10/08/2021
#উচ্চরক্তচাপ চাপ ও হাইপারলিপিডেমিয়ায় কি কি খাওয়া যাবে ও কি কি খাওয়া যাবে না।
✴️ বর্তমানে উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) ও হাইপারলিপিডেমিয়া অর্থাৎ রক্তে কোলেস্টেরলসহ অন্য ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বিভিন্ন রোগে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে।
👉 আজকাল যে কোনো বয়সী মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা দেখা যায়। সাধারণত বেশি ওজন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে অনেকেই খুব কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে আক্রান্ত হন। উচ্চ রক্তচাপ হলে প্রথমেই করণীয় চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ। সেই সঙ্গে খাবারের নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। কেননা উচ্চ রক্তচাপ মানেই এখান থেকে পরবর্তী সময়ে কিডনি এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রত্যেক রোগীর উচিত তার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
👉 আমরা অনেকেই জানি না, খুব ছোট কিছু খাদ্যাভ্যাস এসব রোগের খারাপ প্রভাব থেকে অনেকটাই পরিত্রাণ দিতে পারে। আজ এমন কিছু খাদ্যাভ্যাস নিয়েই আলোচনা করব-
🔶 হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপঃ
👉 হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ এতটাই বেশি হচ্ছে- অনেক প্রবীণ বা বয়স্ক মানুষের পাশাপাশি কম বয়স্ক মানুষের মধ্যেও এটি দেখতে পাওয়া যায়। সহজ জীবনযাপন, অল্প কিছু খাবার পরিত্যাগ আর বেশ কিছু খাবার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যোগ করে নিলেই পাওয়া যেতে পারে এ রোগের সুন্দর নিয়ন্ত্রিত সমাধান।
👉 এই রোগের সমাধানে তাজা ফল যেমন- লেবু, জাম্বুরা, পেয়ারা, আমলকী, কামরাঙা, আপেল, কমলা, মালটা, পেস্তা বাদাম, ডালিম, কলা, নাশপাতি, পেঁপে ইত্যাদি খেতে পারেন।
পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া।
নার্ভের কার্যকলাপ ভালো রাখতে, মাসল কন্ট্রোল রাখতে ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। পটাসিয়ামের প্রধান উৎসই হচ্ছে কলা। তাই রক্তচাপ কমাতে প্রতিদিন কলা খেতে হবে।
সবুজ শাক-সবজির ও সাথে লেবু, কমলালেবু, কলা, টমেটো, ডাবের পানিও খেতে হবে। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন আলুবোখারা, আম, সবুজ মুগ ডাল, মিষ্টি আলু, পালং শাক, বেগুন জাতীয় খাবার শরীরে লবণ ও ফ্লুয়িড ব্যালেন্স বজায় রেখে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে।
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হলেও হাইপারটেনশনের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তিল, কমলালেবু, মেথি, ধনেপাতা, ফুলকপি, গাজর খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। রসুনও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
👉 এ ছাড়া সবুজ শাকসবজি যেমন- প্রায় সব ধরনের সবুজ শাক (পালংশাক, কলমিশাক, মুলাশাক, পাটশাক ইত্যাদি) এবং বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, শসা, মুলা, লাউ, মটরশুঁটি, ঢেঁড়স, বেগুন, কুমড়ো ইত্যাদি। এ ছাড়া খেতে পারেন প্রোটিন জাতীয় প্রায় সব ধরনের খাবার (চর্বিযুক্ত মাংস, কলিজা, চিংড়ি ও ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে)।
🔶 যেসব খাবার উচ্চ রক্তচাপের রোগীর পরিত্যাগ করা উচিতঃ
১. লবণ এবং বেশি লবণযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। এর সঙ্গে বিট লবণ এবং অন্যান্য মুখরোচক লবণ গ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
২. রান্নার সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে- কোনোভাবে সয়া সস যেন ব্যবহার না হয়।
৩. অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার- কেক, পেস্ট্রি, নুডলস, পরোটা, লুচি, আইসক্রিম ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।
৪. ডিমের কুসুম, খাসির মাংস, গরুর মাংস ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।
৫. চাটনি অর্থাৎ আচার খাওয়া যাবে না। কারণ আচারে প্রচুর তেল ও লবণ ব্যবহার করা হয়; যা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য খুবই ক্ষতিকর।
👉 এছারা রেড মিটকে বিদায়:
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় রেড মিট অর্থাৎ গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং মহিষের মাংস একেবারেই বর্জন করা একান্তভাবে জরুরি। কারণ এই সব লাল মাংসে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুন বাড়িয়ে দেয়।
👉 মুরগির চামড়া এবং ডিমের কুসুমঃ
মুরগির চামড়া এবং ডিমের কুসুম খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় সেই সাথে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও। তাছাড়া মুরগি ত্বকে উচ্চ মাত্রার চর্বি থাকে যা মানুষের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
👉 চিনিযুক্ত খাবার আর নয়:
অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার আমাদের শরীরে মেদ জমতে সাহায্য করে এবং এর ফলে ওজন বৃদ্ধি পেয়ে শরীর মোটা হয়ে যায়। এমন অনেকে আছেন যারা অতিরিক্ত ওজনের কারণে উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাছাড়া অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
👉 আচার এবং সস জাতীয় খাবার:
যতই মুখরোচক লাগুক যারা হাই প্রেসারের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের আচার এবং সস জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ আচার এবং সসে লবণ এবং চিনির পরিমাণ খুব বেশি থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের শরীরের পক্ষে একেবারেই ভালো নয়।
👉 সারাদিনের খাবারে পটাশিয়াম জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে পারলে উচ্চ রক্তচাপের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। সাধারণত ডাবের পানি, কলা ও সবজি খেলে উচ্চ রক্তচাপ সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে।
👉 একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগীর অবশ্যই তেল, চর্বি এবং অতিরিক্ত লবণ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তবে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বাদাম, পেঁয়াজ, ডালিম, আপেল, শালগম, তিসি, ডার্ক চকোলেট, কালিজিরা, চালতা একেবারে টনিকের মতো কাজ করে।
🔷 হাইপারলিপিডেমিয়া বা হাইকোলেস্টেরলঃ
👉 মূলত রক্তে কোলেস্টেরল, এলডিএল-এর মাত্রা বেড়ে গেলেই হাইপারলিপিডেমিয়া দেখা যায়। তাই যেসব খাবারে কোলেস্টেরল এবং এলডিএল-এর মাত্রা বেশি সেগুলো বেছে চলতে হবে। সাধারণত এ ধরনের রোগীর প্রতিদিনের খাবারে ডাল, বিচি, তিল, ভুট্টা, অলিভ অয়েল, মাছ, তাজা ফল, সবুজ শাকসবজি, স্যুপ, সালাদ, লেবু, ডিমের সাদা অংশ, মাছ, তেঁতুল, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন। রঙিন শাকসবজি একই সঙ্গে ভিটামিন, মিনারেল ও আঁশের উৎস। আঁশ শরীরের অতিরিক্ত লিপিড বা ফ্যাট বের করে নিয়ে যায়।
👉 এ ছাড়া কম তেলযুক্ত খাবার খাওয়াই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। কিছু খাবার বর্জন করতে হবে যেমন পরোটা, লুচি, ভাজাভুজি, গরুর মাংস, খাসির মাংস, মগজ, চিংড়ি, আচার, চাটনি, বেকারি জাতীয় খাবার, বিস্কুট, কেক, আইসক্রিম, ক্রিম, দুধের সর, ঘি, ডালডা, মাখন ইত্যাদি তেল জাতীয় খাবার।
🔷 সুতরাং কিছু খাবার নিজের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়ে আর কিছু খাদ্যাভ্যাস যোগ করে আপনি ভালো থাকতে পারেন সহজেই। হাইপারটেনশন, হাইপারলিপিডেমিয়া এই দুটি রোগকেই সুষম খাদ্য গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।