার সামনে পানি, শরবত পেশ করা, তার প্রয়োজনীয় জিনিস এগিয়ে দেওয়া, বৈদ্যুতিক পাখা না থাকলে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা ইত্যাদি আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া স্বামী সালাম দিয়ে যখন বাড়িতে প্রবেশ করে, তখন উত্তর দিয়ে হাসিমুখে স্বামীকে সাদর সম্ভাষণ জানানো উচিত।

সাধারণত স্ত্রী স্বামীর জন্য সাজসজ্জা করে ফুটন্ত গোলাপ সদৃশ হয়ে থাকবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়, সাজসজ্জা ও বেশভূষায় স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। সৌন্দর্য ও সৌরভে ভরা গোলাপের দিকে এক পলক তাকিয়ে যেমন মন-প্রাণ আকৃষ্ট হয়, স্বামীর মনও তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তেমনি প্রফুল্ল হবে। স্ত্রীর মাঝে সৎগুণাবলী থাকলে এবং স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মধুর সম্পর্ক থাকলে, কোন নারী সংগঠন বা নারীস্বাধীনতা ও নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রয়োজনই হবে না।

উল্লেখ্য যে, যে স্বামী তার স্ত্রীর প্রগাঢ় ভালোবাসা পায়, বিপদে সান্ত্বনা, কষ্টে সেবা-যত্ন পায়, রাগ-অনুরাগ বা অভিমান করলে যার স্ত্রী তার অভিমান ভাঙ্গাতে ব্যাকুল থাকে সেইতো সৌভাগ্যবান। পিতা-মাতার দো‘আ ও স্ত্রীর অকৃত্রিম প্রেমের বাহুবন্ধনেই তো রয়েছে স্বামীর প্রকৃত পৌরুষ। এমন স্ত্রী না হ’লে পুরুষের জীবন বৃথা।

৫. লজ্জাস্থান হেফাযত করা : স্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য হ’ল তার লজ্জাস্থান হেফাযত করা। অর্থাৎ ব্যভিচারের পথ পরিহার করা। আল্লাহ বলেন,فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ- ‘অতএব সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা হয় অনুগত এবং আল্লাহ যা হেফাযত করেছেন, আড়ালেও (সেই গুপ্তাঙ্গের) হেফাযত করে’ (নিসা ৪/৩৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, خَيْرُ النِّسَاءِ تَسُرُّكَ إِذَا أَبْصَرْتَ وَتُطِيْعُكَ إِذَا أَمَرْتَ وَتَحْفَظُ غَيْبَتَكَ فِيْ نَفْسِهَا وَمَالِكَ ‘উত্তম স্ত্রী সে যার দিকে তুমি তাকালে তোমাকে আনন্দিত করে, তুমি নির্দেশ দিলে তা প্রতিপালন করে, তোমার অনুপিস্থিতিতে তার নিজেকে ও তোমার সম্পদ হেফাযত করে’।[19]

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَلاَ أُخْبِرُكَ بِخَيْرِ مَا يَكْنِزُ الْمَرْءُ الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَإِذَا أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِذَا غَابَ عَنْهَا حَفِظَتْهُ ‘আমি কি তোমাকে মানুষের সর্বোত্তম সম্পদ সম্পর্কে অবহিত করব না? তা হ’ল, নেককার স্ত্রী। সে (স্বামী) তার (স্ত্রীর) দিকে তাকালে স্ত্রী তাকে আনন্দ দেয়, তাকে কোন নির্দেশ দিলে সে তা মেনে নেয় এবং সে যখন তার থেকে অনুপস্থিত থাকে, তখন সে তার সতীত্ব ও তার সম্পদের হেফাযত করে’।[20]

এর সাথে নিম্নোক্ত কাজগুলি করা যরূরী। ক. স্বামীর অনুপস্থিতিতে গায়ের মাহরাম পুরুষকে বাড়ীতে প্রবেশ করতে না দেওয়া। খ. পরিবারের দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মাঝে পর্দার ব্যবস্থা থাকা। গ. পরিচারক ও গাড়ী চালকদের থেকে সাবধান থাকা। ঘ. হিজড়াদের বাড়ীতে প্রবেশ করতে না দেওয়া। ঙ. পরপুরুষের সামনে পাতলা, মিহি কাপড় পরিহার করা। চ. টেলিফোন ও মোবাইলের ক্ষতি থেকে সাবধান থাকা। ছ. বিধর্মীদের ধর্মীয় প্রতীক ও দেব-দেবীর প্রতীক পরিহার করা। জ. সকল প্রকার প্রাণীর ছবি ও মূর্তি বাড়ীতে না রাখা। ঝ. যাবতীয় নেশাদ্রব্য থেকে বাড়ীকে মুক্ত রাখা। ঞ. কোন কুকুর বাড়ীতে না রাখা। ট. বাদ্যযন্ত্র ও অশ্লীল গান-বাজনা পরিহার করা। ঠ. বাড়ীর ভিতর-বাহির পরিচ্ছন্ন রাখা।[21]

৬. স্বামীর গৃহের কাজ করা : স্বামীর ঘর-বাড়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিপাটি রাখা স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর খেদমত করা, সন্তান-সন্ততিদেরকে লালন-পালন করা ও তাদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখা, তাদের আদব-কায়েদা শিক্ষা দেওয়া এবং সভ্য করে গড়ে তোলাও স্ত্রীর দায়িত্ব। সংসারের কাজ নিজের হাতে করা উত্তম। এতে তার স্বাস্থ্য ভালো ও সুস্থ থাকবে। একান্ত প্রয়োজন না হ’লে গৃহপরিচারিকা না রাখা ভাল। মহিলা ছাহাবীগণ নিজ হাতে ক্ষেতেরও কাজ করতেন। একদা হযরত ফাতেমা (রাঃ) কাজের অতিরিক্ত চাপ ও নিজের কষ্টের কথা পিতা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করে খাদেম চাইলে নবী করীম (ছাঃ) তাঁকে নিজ হাতে কাজ করতে নির্দেশ দিলেন এবং অলসতা কাটিয়ে উঠার প্রতিষেধকও বলে দিলেন। তিনি বলেন, ‘যখন তোমরা শয়ন করবে তখন ৩৪ বার ‘আল্লা-হু আকবার’ ৩৩ বার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ এবং ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ পড়বে। এটা তোমাদের জন্য খাদেম থেকেও উত্তম হবে’।[22]

৭. স্বামীর রাগের সময় স্ত্রী বিনম্র হওয়া : কখনও কোন কারণে স্বামী রাগান্বিত হ’লে স্ত্রী নীরব থাকবে ও নম্রতা অবলম্বন করবে। যে আদর-সোহাগ করে, তার শাসন করারও অধিকার আছে। আর এ শাসন স্ত্রীকে মাথা পেতে মেনে নিতে হয়। ভুল হ’লে ক্ষমা চাইবে। স্বামী যেহেতু বয়সে ও মর্যাদায় বড়, সেহেতু তার কাছে ক্ষমা চাওয়া অপমানের নয়; বরং এতে মান-সম্মান বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া অহংকার ও ঔদ্ধত্যের পরিণাম কখনও ভাল হয় না। সুতরাং স্বামীর রাগের আগুনকে গর্ব-অহংকার ও ঔদ্ধত্যের ফুৎকারে প্রজ্বলিত না করে বিনয়ের পানি দিয়ে নির্বাপিত করা উচিত। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,وَنِسَاؤُكُمْ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ الْوَدُوْدُ الْعَؤُوْدُ عَلَى زَوْجِهَا، الَّتِيْ إِذَا غَضِبَ جَاءَتْ حَتَّى تَضَعَ يَدَهَا فِيْ يَدِهِ، ثُمَّ تَقُوْلُ: لاَ أَذُوْقُ غَمْضًا حَتَّى تَرْضَى- ‘তোমাদের স্ত্রীরাও জান্নাতী হবে; যে স্ত্রী অধিক প্রণয়িণী, সন্তানদাত্রী, ভুল করে বার বার স্বামীর নিকট আত্মসমর্পণকারিণী, যার স্বামী রাগ করলে সে তার নিকট এসে তার হাতে হাত রেখে বলে, আপনি রাযী (ঠান্ডা) না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাব না’।[23]

স্মর্তব্য যে, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে শয়তান বড় তৎপর। সমুদ্রের উপর নিজ সিংহাসন পেতে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তার বাহিনী পাঠিয়ে দেয়। সবচেয়ে যে বড় ফিৎনা সৃষ্টি করতে পারে সেই হয় তার অধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত। কে কি করেছে তার হিসাব নেয় ইবলীস। প্রত্যেকে এসে বলে, আমি এটা করেছি, আমি ওটা করেছি। (চুরি, ব্যভিচার, হত্যা প্রভৃতি সংঘটন করেছি)। কিন্তু ইবলীস বলে, কিছুই করনি! অতঃপর যখন একজন বলে, আমি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে রাগারাগি সৃষ্টি করে উভয়ের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ছেড়েছি। তখন শয়তান উঠে এসে তাকে আলিঙ্গন করে বলে, হ্যাঁ, তুমিই কাজের কাজ করেছ![24] সুতরাং রাগের সময় শয়তানকে সহায়তা ও তুষ্ট করা কোন মুসলিম দম্পতির কাজ নয়।

স্ত্রীর নিকটে স্বামীর হক :

স্বামীর উপরে স্ত্রীর যেমন হক আছে, তেমনি স্ত্রীর উপরেও স্বামীর হক আছে। স্ত্রী এসব হক বা অধিকার যথাযথভাবে আদায় করলে সংসার সুখের হবে। তাদের মাঝে কখনো কোন অশান্তি বাসা বাঁধতে পারবে না। নিম্নে কয়েকটি হক উল্লেখ করা হ’ল।-

