08/04/2022
আজ একটি বিরল রোগ নিয়ে আলোচনা করি।
[মৌমিতা'কে (ছদ্মনাম) তার স্বামী নিয়ে এসছেন। তাদের নতুন বিয়ে। কিন্তু এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ঝগড়া হয়ে তাদের মধ্যে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে মৌমিতা ভাংচুর করেন। এ নিয়ে মোট ৩ টি স্মার্ট ফোন ভেংগেছেন।
গতকাল তর্কাতর্কির জেরে নাকি ঘরের টিভি ভেংগে ফেলেছেন। নতুন টিভি, বিয়ে উপলক্ষ্যে কেনা। দেয়ালে আঘাত করে নিজের হাতে তৈরি করেছেন বড় ধরনের ক্ষত।
মৌমিতার আর কোনই সমস্যা নেই। শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে তার ভালো, সু-সম্পর্ক এবং সেটা সব সময়। কেবল ঝগড়াঝাটি বা তর্কাতর্কি নিয়ে রাগ উঠলে নিজেকে আর সংবরণ করতে পারেন না। এ সমস্যা আগেও ছিলো। বাবা মা তেমন গুরুত্ব দেননি।
আধাঘন্টা বা এক ঘন্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হলে মৌমিতা তখন নিজের ভুলটি বুঝতে পারেন। অনুতপ্ত হন। তিনি বুঝেন মামুলি বিষয় নিয়ে অতো রাগের কিছুই ছিলোনা। কিন্তু তিনি নিজেকে সে সময়টিতে সংবরণ করতে পারেন না। সমস্যাটি সেখানেই।
শ্বশুর বাড়িতে নতুন বউ -মৌমিতাকে নিয়ে প্রচন্ড ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। শুরু হয়েছে কানাঘুষা ]
ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার (Intermittent Explosive Disorder) কি?
ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার বা আই.ই. ডি (IED) একটি আচরণগত ব্যাধি যাতে রোগী হঠাৎ করে তীব্র ক্রোধের বশবর্তী হয় এবং এমন ধ্বংসাত্মক কাজ করে যা পরিস্থিতির বা ব্যাক্তির ব্যাক্তিত্বের সাথে মোটেই খাপ খায়না।
সহজ ভাষায়, হঠাৎ করে রেগে গিয়ে ভাংচুর করা, নিজেকে আঘাত করা, অন্যকে আঘাত করা, অশালীন আচরণ করা, সম্পর্ক-চ্ছেদ করা, খারাপ মন্তব্য করা, চিৎকার চেচামেচি করে একটা অস্বাভাবিক, বিশ্রী পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করা যা মোটেই মানানসই নয়।
এটি একটি বিরল মানসিক রোগ। কিন্তু অজ্ঞতার জন্যে এ নিয়ে কেউ মাথা ঘামান না, সাইকিয়াট্রিস্ট এর শরণাপন্ন হননা। প্রিয়জনের রাগের বশবর্তী হয়ে অযৌক্তিক আচরণ নিয়ে আজীবন অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করেন।
মামুলি বিষয় নিয়ে ক্রোধ বা আবেগের বশবর্তী হয়ে আই ই ডি (IED) রোগীরা এসব অযৌক্তিক, অস্বাভাবিক আচরণ করেন। তারা এটা না বুঝেই করেন, কিন্তু ধীরে ধীরে যত সময় অতিবাহিত হতে থাকে তারা তাদের ভুলটি বুঝতে পারেন। অনুতপ্ত হন। কিন্তু ততক্ষণে পারিবারিক- সামাজিক জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দূর্ঘটনা।
লক্ষণঃ
তীব্র ক্রোধে ফলশ্রুতিতে আই ই ডি রোগীরা যে সমস্থ আচরণ করেন তা হলো,
১) ক্রমাগত নিজের পক্ষে যুক্তি তথ্য গুলো চিৎকার করে বলতে শুরু করা,
২) দেয়ালে নিজেকে আঘাত করা
৩) হাত কাটা, ধাক্কা বা ধাক্কা করা
৪) অন্যকে আঘাত করা
৫) টিভি, মোবাইল, গ্লাস, ফার্নিচার ভাংচুর করা
৬) নিজের সম্পত্তির ক্ষতি করা, প্রতিপক্ষকে হুমকি প্রদর্শন করা, গায়ে হাত তোলা বা আক্রমণ করা।
৭) আগুন লাগিয়ে দেয়া।
ইন্টারেসটিং হলো এ অস্বাভাবিক আচরণ গুলো সাধারণত পূর্বপরিকল্পিত, বা ইচ্ছাকৃত নয়। এ ঘটনাটি পরিবারের অতি নিকটতম মানুষের সাথেই ঘটে এবং এটা বার বার হয়, প্রতি সপ্তাহেই একাধিক বার। প্রচন্ড ক্রোধ ও আবেগতাড়িত হয়ে রোগী নিজেকে এসব আচরণ থেকে নিবৃত্ত করতে পারেন না। আর পরবর্তীতে যখন তার ক্রোধ বা আবেগ চলে যায়, তিনি অনুশোচনা করেন, বিব্রত হন, কিন্তু তখন আর কিছু করার থাকে না।
কারনঃ
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রেইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশে (Anterior Cingulate) সেরোটোনিন নিউরোট্রান্সমিটার এর ভারসাম্যহীনতায় এমন হয়ে থাকে। পুরুষদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশী।
চিকিৎসাঃ
Psychotherapy (সাইকোথেরাপি) এবং SSRI (সিলেকটিভ সেরোটোনিন রি-আপটেক ইনহিবিটর) দারুন কার্যকরী । তাছাড়া মুড স্ট্যাবিলাইজার ও ব্যবহার করা হয়।
আসুন, মানসিক রোগ গুলো নিয়ে সচেতন হই। তাদের সুন্দর সুখী জীবন গড়তে সহায়তা করি।
ডা. সাঈদ এনাম
ডিএমসি কে-৫২, বিসিএস-২৪
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি।