
17/05/2023
হিজামার উপকারিতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেলে যে কেউ এই চিকিৎসা নিতে চাইবে। হিজামাতে অসংখ্য বৈজ্ঞানিক থিওরি, ফিজিওলজি, এনাটমি রয়েছে।
সেই সাথে মানসিক ও আধ্যাত্মিক উপশম রয়েছে। হিজামা কে অনেকে শিঙ্গা বলে থাকেন কিন্তু আধুনিক মেশিনের সাহায্যে শরীরের সামগ্রিক জ্ঞান লাভের পর যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তা আরো বেশি ফলপ্রসূ।
হিজামা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। এটি কি আসলে উপকারী কোন চিকিৎসা। এতে কি মানুষের ক্ষতি হতে পারে কিনা। যথেষ্ট তত্ত্ব ও উপাত্ত্ব অনুসারে আমরা আজ এটি বলতে পারি দক্ষ হিজামা থেরাপিস্ট সহকারে কারো হিজামা করা হলে তার কোন ক্ষতি হবার আশংকা নেই। কাপিং মূলত দুই ধরনের । dry cuppingএবং ওয়েট কাপিং। Wet cupping কে মূলত হিজামা বলা হয়। উপকারিতার দিক থেকে হিজামা সর্বোত্তম। এটি শুধু ইসলামিক চিকিৎসা বলে উত্তম তা নয়। গবেষণা দ্বারা এটাই প্রমাণিত। আমাদের শরীরের প্রথম বৃহত্তম অঙ্গ ত্বক। দ্বিতীয় লিভার। শরীরের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি।
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার পিছনে এই লিভার ও কিডনি প্রধান ভূমিকা পালন করে। গবেষণা থেকে জানা গেছে হিজামাতে ত্বককে যে নেগেটিভ প্রেশার দেয়া হয় তা ৩৫ গুণ বেশি এই একই কাজ করে। অর্থাৎ ত্বকে নেগেটিভ প্রেশার দেয়া হলে যে পদার্থ টেনে নিয়ে আসে তাতেই থাকে সেসব বর্জ্য যা লিভার ও কিডনি ডায়ালাইসিস করে। আর এটিই হিজামা। আরেক ধরনের কাপিং আছে যাতে কাটা হয় না এটিও ব্যথার জন্য অত্যন্ত উপকারী।
বিশেষ করে যারা খেলাধুলা করেন তাদের মাংসপেশির স্টিফনেস দূর করতে এটি বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও মুখের ত্বক, সেলুলিয়েটের (ত্বকে ভাঁজ পড়া) সমস্যা, মুখের লোমকূপ বড় হয়ে যাওয়া যাকে পোরস বলে, পেটের দাগ ইত্যাদির জন্য কাপিং ম্যাসাজ (ড্রাই কাপিং) কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
হিজামা চিকিৎসাতে ত্বকে খুব ই সামান্য কাটতে হয় এবং নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে বদ-রক্ত বের করা হয়। আমাদের ত্বক একটা রক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে। হিজামাতে ত্বকের তিনটি স্তরের কেবল উপরের স্তরটি কাটা হয় যার ফলে নিচের ত্বক ছাকনী হিসেবে কাজ করে।
কিন্তু কেউ যদি এর নিচের ত্বক কেটে দেয় তবে ভাল রক্ত বের হয়ে যাবে। এতে যথেষ্ট ক্ষতি ও ইনফেকশনের আশংকা থাকে।
ইন্টারন্যাশনাল কাপিং থেরাপি এসোসিয়েশন বলেছে কাপিং একই সাথে একজন মানুষের একাধিক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার উপশম করতে পারে।
আমরা একটা ওষুধ একটা মাত্র সমস্যার জন্য খেয়ে থাকি।কিন্তু হিজামাতে যে দূষিত প্লাজমা বেরিয়ে আসে তাতে থাকে একাধিক রোগের জীবাণু যেমন ঠাণ্ডা, কাশি, বিষন্নতা, আরথ্রাইটিস, কোমরের সায়াটিকার ব্যথা,চিন্তা, ঘুমের সমস্যা, মাংসপেশির ব্যথা এবং অন্যান্য সকল রোগের তীব্রতাও কমে আসে।
কাপিং থেরাপীর আন্তর্জাতিক সংস্থা ICTA থেকে হিজামার কিছু উপকারিতাছিঃ
১. হিজামা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
হিজামা কাপিং থেরাপী একটি অতি প্রাচীন চিকিৎসা। মিশরীয় এবং সৌদি আরব গবেষকরা বলেছেন এই থেরাপি
১। মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
২। আমরা যে ওষুধ খাই তার প্রভাবকে আরো কার্যকরী করে
৩। অনেক রোগ সৃষ্টিকারী এবং শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পদার্থ রক্ত থেকে নিঃসৃত করে।
তারা তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন প্রচলিত ওষুধ এর ১৫শতাংশ কম সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। হিজামা যখন ওষুধের সাথে নেয়া হয় তখন তা ১৫৬ শতাংশ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর ওষুধ ছাড়া একক ভাবে হিজামা কাজ কড়ে ১৩৩ শতাংশ হারে।
২. দীর্ঘকালীন রোগ কমায়
গবেষণায় আরো পাওয়া গেছে যে, হিজামা থেরাপি ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার তীব্রতা হ্রাস পায়।
টেস্টের রিপোর্ট থেকে পাওয়া গেছে এক মাস পর ৩৪%, দুই মাস পর ৪০% এবং তিন মাস পর প্রায় ৬০% শতাংশ ব্যথা কমেছে।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে ব্যথা, বাতের ব্যথা,পিঠের ব্যথা ও মেরুদন্ডের ব্যথা, ফিব্রোমায়ালজিয়া, হাটুর অস্ট্রিওআর্থারাইটিস অর্থাৎ হাটু ক্ষয়, হার্ণিয়ার সমস্যা, ঘাড় ও কাঁধের ব্যথা, দীর্ঘকালীন পিঠের ব্যথা, মাংশপেশীর ব্যথা, মচকে যাওয়া , পায়ে পানি আসা, ফুলে যাওয়া কিংবা আঘাতের কারণে ফেটে যাওয়ার ব্যথায় হিজামা খুব ভালো কাজ করে।
৩. ভাইরাল এবং ইনফেকশাস রোগ কমায় ও প্রতিরোধ বাড়ায়
হারপিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ভাইরাল হেপাটাইটিস, ব্রণ, ডার্মাটাইটিস, এবং সেলুলাইটিস এসব স্বাস্থ্য সমস্যা যা হিজামা কাপিং থেরাপি দ্বারা চিকিৎসা করা যায়।
একযোগে একাধিক শারীরিক উপশমে ভূমিকা রাখে স্নায়ুতন্ত্রের সিস্টেমে সেরোটোনিন, ডোপামাইন, এন্ডোরিফিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার এর মাধ্যমে।
এছাড়াও হিজামাতে তে যে সাময়িক সংকুচন-প্রসারণ ও কাটা হয় তা প্রতিরোধ সিস্টেমকে সক্রিয় করে রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।