১. স্বামীর অপসন্দনীয় কাউকে বাড়ীতে প্রবেশ করতে না দেওয়া : স্বামী অপসন্দ করে এমন কোন লোককে বাড়ীতে বা নিজের কাছে প্রবেশ করতে দেওয়া স্ত্রীর জন্য উচিত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لاَ يُوْطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُوْنَهُ- ‘তাদের প্রতি তোমাদের অধিকার এই যে, তোমরা যাদেরকে পসন্দ কর না তারা যেন সেসব লোককে দিয়ে তোমাদের বিছানা না মাড়ায়’।[25] অন্যত্র তিনি বলেন, وَلاَ تَأْذَنَ فِى بَيْتِهِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، ‘স্বামীর অনুমতি ব্যতীত অন্য কাউকে তার গৃহে প্রবেশ করতে দেবে না’।[26]

২. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত নফল ছিয়াম না রাখা : স্বামী উপস্থিত থাকাবস্থায় তার অনুমতি ব্যতীত নফল ছিয়াম রাখা স্ত্রীর জন্য বৈধ নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ يَحِلُّ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَصُومَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، ‘যখন স্বামী উপস্থিত থাকবে, তখন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত মহিলার জন্য (নফল) ছিয়াম পালন করা বৈধ নয়’।[27]

৩. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত বাড়ীর বাইরে না যাওয়া : নারীর কাজ বাড়ীর ভিতরে। তাই বাড়ীর অভ্যন্তরে অবস্থান করা তার কর্তব্য। আল্লাহ বলেন,وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلاَ تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى ‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে। প্রাচীন জাহেলী যুগের ন্যায় সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না’ (আহযাব ৩৩/৩৩)। কোন যরূরী প্রয়োজনে তাকে বাড়ীর বাইরে যেতে হ’লে স্বামীর অনুমতি নিয়ে যেতে হবে এবং শারঈ পর্দা বজায় রেখে যেতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহের হেফাযত করে। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তবে যেটুকু স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় সেটুকু ব্যতীত। আর তারা যেন তাদের মাথার কাপড় বক্ষদেশের উপর রাখে’ (নূর ২৪/৩১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّهُ قَدْ أُذِنَ لَكُنَّ أَنْ تَخْرُجْنَ لِحَاجَتِكُنَّ ‘আল্লাহ প্রয়োজনে তোমাদেরকে বাইরে যাবার অনুমতি দিয়েছেন’।[28]

স্বামীর বিনা অনুমতিতে বাড়ীর বাইরে, পিতার বাড়ী, বোনের বাড়ী, মার্কেট বা অন্য কোথাও না যাওয়া পতিভক্তির পরিচায়ক। এমনকি ছালাত আদায়ের জন্য মসজিদে গেলেও স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। মায়ের কোল ছেড়ে বাইরে গেলে যেমন শিশু ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীষ্ম প্রভৃতি দুর্যোগে নিজেকে বিপদে ফেলে, মুরগীর কোল ছেড়ে বাচ্চারা দূরে গেলে যেমন বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর হামলার শিকার হয়, ঠিক তেমনি নারীও স্বামীর নির্দেশ উপেক্ষা করে একাকী বাইরে গেলে নানাবিধ দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার আশংকা থাকে।

ধর্ম-কর্ম ও নৈতিকতাকে কবর দিয়ে অনেক উচ্চশিক্ষিতা মহিলা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করে। স্বামীর তোয়াক্কা না করে পার্থিব সুখ ভোগ করা বস্ত্তবাদী ও পরকালে অবিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য। পক্ষান্তরে ধর্মীয় নির্দেশ পালন ও নীতি-নৈতিকতা বজায় রেখে পার্থিব কর্তব্য পালন করা পরকালে বিশ্বাসী মুসলিম নারীর একমাত্র বৈশিষ্ট্য। কারণ মুসলমানের মূল লক্ষ্য হ’ল পরকালীন মুক্তি। মুসলিম দু’দিনের সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে পরকাল হারাতে রাযী নয়। সে চায় চিরস্থায়ী আবাস ও অনন্ত সুখের ঠিকানা জান্নাত। এজন্যই নবী করীম (ছাঃ) দো‘আ করতেন,وَلاَ تَجْعَل الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا وَلاَ مَبْلَغَ عِلْمِنَا ‘দুনিয়াকে আমাদের বৃহত্তম চিন্তার বিষয় ও আমাদের জ্ঞানের শেষ সীমা (মূল লক্ষ্য) করে দিও না’।[29]

৪. স্বামীকে সম্মান করা ও তার অনুগত থাকা : স্ত্রীর কাছে স্বামী অতি সম্মান ও মর্যাদার পাত্র। তার সম্মানের কথা হাদীছে এভাবে উল্লিখিত হয়েছে,لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِغَيْرِ اللهِ لأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ تُؤَدِّى الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّىَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِىَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ- ‘যদি আমি কাউকে নির্দেশ দিতাম আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে সিজদা করার, তাহ’লে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য। যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর কসম! কোন নারী তার প্রতিপালকের হক ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার স্বামীর হক আদায় করেছে। সওয়ারীর পিঠে থাকলেও স্বামী যদি তার মিলন চায়, তবে সে বাধা দিতে পারবে না’।[30] অন্যত্র তিনি বলেন,حَقُّ الزَّوْجِ عَلَى زَوْجَتِهِ، أَنْ لَوْ كَانَتْ قَرْحَةٌ فَلَحَسَتْهَا مَا أَدَّتْ حَقَّهُ ‘স্ত্রীর কাছে স্বামীর এরূপ হক আছে যে, স্ত্রী যদি স্বামীর দেহের ঘা চেটেও থাকে তবুও সে তার যথার্থ হক আদায় করতে পারবে না’।[31]

তাই স্বামীর শরী‘আত সম্মত সকল কাজে সহযোগিতা করা এবং তার বৈধ নির্দেশ মেনে নেওয়া স্ত্রীর জন্য আবশ্যক। আল্লাহ বলেন,فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ- ‘অতএব সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা হয় অনুগত এবং আল্লাহ যা হেফাযত করেছেন, আড়ালেও (সেই গুপ্তাঙ্গের) হেফাযত করে’ (নিসা ৪/৩৪)। আর স্বামীর আনুগত্যে অশেষ ছওয়াব রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,الْمَرْأَةُ إِذَا صَلَّتْ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَأَحْصَنَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا فَلْتَدْخُلْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ- ‘মহিলা তার পাঁচ ওয়াক্তের ছালাত আদায় করলে, রামাযানের ছিয়াম পালন করলে, লজ্জাস্থানের হিফাযত করলে ও স্বামীর আনুগত্য করলে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে’।[32]

স্বামী-স্ত্রীর যৌথ কর্তব্য :

স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য আলাদাভাবে ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে স্বামী-স্ত্রীর কিছু যৌথ কর্তব্য আলোচনা করা হ’ল।

ক. সন্তানদের সামনে ঝগড়া-বিবাদ না করা : দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোন সময় মনোমালিন্য হ’তে পারে। এসব কোন কোন ক্ষেত্রে বাক-বিতন্ডার পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। কিন্তু ঝগড়া-ঝাটি ও বাক-বিতন্ডা সন্তানদের সামনে করা বা তাদের সামনে অপ্রীতিকর কোন কিছু প্রকাশ করা উচিত নয়। এতে সন্তানদের মনে একটা বিরূপ প্রভাব পড়ে। যা তাদের কোমল হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। কোন কোন সময় সন্তানরা বিপাকে পড়ে যায়। যেমন কখনও পিতা বলে, তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলবে না, আমার সাথে থাকবে। আবার মা বলে, তুমি তোমার পিতার সাথে কথা বলবে না, আমার কাছে থাকবে। আবার কখনও সন্তানরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কেউ পিতার পক্ষে, কেউ মায়ের পক্ষে যায়। এতে পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। কাজেই স্বামী-স্ত্রী উভয়ই সন্তানদের সামনে ঝগড়া-বিবাদ করা থেকে বিরত থাকবে এবং দু’জনের মাঝের অসন্তোষ ও রাগ-অভিমান সন্তানরা যাতে বুঝতে না পারে সে চেষ্টা করা তাদের জন্য যরূরী।

খ. যার দ্বীনদারী সন্তোষজনক নয় তাকে বাড়ীতে প্রবেশ করতে না দেওয়া : স্বামী-স্ত্রীর অন্যতম করণীয় হ’ল, যার দ্বীনদারী সন্তোষজনক নয়, এমন নারী-পুরুষকে বাড়ীতে প্রবেশ করতে না দেওয়া। যাতে তারা বাড়ীতে প্রবেশ করে কোন ফিৎনা সৃষ্টি করতে না পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَمَثَلُ جَلِيْسِ السُّوْءِ كَمَثَلِ صَاحِبِ الْكِيْرِ إِنْ لَمْ يُصِبْكَ مِنْ سَوَادِهِ أَصَابَكَ مِنْ دُخَانِهِ-ٍ ‘আর অসৎ লোকের সংসর্গ হ’ল কামারের সদৃশ। যদিও কালি ও ময়লা না লাগে, তবে তার ধূয়া থেকে রক্ষা পাবে না’।[33] অন্যত্র তিনি বলেন,مَثَلُ الْجَلِيْسِ الصَّالِحِ وَالسَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيْرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الْكِيْرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيْحًا خَبِيْثَةً- ‘সৎসঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হ’ল, কস্ত্তরীওয়ালা ও কামারের হাপরের ন্যায়। কস্ত্তরীওয়ালা হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তার নিকট হ’তে তুমি কিছু খরিদ করবে কিংবা তার নিকট হ’তে তুমি সুবাস পাবে। আর কামারের হাপর হয়তো তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে কিংবা তুমি তার নিকট হ’তে দুর্গন্ধ পাবে’।[34]

