28/05/2025
উপবৃত্তির টাকা নিয়ে জরুরি কথা: কেন এত কম শিক্ষার্থী টাকা পাচ্ছে?
এটা নিয়ে একটা বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, এ বছর প্রাথমিকভাবে মাত্র প্রায় ৮৮,০০০ (আটাশি হাজার) শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হচ্ছে। যেখানে সারা দেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়, সেখানে এত কম সংখ্যক শিক্ষার্থীকে টাকা দেওয়ার কারণটা কী?
আসলে, এর পেছনে একটা বড় কারণ আছে। আর সেই কারণটা হলো তথ্যের গরমিল। বিশেষ করে, অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এবং মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট (যেমন নগদ) সংক্রান্ত তথ্যে অনেক ভুলত্রুটি পাওয়া গেছে।
ভুলের মাশুল: NID এবং মোবাইল একাউন্টের ঝামেলা
আসুন, বিষয়টা আরেকটু সহজ করে বুঝি। সরকার যখন উপবৃত্তির টাকা দেয়, তখন কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। যেমন:
অভিভাবকের NID: ছাত্র/ছাত্রী যার অভিভাবকত্বে থাকবে, সেই অভিভাবকের সঠিক NID নম্বর দিতে হয়।
NID দিয়ে তোলা সিম কার্ড: যে অভিভাবকের NID নম্বর দেওয়া হয়েছে, তার নামে রেজিস্ট্রেশন করা একটি মোবাইল সিম কার্ড থাকতে হবে।
NID দিয়ে খোলা নগদ একাউন্ট: ওই একই অভিভাবকের NID ব্যবহার করে খোলা একটি নগদ (Nagad) একাউন্ট থাকতে হবে এবং সেই একাউন্ট নম্বরটি স্কুলে জমা দিতে হয়।
কিন্তু অনেকেই যে ভুলটা করেছেন, সেটা হলো:
হয়তো অভিভাবক হিসেবে মায়ের নাম দিয়েছেন, কিন্তু মোবাইল সিমটা বাবার নামে রেজিস্ট্রেশন করা.
অথবা, মায়ের NID দিয়েছেন, সিমও মায়ের নামে, কিন্তু নগদ একাউন্ট খোলা হয়েছে অন্য কারো NID দিয়ে, অথবা একাউন্টটি ঠিকভাবে ভেরিফাই করা নেই।
এই ধরনের ছোট ছোট ভুলের কারণেই কিন্তু হাজার হাজার শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা আটকে গেছে। স্কুল এবং কলেজগুলো যখন এই তথ্যগুলো সরকারের HSP MIS সফটওয়্যারে আপলোড করেছে, তখন গরমিলের কারণে সেগুলো ভ্যালিডেশন বা অনুমোদন পায়নি।
একটা তথ্য দেই, সাধারণত প্রায় ১১ লক্ষ ৬৬ হাজার ২৩৮ জন শিক্ষার্থী এই উপবৃত্তি পেয়ে থাকে (এটা জেনারেল বা সাধারণ উপবৃত্তির হিসাব)। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এবার মাত্র ৮৫ হাজার জনের তথ্য সঠিকভাবে ভেরিফাই করা সম্ভব হয়েছে। এটা কিন্তু মোট সংখ্যার ১% ও না! যা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক অনেক কম।
সরকারি নোটিশ কী বলছে? কাদের টাকা আটকে যাবে?
এই ভুলের কারণে সরকার একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি নোটিশে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, যেসব শিক্ষার্থীর তথ্য তাদের অভিভাবকের NID দ্বারা ভ্যালিডেশন বা যাচাই করা সম্ভব হবে না, সেসব শিক্ষার্থীদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪ এবং জানুয়ারি-জুন ২০২৫ কিস্তির উপবৃত্তির টাকা দেওয়া স্থগিত থাকবে।
অর্থাৎ, সোজা বাংলায় বললে, যাদের তথ্যে গড়মিল আছে, তারা আপাতত এই দুই কিস্তির টাকা পাচ্ছেন না। তাই, এই ৮৫ হাজার বা ৮৮ হাজার শিক্ষার্থী বাদে বাকিদের টাকা কিন্তু আটকে যাচ্ছে।
উপবৃত্তির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা
নোটিশে আরও বলা হয়েছিল যে, যাদের তথ্যে ভুল আছে বা যারা নগদ একাউন্ট ছাড়া অন্য মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট ব্যবহার করছেন, তাদের তথ্য সংশোধন এবং নগদ একাউন্টে রূপান্তর করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই তারিখটি ছিল ২৯শে মে, ২০২৫ (অনুমান করছি ভিডিওতে একটি ভবিষ্যৎ তারিখের কথা বলা হয়েছে, তাই সেভাবেই লিখছি)। এই সময়ের মধ্যে যাদের তথ্য ঠিক করা সম্ভব হবে, শুধু তারাই টাকা পাবেন।
যদিও সময় খুব কম, তবুও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে দেখুন, কোনো সমাধান করা যায় কিনা। আশা করি, এই সংখ্যাটা হয়তো কিছুটা বাড়তে পারে, কিন্তু খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না।
এটা আপনাদের জন্য একটা বড় শিক্ষা। সবসময় সঠিক তথ্য দিন এবং সরকারি নিয়মকানুন মেনে চলুন। আর উপবৃত্তি নিয়ে যেকোনো তথ্যের জন্য যুক্ত থাকুন "সকল সরকারি ভাতা ও উপবৃত্তির আপডেট" গ্রুপে