20/09/2022
"বয়স বাড়লেও তারুণ্য ধরে রাখার রহস্য"
লেখক:
ডা:মোঃ দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী
পিএইচডি স্কলার
ফিজিওথেরাপি (কনসালটেন্ট), বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
ফ্যাকাল্টি (গেস্ট), ফিজিওথেরাপি বিভাগ,
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা।
বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক,
চৌধুরী ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, কল্যাণপুর, মিরপুর, ঢাকা। মোবা: 01703 724200
কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান (সাবেক), ফিজিওথেরাপি বিভাগ, ইবনে সিনা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ফুয়াদ আল খতিব ইউনিট), কল্যাণপুর, ঢাকা
"বয়স বাড়লেও তারুণ্য ধরে রাখার রহস্য" এ বিষয়ে পাঠকদের বুঝানোর জন্য লেখক কয়েকটি পয়েন্ট আউট করে লিখেছেন। সবগুলা পয়েন্টের বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হল।
১. সঠিকভাবে সকাল শুরু করা:
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার নিয়মিত অভ্যাস তৈরি করা। তারপর এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে লবণ, মধু ও কালোজিরা মিশিয়ে পান করা। এতে শরীরের বিপাকক্রিয়া ভালো হয়। আর বিপাকক্রিয়া ভালো হলে দেহের টক্সিন ভালোভাবে বের হয়। এছাড়াও ধর্মীয় নিয়ম নীতি মেনে সকলে সঠিকভাবে সকালটা শুরু করা। এতে শরীর ও মন উভয়টি ভালো অনুভব হয়। তবে সকালবেলা নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করলে মন ও শরীর ভালো থাকে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে লেখক পুরো লেখাটি পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
২. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা:
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীরচর্চা বুঝতে হলে প্রথমে জানা উচিত হার্ট রেট (Heart Rate), ম্যাক্সিমাম হার্ট রেট (Maximum Heart Rate), টার্গেট হার্ট রেট (Target Heart Rate) ও ফিট প্রিন্সিপল ( F**T Principle) বিষয়ে। আমাদের হৃদপিণ্ড প্রতি মিনিটে যতবার হৃদ স্পন্দন দেয় সেটাকে বলা হয় হার্ট রেট। প্রতি মিনিটে আমাদের হৃদপিণ্ড ৬০ থেকে ৯০ বার স্পন্দন দেয়। ২২০ থেকে বয়স বিয়োগ করলে যেটা পাওয়া যাবে সেটাই হল ম্যাক্সিমাম হার্ট রেট (Maximum Heart Rate = 220 - Age). উদাহরণ হিসাবে বলা যায় একজন মানুষের বয়স যদি ৩০ বছর হয় তাহলে তার ম্যাক্সিমাম হার্ট রেট হবে প্রতি মিনিটে ১৯০ বিট (অর্থাৎ ২২০-৩০= ১৯০)। আর টার্গেট হার্ট রেট হল ম্যাক্সিমাম হার্ট রেট এর ৬০% থেকে ৮৫% । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় একজন মানুষের ম্যাক্সিমাম হার্ট রেট যদি ১৯০ হয় তাহলে তার টার্গেট হার্ট রেট হবে প্রতি মিনিটে ১১৪ থেকে ১৬২ বিট, যা মেক্সিমাম হার্ট রেটের (অর্থাৎ ১৯০ এর) ৬০% থেকে ৮৫%। একজন মানুষ কত বার,কত তীব্রতায়, কত সময়ে, কি ধরনের ব্যায়াম করবে সেই টোটাল প্রক্রিয়া কে বলা হয় F**T Principle. যদি কেউ সকালবেলা মেক্সিমাম হার্ট রেট, টার্গেট হার্ট রেট, ও ফিট প্রিন্সিপল মেনে শরীরচর্চা/ব্যায়াম নিয়মিত করতে পারে তাহলে তার শারীরিক কন্ডিশন খুব ভালো থাকবে ইনশাআল্লাহ। কারণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করলে দেহের গ্রোথ (Growth) হরমোন নিঃসরণ হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে দেহে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ কমে যায়। যাদের গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ ভালো থাকে তাদের শরীরের ব্রাউন এডিপোজ টিস্যু বেশি মবিলাইজ হয়, যা দেহের জমানো খারাপ চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে। এর ফলে শারীরিক ফিটনেস বৃদ্ধি পায়।
৩. খাদ্যভ্যাসের পরিবর্তন: খাদ্যাভাস পরিবর্তনের ক্ষেত্রে লেখক এখানে কয়েকটি জিনিস পয়েন্ট আউট করেছেন। যেমন:
*ক) এন্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার: এন্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া। কোকিউ ১০ (COQ 10), যা একটি গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ATP