অর্থাৎ দ্বীনহীন লোক বিভিন্ন ধরনের ফেৎনা-ফাসাদ দ্বারা পরিবারে অশান্তির আগুন জ্বেলে দিবে। এমন অনেক ফাসাদ সৃষ্টিকারী ও সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টিকারী আছে যে, বাড়ীতে যাদের যাতায়াতের কারণে পরিবারের সদস্যদের মাঝে শত্রুতা, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মতপার্থক্য, বিভেদ-বিচ্ছেদ এবং পিতা ও সন্তানদের মাঝে দুশমনী সৃষ্টি হয়। কখনো বাড়ীতে যাদু করা, চুরি-ডাকাতি হওয়া ইত্যাকার ঘটনা ঘটে দ্বীনহীন নারী-পুরুষের বাড়ীতে যাতায়াতের ফলে। তাই স্বামী-স্ত্রীকে এধরনের নারী-পুরুষকে বাড়ীতে প্রবেশ করা থেকে সতর্ক হ’তে হবে। যদিও তারা প্রতিবেশী কিংবা বাহ্যিকভাবে বন্ধুও হয়। ফাসাদ সৃষ্টিকারী বলে জানা গেলে এবং বাড়ীতে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলে তাকে প্রবেশ করতে না দেয়াই কর্তব্য। এক্ষেত্রে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,فَأَمَّا حَقُّكُمْ عَلَى نِسَائِكُمْ فَلاَ يُوْطِئْنَ فُرُشَكُمْ مَنْ تَكْرَهُوْنَ وَلاَ يَأْذَنَّ فِىْ بُيُوْتِكُمُ لِمَنْ تَكْرَهُوْنَ- ‘তাদের প্রতি তোমাদের অধিকার এই যে, তোমরা যাদেরকে পসন্দ কর না তারা যেন সেসব লোককে দিয়ে তোমাদের বিছানা পদদলিত না করায় এবং যেসব লোককে অপসন্দ কর তাদেরকে বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি না দেয়’।[35]

গ. পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা : স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি স্নেহ-ভালবাসা বজায় রাখা পরিবারে সম্প্রীতি-সদ্ভাব বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। এজন্য রাসূল (ছাঃ) জাবের (রাঃ)-কে বলেন,فَهَلاَّ جَارِيَةً تُلاَعِبُهَا وَتُلاَعِبُكَ، وَتُضَاحِكُهَا وَتُضَاحِكُكَ- ‘কুমারী (বিবাহ) করলে না কেন? তুমি তার সাথে খেলতে, সেও তোমার সাথে খেলত। তুমি তাকে হাসাতে, সেও তোমাকে হাসাত’।[36]

অন্যত্র তিনি বলেন,كُلُّ شَيْءٍ لَيْسَ فِيهِ ذِكْرُ اللهِ فَهُوَ لَهْوٌ وَلَعِبٌ إِلَّا أَرْبَعَ، مُلَاعَبَةُ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ، وَتَأْدِيبُ الرَّجُلِ فَرَسَهُ، وَمَشْيُهُ بَيْنَ الْغَرَضَيْنِ، وَتَعْلِيمُ الرَّجُلِ السَّبَّاحَةَ- ‘যে বস্ত্ততে আল্লাহর যিকির উল্লেখ করা হয় না তা একটি নিরর্থক ও কৌতুক। কিন্তু চারটি বস্ত্ত এমন রয়েছে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়- (১) পুরুষের স্বীয় স্ত্রীর সাথে খেলাধূলা করা (২) কারো ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া (৩) দু’টিলার মধ্যস্থল দিয়ে ঘোড়া দৌড়ানো (৪) কাউকে সাঁতার শিক্ষা দেওয়া’।[37] উপরোক্ত হাদীছদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রীর সাথে হাসি-তামাশা করা ও মাঝে-মধ্যে বৈধ খেলাধূলা করায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি পায়, পারস্পরিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন আরো সুদৃঢ় ও মযবূত হয়। পক্ষান্তরে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মহববত না থাকলে সংসারে সুখ-শান্তি থাকে না; পরিবার পরিণত হয় অশান্তির আকরে।

ঘ. সন্তানদের স্নেহ করা : স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত সন্তানদের আদর-স্নেহ করা। সর্বদা ধমক দেওয়া, রাগারাগি করা, শাসনের সুরে কথা বলা উচিত নয়। বরং সন্তানদের স্নেহ করা আবশ্যক। হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আক্বরা‘ বিন হাবেস (রাঃ) দেখলেন যে, নবী করীম (ছাঃ) হাসানকে চুম্বন করছেন। তখন তিনি বললেন, আমার দশটি ছেলে, আমি তাদের কাউকে চুমা দেইনি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি দয়া করে না, তাকে দয়া করা হয় না’।[38]

ঙ. নিন্দিত স্বভাব প্রতিহত করা : কোন ব্যক্তি ও পরিবার মিথ্যা বলা, গীবত-তোহমত, চোগলখুরী করা ও অন

কুরআনের তিলাওয়াত শোনার ৮টি অনবদ্য উপকারিতাকুরআনের তিলওয়াত করা ও শোনা, উভয়ে রয়েছে মুসলিমের জন্য বিশেষ কিছু উপকারীতা। আজকে...
17/09/2024

কুরআনের তিলাওয়াত শোনার ৮টি অনবদ্য উপকারিতা

কুরআনের তিলওয়াত করা ও শোনা, উভয়ে রয়েছে মুসলিমের জন্য বিশেষ কিছু উপকারীতা। আজকে এই লেখায় কুরআনের তিলওয়াত শোনার কিছু উপকারীতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আল কুরআন মহান আল্লাহর মর্যাদাপূর্ণ বাণী সমষ্টির এক অবিস্মরণীয় ও বিস্ময়কর গ্রন্থ। এটি এমন এক গ্রন্থ তা পাঠ করলে প্রতিটি অক্ষরে একটি করে সওয়াব লেখা হয় যা দশটির সমান।

যেমন, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لاَ أَقُولُ الم حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ

“যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করবে তার একটি সওয়াব হবে। আর একটি সওয়াব দশটি সওয়াবের অনুরূপ। আমি বলি না যে, “আলিফ-লাম-মীম” একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম আরেকটি হরফ। (অর্থাৎ তিনটি হরফে রয়েছে তিনটি সওয়াব যা ত্রিশটি সওয়াবের সমান)।”

সুনান তিরমিজী, হা/২৯১০, অনুচ্ছেদ: যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পড়বে তার সাওয়াব কী হবে? অধ্যায়: ৪৮/ কুরআনের ফযিলত -সনদ সহিহ
সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করবে সে উক্ত সওয়াব লাভ করবে ইনশাআল্লাহ; চাই বুঝে পড়ুক অথবা না বুঝে পড়ুক, দেখে পড়ুক অথবা মুখস্থ পড়ুক, মুসহাফ দেখে পড়ুক অথবা মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিভাইস থেকে পড়ুক, নামাজের মধ্যে পড়ুক অথবা নামাজের বাইরে পড়ুক। অনুরূপভাবে তিলাওয়াত শোনাতেও রয়েছে বিশাল সওয়াব, অসীম কল্যাণ ও অতুলনীয় উপকারিতা।

কুরআনের তিলওয়াত শ্রবণের ৮টি অনবদ্য উপকারিতা
● ১. আল্লাহর রহমত ও অনুকম্পা লাভ।
● ২. হেদায়েত (সঠিক পথের নির্দেশনা) লাভ।
● ৩. ঈমান বৃদ্ধি।
● ৪. সত্যকে চেনার উপলব্ধি সৃষ্টি।
● ৫. জ্ঞানার্জন।
● ৬. আল্লাহর সহজ ইবাদত।
● ৭. কুরআন তিলাওয়াত শোনা সুন্নত।
● ৮. মনে অনাবিল প্রশান্তি ও স্বস্তি লাভ।

নিম্নে কুরআন তিলাওয়াত শোনার মর্যাদা ও উপকারিতার বিষয়গুলো সংক্ষেপে দলিল সহ উপস্থাপন করা হল:

◈◈ ১. আল্লাহর রহমত ও অনুকম্পা লাভ:
মনোযোগ সহকারে কুরআন তিলাওয়াত শুনলে আল্লাহর রহমত ও অনুকম্পা লাভ হয়। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ“
আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো এবং নীরবতা অবলম্বন করো যাতে তোমরা রহমত (দয়া) প্রাপ্ত হও।”

সূরা আরাফ: ২০৪
তাফসিরে ত্ববারীতে এসেছে: আবু জাফর বলেন: “তোমরা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো” এ কথার অর্থ হল:
أصغوا له سمعكم، لتتفهموا آياته، وتعتبروا بمواعظه
“তোমরা কান লাগিয়ে শোনো যেন আয়াতের অর্থ বুঝতে পারো এবং উপদেশ বার্তাগুলো থেকে উপদেশ গ্রহণ করো।” (তাফসিরে ত্ববারী)

ইবনে কাসির রাহ. বলেন:
أمر تعالى بالإنصات عند تلاوته إعظاما له واحتراما
“আল্লাহ তাআলা কুরআন তিলাওয়াতের সময় নীরবতা অবলম্বন করার আদেশ করেছেন তার প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনার্থে।” (তাফসিরে ইবনে কাসির)

◈◈ ২. হেদায়েত (সঠিক পথের নির্দেশনা) লাভ:
মনোযোগ সহকারে কুরআন তিলাওয়াত শোনার পাশাপাশি তার অনুসরণ করলে আল্লাহ তাআলা হেদায়েত (সুপথ) দেখান। যেমন: তিনি বলেন,

الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ ۚ أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّـهُ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمْ أُولُو الْأَلْبَابِ
“যারা মনোযোগ সহকারে কথা শুনে অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সুপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান।”

সূরা যুমার: ১৮
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ فَقَالُوا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا- يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ ۖ
“জিনদের একটি দল কুরআন শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা বলেছে: আমরা বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি; যা সুপথ প্রদর্শন করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।”

সূরা জিন: ১ -২
তিনি আরও বলেন,
وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآنَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوا أَنصِتُوا ۖ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلَىٰ قَوْمِهِم مُّنذِرِينَ – قَالُوا يَا قَوْمَنَا إِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا أُنزِلَ مِن بَعْدِ مُوسَىٰ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ وَإِلَىٰ طَرِيقٍ مُّسْتَقِيمٍ

“যখন আমি একদল জিনকে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম, তারা মনোযোগ সহকারে কুরআন পাঠ শুনছিল। তারা যখন কুরআন পাঠের জায়গায় উপস্থিত হল, তখন পরস্পর বলল, চুপ থাক। অতঃপর যখন পাঠ সমাপ্ত হল, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ক কারী রূপে ফিরে গেল।”

সূরা আহকাফ: ২৯ ও ৩০
সুতরাং যে ব্যক্তি মনোযোগ সহকারে কুরআন তিলাওয়াত শুনবে তার জীবন আল্লাহ দয়া ও অনুকম্পায় সিক্ত হওয়ার পাশাপাশি লাভ করবে হেদায়েত তথা সঠিক দিকনির্দেশনা। সে কুরআনে মধ্যে খুঁজে পাবে তার ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, নানা প্রশ্নের উত্তর, চরিত্রিক উন্নয়ন, মানসিক প্রশান্তি ও আনন্দ মুখর জীবনের রূপরেখা, পারিবারিক সুখ, সামাজিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও পরিচ্ছন্নতা, আত্মিক পরিশুদ্ধতা, রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সভ্যতা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে সর্বোত্তম নীতি এবং সর্বোপরি আল্লাহর ইবাদতে সুগভীর পরিতৃপ্তি।

তবে আমাদের ভাষা যেহেতু আরবি নয় সেহেতু কুরআন থেকে যথার্থভাবে হিদায়েত ও ফায়দা অর্জন করতে চাইলে তরজমা ও তাফসির সহ শোনার চেষ্টা করা উচিৎ।

◈◈ ৩. ঈমান বৃদ্ধি:
তিলাওয়াত শ্রবণ করার মাধ্যমে অন্তরে ঈমান বৃদ্ধি পায়। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا
“আর যখন তাদের সামনে (কুরআন) তিলাওয়াত করা হয় হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়।”

সূরা আনফাল: ২
◈ ৪. সত্যকে চেনার উপলব্ধি সৃষ্টি:
গভীর মনোযোগ সহকারে কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করার পাশাপাশি তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার ফলে অন্তরে আল্লাহ ভীতি সৃষ্টি হয় এবং সত্য উপলব্ধির অন্তর চক্ষু উন্মোচিত হয়। ফলে এই উপলব্ধি থেকে দুচোখ বেয়ে অশ্রু বিগলিত হয়। যেমন: আল্লাহ তা’আলা সাহাবীদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে বলেন,

وَإِذَا سَمِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَى الرَّسُولِ تَرَىٰ أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوا مِنَ الْحَقِّ
“আর তারা রসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা যখন শুনে তখন আপনি তাদের চোখ অশ্রু সজল দেখতে পাবেন; এ কারণে যে, তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে।”

সূরা মায়িদা: ৮৩
◈◈ ৫. জ্ঞানার্জন:
যে কোন বিষয়ে জ্ঞানার্জনের চাবিকাঠি হল, মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা। সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রহ. বলেন:
أوّل العلم الاستماع، ثم الفهم، ثم الحفظ، ثم العمل ثم النشر]فإذا استمع العبد إلى كتاب الله تعالى وسنّة نبيه ﷺ بنيّة صادقة على ما يحب الله؛ أفهمه كما يحب، وجعل له في قلبه نوراً ].
تفسير القرطبي ١٧٦/١١.

“জ্ঞানের প্রথম ধাপ হল, মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা। তারপর বুঝা, তারপর মুখস্থ করা, তারপর কর্মে বাস্তবায়ন করা, তারপর প্রচার ও প্রসার করা। সুতরাং বান্দা যখন আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রাসূলের রসূলের আল্লাহর পছন্দ মত সৎ নিয়তে মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করে আল্লাহ তাকে তা বোঝার ক্ষমতা দান করেন যেভাবে তিনি পছন্দ করেন এবং তার অন্তরে আলো ঢেলে দেন।”

তাফসিরে কুরতুবী ১১/১৭৬
সুতরাং মনোযোগ দিয়ে শুনার মাধ্যমে হ্রদয়ে অনেক অজানা তথ্যের উন্মেষ ঘটে, জ্ঞান-বুদ্ধি ও বোধশক্তির উন্নতি সাধিত হয় এবং বিচক্ষণতা বৃদ্ধি পায়। এভাবে মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়। তাই তো আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَذِكْرَىٰ لِمَن كَانَ لَهُ قَلْبٌ أَوْ أَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيدٌ
“এতে (কুরআনে) উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে অথবা যে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে।”

সূরা ক্বাফ: ৩৭
◈◈ ৬. সহজ ইবাদত:
কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করা একটা ইবাদত। কারণ তিনি আমাদেরকে কুরআন শোনার নির্দেশ দিয়েছেন। (যেমনটি উপরোক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদিস সমূহ)। সুতরাং শুনার মাধ্যমেও আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় এবং অর্জিত হয় অবারিত সওয়াব। (যদিও তিলাওয়াত শুনলে তিলাওয়াত করার সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে কি না সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন হাদিস পাওয়া যায় না।)

আর এটি এত সহজ ইবাদত যে, আমরা বাড়িতে, গাড়িতে, অফিসে, দোকানে, রাস্তায় চলতে চলতে, দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে যে কোন অবস্থায় খুব সহজে তা করতে পারি। বর্তমানে আধুনিক টেকনোলোজি, অডিও, মেমরি আর স্মার্ট ফোনের যুগে তা আরও সহজ হয়ে গেছে আল হামদুলিল্লাহ।

