
27/08/2024
রুকইয়াহ্ কোন কবিরাজি না।
➖➖➖➖➖➖➖➖➖
অনেকের ধারনা রুকইয়াহ্ এবং কবিরাজি একই। আমাদের রাক্কীদের প্রতি অনেকের ধারনা আমরা কবিরাজি করি। রুকিয়াহ্ সম্পর্কে যার ন্যূনতম জ্ঞান আছে, সে অন্তত এই ধারণা পোষণ করবে না। সাধারন মানুষ কবিরাজদের কাছে যায়, কিছু টাকা দেয় বা না দেয়, কবিরাজ বলে কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু কিভাবে কাজ হবে সেটা আর বলে না। ভয়ে উনাকে জিজ্ঞেসও করা যায় না। এত্তবড় কবিরাজ/ভন্ড হুজুর। জিজ্ঞেস করলে যদি আবার আমার কোন ক্ষতি হয়❗ ইমাম সাহেব উনি, উনি খতিব, উনি মুফতি সাহেব, উনি মাদ্রাসায় শিক্ষক!! উনি কি আর ভুল কিছু করবেন ?❓
কাজেই আমরা যখন "বদ-নজর, জ্বিন, যাদুর" ব্যাপারে কথা বলতে যাই তখন স্বাভাবিক ভাবেই তাদেরকে কবিরাজ বা হুজুরই মনে করি। কারন আমরা ভাবি কবিরাজ/হুজুররা কুরআন দিয়েই চিকিৎসা করেন। কেউ খতিয়ে দেখার কথা ভাবে না যে, তলে তলে কি হচ্ছে। আমাদের অজান্তেই তারা কুফর/শির্ক করে ভেলকি লাগাতে চায়। এর ক্ষতি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
🔰 শির্কের ফল কি হতে পারে সে ব্যপারে মহান আল্লাহ্ বলেন,
''যদি তারা শির্ক করে তাহলে তাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।''
¤ সূরা আন'আমঃ আয়াতঃ৮৮।
তিনি আরও বলেন,
''নিশ্চয়ই যে আল্লাহ'র সঙ্গে শির্কে লিপ্ত হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং জাহান্নামকে অবধারিত করে দেন।''
¤ সূরা মায়েদাহ, আয়াতঃ৭২।
তাই ঈমান রক্ষার্থে কুফরী করা, শির্ক করা, ভণ্ড কবিরাজ, ভন্ড হুজুর চেনা অত্যন্ত জরুরী।
🌀 লন্ডনের এক বিখ্যাত রাক্কী (রুকিয়াহ্ বিশেষজ্ঞ) কবিরাজ/হুজুর চেনার কিছু উপায় বলেছিলেন। আপনাদের জন্য সেগুলো তুলে ধরা হল,
১. যদি বলে আপনার কাপড়ের অংশ লাগবে/আন্ডারগার্মেন্টেসের অংশ লাগবে/ চুল লাগবে/ দাড়ি লাগবে/কানের দুলটা/গলার চেইনটা লাগবে/হাতের চুড়ি লাগবে, ইত্যাদি।
২. যদি সে বলে "একগ্লাস পানি আনেন। আর একটা ছুড়ি আনেন। এবার গ্লাসের পানিতে ছুড়ি চালান।" আপনি চালাবেন আর আপনার মনে হবে আপনি ছুড়ি পানিতে না গোশতের মধ্যে চালাচ্ছেন।
৩. যদি সে আপনার বাসায় আসে, বসে পড়ে এদিক সেদিক তাকায় আর কি যেন বিড়বিড় করে। সুন্দর সুন্দর কথা বলে কিন্তু সেগুলো কুরআনের আয়াত নয়, হাদীসের দোয়াও নয়।
৪. যদি এমন বলে (সাধারনত মেয়েদের বলে) যে, আপনি যদি সুস্থ হতে চান তাহলে "এই জিনিস"টা আমাকে আপনার গোপন অঙ্গে ঘষতে হবে। যদি সুস্থ হত চান তাহলে আপনার এই এই অঙ্গ আমাকে ধরতে হবে/আপনাকে উলঙ্গ হতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি (নাউজুবিল্লাহ)।
৫. যদি বলে যে, এক বোতল পানি আনেন। বোতলটা টেবিলের উপর/ওয়ারড্রোবের উপর রাখুন। অথবা বলে যে, বোতলের মুখ খুলে হাতে রাখুন। আমি যখন বলব তখন সাথে সাথে মুখ লাগিয়ে দিবেন।
৬. যদি বলে যে, এই নেন এই তাবিজটা/কবচটা গলায়/হাতে/কোমড়ে পড়েন। কারণ প্রায় ৯৯% তাবিজেই শিরক, কুফর বিদ্যমান।
৭. যদি বলে, চোখ বন্ধ করুন। কিছু একটা দেখতে পাবেন। যখন দেখতে পাবেন তখনই ধরে ফেলবেন। অথবা বলবে যখনই দেখবেন তখনই দু'হাতে মশা মারার মত করে মারবেন।
৮. আপনারা হয়তো অনেক কবিরাজকে দেখে থাকবেন, যারা বলে গরু লাগবে, মুরগি লাগবে, ছাগল লাগবে তাহলে আপনার কাজ হবে। তাদের অনেকে নিজে এসব শয়তানের নামে বলি দেয়, আর অনেকে বলে “জবাই করার পর রক্তটা দিবেন।" তাঁরা এই রক্ত শয়তানের উপাসনায় ব্যবহার করে। যাদুবিদ্যায় বিভিন্ন মৃত প্রাণীর রক্ত ব্যবহার করা খুবই কমন ব্যাপার।
🔰 আমাদের দেশের কবিরাজ/ভন্ড হুজুররা আরও কিছু কাজ করে থাকে যেমন,
১) কাপড় মাপে, কাপড় ছোট বড় করে দেখায়। একই ভাবে হাত মেপে হাত ছোট বড় দেখায়।
২) মুখ দেখেই অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা বলে এবং কিছু কিছু মিলেও যায়।
৩) জ্যোতিষিদের মত হাত দেখে।
৪) কোন কিছু পুতে রাখার জন্য বলে।
৫) জ্বিন বোতলে বন্দি করে রেখেছে, জ্বিনকে অমুক জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছে, জ্বিন রক্তে মিশে গেছে -এই জাতীয় উদ্ভট কথা বলে।
৬) কবিরাজদের একদল নিজের নামের শেষে "বিভিন্ন তরিকার নাম" যোগ করে। ওরা বলে "সাহাবি জ্বিন" নাকি ওদের খেদমত করে।
৭) সাত ঘাটের পানি লাগবে, অমুক জায়গায় মাটি লাগবে ইত্যাদি অর্থহীন কাজ করবে।
৮) অন্য জনের উপর জ্বিন হাজির করে তাকে দিয়ে কথা বলাবে।
৯) শনিবারে যেতে হবে, মঙ্গলবার যেতে হবে, মাগরিবের পর যেতে হবে ইত্যাদি অনর্থক শর্ত আরোপ করবে।
১০) নির্দিষ্ট জিনিস খাওয়া নিষেধ করতে পারেন। যেমন, কলা খাওয়া নিষেধ, গোশত খাওয়া যাবে যাবে না- খেলে ওষুধ কাজ করবে না। অন্যকোন ওষুধ খাওয়া যাবে না ইত্যাদি বলতে পারে।
১১) তুলা রাশির লোক লাগবে এসব বলতে পারে।
কাজেই যারা আমাদের রাক্কিদের সম্পর্কে এমন গর্হিত ধারনা পোষন করে থাকেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আমরা যদি এই ধরনের কথা বলে থাকি, এই ধরনের কাজ করে থাকি তাহলে তার প্রমান দিবেন। আর যদি প্রমান দিতে না পারেন তবে তওবা করে নিজের ধারনা সংশোধন করে নিবেন।
💥 কবিরাজ ও ভন্ড হুজুরদের বাস্তবতা সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলে রাখি,
১) এদের কাছে গেলে আপনার সমস্যার সমাধান হবে না বরং আপনি জটিল থেকে জটিলতর সমস্যায় আক্রান্ত হবেন। অনেক মানুষ আছেন যার হয়ত সামান্য একটা সমস্যা ছিল। কিন্তু নানান কবিরাজের কাছে দৌড়াতে দৌড়াতে সেই সামান্য সমস্যাকে ভয়াবহ আকারে নিয়ে গিয়েছেন।
২) রোগীরা প্রায়ই বলেন, অমুক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলাম, তাবিজ দিয়েছিল, এরপর এক মাস ভাল ছিলাম। এরপর আবার এই সমস্যা ঐ সমস্যা শুরু হয়েছে। আসল কথা হল, শয়তানের একটা কাজ করে দিয়েছেন আপনি তাই একমাস আপনাকে বিরক্ত করেনি। একমাস পরে আবার শয়তানি করবে যেন আমি আবার নতুন করে কোন শয়তানি কুফরীতে লিপ্ত হতে পারেন। প্রতিবার বড় থেকে বড় গোনাহে আপনি লিপ্ত হয়ে যাবেন। ক্ষুধার্ত কুকুরের মত। মাংস দিবেন, পেট ভরবে, চুপ থাকবে। হজম হয়ে গেলেই আবার ঘেঊ ঘেউ শুরু করবে।
৩) কবিরাজের/ভন্ড হুজুরের দেয়া তাবিজ কিছুদিন পর পর হারিয়ে যায়। ঘটনা একই আপনাকে আবার তাবিজ/টোটকা নিতে হবে। আবারও কোন গোনাহ করতে দিতে হবে।
৪) কেউ কেউ বলে জ্বিন নাকি নিজেই খেদমত করে। ডাহা মিথ্যে কথা। প্রথম দিকে হয়ত ছোট ছোট সমস্যার ব্যাপারে সহায়তা করে আপনার বিশ্বস্ততা অর্জন করতে চাইবে। পরে আপনাকে ঈমানহারা করে ফেলবে। আর পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখাবে। আপনিও দেখবেন অমুক কাজ হয়েছে, তমুক কাজ হয়েছে এখন কথা না শুনলে না জানি আমার কি ক্ষতি করে। আমার ফ্যামিলির কি ক্ষতি করে! এ এক ভয়াবহ দুষ্টচক্র।
৫) ঈমানের ন্যুনতম নূর যার অন্তরে আছে তার কাছে কুফরী করা, শিরক করা কবিরাজ/হুজুর/যাদুকরের কাছে গেলেই মনেহবে "আমি ভুল কিছু করলাম নাতো"। মনে অশান্তি, খচখচানি থাকবে সারাজীবন।
অথচ রুকইয়াহ্ ,,,,, একটি কুরআনী চিকিৎসা, হাদিসের দোয়া নির্ভর চিকিৎসা। গোপনীয় কোন কিছু নেই। এমন না আমরা গ্রুপে এক কথা বলি আর ইনবক্সে অন্য কথা বলি। যারা আমাদের ইনবক্স করেছেন তারা ভাল করেই জানেন কি অবস্থা। এখনো মনে হয় এক একজন রাক্কীর অসংখ্য মেসেজ রিকুয়েস্ট ঝুলে আছে। এগুলো ঝুলেই থাকবে।
আপনি নিজেই করেন নিজের চিকিৎসা। কারও কাছে যেতে হবে না। আপনার জ্বিন সংক্রান্ত সমস্যা হলে আপনার বাবা, মা, ভাই, বোন, যে কাউকে (যার কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ আছে) বলেন আপনাকে রুকইয়াহ্ করতে। চার আনা পয়সাও আপনাকে খরচ করতে হবে না। কেউ যদি আমাদের পরামর্শ চান তাহলে ইনবক্স করুন অথবা নাম্বারে যোগাযোগ করুন অথবা গ্রুপে পোস্ট করুন। একটা পয়সাও আমাদের দিতে হবে না। শুধু একটু ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
তারপরও যারা "বিচার মানি তালগাছ আমার টাইপের তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করি। আল্লাহ যেন তাদের হেদায়াত দান করেন। সঠিকভাবে বুঝার তাওফিক দান করেন ,আমিন।
Md Mustakim
➖➖➖➖➖