20/03/2025
১৩ মার্চ,২০২৫
দুপুরবেলা তিনজন মহিলা এডমিশন রুমে এসে হাজির।
আগের রাতে বাড়িতে দাই এনে নরমাল ডেলিভারি করার চেষ্টা করছে, পারে নাই।
CTG করে দেখলাম বাচ্চার অবস্থা ভালো না। শামীমা আপু পিভি করে দেখলো বাচ্চার মাথা বড়ো হয়ে গেছে।
তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেয়া হলো সিজার করা লাগবে।
বাগড়া বাদলো রোগীর সাথে রোগীর মা আর ভাবি আসছে শুধু। জামাই পলাতক ফোন ধরতেছে না।
রোগীর ভাই রিপোর্ট নিয়ে আসতেছে।তন্দ্রা আপু বললো পেশেন্টকে ওটিতে নিতে।এইদিকে রোগীর ভাবি কনসেন্ট পেপারে সাইন দিতে ভয় পাচ্ছে। রোগীর ভাই আসতেও দেরি করতেছে। রোগীর রক্তের গ্রুপও জানা নেই।
রক্ত নিয়ে রোগীর মা গেলো গ্রুপ পরীক্ষা করতে,ফিরে আসলো না করেই।
উনি নিজেই কথা বার্তা বলতে পারতেছে না।
রোগীও কিছু জিজ্ঞেস করলে হা করে তাকায় তাকে।
রোগীকে ওটিতে নিয়ে দাঁড়ায় আছি।
মহাবিপদে পড়া গেলো।অবশেষে রিপোর্ট নিয়ে আসছে।বি পজিটিভ দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলাম।
অপারেশন শুরু হলো।
এই প্রথম ওয়াশ নিয়ে ওটিতে দাড়ালাম।
আমি, শামিমা আপু আর তন্দ্রা আপু।
দুইজন মিলে অপারেশন করার সাথে সাথে আমাকে সব শিখায় দিচ্ছিলেন।
পেট কাঁটার সাথে সাথে সবুজ মিকোনিয়াম মাখানো একটা বাচ্চা বের হলো।
বাচ্চা কান্না করতেছে না।
খালা বাচ্চা নিয়ে পরিষ্কার করতেছে, এখন অল্প অল্প কান্নার শব্দ পেলাম।
শামীমা আপু সাথে সাথে বাচ্চাকে পেডিতে পাঠানোর জন্য বললো।
পুরো ১ প্যাকেট স্যালাইন দিয়ে রোগীর পেটের ভিতর পরিষ্কার করা হলো।রোগীকে পোস্ট অপে পাঠানো হলো।
এইদিকে বাচ্চার আর কোন খবর নাই।
৮:৩০ পর্যন্ত খুঁজ লিলাম মিতু রোগীর লোক আসছে কিনা?কোন খুঁজ খবর নাই।
আমার ডিউটি শেষ করে চলে আসছি।
রাতে ডা: সজল খুঁজ দিলো বাচ্চার অবস্থা বেশি ভালো না।
পরের দিন ফলো আপে গেলাম রোগী একা পড়ে আছে। কেউ নাই সাথে।
পাশের বেডের মহিলা বললো কিছু খায় নাই রোগী।বললো বাচ্চা উপরে ভর্তি আছে।
৩য় দিন চেক ড্রেসিং করতে গেলাম।
দেখি ব্যান্ডেজ নাই, ব্যান্ডেজ খুলে ফেলছে।
বাথরুমে গিয়ে পেটটাও ভিজায় আসছে।
ভয় পেলাম কোনো ইনফেকশন বাদালো কিনা।
ভালো ছিলো,ড্রেসিং শেষ।
এখন ব্লাড টেস্ট করাইতো পারতেছে না টাকা নাই।
ব্লাডে হিমোগ্লোবিন লেভেল কম থাকলে ব্লাড দেয়া লাগে।কি করা যায়? আমাদের সিএ,সুমাইয়া আপু নিজের টাকা দিয়ে আয়রন কিনে দিলেন।
রোগীর মাকে বললাম আমাকে বাচ্চার কাছে নিয়ে যাইতে, বললো ভুলে গেছে কই আছে বাচ্চা।
আশার সময় রোগীকে কিছু উপদেশ দিয়ে চলে আসলাম।
*সরকারি হাসপাতালে গেলে কমপক্ষে একজন পুরুষ, একজন মহিলা সাথে থাকবেন।
*সব কাগজপত্র সাথে রাখবেন।
*রোগীর সমস্যা রোগীকে বলতে দিবেন।