তৈরি করে মানুষের কোষে শক্তির সঞ্চার ঘটায়। COQ 10 মানুষের শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, যা মানুষের প্রত্যেকটি সিস্টেমকে ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ Heart/ হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কিছু প্রাকৃতিক খাবার থেকে যেমন মাছ, গোটা শস্য, পালং শাক, ফুলকপি, ব্রকলি, কমলা লেবু, সয়াবিন, চিনা বাদাম ও তিল ইত্যাদি জাতীয় খাবার থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ COQ 10 এন্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।
*খ) ভিটামিন বি-৩/ নিয়াসিন: ভিটামিন বি- ৩ দেহে বিপাক ক্রিয়া ও ডিএনএ (DNA) উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে এবং দেহের কোষের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। ট্রিপটুফেন সমৃদ্ধ খাবার থেকে ভিটামিন বি-৩ অর্থাৎ নিয়াসিন পাওয়া যায়। কিছু প্রাকৃতিক উৎস যেমন চর্বি জাতীয় মাছ, ওটস ও কুমড়ার বীজ ইত্যাদি থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন বি -৩/ নিয়াসিন পাওয়া যায়।
*গ) ওমেগা-৩: এটি দেহে বয়সের ছাপ রুখতে সাহায্য করে। মাছের তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমান ওমেগা- ৩।
*ঘ) পেপটাইড ও ফাইবার জাতীয় খাবার:
বাদামী রংয়ের চাউল, তাজা শাক সবজি, হলুদ শাকসবজি, লাল শাকসবজি তে বেশি পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকে। হলুদ শাকসবজিতে বিটা ক্যারোটিন জাতীয় পদার্থ এবং লাল শাকসবজিতে লাইকোপিন নামক পদার্থ থাকে যা দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পেয়ারা, আনারস, আপেল, আঙ্গুর ও টক দইয়ে প্রচুর পরিমাণ পেপটাইড থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
*ঙ)জাঙ্ক ফুড/ফাস্টফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা:
বেশি তেলে ভাজা ও বেশি মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা। কম মসলাযুক্ত ও কম তেল দিয়ে তৈরি রান্না করা খাবার পরিমান মত খাওয়া।
৪. সময় মত রাতের ঘুম:
সময় মত রাতে ঘুমাতে যাওয়া খুবই জরুরী। এটা হতে হবে রাত সাড়ে দশটার মধ্যে। কারণ এ সময়ের মধ্যে নিয়মিত ঘুমাতে পারলে দেহে Growth হরমোনের নিঃসরণের পরিমাণ ভালো হয় এবং Cortisol হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা হয়। আর অনিয়মিত রাতের ঘুম অথবা রাতে দেরিতে ঘুমানোর অভ্যাসের ফলে দেহে Growth হরমোন নিঃসরণ কমে যায় এবং Cortisol হরমোনের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। যার ফলে দেহের অতিরিক্ত ফ্যাট পেটে এসে জমা হয় এবং পেটের ভুড়ি বেড়ে যায়। তাই শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হলে রাতে উক্ত সময়ে ঘুমানো খুবই জরুরী। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ঘুমানোর এক থেকে দেড় ঘন্টা পূর্বে রাতের খাবার গ্রহণ করা উচিত।
৫. দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা:
বয়স ধরে রাখা ও তারুণ্য ধরে রাখার জন্য দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা। এই অভ্যাস মানুষকে তাড়াতাড়ি বার্ধক্যের দিকে নিয়ে যায়। এ থেকে বাঁচার উত্তম উপায় হল নিয়মিত শরীরচর্চা ও যোগ ব্যায়াম করা। আরো ভালো উপায় হল ধর্মীয় চর্চা করা।
এছাড়াও ত্বকের নিয়মিত চর্চা করা উচিত। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো ঘুম, পরিমাণ মতো পানি পান করা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। বাহিরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও বাহ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য হলুদের ঘোড়ার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে তকে লাগানো যেতে পারে, বিশেষ করে অলিভ অয়েল ও অ্যালোভেরা জেল ত্বকে লাগানো এতে ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে করে তুলবে টানটান।
ধন্যবাদান্তে,
চৌধুরী ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার
কল্যাণপুর, মিরপুর, ঢাকা।
মোবাইল: 01703 724200
#বয়স
#তারুণ্য
#তারুণ্য ধরে রাখার রহস্য
#চৌধুরী ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার
#ডা মোঃ দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী
Md Delowar Hossain Chowdhury