◈◈ ৭. কুরআন তিলাওয়াত শোনা সুন্নত:
হাদিসে এসেছে:
عن عبدالله بن مسعود قال: “قال لي رسولُ الله – صلى الله عليه وسلم – وهو على المنبر: ((اقرأْ عليّ))، قلتُ: أَقْرَأُ عليك وعليك أُنْزل؟ قال: ((إني أحبُّ أنْ أسمعَه من غيري))، فقرأتُ سورة النساء، حتى أتيتُ إلى هذه الآية: ﴿ فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيدًا ﴾ [النساء: 41].
قال: ((حَسْبُك الآن))، فالْتَفَتُّ إليه، فإذا عيناه تذرفان؛ متفق عليه

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, “আমাকে তুমি তিলাওয়াত করে শুনাও।”
আমি বললাম: আমি আপনাকে তিলাওয়াত শোনাব অথচ আপনার ওপরই এটি অবতীর্ণ হয়েছে?
তিনি বললেন: “আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি।”
অতঃপর আমি তাঁকে সূরা নিসা পড়ে শুনাতে লাগলাম। যখন আমি فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيدًا “অতএব কেমন হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব তাদের উপর সাক্ষী রূপে? ”(সূরা নিসা: ৪১) পর্যন্ত পৌঁছলাম তিনি বললেন: “ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে।”
তখন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে।”

সহিহ বুখারী : ৫০৫০ ও মুসলিম : ১৯০৩
◈◈ ৮. মনে অনাবিল প্রশান্তি ও স্বস্তি লাভ:
কুরআন নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা, পরস্পরে অধ্যয়ন, তিলাওয়াত করা ও শুনা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর দয়ায় সিক্ত হওয়ার পাশাপাশি হৃদয়ে নেমে আসে অনাবিল প্রশান্তি ও অভূতপূর্ব স্বস্তির সুবাতাস। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ تَعَالَى يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلاَّ نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلاَئِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ ‏

আবু হুরায়রা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: “যখন কিছু লোক আল্লাহর কোন এক ঘরে একত্রিত হয়ে কুরআন পাঠ করে এবং একে অপরের সাথে কুরআন নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা ও অধ্যয়ন করে তখন তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হয়, আল্লাহর রহমত তাদেরকে আচ্ছাদিত করে, ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তাআলা ঐ সমস্ত বান্দাদেরকে তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের সামনে উল্লেখ করেন।”

সুনানে আবু দাউদ, হা/১৪৫৫ অধ্যায়ঃ ২/ সালাত, পরিচ্ছদ: ৩৫৫. কুরআন তিলাওয়াতের সাওয়াব সম্পর্কে (ইফা)
মোটকথা, কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণের মধ্যে সওয়াব অর্জনের পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন দিক দিয়ে উপকার লাভ করতে পারি। শোনার মাধ্যম যাই হোক না কেন। কেউ যদি ক্বারি সাহেবের সরাসরি তিলাওয়াত শুনে অথবা তার ধারণকৃত তিলাওয়াত ইউটিউব, মোবাইল মেমরী, সিডি, ল্যাপটপ ইত্যাদিতে থেকে মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে তাহলে আল্লাহর সর্ববৃহৎ নিয়ামত হিদায়েত বা সুপথ প্রাপ্তি এবং তাঁর অসীম দয়া ও অনুকম্পার শীতল বারি বর্ষণে জীবন হয়ে উঠবে ফুল-ফলে সুশোভিত ও সঞ্জীবিত। মনের মধ্যে অর্জিত হবে অনাবিল জান্নাতি সুখ ও প্রশান্তি এবং দূর হবে সকল অন্ধকার, হতাশা, অস্থিরতা, কষ্ট এবং দু:শ্চিন্তা।

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻞِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﺭَﺑِﻴﻊَ ﻗَﻠْﺒِﻲ ﻭَﻧُﻮﺭَ ﺻَﺪْﺭِﻱْ ﻭَﺟِﻼَﺀَ ﺣُﺰْﻧِﻲْ ﻭَﺫَﻫَﺎﺏَ ﻫَﻤِّﻲْ

“হে আল্লাহ, কুরআনকে তুমি আমার হৃদয়ের প্রশান্তি, আমার বক্ষের জ্যোতি,আমার চিন্তা-ভাবনার অপসারণকারী এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিদূরীত কারীতে পরিণত করো।” আমিন।

সালাতে রুকু-সিজদায় কুরআন তিলওয়াতের বিধান

▬▬▬ ◈❥◈▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

Address

Nabakalash, Wapda, Matlab Gonj,
Matlab Bazar
3640

Opening Hours

Monday 09:00 - 20:00
Tuesday 09:00 - 20:00
Wednesday 09:00 - 20:00
Thursday 09:00 - 20:00
Saturday 09:00 - 20:00
Sunday 09:00 - 20:00

Telephone

+8801949860266

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Dr. Md. Amir Hossain posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram

Category